দেশভাগের বিয়োগান্ত প্রেমপত্র!
(First Long-distance relationship)
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট রাত ১২টায় রাজশাহীতে বসে এক তরুণ লিখেছেন কলকাতার এক তরুণীকে। চিঠিতে দুজনের কারোরই নাম নেই। সম্বোধনের জায়গায় মেয়েটার ছবি। একইভাবে ছয় পাতার চিঠির শেষে নাম না লিখে ‘ইতি’র পরে ছেলেটা নিজের ছবি দিয়েছেন।
কলকাতার ফুটপাতের বইয়ের দোকানে বছর দেড়েক আগে একটি পুরোনো বইয়ের ভেতরে চিঠিখানা আবিষ্কার করেন সংগ্রাহক উজ্জ্বল সরদার। রাজশাহীতে সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত চিহ্নমেলায় উজ্জ্বল এনেছিলেন সেই চিঠি। নিছক প্রেমপত্র হলেও পড়ে বোঝা যায়, দেশভাগের কারণে মেয়েটা রয়ে গেছেন কলকাতায় আর ছেলেটা রাজশাহীতে। চিঠির ছত্রে ছত্রে সেই বিয়োগান্ত কথা ঘুরেফিরে!
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট রাত ১২টায় রাজশাহীতে বসে এক তরুণ লিখেছেন কলকাতার এক তরুণীকে। চিঠিতে দুজনের কারোরই নাম নেই। সম্বোধনের জায়গায় মেয়েটার ছবি। একইভাবে ছয় পাতার চিঠির শেষে নাম না লিখে ‘ইতি’র পরে ছেলেটা নিজের ছবি দিয়েছেন।
কলকাতার ফুটপাতের বইয়ের দোকানে বছর দেড়েক আগে একটি পুরোনো বইয়ের ভেতরে চিঠিখানা আবিষ্কার করেন সংগ্রাহক উজ্জ্বল সরদার। রাজশাহীতে সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত চিহ্নমেলায় উজ্জ্বল এনেছিলেন সেই চিঠি। নিছক প্রেমপত্র হলেও পড়ে বোঝা যায়, দেশভাগের কারণে মেয়েটা রয়ে গেছেন কলকাতায় আর ছেলেটা রাজশাহীতে। চিঠির ছত্রে ছত্রে সেই বিয়োগান্ত কথা!
চিঠিতে মেয়েটার ছদ্মনাম ‘মিত্তি’ আর ছেলেটার নাম ‘মানা’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সে সময় রাজশাহী বানানে দন্ত্যস লেখা হতো। চিঠিতে ওভাবেই লেখা। তারিখের জায়গায় ‘রাজসাহী, ১৫ই আগস্ট রাত বারোটা।’ ভেতরের আরেকটা পাতায় সাল লেখা ১৯৪৭।
ছেলেটা শুরুতেই লিখেছেন, ‘এখানে এসে অবধি তোমায় তিনখানা চিঠি লিখেছি, এটা হলো চতুর্থ। তুমি লিখেছ মাত্র একটা। তার জন্য অনুযোগ করব না।’ রাতের বেলায় খেয়ালমতো ঘুরে বেড়ানোর প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘হয়তো ভাবছো কেন আমি অন্ধকারের মধ্যে বেড়াতে যাই-তাই না! হ্যাঁ, তুমি অন্ধকার ভালোবাস বলেই যাই। তুমি অন্ধকারের মধ্যে কী এত খোঁজ!’
নিজের ঘরের বর্ণনা দিতে বলেছেন, এখানে আমার ঘরটা বড্ড বড়, আমার একার পক্ষে। পড়ার টেবিল, খাট, ড্রেসিং টেবিল। এ ছাড়া এত জিনিস আছে ঘরটার ভেতরে, তা–ও মনে হয়, একেবারে ফাঁকা।’ লিখতে লিখতে রাত একটা বেজে গেছে। আলো নিভে গেছে। ফ্যান বন্ধ হয়ে গেছে।
মোম জ্বালিয়েছেন। এই জায়গায় লিখেছেন, ‘বলতো, মোমের শিখায় এসে পোকাগুলো মরছে, এ দোষ কার, আলোর না পোকাগুলোর?—উত্তর পেলে কলকাতায় তুমি একদিন আমাকে কতগুলো কথা বলেছিলে, আমি তার উত্তর দিব।’ ছয় পাতার চিঠিতে জর্জ বার্নার্ড শর একটি নাটক সদ্য শেষ করে তার কয়েকটি সংলাপ ইংরেজিতে লিখেছেন, নিঝুম রাতের ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দ, কলকাতার কোনো এক বেনুদার ঝগড়া, কাকে যেন ‘বেলুন’ সম্বোধন করে জানতে চেয়েছেন তার খবর। লিখেছেন আরও অনেক কিছু।
শেষাংশে লিখেছেন, ‘খুব পড়াশোনা করছো নিশ্চয়ই! আর আমায় ফেলে ফেলে বেড়াচ্ছোও নিশ্চয়-খুব।’
শেষে লিখেছেন, ‘প্রীতি নিও। ইতি।’ তারপরে শুধু নিজের ছবিটা লাগিয়ে দিয়েছেন।
সূত্র: প্রথম আলো
সৌজন্যে: বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র গ্রুপ