ঢাকা ০৯:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

জনগণই বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:২৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩
  • ১৬৩ জন পড়েছেন ।

হীরেন পন্ডিত
১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লাখ মা বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননত্রেী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। গত ১৫ বছরে অবিশ্বাস্য উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশের। কিন্তু সেটি সহজ বিষয় ছিলোনা। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সবসময় বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এসব কিছুই মোকাবিলা করে চলেছে এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ক্রমশ সচেষ্ট হচ্ছে। বিশ্বপরিম-লে বাংলাদেশের অনেক বন্ধু ও সহযোগী রয়েছে। কিন্তু অপতথ্য-অপপ্রচার এবং উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিভিন্ন কর্মকা- দেশকে নানা সমস্যার মধ্যে ফেলছে।

৫২ বছর পর বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছে উন্নয়নের মডেল হিসেবে। সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করার মাধ্যমে। আজ বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের আদর্শকে সামনে নিয়ে সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয় এটিকে পররাষ্ট্র নীতির মূল বিষয় হিসেবে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিতেও সাফল্য অর্জন করছে। বাংলাদেশের অব্যাহত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্ব নেতবৃন্দকে বিস্মিত করেছে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সমাজে বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সবসময় অপপ্রচারের শিকার হয়েছে তবে সরকার কূটনৈতিক মিশনগুলো ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে এ বিষয়গুলো নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনাকারী দেশগুলোর উদ্বেগগুলোকে বাংলাদেশকে গুরুত্বের সাথে মোকাবিলা করা প্রয়োজন এবং প্রকৃত সত্য তুলে ধরে এই উদ্বেগ এবং দেশি-বিদেশি অপপ্রচার রোধ করতে হবে।
বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল দেশ হিসেবে এটিই এখন সবার অঙ্গীকার হওয়া উচিত। তবে এদেশের জনগণ এই সমস্ত বিভ্রান্তি, দেশি-বিদেশি অপপ্রচারের মোক্ষম জবাব সবসময় দিয়ে এসছে এখনো দিয়ে যাচ্ছে এটিই সবচেয়ে আশার কথা। বিদেশি লবিং অনেক সময় বাংলাদেশের সাফল্য ও কৃতিত্বকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিকৃত করার মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা করে। বিদেশি আইনজীবী ও লবিস্টদের উদ্দেশ্যমূলক বিকৃতি ও বিভ্রান্তিকেও চালেঞ্জ করার দরকার আছে। বাংলাদেশ সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। সম্প্রতি ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা।
একটি গতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে। তিনি আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সে দেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ নিজেদের অবস্থান “খুবই স্পষ্ট করে” যুক্তরাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরার বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করছেন যে আমেরিকা যাতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশী চাপ না দেয়, সেই বার্তাই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে ভারত। ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পরে শুক্রবার বিকেলে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেখানেই এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি আমরা। তৃতীয় কোনও দেশের নীতিমালা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করার জায়গা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেদেশের মানুষ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ‘এক বন্ধু এবং সঙ্গী দেশ হিসাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাই আমরা। একটি গতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে,” জানান মি. কোয়াত্রা। তিনি একটু জোর দিয়েই বলেন, “বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিণতি নিয়ে আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি, আমরা যেভাবে পরিণতি পর্যালোচনা করি, সেটা খুব স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি।” বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের এই অবস্থান নতুন নয়। কিš যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেভাবে নানা মন্তব্য করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা, তার বিপরীতে গিয়ে ‘তাদের’ দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে মার্কিন মন্ত্রীদের সামনে তুলে ধরার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পরে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যুক্তরাষ্টের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন করা হয়নি।
বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের নানা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই বৈঠকে ভারত তাদের অবস্থান যে স্পষ্ট করে দিয়েছে, সেটাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। “ভারতের অবস্থান স্পষ্টই ছিল, কিš সেটা ‘খুব স্পষ্ট’ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিবের সামনে তুলে ধরাটা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে আমাদের।” “ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে একটা গতিশীল সরকার থাকা খুবই জরুরি আমাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে। সেদেশের ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে শেখ হাসিনার সরকারের ওপরে নানাভাবে চাপ বাড়াচ্ছে, সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও তারা যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে, সেগুলো তো ঘটনা। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যাতে তারা বেশি মাথা না ঘামায়, সেটা ভারত স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। যদিও যৌথ বিবৃতি জারি করা হলে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানটা জানা যেত।’ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। প্রতিবছর টু প্লাস টু বৈঠক যেমন করছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা, তেমনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর নরেন্দ্র মোদীর মাঝে-মধ্যেই সাক্ষাত হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বন্দ্বে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের মাথা গলানোর কারণে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হুমকির মুখে পড়ছে।’ “ওয়াশিংটন প্রকাশ্যেই হাসিনা সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাসিনা সরকার আর আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে মানবাধিকার ইস্যুতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমেরিকার অবস্থান একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।’ ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক হলেন শেখ হাসিনা। বৈঠকের আগে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) বিশেষজ্ঞ রিক রসো বলেছিলেন, ভারত-মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কেও ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর প্রভাবই কিন্তু বেশি থাকবে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভবারতের দৃষ্টিভঙ্গী আলাদা। “ওদিকে মালদ্বীপে একটি নতুন চীন-পন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছঅবস্থার এমন আশঙ্কা আছে শ্রীলঙ্কা বা নেপালে। ভারতের কাছে এই ইস্যুগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অনেক সরাসরি যুক্ত”, এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনই কথা হয়েছে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়েও, এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। আবার প্রতিরক্ষা খাতেও দুই দেশের সহযোগিতা, যৌথ উৎপাদন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ওপর ভরসা করেই বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে এখন জোর আলোচনা সর্বত্র। এর মধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিজেদের ‘ভগবান’ ও অবতার বলে দাবি করে তার কাছে নিজেদের রক্ষার আবেদন জানানো হয়। এমনকি চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন সবাইকে সাহস জোগাচ্ছে- এমনটাও মন্তব্য করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ধন্যবাদ জানান তাদের জন্য অবতার হয়ে আসার জন্য।
বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শব্দ। মানবাধিকারের ব্যবসাও এখন জমজমাট। মানবাধিকার নিয়ে নানা রকম দোকানপাট খোলা হচ্ছে। মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও বেড়েছে। যার ফলে মানবাধিকার পণ্যের পসার এখন জমজমাট। আর বাংলাদেশে কিছু মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকারের লঙ্ঘনের  করুণ এই প্রচারণা করছেন। প্রতিদিন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে আর্তনাদ করছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে তথাকথিত জাতির বিবেকেরা কথা বলবেন, এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যদি শুধুমাত্র একটি সরকার ক্ষমতায় এলেই মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হোন, অন্য সময় যদি মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন তাহলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম একটি বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছিলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ১৫ আগস্টের ঘটনা আর একুশে আগস্টের ঘটনা ভয়াবহতার দিক থেকে একই রকম। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তার একটি বিবৃতিও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেই গবেষকরা দাবি করেন।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের কোনো চাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেবে না বলেই অনেকে মনে করছেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এখন পর্যন্ত কারো কাছেই স্পষ্ট নয়।
সহিংসতা এবং অপতৎপরতা গণতান্ত্রিক, প্রতিযোগিতা বিরোধী, শান্তি বিরোধী এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই অগ্রগতিশীল অবস্থা কাম্য নয়। যদিও স্বাধীনতার পর থেকে সহিংসতা এবং অপতৎপরতা উভয়ই বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও বিভ্রান্তি, অপতৎপরতা সাম্প্রতিক দিনগুলিতে কেবল তার আধিপত্যের উপর একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা একটি ভিন্ন এবং আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সহিংসতা এবং রাজনৈতিক বিরোধীরা সংখ্যালঘুদের এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সরানোর জন্য সরাসরি টার্গেট করা হয়। সহিংসতার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। কিš সংখ্যালঘু ভোটার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সহিংসতার সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘটনাগুলি হল, অক্টোবর ২০০১ নির্বাচন-পরবর্তী হিন্দুদের ওপর রাজনৈতিক ও যৌন সহিংসতা, ২১শে আগস্ট, ২০০৪, আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ নেতাকর্মী নিহত এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ ৫০০ শতাধিক আহত হন। ২০০৫ সারা দেশে বোমা হামলা। সহিংসতার কারণে অনেকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলো। জোরপূর্বক দেশত্যাগ ছিল গণতান্ত্রিক ও অমানবিক। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকেও সন্ত্রাসীরা রেহাই দেয়নি। তিনি ১৯ বার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন।
২০১৩-২০১৬ এর মধ্যে সহিংসতা অব্যাহত ছিল বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এর পেছনে কাজ করেছিলো। আমরা আবার সহিংসতার অনুরূপ নমুনা দেখতে পাচ্ছি, গণপরিবহন পোড়ানো, সাংবাদিকদের মারধর এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এখনো ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী বিভ্রান্তি ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা আপপ্রচার।
আমরা কোনো দেশের প্রভাব দেখতে চাই না, বাংলাদেশ সবাই একটি টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। আমরা সবাই বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা চাই রাজনীতি হোক চিন্তার দ্বন্দ্ব, রাজপথে রক্তাক্ত সংঘর্ষ নয়। সে জায়গায় পৌঁছতে জাতীয়, আঞ্চলিক, আšর্জাতিক আলোচনার দরকার। আমাদের আস্থা আছে সবাই মিলে সেটা অর্জনে সক্ষম হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে সত্যিকারের সুশীল সমাজের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ভাবেন, তাঁরা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে কাজ করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৫২ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কম সময় নয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তি জনগণের শক্তির ওপর ভরসা করে লড়াই করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভ করে দেশকে এগিয়ে যায় আত্মমর্যাদা ও গৌরবে বলীয়ান জাতি হিসেবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য সহকর্মী, বাংলার স্বাধীনতাকামী ছাত্রসমাজ এবং বাংলাদেশের হত-দরিদ্র মানুষের চরম আত্মত্যাগে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আশা করবো বাংলাদেশের কান্ডারি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী পাঁচ বছরের শাসনে তেমন এক সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবেন।
দেশের মহাসংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের কান্ডারি জননেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার লড়াইয়ে সকলে শামিল হবে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টির জন্য, যা হয়তো অনুপ্রাণিত করবে সব ভালো মানুষকে যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন পরম মমতায়।

