ঢাকা ০২:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই – এ্যাডঃ সৈয়দ ইফতেখার আলী শ্যামনগরে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার উপর ওরিয়েন্টশন আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত 

ঢাকা তথা বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে অবিচ্ছেদ্য একটি নাম,’মধুর ক্যান্টিন’

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৮:১৫:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩
  • ১০৩ জন পড়েছেন ।
ঢাকা তথা বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে অবিচ্ছেদ্য একটি নাম,’মধুর ক্যান্টিন’। ঢাকায় বাসকারী ধনাঢ্য জমিদার, খাজা আহসানউল্লাহ (১৮৪৬-১৯০১) খান বাহাদুর মহোদয়ের উদ্যোগে, ১৮৭৩ সালে স্থাপনাটির নির্মাণ কাজের সূচনা ঘটে। তবে ঠিক কোন সময়ে সমাপ্ত হয় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি (আনুমানিক ১৮৭৫ থেকে ১৮৭৭ সাল ধরে নেয়া যেতে পারে)।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন রচিত, ‘ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ গ্রন্থে হেকিম হাবিবুর রহমানের বরাতে জানা যায়, মধুর ক্যান্টিনটি মূলত দরবার কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর শাহবাগে ‘এশরাত মঞ্জিল’ মূল বাগানবাড়ি ছিল। বর্তমান কলাভবন নির্মাণের সময় ‘এশরাত মঞ্জিল’ ভেঙে ফেলা হয়। উল্লেখ্য, সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে যুক্ত স্থাপনা এই মধুর ক্যান্টিন।
মধুর ক্যান্টিন স্থাপিত হয়েছিল ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার সময় ‘আদিত্যর ক্যান্টিন’ নামে। মধু’দার পিতা আদিত্য চন্দ্র দে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে খাবারের ব্যবসা শুরু করেন।
বর্তমান মেডিক্যাল কলেজ ছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এর পাশে পলাশী থেকে তৎকালীন পুলিশ ব্যারাক প্রত্যাহার করা হলে আদিত্য ব্রিটিশ পুলিশের কাছ থেকে ২০/৩০ টাকায় দু’টি ছনের ঘর কিনে নেন। তার একটিতে ছিল দোকান, আরেকটিতে তিনি থাকতেন। ১৯৩৪-৩৫ সালে মধু’দার বয়স তখন ১৪-১৫ তখন তিনি বাবার দোকানে সাহায্যকারি হিসেবে ক্যান্টিনে যোগ দেন। সে হিসেবে মধু’দার জন্ম ১৯১৯ সালে। মা নীরোদা সুন্দরী দেবী। পৈত্রিক গ্রাম শ্রীনগরের বাবুর দিঘীর পাড় গ্রাম।
১৯৩৯ সালে আদিত্য চন্দ্র দের পরলোকগমন ঘটলে, মধুদা সংসারের দায়িত্ব নেন ও ক্যান্টিন পরিচালনা করতে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ডাকসুর ক্যান্টিন হিসেবে মধুর ক্যান্টিন যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন স্থানান্তরিত হলে মধুর ক্যান্টিন ঠাঁই পায় ঢাকার নবাবদের দরবার হলে।
মধু’দার মৃত্যু হয়েছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরদের হাতে ১৯৭১ সালে গণহত্যার সূচনালগ্নেই। মধুদা থাকতেন জগন্নাথ হলের পাশে। পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানী জল্লাদেরা তাঁর ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে, প্রথমেই নির্মম ভাবে হত্যা করে মধু’দার স্ত্রীকে, গুলি করে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূকে, আরেক কন্যা গুলিবিদ্ধ হন। মধু’দাকেও গুলি করা হয়। এরপর তাঁকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় জগন্নাথ হলের মাঠে। সেখানে অনেকের সঙ্গে লাইন করে দাঁড় করিয়ে পুনর্বার গুলি করা হয়। নিহত সবাইকে মাঠেই বুলডোজার দিয়ে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর ডাকসুর উদ্যোগে ফের আগের স্থানেই চালু করা হয় মধুর ক্যান্টিন। সে সময় ‘মধুর ক্যান্টিনের’ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁর কন্যা প্রতিভা দে। বর্তমানে মধু’দার ছেলেরা পরিচালনা করে আসছেন ১৫০ বছরের ইতিহাস বুকে ধারণকারী স্থাপনা ‘মধুর ক্যান্টিন’।
শাহবাগের দরবার হল তথা বর্তমান মধুর ক্যান্টিনের ছবিটি ১৯০৪ সালে তুলেছিলেন জার্মান আলোকচিত্রী ফ্রেডরিখ ফ্রিৎজ ক্যাপ। স্মর্তব্য, গেল শতকের শুরুর দিকের বেশ কিছু আলোকচিত্র তিনি ধারণ করেছিলেন। আহসানমঞ্জিলের বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তিনি একাধিকবার ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁর তোলা ছবিগুলো টিকে থাকায় আমরা শতবর্ষ আগের ঢাকাকে সামান্য হলেও বুঝতে পারি।
May be an image of Monticello
সূত্র : গেরিলা ১৯৭১
Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ

