মোঃ শেখ শহীদুল্লাহ্ আল আজাদ:
খুলনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ক্যাম্প রূপসার বাগমারার হামিদা মঞ্জিলের কোনো চিহ্ন এখন অবশিষ্ট নেই। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত দ্বিতল ভবনটি কয়েক বছর আগে ভেঙে বিক্রি করে দেয়। ভবনসংলগ্ন জমিতে এখন গড়ে উঠেছে বসতি। স্মৃতি ধরে রাখতে জায়গা দখলমুক্ত করে ‘হামিদা মঞ্জিল স্মৃতি কমপ্লেক্স ও পাঠাগার’ স্থাপনের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে রচিত বিভিন্ন বই থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার পর খুলনা জেলায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য খানজাহান আলী রোডের কবীর মঞ্জিলে বিপ্লবী পরিষদের কমিটি গঠিত হয়। তৎকালীন জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু এই পরিষদের চেয়ারম্যান হন। ২৬ মার্চ থেকে খুলনা শহরে পাকিস্তানি বাহিনীর টহল শুরু হলে ২৮ মার্চ নাগাদ শেখ কামরুজ্জামান টুকু অস্ত্র ও যুবকদের নিয়ে রূপসা নদী পার হয়ে বাগমারা গ্রামের হামিদা মঞ্জিলে ক্যাম্প স্থাপন করেন। রেলওয়ের আওতাধীন দ্বিতল ফাঁকা ভবন হামিদা মঞ্জিলে ১০টি কক্ষ ছিল। বাড়িটির নির্মাতা ছিলেন মরহুম মোসলেম উদ্দীন শেখ। স্ত্রীর নামে বাড়ির নামকরণ করেন। ১৯৬৭ সালে এই বাড়িসহ সম্পত্তি রেল অধিগ্রহণ করে। হামিদা মঞ্জিলে ক্যাম্প স্থাপনের পর দেবীপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়েও ক্যাম্প স্থাপন হয়। সব মিলিয়ে দুই ক্যাম্পে প্রায় ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। উক্ত সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত হামিদা মঞ্জিলের জায়গায় বসতি গড়ে উঠেছে। হামিদা মঞ্জিলের নির্মাতা মোসলেম উদ্দীন শেখের মা আছিয়া খাতুনের কবর রয়েছে সেখানে। কবরের পার্শ্ববর্তী ঘরের দেয়ালে ‘হামিদা মঞ্জিল’ লেখা ছোট একটি ব্যানার টানোনো আছে। প্রভাবশালী চক্রটি হামিদা মঞ্জিল ভাঙার পর ভবন সংলগ্ন জমি কয়েকজনকে অর্থের বিনিময়ে প্লট আকারে দখল বুঝিয়ে দেয়। পরে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ইজারা নিয়ে ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করে কয়েকটি পরিবার। তবে সেখানে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি পুরনো ভবন এখনো বিদ্যমান। উক্ত হামিদা মঞ্জিলের নির্মাতা মোসলেম উদ্দীনের ছেলে অ্যাডভোকেট এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হামিদা মঞ্জিল সংরক্ষণের জন্য তৎকালীন সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দীন ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু সংসদে দাবি তোলেন। আমরাও ভবনটি সংরক্ষণের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করি। একপর্যায়ে ২০১১ সালে কতিপয় ভূমিদস্যু রেলওয়ের সঙ্গে যোগসাজশে হামিদা মঞ্জিল ভেঙে বিক্রি করে দেয়। সেখানকার প্রায় এক একর জমিতে অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘ভবন ভেঙে নেওয়ার সময় আমাদের নেতারা এগিয়ে না আসায় আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি।’ সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সভাপতি সরদার মাহাবুবার রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান বিলীন হয়ে যাবে, এটা কারও কাম্য নয়। সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। উক্ত বিষয়ে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।