হীরেন পন্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

জনগণই বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে

পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:২৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩

হীরেন পন্ডিত
১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লাখ মা বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননত্রেী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। গত ১৫ বছরে অবিশ্বাস্য উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশের। কিন্তু সেটি সহজ বিষয় ছিলোনা। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সবসময় বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এসব কিছুই মোকাবিলা করে চলেছে এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ক্রমশ সচেষ্ট হচ্ছে। বিশ্বপরিম-লে বাংলাদেশের অনেক বন্ধু ও সহযোগী রয়েছে। কিন্তু অপতথ্য-অপপ্রচার এবং উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিভিন্ন কর্মকা- দেশকে নানা সমস্যার মধ্যে ফেলছে।

৫২ বছর পর বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছে উন্নয়নের মডেল হিসেবে। সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করার মাধ্যমে। আজ বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের আদর্শকে সামনে নিয়ে সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয় এটিকে পররাষ্ট্র নীতির মূল বিষয় হিসেবে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিতেও সাফল্য অর্জন করছে। বাংলাদেশের অব্যাহত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্ব নেতবৃন্দকে বিস্মিত করেছে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সমাজে বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সবসময় অপপ্রচারের শিকার হয়েছে তবে সরকার কূটনৈতিক মিশনগুলো ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে এ বিষয়গুলো নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনাকারী দেশগুলোর উদ্বেগগুলোকে বাংলাদেশকে গুরুত্বের সাথে মোকাবিলা করা প্রয়োজন এবং প্রকৃত সত্য তুলে ধরে এই উদ্বেগ এবং দেশি-বিদেশি অপপ্রচার রোধ করতে হবে।
বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল দেশ হিসেবে এটিই এখন সবার অঙ্গীকার হওয়া উচিত। তবে এদেশের জনগণ এই সমস্ত বিভ্রান্তি, দেশি-বিদেশি অপপ্রচারের মোক্ষম জবাব সবসময় দিয়ে এসছে এখনো দিয়ে যাচ্ছে এটিই সবচেয়ে আশার কথা। বিদেশি লবিং অনেক সময় বাংলাদেশের সাফল্য ও কৃতিত্বকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিকৃত করার মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা করে। বিদেশি আইনজীবী ও লবিস্টদের উদ্দেশ্যমূলক বিকৃতি ও বিভ্রান্তিকেও চালেঞ্জ করার দরকার আছে। বাংলাদেশ সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। সম্প্রতি ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা।
একটি গতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে। তিনি আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সে দেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ নিজেদের অবস্থান “খুবই স্পষ্ট করে” যুক্তরাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরার বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করছেন যে আমেরিকা যাতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশী চাপ না দেয়, সেই বার্তাই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে ভারত। ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পরে শুক্রবার বিকেলে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেখানেই এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি আমরা। তৃতীয় কোনও দেশের নীতিমালা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করার জায়গা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেদেশের মানুষ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ‘এক বন্ধু এবং সঙ্গী দেশ হিসাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাই আমরা। একটি গতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে,” জানান মি. কোয়াত্রা। তিনি একটু জোর দিয়েই বলেন, “বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিণতি নিয়ে আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি, আমরা যেভাবে পরিণতি পর্যালোচনা করি, সেটা খুব স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি।” বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের এই অবস্থান নতুন নয়। কিš যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেভাবে নানা মন্তব্য করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা, তার বিপরীতে গিয়ে ‘তাদের’ দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে মার্কিন মন্ত্রীদের সামনে তুলে ধরার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পরে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যুক্তরাষ্টের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন করা হয়নি।
বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের নানা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই বৈঠকে ভারত তাদের অবস্থান যে স্পষ্ট করে দিয়েছে, সেটাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। “ভারতের অবস্থান স্পষ্টই ছিল, কিš সেটা ‘খুব স্পষ্ট’ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিবের সামনে তুলে ধরাটা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে আমাদের।” “ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে একটা গতিশীল সরকার থাকা খুবই জরুরি আমাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে। সেদেশের ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে শেখ হাসিনার সরকারের ওপরে নানাভাবে চাপ বাড়াচ্ছে, সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও তারা যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে, সেগুলো তো ঘটনা। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যাতে তারা বেশি মাথা না ঘামায়, সেটা ভারত স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। যদিও যৌথ বিবৃতি জারি করা হলে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানটা জানা যেত।’ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। প্রতিবছর টু প্লাস টু বৈঠক যেমন করছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা, তেমনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর নরেন্দ্র মোদীর মাঝে-মধ্যেই সাক্ষাত হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বন্দ্বে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের মাথা গলানোর কারণে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হুমকির মুখে পড়ছে।’ “ওয়াশিংটন প্রকাশ্যেই হাসিনা সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাসিনা সরকার আর আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে মানবাধিকার ইস্যুতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমেরিকার অবস্থান একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।’ ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক হলেন শেখ হাসিনা। বৈঠকের আগে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) বিশেষজ্ঞ রিক রসো বলেছিলেন, ভারত-মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কেও ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর প্রভাবই কিন্তু বেশি থাকবে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভবারতের দৃষ্টিভঙ্গী আলাদা। “ওদিকে মালদ্বীপে একটি নতুন চীন-পন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছঅবস্থার এমন আশঙ্কা আছে শ্রীলঙ্কা বা নেপালে। ভারতের কাছে এই ইস্যুগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অনেক সরাসরি যুক্ত”, এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনই কথা হয়েছে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়েও, এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। আবার প্রতিরক্ষা খাতেও দুই দেশের সহযোগিতা, যৌথ উৎপাদন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ওপর ভরসা করেই বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে এখন জোর আলোচনা সর্বত্র। এর মধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিজেদের ‘ভগবান’ ও অবতার বলে দাবি করে তার কাছে নিজেদের রক্ষার আবেদন জানানো হয়। এমনকি চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন সবাইকে সাহস জোগাচ্ছে- এমনটাও মন্তব্য করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ধন্যবাদ জানান তাদের জন্য অবতার হয়ে আসার জন্য।
বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শব্দ। মানবাধিকারের ব্যবসাও এখন জমজমাট। মানবাধিকার নিয়ে নানা রকম দোকানপাট খোলা হচ্ছে। মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও বেড়েছে। যার ফলে মানবাধিকার পণ্যের পসার এখন জমজমাট। আর বাংলাদেশে কিছু মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকারের লঙ্ঘনের  করুণ এই প্রচারণা করছেন। প্রতিদিন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে আর্তনাদ করছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে তথাকথিত জাতির বিবেকেরা কথা বলবেন, এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যদি শুধুমাত্র একটি সরকার ক্ষমতায় এলেই মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হোন, অন্য সময় যদি মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন তাহলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম একটি বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছিলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ১৫ আগস্টের ঘটনা আর একুশে আগস্টের ঘটনা ভয়াবহতার দিক থেকে একই রকম। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তার একটি বিবৃতিও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেই গবেষকরা দাবি করেন।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের কোনো চাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেবে না বলেই অনেকে মনে করছেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এখন পর্যন্ত কারো কাছেই স্পষ্ট নয়।
সহিংসতা এবং অপতৎপরতা গণতান্ত্রিক, প্রতিযোগিতা বিরোধী, শান্তি বিরোধী এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই অগ্রগতিশীল অবস্থা কাম্য নয়। যদিও স্বাধীনতার পর থেকে সহিংসতা এবং অপতৎপরতা উভয়ই বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও বিভ্রান্তি, অপতৎপরতা সাম্প্রতিক দিনগুলিতে কেবল তার আধিপত্যের উপর একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা একটি ভিন্ন এবং আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সহিংসতা এবং রাজনৈতিক বিরোধীরা সংখ্যালঘুদের এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সরানোর জন্য সরাসরি টার্গেট করা হয়। সহিংসতার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। কিš সংখ্যালঘু ভোটার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সহিংসতার সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘটনাগুলি হল, অক্টোবর ২০০১ নির্বাচন-পরবর্তী হিন্দুদের ওপর রাজনৈতিক ও যৌন সহিংসতা, ২১শে আগস্ট, ২০০৪, আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ নেতাকর্মী নিহত এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ ৫০০ শতাধিক আহত হন। ২০০৫ সারা দেশে বোমা হামলা। সহিংসতার কারণে অনেকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলো। জোরপূর্বক দেশত্যাগ ছিল গণতান্ত্রিক ও অমানবিক। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকেও সন্ত্রাসীরা রেহাই দেয়নি। তিনি ১৯ বার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন।
২০১৩-২০১৬ এর মধ্যে সহিংসতা অব্যাহত ছিল বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এর পেছনে কাজ করেছিলো। আমরা আবার সহিংসতার অনুরূপ নমুনা দেখতে পাচ্ছি, গণপরিবহন পোড়ানো, সাংবাদিকদের মারধর এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এখনো ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী বিভ্রান্তি ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা আপপ্রচার।
আমরা কোনো দেশের প্রভাব দেখতে চাই না, বাংলাদেশ সবাই একটি টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। আমরা সবাই বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা চাই রাজনীতি হোক চিন্তার দ্বন্দ্ব, রাজপথে রক্তাক্ত সংঘর্ষ নয়। সে জায়গায় পৌঁছতে জাতীয়, আঞ্চলিক, আšর্জাতিক আলোচনার দরকার। আমাদের আস্থা আছে সবাই মিলে সেটা অর্জনে সক্ষম হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে সত্যিকারের সুশীল সমাজের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ভাবেন, তাঁরা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে কাজ করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৫২ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কম সময় নয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তি জনগণের শক্তির ওপর ভরসা করে লড়াই করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভ করে দেশকে এগিয়ে যায় আত্মমর্যাদা ও গৌরবে বলীয়ান জাতি হিসেবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য সহকর্মী, বাংলার স্বাধীনতাকামী ছাত্রসমাজ এবং বাংলাদেশের হত-দরিদ্র মানুষের চরম আত্মত্যাগে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আশা করবো বাংলাদেশের কান্ডারি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী পাঁচ বছরের শাসনে তেমন এক সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবেন।
দেশের মহাসংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের কান্ডারি জননেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার লড়াইয়ে সকলে শামিল হবে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টির জন্য, যা হয়তো অনুপ্রাণিত করবে সব ভালো মানুষকে যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন পরম মমতায়।

হীরেন পন্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক