ঢাকা ১২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
বাকেরগঞ্জে পুলিশের উপর হামলার মামলায় দুই নারী গ্রেপ্তার শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিডি ক্লিনের পরিচ্ছন্নতা অভিযান তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতিকের পথ সভায় জনতার ঢল শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহরাব হোসেন নির্বাচনী গনসংযোগ ও পথসভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল উপজেলার শ্রেষ্ঠ হয়েছে তালার ঘোনায় ঘোড়া প্রতীকের পথসভায় জনতার ঢল ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কাঞ্চনের বিদায়, আমিনুরের যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা নলতায় চোর ও গাঁজা ব্যবসায়ী আটক তালার মদনপুর চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলামের ঘোড়া প্রতিকের নির্বাচনী পথসভা অনুষ্ঠিত  বাঘায় ট্রাক-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ – আহত ১

একজন আদর্শ ছাত্রের গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্য

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ১১:২৪:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০২৩
  • ৭৮৫ জন পড়েছেন ।

মোঃ সমশের আলী

একজন আদর্শ ছাত্রের মধ্যে নানাবিধ গুণাবলী থাকা প্রয়োজন যেগুলো তার শিক্ষার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটে। আর শিক্ষা হলো মানুষের মনের প্রবৃদ্ধি যা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শিক্ষা অর্জন করে তা ব্যবহারের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে না পারলে সেটাকে শিক্ষা বলা যায়না। শিক্ষা বলতে হাজার হাজার বই মুখস্থ করে রাখা আর পরীক্ষায় পাশ করে সার্টিফিকেট অর্জনই নয় বরং সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশই হল শিক্ষা; এবং সার্টিফিকেট হলো শিক্ষার সাক্ষী হিসেবে এক টুকরো কাগজের নমুনা মাত্র। আর ব্যবহার হলো শিক্ষার প্রমাণ যা মানুষের বহিঃপ্রকাশে তার কথাবার্তা ও চালচলনের মধ্যে দিয়ে অবলীলায় ফুটে ওঠে।

একজন আদর্শ ছাত্র তো তারাই হতে পারে যারা কোনো অজানাকে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে, যেকোনো বিষয়বস্তু দেখা মাত্রই তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে চলে। নিজের সংকীর্ণ মনকে বিকশিত করে, নিজের দুর্বলতাকে দূর করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই হলো আদর্শ ছাত্রের গুণাবলী।

এছাড়াও আরও বিশেষ কিছু গুণাবলী রয়েছে যা একজন ছাত্রের মধ্যে থাকা আবশ্যক।

আদর্শ ছাত্রের ১১ টি গুণাবলী যা থাকা আবশ্যক
১) পড়াশোনায় গভীর মনোযোগী হওয়া

একজন আদর্শ ছাত্র হয়ে ওঠার জন্য প্রচুর পরিমানে পড়াশোনা করতে বাঞ্ছনীয়। পড়াশোনায় গভীর মনোযোগী না হলে সে কখনোই ভালো ছাত্র হয়ে উঠতে পারেনা। এজন্য প্রথমেই- পড়াশোনায় মন বসানোর সহজ উপায় গুলো জেনে নিতে হবে।

আমাদের আশেপাশে হয়তোবা দেখা যায় বাবা-মায়ের ইচ্ছা পূরণের আশায় জোরপূর্বক লেখাপড়া করছে কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ভালো কিছু অর্জন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আদর্শ ছাত্র হতে হলে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। নিজেকেই নিজের শিক্ষক হয়ে উঠার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের খুটিনাটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে।

