ঢাকা ০৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
বাকেরগঞ্জে পুলিশের উপর হামলার মামলায় দুই নারী গ্রেপ্তার শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিডি ক্লিনের পরিচ্ছন্নতা অভিযান তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতিকের পথ সভায় জনতার ঢল শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহরাব হোসেন নির্বাচনী গনসংযোগ ও পথসভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল উপজেলার শ্রেষ্ঠ হয়েছে তালার ঘোনায় ঘোড়া প্রতীকের পথসভায় জনতার ঢল ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কাঞ্চনের বিদায়, আমিনুরের যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা নলতায় চোর ও গাঁজা ব্যবসায়ী আটক তালার মদনপুর চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলামের ঘোড়া প্রতিকের নির্বাচনী পথসভা অনুষ্ঠিত  বাঘায় ট্রাক-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ – আহত ১

বাংলার প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার 

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ১১:১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩
  • ১১৯ জন পড়েছেন ।
১৯৪৭ সাল , দেশ স্বাধীন হল । প্রযুক্তিবিদ্যার অধ্যয়নে তখন পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য । পশ্চিমবাংলার বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তখন প্রযুক্তিবিদ্যার অধ্যয়নের অন্যতম পীঠস্থান । ১৯৪৭ সালেই পশ্চিমবাংলার তৎকালীন নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দরজা খুলে দিলেন মহিলাদের জন্যে । প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন দুইজন ছাত্রী । ভর্তি হলেন দুজনেই । কিন্তু একজন দ্বিতীয় বর্ষেই কলেজ ছাড়লেন । রইলেন একজন ছাত্রী | ১৯৫১ সালে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করলেন । তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম ইঞ্জিনিয়ার। গোটা ব্যাচে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছাত্রী । বাকি সকলেই ছিলেন ছাত্র ।
তিনি ইলা মজুমদার । জন্ম ১৯৩০ সালের ২৪শে জুলাই বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর গ্রামে । পিতা যতীন্দ্র কুমার মজুমদার ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট । মা ছিলেন গৃহবধূ । যতীন্দ্রবাবু ছোট থেকেই মেয়েকে মুক্ত পরিবেশে বড় করে তোলেন । ১২ বছর বয়সেই ইলা সাইকেল চালাতে পারত । মাত্র ১৬ বছর বয়সে শিখেছিলেন জিপ চালানো। খুলনায় তিনি নবম শ্রেণী অবধি পড়াশোনা করেন । এরপর ১৯৪৫ সালে ইলাদের পুরো পরিবার কলকাতায় চলে আসে । সেই বছর ইলা স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি । ভর্তি হন পরের বছর । দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন আশুতোষ কলেজে । সেখান থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি তে উত্তীর্ণ হন ।
এরই মধ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইলা ভর্তি হন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে । প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম দরকার বলে অধ্যক্ষ তাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে নিষেধ করেন । শেষে ইলা ভর্তি হন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য তিনি ডাক্তারি পড়ার সুযোগও পেয়েছিলেন কিন্তু যাননি । তিনিই ছিলেন ওই কলেজের প্রথম মহিলা ছাত্রী তথা বাংলার প্রথম ইঞ্জিনিয়ার । প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার । তখন ছাত্রীদের জন্যে আলাদা হোস্টেল ছিল না তাই ইলা মজুমদার থাকতেন লাইব্রেরির বাম প্রান্তের একটি ঘরে । সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পুলিন বিহারী ঘোষ এই সময় তার পাশে দাঁড়ান । কলেজে তিনিই ছিলেন ইলার অভিভাবক ।
১৯৫১ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হলেন ইলা। তারপর ট্রেনিং করতে যান গ্লাসগো । ট্রেনিং শেষে ভারতে ফিরে এসে দেরাদুনের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ দেন । তিনি ভারতের প্রথম মহিলা যিনি ভারী যন্ত্রাংশ তৈরীর কারখানায় কাজ করেছেন। সেই সময় ইলা থাকতেন স্টাফ কোয়ার্টারে । ওখানে ছয় মাস চাকরি করার পর দিল্লি পলিটেকনিক কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন । এরপর কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ জুট টেকনোলজিতে লেকচারার ছিলেন তিনি। কলকাতার প্রথম মহিলা পলিটেকনিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ইলা মজুমদার ছিলেন ওই কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল । তার কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে ১৯৮৫ তে জাতিসংঘের তরফ থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা শহরে একটি মহিলা পলিটেকনিক কলেজ খোলার। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না। পরে অবশ্য তিনি সাফল্যের সঙ্গেই কাজটি সম্পন্ন করেন।
ইলা মজুমদার ছিলেন ব্যতিক্রমী এক মহিলা। পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোয় এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম গড়ে তুলেছেন ইতিহাস। আমাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য..
Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