ঢাকা তথা বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে অবিচ্ছেদ্য একটি নাম,’মধুর ক্যান্টিন’

পোস্ট করা হয়েছে : ০৮:১৫:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩
ঢাকা তথা বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে অবিচ্ছেদ্য একটি নাম,’মধুর ক্যান্টিন’। ঢাকায় বাসকারী ধনাঢ্য জমিদার, খাজা আহসানউল্লাহ (১৮৪৬-১৯০১) খান বাহাদুর মহোদয়ের উদ্যোগে, ১৮৭৩ সালে স্থাপনাটির নির্মাণ কাজের সূচনা ঘটে। তবে ঠিক কোন সময়ে সমাপ্ত হয় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি (আনুমানিক ১৮৭৫ থেকে ১৮৭৭ সাল ধরে নেয়া যেতে পারে)।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন রচিত, ‘ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ গ্রন্থে হেকিম হাবিবুর রহমানের বরাতে জানা যায়, মধুর ক্যান্টিনটি মূলত দরবার কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর শাহবাগে ‘এশরাত মঞ্জিল’ মূল বাগানবাড়ি ছিল। বর্তমান কলাভবন নির্মাণের সময় ‘এশরাত মঞ্জিল’ ভেঙে ফেলা হয়। উল্লেখ্য, সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে যুক্ত স্থাপনা এই মধুর ক্যান্টিন।
মধুর ক্যান্টিন স্থাপিত হয়েছিল ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার সময় ‘আদিত্যর ক্যান্টিন’ নামে। মধু’দার পিতা আদিত্য চন্দ্র দে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে খাবারের ব্যবসা শুরু করেন।
বর্তমান মেডিক্যাল কলেজ ছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এর পাশে পলাশী থেকে তৎকালীন পুলিশ ব্যারাক প্রত্যাহার করা হলে আদিত্য ব্রিটিশ পুলিশের কাছ থেকে ২০/৩০ টাকায় দু’টি ছনের ঘর কিনে নেন। তার একটিতে ছিল দোকান, আরেকটিতে তিনি থাকতেন। ১৯৩৪-৩৫ সালে মধু’দার বয়স তখন ১৪-১৫ তখন তিনি বাবার দোকানে সাহায্যকারি হিসেবে ক্যান্টিনে যোগ দেন। সে হিসেবে মধু’দার জন্ম ১৯১৯ সালে। মা নীরোদা সুন্দরী দেবী। পৈত্রিক গ্রাম শ্রীনগরের বাবুর দিঘীর পাড় গ্রাম।
১৯৩৯ সালে আদিত্য চন্দ্র দের পরলোকগমন ঘটলে, মধুদা সংসারের দায়িত্ব নেন ও ক্যান্টিন পরিচালনা করতে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ডাকসুর ক্যান্টিন হিসেবে মধুর ক্যান্টিন যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন স্থানান্তরিত হলে মধুর ক্যান্টিন ঠাঁই পায় ঢাকার নবাবদের দরবার হলে।
মধু’দার মৃত্যু হয়েছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরদের হাতে ১৯৭১ সালে গণহত্যার সূচনালগ্নেই। মধুদা থাকতেন জগন্নাথ হলের পাশে। পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানী জল্লাদেরা তাঁর ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে, প্রথমেই নির্মম ভাবে হত্যা করে মধু’দার স্ত্রীকে, গুলি করে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূকে, আরেক কন্যা গুলিবিদ্ধ হন। মধু’দাকেও গুলি করা হয়। এরপর তাঁকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় জগন্নাথ হলের মাঠে। সেখানে অনেকের সঙ্গে লাইন করে দাঁড় করিয়ে পুনর্বার গুলি করা হয়। নিহত সবাইকে মাঠেই বুলডোজার দিয়ে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর ডাকসুর উদ্যোগে ফের আগের স্থানেই চালু করা হয় মধুর ক্যান্টিন। সে সময় ‘মধুর ক্যান্টিনের’ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁর কন্যা প্রতিভা দে। বর্তমানে মধু’দার ছেলেরা পরিচালনা করে আসছেন ১৫০ বছরের ইতিহাস বুকে ধারণকারী স্থাপনা ‘মধুর ক্যান্টিন’।
শাহবাগের দরবার হল তথা বর্তমান মধুর ক্যান্টিনের ছবিটি ১৯০৪ সালে তুলেছিলেন জার্মান আলোকচিত্রী ফ্রেডরিখ ফ্রিৎজ ক্যাপ। স্মর্তব্য, গেল শতকের শুরুর দিকের বেশ কিছু আলোকচিত্র তিনি ধারণ করেছিলেন। আহসানমঞ্জিলের বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তিনি একাধিকবার ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁর তোলা ছবিগুলো টিকে থাকায় আমরা শতবর্ষ আগের ঢাকাকে সামান্য হলেও বুঝতে পারি।
May be an image of Monticello
সূত্র : গেরিলা ১৯৭১