২) নিয়মানুবর্তী

নিয়মানুবর্তিতা একজন আদর্শ ছাত্রের অনেক বড় একটি গুণ। প্রতিটি কাজ নিয়ম-মাফিক করাই উত্তম। কোন কাজের পর কোন কাজ করতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে চলতে হবে। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখা উচিৎ নয়, কারন এটি আদর্শহীনের লক্ষণ। প্রতিটি কাজের কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। প্রতিদিনের কাজ গুলো নিয়মিত করার মাধ্যমেই যেকোনো কাজেই সাফল্য অর্জন সম্ভব। নিয়মানুবর্তিতা মেনে প্রতিটি কাজ করার ফলে সাফল্যের দিকে পৌঁছানো সম্ভব।

৩) সময়ের সদ্ব্যবহার

কথায় আছে, ‘সময় ও স্রোত কারো জন্য বসে থাকে না’। তাই সময়ের সঠিক মূল্য দিয়ে সময়ের কাজ সময়ে করাই হলো আদর্শ ছাত্রের গুণ। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারলে সময়ের শেষপ্রান্তে আফসোস করতে হয়না। আদর্শ ছাত্ররা সময়ের জন্য কখনো আফসোস করেনা। এখন ভালো লাগছেনা, আরেকটু পরে করি এসব চিন্তাভাবনা কিন্তু শুধু আপনার মাথাতেই ঘুরছে। যারা আপনার থেকে ভালো করার কথা ভাবছে তারা কিন্তু আপনার মতো বসে নেই। তারা কিন্তু নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর আপনি বসে বসে শুধু ভেবেই যাচ্ছেন। তাহলে তারা তো আপনার থেকে ভালো করবেই। না ভেবে কাজে লেগে থাকুন। তাহলে আপনিও আদর্শ ছাত্রের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

৪) সঠিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ এবং বাস্তবায়

ছাত্রজীবনে প্রতিটি কাজ পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিৎ। কখন কোন বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করবেন, পুরনো কোন পড়াটা একটু রিভিউ করবেন। আবার কোন বিষয়টি একটু কঠিন মনে হচ্ছে যার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। এসবকিছুই একটি পরিকল্পনার উপর নির্ভর। পরিকল্পনা না করে একটার পর একটা বই পড়ে গেলেই কিন্তু হবে না সেটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন বিষয়টির কতটুকু শেষ করতে পেরেছেন আর কতটুকু বাকি আছে তার সঠিক বিবেচনা করে নিতে হবে। যতটুকু পড়া হয়েছে তা কি ভালো মতো বুঝতে পেরেছেন নাকি একটু পরে গুলিয়ে ফেলবেন তার দিকেও যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে।

৫) ব্যক্তিত্ব প্রকাশ

নিজেকে শুধু একজন আদর্শ ছাত্র হিসেবে পরিণত করলেই হবেনা। নিজের ব্যক্তিত্বকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আর সেটা সম্ভব হয় নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে। ব্যক্তিত্ব প্রকাশিত হয় নিজের ঙ্গান বুদ্ধি দিয়ে কোনো বিষয়ের উপর সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। খালি বই মুখস্থ করে গেলেই আর ভালো রেজাল্ট করতে পারলেই কিন্তু আদর্শ ছাত্র হওয়া যায়না। সেই শিক্ষাকে সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারাটাই হলো আদর্শ ছাত্রের গুণাবলী।

৬) সৎ গুণাবলী

একজন আদর্শ ছাত্রের অন্যতম একটি গুণ হচ্ছে সৎ গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ। যে কোনো কাজ সৎভাবে সৎ উদ্দেশ্যে অর্জন করতে হবে। অসৎ উপায়ে কোনো কিছু অর্জন করা কিন্তু আদর্শ ছাত্রের গুণগত বৈশিষ্ট্য নয়। মানুষের সাথে সত্য কথা বলা, সৎ বন্ধু-বান্ধব নির্বাচন করা, সৎ পথে চলা, মুরুব্বিদের দেখলে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, ছোটদের ভালোবেসে কাছে টেনে নেওয়া, বিপদে একে অপরকে সাহায্য করা, কাউকে সৎ উপদেশ দেওয়া, কাউকে খারাপ কাজ করতে দেখলে বাঁধা দেওয়া এসবই সৎ গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত।

