প্রায় ৫০০ বছরের ঐহিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ভেঙে করা রামমন্দিরের উদ্বোধন করলেন মোদি। সাম্প্রদায়িক কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করলো ভারতের উগ্রবাদিরা।
আজ ২২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে বহু বিতর্কের মাঝেই ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে করা রামমন্দিরে বিগ্রহের ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
হিন্দু মহাকাব্য কল্পিত রামায়ণে ভগবান রামচন্দ্রের জন্মস্থান হিসেবে যে অযোধ্যা নগরীর উল্লেখ আছে। আর এই কারণ ধরে প্রায় ৫০০ বছরের এতিহ্যবাহী মুসলিম এতিহ্য বাররী মসজিদ ১৯৯২ সালে ভেঙে ফেলে উগ্রবাদী উন্মত্ত করসেবকরা। ভারতজুড়ে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম।
ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের আদেশে একজন সেনাপতি মীর বাকি ১৫২৯ সালে ‘বাবরি মসজিদ’ তৈরি করেন।
বাবরি মসজিদ,ভারতের উত্তর প্রদেশের, ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরের রামকোট হিলের উপর অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ ছিল। হিন্দু সম্প্রদয়ের কিছু উগ্রবাদী করসেবকদের বিশ্বাস এ বাবরি মসজিদ যে স্থানে অবস্থিত ছিল সেটাই ছিল হিন্দু ধর্মের অবতার রামের জন্মস্থান। এই বিষয়টি নিয়ে আঠারো শতক থেকেই হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক চলে আসছে, যা অযোধ্যা বিবাদ নামে পরিচিত। মসজিদের অভিলিখন থেকে জানা যায়, মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে সেনাপতি মীর বাকী ১৫২৮–২৯ (৯৩৫ হিজরি বর্ষে) এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
১৯৯২ সালে কর সেবক দ্বারা এই মসজিদ আক্রমণ করা হয় এবং গুড়িয়ে দেওয়া হয়। যা পুরো দেশজুড়ে এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষ্ফোরণ ঘটায়।
ধারণা করা হয়, এই মসজিদটি রামকোট (“রামের দুর্গ”) পাহাড়ের উপর অবস্থিত ছিল। হিন্দুদের মতে, মীর বাকী পূর্বে অবস্থিত রামমন্দির ধ্বংস করে তারপর মসজিদ নির্মাণ করেছে। আদৌ রামমন্দির ছিল কিনা তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ভিন্নমত আছে।২০০৩ সালে ভারতের ভূমি জরিপ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা বাবরী মসজিদের নিচে একটি পুরাতন স্থাপনার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবী করেন তারা।
১৯ শতকের শুরু থেকে এ বিতর্কের জের ধরে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একাধিক কলহের ঘটনা ঘটে এবং পাল্টাপাল্টি আদালতে মামলা দায়ের চলতে থাকে। ১৯৪৯ সালে হিন্দু সক্রিয়তাবাদীরা হিন্দু মহাসভার সাথে জোট বেধে গোপনে রামের একটি বিগ্রহ মুর্তি মসজিদের অভ্যন্তরে রেখে দেয়। এরপরই গুজরাটের দাঙ্গাবাজ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার দাঙ্গা ঠেকানোর অভিপ্রায় দেখিয়ে পুরো মসজিদকে সিলগালা করে দেয়। হিন্দু-মুসলিম উভয়ই সে স্থানে প্রবেশাধিকার পেতে আদালতে মামলা করে।