ঢাকা ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই – এ্যাডঃ সৈয়দ ইফতেখার আলী শ্যামনগরে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার উপর ওরিয়েন্টশন আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত 

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিতে খাতের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৫:৩৭:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
  • ১০৩ জন পড়েছেন ।

হীরেন পণ্ডিত: উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে শিরোনামে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট সংসদে পাশ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এটি প্রথম বাজেট। প্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে এককভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। যা পরে সংশোধিত বাজেটে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। সংশোধিত চূড়ান্ত বাজেটের তুলনায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ গত অর্থবছরের চেয়ে ৫২৬ কোটি টাকা বেশি পেয়েছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট জাতিতে পরিণত করতে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। ২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে আকার দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এবার বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৭৮৬ কোটি টাকা।
কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পণ্য উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দেশে ল্যাপটপসহ কম্পিউটার পণ্য তৈরিতে ভ্যাট অব্যাহতি ২০২৬ সাল পর্যন্ত বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে মূসক অব্যাহতি প্রদান ও বহাল রাখার ব্যবস্থা করছেন অর্থমন্ত্রী। প্রিন্টার, টোনার কার্টিজ, ইনজেক্ট কার্টিজ, কম্পিউটার প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার, ল্যাটপট, এআইও, ডেস্কটপ, নোটবুক, নোটপ্যাড, ট্যাব, সার্ভার, কিবোর্ড, মাউস, বারকোড-কিউআর কোড স্ক্যানার, র‌্যাম, পিসিবিএ, মাদারবোর্ড, পাওয়ার ব্যাংক, রাউটার, নেটওয়ার্ক সুইচ, মডেম, নেটওয়ার্ক ডিভাইস হাব, স্পিকার, সাউন্ড স্টিটেম, ইয়ারফোন, হেডফোন, এসএসডি, পোর্টেবল এসএসডি, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, পেনড্রাইভ, মাইক্রো এসডি কার্ড, ফ্লাশ মেমোরি কার্ড, সিসিটিভি, ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটর, প্রজেক্টর, ইউএসবি ক্যাবল, ডেটাক্যাবল, ডিজিটাল ওয়াচ, ইরাইটিং প্যাড, লোডেড পিসিবি ও প্রিন্টেড সার্কিড বোর্ড এ ভ্যাট অব্যাহতি বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে বাজেটে।
দেশীয় সফটওয়্যার খাতের সুরক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা সফটওয়্যার শুল্ক ও মূসক বাড়ানো হয়েছে। বাজেটে বলা হয়, কিছু সংখ্যক সফটওয়্যার আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান থাকলেও অধিকাংশ সফটওয়্যারের বিপরীতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। তাই দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ এবং মূসক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মার্কেটপ্লেস আলাদা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বর্তমান অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের সংজ্ঞায় শুধু রিটেইল খুচরা কেনাবেচাকে বোঝানো হয়েছে। এই সংজ্ঞায় অনলাইন মার্কেটপ্লেসের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। এবারের বাজেটে অনলাইনে পণ্য বিক্রির সংজ্ঞায় মার্কেটপ্লেস বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার কথা বলা হয়েছে।
কমছে ইন্টারনেটের দাম এবারের বাজেটে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত অপটিক্যাল ফাইবারে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অপটিক্যাল ফাইবারের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান এবং এ অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এ কারণে ইন্টারনেটের দাম কমবে।