৭) সদ্ব্যবহার

একজন আদর্শ ছাত্রকে অবশ্যই সদ্ব্যবহারের অধিকারী হতে হবে। লেখাপড়া শিখে যদি নিজের ব্যবহার ভালো না হয় তাহলে সে শিক্ষার কোনো মূল্য নেই। মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্যই মূলত শিক্ষা অর্জন করতে হয়। নয়তো সে শিক্ষাকে আমরা আদর্শ শিক্ষা বলতে পারিনা। যেকোনো মানুষই একজনের সাথে দেখা হওয়া মাত্রই তার ব্যবহারের মাধ্যমেই তাকে বিবেচনা করে ফেলে সে কেমন শিক্ষায় শিক্ষিত। তাই যেকোনো মানুষের সাথে ভালো ব্যবহারের জন্যই নিজেকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

৮) নিয়মিত অনুশীলন

পড়ালেখা শিখেই যে সবাই ভালো ফলাফল করতে পারে তা কিন্তু নয়। এখনকার সমাজে সবাই পড়াশোনা করে। কিন্তু ভালো ফলাফল ক’জনই বা করতে পারে। হ্যা, ভালো ফলাফল সেই করতে পারে যে নিজের শিক্ষার উপর বার বার অনুশীলন করে। যে শিক্ষা আপনি গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবে রূপদানের জন্য সেই শিক্ষার উপর বার বার অনুশীলনের প্রয়োজন। অনুশীলন ছাড়া কেউই তার শিক্ষাকে কখনোই বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। তাই যেকোনো শিক্ষার উপরই প্রচুর পরিমাণে অনুশীলনের প্রয়োজন।

৯) সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ
আপনি নিজেকে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন তা আগে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী আপনাকে অনুশীলন করে যেতে হবে। আপনি যদি ডাক্তার হতে চান তাহলে আপনাকে জীববিজ্ঞানের উপর বেশি অনুশীলন করতে হবে। আবার যদি আর্কিটেকচার হতে চান তাহলে গণিতশাস্ত্রের উপর বেশি অনুশীলন করতে হবে। আসলে আপনি ভবিষ্যতে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জনগনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন তা আগে আপনাকে বাছাই করতে হবে। তারপর সেই পর্যায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে আপনি পৌঁছাতে পারবেন।
১০) কঠোর পরিশ্রম হওয়া

নিজের জীবনের সাফল্য কিন্তু আপনা আপনিই আসে না। তার জন্য আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ছোটবেলায় অনেক বাচ্চাদের ইচ্ছে থাকে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ইন্জিনিয়ারিং হবে, বিসিএস ক্যাডার হবে আরো কত কি। কিন্তু এই বাচ্চারা যখন বড় হয় তখন ক’জনই বা তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারে? ক’জনইবা হতে পাতে ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার? হ্যা, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার তারাই হতে পারে যারা তাদের জীবনে কঠোর পরিশ্রম করতে পেরেছে। আরাম আয়েশে জীবন পরিচালিত করলে সে জীবনের সাফল্য খুব কমই দেখা যায়। তাই জীবনে কিছু পাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

১১) পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ

সারাদিন বই পুস্তকে মাথা ঢুকিয়ে রাখলেই ভালো ছাত্র হওয়া যায়না। বই পড়ে ভালো রেজাল্ট করার পাশাপাশি খেলাধূলা করা, গান বাজনা করা, গল্পের বই পড়া, টিভি দেখা আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া, নতুন নতুন মানুষের সাথে মেলামেশার মাধ্যমেও একজন ছাত্রের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। তাছাড়াও শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া দাওয়া ও যথেষ্ট ঘুমের প্রয়োজন।