বাকেরগঞ্জে পুলিশের উপর হামলার মামলায় দুই নারী গ্রেপ্তার

বাংলার প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার 

পোস্ট করা হয়েছে : ১১:১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩
১৯৪৭ সাল , দেশ স্বাধীন হল । প্রযুক্তিবিদ্যার অধ্যয়নে তখন পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য । পশ্চিমবাংলার বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তখন প্রযুক্তিবিদ্যার অধ্যয়নের অন্যতম পীঠস্থান । ১৯৪৭ সালেই পশ্চিমবাংলার তৎকালীন নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দরজা খুলে দিলেন মহিলাদের জন্যে । প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন দুইজন ছাত্রী । ভর্তি হলেন দুজনেই । কিন্তু একজন দ্বিতীয় বর্ষেই কলেজ ছাড়লেন । রইলেন একজন ছাত্রী | ১৯৫১ সালে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করলেন । তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম ইঞ্জিনিয়ার। গোটা ব্যাচে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছাত্রী । বাকি সকলেই ছিলেন ছাত্র ।
তিনি ইলা মজুমদার । জন্ম ১৯৩০ সালের ২৪শে জুলাই বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর গ্রামে । পিতা যতীন্দ্র কুমার মজুমদার ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট । মা ছিলেন গৃহবধূ । যতীন্দ্রবাবু ছোট থেকেই মেয়েকে মুক্ত পরিবেশে বড় করে তোলেন । ১২ বছর বয়সেই ইলা সাইকেল চালাতে পারত । মাত্র ১৬ বছর বয়সে শিখেছিলেন জিপ চালানো। খুলনায় তিনি নবম শ্রেণী অবধি পড়াশোনা করেন । এরপর ১৯৪৫ সালে ইলাদের পুরো পরিবার কলকাতায় চলে আসে । সেই বছর ইলা স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি । ভর্তি হন পরের বছর । দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন আশুতোষ কলেজে । সেখান থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি তে উত্তীর্ণ হন ।
এরই মধ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইলা ভর্তি হন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে । প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম দরকার বলে অধ্যক্ষ তাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে নিষেধ করেন । শেষে ইলা ভর্তি হন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য তিনি ডাক্তারি পড়ার সুযোগও পেয়েছিলেন কিন্তু যাননি । তিনিই ছিলেন ওই কলেজের প্রথম মহিলা ছাত্রী তথা বাংলার প্রথম ইঞ্জিনিয়ার । প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার । তখন ছাত্রীদের জন্যে আলাদা হোস্টেল ছিল না তাই ইলা মজুমদার থাকতেন লাইব্রেরির বাম প্রান্তের একটি ঘরে । সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পুলিন বিহারী ঘোষ এই সময় তার পাশে দাঁড়ান । কলেজে তিনিই ছিলেন ইলার অভিভাবক ।
১৯৫১ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হলেন ইলা। তারপর ট্রেনিং করতে যান গ্লাসগো । ট্রেনিং শেষে ভারতে ফিরে এসে দেরাদুনের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ দেন । তিনি ভারতের প্রথম মহিলা যিনি ভারী যন্ত্রাংশ তৈরীর কারখানায় কাজ করেছেন। সেই সময় ইলা থাকতেন স্টাফ কোয়ার্টারে । ওখানে ছয় মাস চাকরি করার পর দিল্লি পলিটেকনিক কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন । এরপর কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ জুট টেকনোলজিতে লেকচারার ছিলেন তিনি। কলকাতার প্রথম মহিলা পলিটেকনিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ইলা মজুমদার ছিলেন ওই কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল । তার কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে ১৯৮৫ তে জাতিসংঘের তরফ থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা শহরে একটি মহিলা পলিটেকনিক কলেজ খোলার। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না। পরে অবশ্য তিনি সাফল্যের সঙ্গেই কাজটি সম্পন্ন করেন।
ইলা মজুমদার ছিলেন ব্যতিক্রমী এক মহিলা। পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোয় এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম গড়ে তুলেছেন ইতিহাস। আমাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য..