বাবুল সরদার, বাগেরহাট
বাগেরহাটের সর্বত্র দীর্ঘ ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত স্পষ্ট। ১৮ লক্ষ লোক অধ্যুষিত এ জেলা অধিকাংশ পরিবার রেমালের আঘাতে কমবেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বিদ্যুৎ, মৎস্য, কৃষি, শিক্ষা, প্রাণীসম্পদ, যোগাযোগ, ব্যবসা, বাঁধ, জীব বৈচিত্র্য, সরকারী-আধা সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোসহ সকল ক্ষেত্রে ক্ষতি চিহ্ন স্পষ্ট। আক্ষরিক অর্থে প্রবল ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও আম্পানের পর ঘূর্ণিঝড় রেমালে সুন্দবনসংলগ্ন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়েছে। রক্ষা পায়নি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। যতই সময় গড়াচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে ধ্বংসলীলার ক্ষত।
সরকারী তথ্যে কৃষিতে ক্ষতি ১০৬ কোটি
রেমালের ৪৮ ঘন্টা পরেও এ জেলার মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়া ও সদর উপজেলার অর্ধ শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে আছে। আমনের বীজতলা, পানবরজ, কলা-পেঁপে,মরিচ, শসা, বেগুন, কাকরোল,পটলসহ সব ফসলের ক্ষেত ডুবে রয়েছে। জেলায় ১১ হাজার হেক্টর ফসলী জমি বিধ্বস্থ হয়ে কমপক্ষে ১’শ ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানিয়েছেন।
৪৫ হাজার বাড়ি ঘর বিধ্বস্থ অসংখ্য গাছ-গাছালিসহ ১০ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আরও ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের ধানসাগর গ্রামে ঘূর্ণিঝড়ে গাছ চাপা পড়ে ফজিলা বেগম নামের এক নারী নিহত হন।
জেলার বিভিন্ন সড়কের প্রায় ১২ কি:মি: সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকার ক্ষতি
বাগেরহাট জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটন বলেন, অতিরিক্ত জলচ্ছাসে ও প্রবল বৃষ্টিতে এ জেলার ২ হাজারের বেশী ব্যবসায়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে মালামাল ভিজে গেছে। এতে কয়েক শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মোড়েলগঞ্জ পৌর সভার মেয়র মনিরুল হক তালুকদার বলেন, শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে কোটি কোটি টাকার মালামাল ভিজে গেছে। এমন দীর্ঘ ঘুর্ণিঝড় ও পানির চাপ জীবনে দেখিনি। এখনও পানিতে তলিয়ে আছে শহর-গ্রাম। উঁচু দালানের নিচেও পানি জমে আছে।’ বাগেরহাট বিসিকের ব্যবসায়ী কমল আাঁশ জানান, তাঁর ১০ লাখ টাকার ডাল-ছোলা ভিজে নষ্ট হয়ে গেচে। তাঁর ভাষায়, এখানে সবাই এমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।” এছাড়া ২ শতাধিক পোল্ট্রি খামার মারত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
সুন্দরবনের প্রাণ বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি
অনুরূপ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দর বনের প্রাণ প্রকৃতির মারত্মক ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক মৃত হরিনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গাছগাছালি ছাড়াও এ বনের ৬ কোটি টাকার অবকাঠামো ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে বলে প্রধান বন সংরক্ষক মো: আমীর হোসাইন চৌধুরী জানিয়েছেন। জীব বৈচিত্রের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে কাজ চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাঃ খালিদ হোসেন বলেন, এই ঝড়ে ৫ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪৫ হাজার ঘর বাড়ি। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দিচ্ছি। উপজেলা প্রশাসনকে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৯ লাখ টাকা, ১১ হাজার কেজি চিড়া, ৭শ কেজি গুড় ও ২০ হাজার প্যাকেট বিস্কুট দিয়েছি। দপ্তর অনুযায়ী আরও সহায়তার জন্য তালিকা হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।