শেষ কথা

ভালো ছাত্র হতে হলে শুধু পড়াশোনা করে গেলেই হবেনা। পড়াশোনার পাশাপাশি বাহিরের কিছু বাড়তি জ্ঞানের বিকাশ ও ঘটাতে হবে। সঠিক শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত করাই হচ্ছে আদর্শ শিক্ষা। আর এজন্যই আদর্শ ছাত্রের মধ্যে উপরিউক্ত গুণাবলী থাকা আবশ্যক।

সূত্র শিক্ষক বাতায়ন

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে পুলিশের উপর হামলার মামলায় দুই নারী গ্রেপ্তার

একজন আদর্শ ছাত্রের গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্য

পোস্ট করা হয়েছে : ১১:২৪:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০২৩

মোঃ সমশের আলী

একজন আদর্শ ছাত্রের মধ্যে নানাবিধ গুণাবলী থাকা প্রয়োজন যেগুলো তার শিক্ষার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটে। আর শিক্ষা হলো মানুষের মনের প্রবৃদ্ধি যা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শিক্ষা অর্জন করে তা ব্যবহারের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে না পারলে সেটাকে শিক্ষা বলা যায়না। শিক্ষা বলতে হাজার হাজার বই মুখস্থ করে রাখা আর পরীক্ষায় পাশ করে সার্টিফিকেট অর্জনই নয় বরং সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশই হল শিক্ষা; এবং সার্টিফিকেট হলো শিক্ষার সাক্ষী হিসেবে এক টুকরো কাগজের নমুনা মাত্র। আর ব্যবহার হলো শিক্ষার প্রমাণ যা মানুষের বহিঃপ্রকাশে তার কথাবার্তা ও চালচলনের মধ্যে দিয়ে অবলীলায় ফুটে ওঠে।

একজন আদর্শ ছাত্র তো তারাই হতে পারে যারা কোনো অজানাকে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে, যেকোনো বিষয়বস্তু দেখা মাত্রই তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে চলে। নিজের সংকীর্ণ মনকে বিকশিত করে, নিজের দুর্বলতাকে দূর করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই হলো আদর্শ ছাত্রের গুণাবলী।

এছাড়াও আরও বিশেষ কিছু গুণাবলী রয়েছে যা একজন ছাত্রের মধ্যে থাকা আবশ্যক।

আদর্শ ছাত্রের ১১ টি গুণাবলী যা থাকা আবশ্যক
১) পড়াশোনায় গভীর মনোযোগী হওয়া

একজন আদর্শ ছাত্র হয়ে ওঠার জন্য প্রচুর পরিমানে পড়াশোনা করতে বাঞ্ছনীয়। পড়াশোনায় গভীর মনোযোগী না হলে সে কখনোই ভালো ছাত্র হয়ে উঠতে পারেনা। এজন্য প্রথমেই- পড়াশোনায় মন বসানোর সহজ উপায় গুলো জেনে নিতে হবে।

আমাদের আশেপাশে হয়তোবা দেখা যায় বাবা-মায়ের ইচ্ছা পূরণের আশায় জোরপূর্বক লেখাপড়া করছে কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ভালো কিছু অর্জন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আদর্শ ছাত্র হতে হলে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। নিজেকেই নিজের শিক্ষক হয়ে উঠার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের খুটিনাটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে।

২) নিয়মানুবর্তী

নিয়মানুবর্তিতা একজন আদর্শ ছাত্রের অনেক বড় একটি গুণ। প্রতিটি কাজ নিয়ম-মাফিক করাই উত্তম। কোন কাজের পর কোন কাজ করতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে চলতে হবে। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখা উচিৎ নয়, কারন এটি আদর্শহীনের লক্ষণ। প্রতিটি কাজের কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। প্রতিদিনের কাজ গুলো নিয়মিত করার মাধ্যমেই যেকোনো কাজেই সাফল্য অর্জন সম্ভব। নিয়মানুবর্তিতা মেনে প্রতিটি কাজ করার ফলে সাফল্যের দিকে পৌঁছানো সম্ভব।