ভ্যাট বেড়েছে দেশে মোবাইল উৎপাদনে। মোবাইল ফোনের উৎপাদক কর্তৃক স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে শূন্য শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ, সংযোজন পর্যায়ে যথাক্রমে ৩ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক আরোপপূর্বক প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রজ্ঞাপনে শর্ত যৌক্তিককরণ এবং নতুন শর্ত সংযোজনের প্রস্তাবও আনা হয়েছে। মোবাইল ফোনের উৎপাদক কর্তৃক স্থানীয় উৎপাদনের খরচ বাড়ার কারণে মোবাইলের দাম বাড়বে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মুঠোফোনে বিল চালান হিসাবে গণ্য করা হবে। বর্তমানে মুঠোফোনে এমএফএস-এর মাধ্যমে, ব্যাংক ও ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া যায়। কিন্তু বিল প্রদানের পর এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ইনভয়েস অনেক ক্ষেত্রে চালান হিসাবে গ্রহণ করা হয় না। এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা বিলের ইনভয়েসকে চালান হিসাবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে এবারের বাজেটে।
ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে দেশে সব পর্যায়ের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকে প্রসারিত ও ত্বরান্বিত করতে আগামী অর্থবছরের মধ্যে একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে কাজ করছে। ডিজিটাল ব্যাংকের রূপরেখা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে।
বাজেটে অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এসব সফটওয়্যার টুলস দেশে তৈরি হয় না। অপারেটিং সিস্টেম ও সিকিউরিটি সফটওয়্যার সব পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ডেটাবেজ এবং ডেভেলপমেন্ট টুলস ব্যবহার করে সব ধরনের সফওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়। তদুপরি, সফটওয়্যারের উৎপাদন ও কাস্টমাইজেশন পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হারে শুল্ক এবং কর বৃদ্ধি পেলে সঙ্গত কারণেই দেশীয় সফটওয়্যার উৎপাদনসহ সব পর্যায়ের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা ব্যবহারকারীদের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) এবং ডাটাবেজ সফটওয়্যার আমদানির ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। ওএস যদি আরও বেশি দামে কিনতে হয়, তাহলে ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের দাম আরও বাড়বে।
বাজেটে মার্কেট প্লেসের ডেফিনেশন দেওয়া হয়েছে ফলে ডিজিটাল ব্যবসাগুলো ভ্যাটের সুবিধা পাবে। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো সুবিধা পাবে। সবাই একটা ক্লারিটির জায়গা থেকে দাঁড়াতে পারবে। দেশে ক্যাবল উৎপাদনে যে সুবিধা রয়েছে কার্যত তা কোনো কাজে আসবে না। ফলে আমাদের গ্রাহককে সেবাদানে খরচ আরও বাড়বে। ২০২৩-২৪ কে বলা হচ্ছে স্মার্ট বাজেট। আর স্মার্ট বাজেটের চারটি মূল স্তম্ভ হলো, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট কানেক্টিভিটি ও স্মার্ট অর্থনীতি পরিশেষে স্মার্ট জনগণ। এ চারটি খাতে উন্নয়ন করতে হলে একজন নাগরিকের চাই সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য চাই স্মার্ট ডিভাইস। কিন্তু স্মার্ট বাজেট এর কথা বললেও স্মার্ট কানেক্টিভিটির অন্তরায় তৈরি করে বাজেটে হ্যান্ডসেট ডিভাইসের ওপর তিন থেকে পাঁচ শতাংশ কর নতুন করে আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া আমদানির ওপর আগের ৫৮ শতাংশের সঙ্গে নতুন করে কর যুক্ত করা হয়েছে। ফলে দেশের যেখানে এখনো ৪৪ শতাংশ নাগরিক ইন্টারনেট কানেক্টিভিটিতে যুক্ত হতে পারেনি তাদের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।
তবে সরকারের সময় উপযোগী উদ্যোগ ব্যবসা সহজসাধ্য করতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে। এর পাশাপাশি এ ব্যাখ্যা প্রদান করায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সহজে ভ্যাট প্রদানকরীকে শনাক্ত করতে পারবে, যা ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়াকে আরও জোরালো করবে।