৩) সময়ের সদ্ব্যবহার

কথায় আছে, ‘সময় ও স্রোত কারো জন্য বসে থাকে না’। তাই সময়ের সঠিক মূল্য দিয়ে সময়ের কাজ সময়ে করাই হলো আদর্শ ছাত্রের গুণ। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারলে সময়ের শেষপ্রান্তে আফসোস করতে হয়না। আদর্শ ছাত্ররা সময়ের জন্য কখনো আফসোস করেনা। এখন ভালো লাগছেনা, আরেকটু পরে করি এসব চিন্তাভাবনা কিন্তু শুধু আপনার মাথাতেই ঘুরছে। যারা আপনার থেকে ভালো করার কথা ভাবছে তারা কিন্তু আপনার মতো বসে নেই। তারা কিন্তু নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর আপনি বসে বসে শুধু ভেবেই যাচ্ছেন। তাহলে তারা তো আপনার থেকে ভালো করবেই। না ভেবে কাজে লেগে থাকুন। তাহলে আপনিও আদর্শ ছাত্রের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

৪) সঠিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ এবং বাস্তবায়

ছাত্রজীবনে প্রতিটি কাজ পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিৎ। কখন কোন বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করবেন, পুরনো কোন পড়াটা একটু রিভিউ করবেন। আবার কোন বিষয়টি একটু কঠিন মনে হচ্ছে যার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। এসবকিছুই একটি পরিকল্পনার উপর নির্ভর। পরিকল্পনা না করে একটার পর একটা বই পড়ে গেলেই কিন্তু হবে না সেটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন বিষয়টির কতটুকু শেষ করতে পেরেছেন আর কতটুকু বাকি আছে তার সঠিক বিবেচনা করে নিতে হবে। যতটুকু পড়া হয়েছে তা কি ভালো মতো বুঝতে পেরেছেন নাকি একটু পরে গুলিয়ে ফেলবেন তার দিকেও যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে।

৫) ব্যক্তিত্ব প্রকাশ

নিজেকে শুধু একজন আদর্শ ছাত্র হিসেবে পরিণত করলেই হবেনা। নিজের ব্যক্তিত্বকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আর সেটা সম্ভব হয় নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে। ব্যক্তিত্ব প্রকাশিত হয় নিজের ঙ্গান বুদ্ধি দিয়ে কোনো বিষয়ের উপর সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। খালি বই মুখস্থ করে গেলেই আর ভালো রেজাল্ট করতে পারলেই কিন্তু আদর্শ ছাত্র হওয়া যায়না। সেই শিক্ষাকে সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারাটাই হলো আদর্শ ছাত্রের গুণাবলী।

৬) সৎ গুণাবলী

একজন আদর্শ ছাত্রের অন্যতম একটি গুণ হচ্ছে সৎ গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ। যে কোনো কাজ সৎভাবে সৎ উদ্দেশ্যে অর্জন করতে হবে। অসৎ উপায়ে কোনো কিছু অর্জন করা কিন্তু আদর্শ ছাত্রের গুণগত বৈশিষ্ট্য নয়। মানুষের সাথে সত্য কথা বলা, সৎ বন্ধু-বান্ধব নির্বাচন করা, সৎ পথে চলা, মুরুব্বিদের দেখলে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, ছোটদের ভালোবেসে কাছে টেনে নেওয়া, বিপদে একে অপরকে সাহায্য করা, কাউকে সৎ উপদেশ দেওয়া, কাউকে খারাপ কাজ করতে দেখলে বাঁধা দেওয়া এসবই সৎ গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত।

৭) সদ্ব্যবহার

একজন আদর্শ ছাত্রকে অবশ্যই সদ্ব্যবহারের অধিকারী হতে হবে। লেখাপড়া শিখে যদি নিজের ব্যবহার ভালো না হয় তাহলে সে শিক্ষার কোনো মূল্য নেই। মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্যই মূলত শিক্ষা অর্জন করতে হয়। নয়তো সে শিক্ষাকে আমরা আদর্শ শিক্ষা বলতে পারিনা। যেকোনো মানুষই একজনের সাথে দেখা হওয়া মাত্রই তার ব্যবহারের মাধ্যমেই তাকে বিবেচনা করে ফেলে সে কেমন শিক্ষায় শিক্ষিত। তাই যেকোনো মানুষের সাথে ভালো ব্যবহারের জন্যই নিজেকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

৮) নিয়মিত অনুশীলন

পড়ালেখা শিখেই যে সবাই ভালো ফলাফল করতে পারে তা কিন্তু নয়। এখনকার সমাজে সবাই পড়াশোনা করে। কিন্তু ভালো ফলাফল ক’জনই বা করতে পারে। হ্যা, ভালো ফলাফল সেই করতে পারে যে নিজের শিক্ষার উপর বার বার অনুশীলন করে। যে শিক্ষা আপনি গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবে রূপদানের জন্য সেই শিক্ষার উপর বার বার অনুশীলনের প্রয়োজন। অনুশীলন ছাড়া কেউই তার শিক্ষাকে কখনোই বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। তাই যেকোনো শিক্ষার উপরই প্রচুর পরিমাণে অনুশীলনের প্রয়োজন।

৯) সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ
আপনি নিজেকে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন তা আগে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী আপনাকে অনুশীলন করে যেতে হবে। আপনি যদি ডাক্তার হতে চান তাহলে আপনাকে জীববিজ্ঞানের উপর বেশি অনুশীলন করতে হবে। আবার যদি আর্কিটেকচার হতে চান তাহলে গণিতশাস্ত্রের উপর বেশি অনুশীলন করতে হবে। আসলে আপনি ভবিষ্যতে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জনগনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন তা আগে আপনাকে বাছাই করতে হবে। তারপর সেই পর্যায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে আপনি পৌঁছাতে পারবেন।
১০) কঠোর পরিশ্রম হওয়া

নিজের জীবনের সাফল্য কিন্তু আপনা আপনিই আসে না। তার জন্য আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ছোটবেলায় অনেক বাচ্চাদের ইচ্ছে থাকে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ইন্জিনিয়ারিং হবে, বিসিএস ক্যাডার হবে আরো কত কি। কিন্তু এই বাচ্চারা যখন বড় হয় তখন ক’জনই বা তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারে? ক’জনইবা হতে পাতে ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার? হ্যা, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার তারাই হতে পারে যারা তাদের জীবনে কঠোর পরিশ্রম করতে পেরেছে। আরাম আয়েশে জীবন পরিচালিত করলে সে জীবনের সাফল্য খুব কমই দেখা যায়। তাই জীবনে কিছু পাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

১১) পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ

সারাদিন বই পুস্তকে মাথা ঢুকিয়ে রাখলেই ভালো ছাত্র হওয়া যায়না। বই পড়ে ভালো রেজাল্ট করার পাশাপাশি খেলাধূলা করা, গান বাজনা করা, গল্পের বই পড়া, টিভি দেখা আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া, নতুন নতুন মানুষের সাথে মেলামেশার মাধ্যমেও একজন ছাত্রের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। তাছাড়াও শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া দাওয়া ও যথেষ্ট ঘুমের প্রয়োজন।

শেষ কথা

ভালো ছাত্র হতে হলে শুধু পড়াশোনা করে গেলেই হবেনা। পড়াশোনার পাশাপাশি বাহিরের কিছু বাড়তি জ্ঞানের বিকাশ ও ঘটাতে হবে। সঠিক শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত করাই হচ্ছে আদর্শ শিক্ষা। আর এজন্যই আদর্শ ছাত্রের মধ্যে উপরিউক্ত গুণাবলী থাকা আবশ্যক।

সূত্র শিক্ষক বাতায়ন