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিতে খাতের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

পোস্ট করা হয়েছে : ০৫:৩৭:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩

হীরেন পণ্ডিত: উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে শিরোনামে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট সংসদে পাশ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এটি প্রথম বাজেট। প্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে এককভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। যা পরে সংশোধিত বাজেটে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। সংশোধিত চূড়ান্ত বাজেটের তুলনায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ গত অর্থবছরের চেয়ে ৫২৬ কোটি টাকা বেশি পেয়েছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট জাতিতে পরিণত করতে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। ২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে আকার দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এবার বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৭৮৬ কোটি টাকা।
কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পণ্য উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দেশে ল্যাপটপসহ কম্পিউটার পণ্য তৈরিতে ভ্যাট অব্যাহতি ২০২৬ সাল পর্যন্ত বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে মূসক অব্যাহতি প্রদান ও বহাল রাখার ব্যবস্থা করছেন অর্থমন্ত্রী। প্রিন্টার, টোনার কার্টিজ, ইনজেক্ট কার্টিজ, কম্পিউটার প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার, ল্যাটপট, এআইও, ডেস্কটপ, নোটবুক, নোটপ্যাড, ট্যাব, সার্ভার, কিবোর্ড, মাউস, বারকোড-কিউআর কোড স্ক্যানার, র‌্যাম, পিসিবিএ, মাদারবোর্ড, পাওয়ার ব্যাংক, রাউটার, নেটওয়ার্ক সুইচ, মডেম, নেটওয়ার্ক ডিভাইস হাব, স্পিকার, সাউন্ড স্টিটেম, ইয়ারফোন, হেডফোন, এসএসডি, পোর্টেবল এসএসডি, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, পেনড্রাইভ, মাইক্রো এসডি কার্ড, ফ্লাশ মেমোরি কার্ড, সিসিটিভি, ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটর, প্রজেক্টর, ইউএসবি ক্যাবল, ডেটাক্যাবল, ডিজিটাল ওয়াচ, ইরাইটিং প্যাড, লোডেড পিসিবি ও প্রিন্টেড সার্কিড বোর্ড এ ভ্যাট অব্যাহতি বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে বাজেটে।
দেশীয় সফটওয়্যার খাতের সুরক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা সফটওয়্যার শুল্ক ও মূসক বাড়ানো হয়েছে। বাজেটে বলা হয়, কিছু সংখ্যক সফটওয়্যার আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান থাকলেও অধিকাংশ সফটওয়্যারের বিপরীতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। তাই দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ এবং মূসক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মার্কেটপ্লেস আলাদা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বর্তমান অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের সংজ্ঞায় শুধু রিটেইল খুচরা কেনাবেচাকে বোঝানো হয়েছে। এই সংজ্ঞায় অনলাইন মার্কেটপ্লেসের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। এবারের বাজেটে অনলাইনে পণ্য বিক্রির সংজ্ঞায় মার্কেটপ্লেস বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার কথা বলা হয়েছে।
কমছে ইন্টারনেটের দাম এবারের বাজেটে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত অপটিক্যাল ফাইবারে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অপটিক্যাল ফাইবারের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান এবং এ অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এ কারণে ইন্টারনেটের দাম কমবে।
ভ্যাট বেড়েছে দেশে মোবাইল উৎপাদনে। মোবাইল ফোনের উৎপাদক কর্তৃক স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে শূন্য শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ, সংযোজন পর্যায়ে যথাক্রমে ৩ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক আরোপপূর্বক প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রজ্ঞাপনে শর্ত যৌক্তিককরণ এবং নতুন শর্ত সংযোজনের প্রস্তাবও আনা হয়েছে। মোবাইল ফোনের উৎপাদক কর্তৃক স্থানীয় উৎপাদনের খরচ বাড়ার কারণে মোবাইলের দাম বাড়বে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মুঠোফোনে বিল চালান হিসাবে গণ্য করা হবে। বর্তমানে মুঠোফোনে এমএফএস-এর মাধ্যমে, ব্যাংক ও ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া যায়। কিন্তু বিল প্রদানের পর এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ইনভয়েস অনেক ক্ষেত্রে চালান হিসাবে গ্রহণ করা হয় না। এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা বিলের ইনভয়েসকে চালান হিসাবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে এবারের বাজেটে।
ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে দেশে সব পর্যায়ের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকে প্রসারিত ও ত্বরান্বিত করতে আগামী অর্থবছরের মধ্যে একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে কাজ করছে। ডিজিটাল ব্যাংকের রূপরেখা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে।
বাজেটে অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এসব সফটওয়্যার টুলস দেশে তৈরি হয় না। অপারেটিং সিস্টেম ও সিকিউরিটি সফটওয়্যার সব পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ডেটাবেজ এবং ডেভেলপমেন্ট টুলস ব্যবহার করে সব ধরনের সফওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়। তদুপরি, সফটওয়্যারের উৎপাদন ও কাস্টমাইজেশন পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হারে শুল্ক এবং কর বৃদ্ধি পেলে সঙ্গত কারণেই দেশীয় সফটওয়্যার উৎপাদনসহ সব পর্যায়ের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা ব্যবহারকারীদের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) এবং ডাটাবেজ সফটওয়্যার আমদানির ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। ওএস যদি আরও বেশি দামে কিনতে হয়, তাহলে ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের দাম আরও বাড়বে।
বাজেটে মার্কেট প্লেসের ডেফিনেশন দেওয়া হয়েছে ফলে ডিজিটাল ব্যবসাগুলো ভ্যাটের সুবিধা পাবে। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো সুবিধা পাবে। সবাই একটা ক্লারিটির জায়গা থেকে দাঁড়াতে পারবে। দেশে ক্যাবল উৎপাদনে যে সুবিধা রয়েছে কার্যত তা কোনো কাজে আসবে না। ফলে আমাদের গ্রাহককে সেবাদানে খরচ আরও বাড়বে। ২০২৩-২৪ কে বলা হচ্ছে স্মার্ট বাজেট। আর স্মার্ট বাজেটের চারটি মূল স্তম্ভ হলো, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট কানেক্টিভিটি ও স্মার্ট অর্থনীতি পরিশেষে স্মার্ট জনগণ। এ চারটি খাতে উন্নয়ন করতে হলে একজন নাগরিকের চাই সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য চাই স্মার্ট ডিভাইস। কিন্তু স্মার্ট বাজেট এর কথা বললেও স্মার্ট কানেক্টিভিটির অন্তরায় তৈরি করে বাজেটে হ্যান্ডসেট ডিভাইসের ওপর তিন থেকে পাঁচ শতাংশ কর নতুন করে আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া আমদানির ওপর আগের ৫৮ শতাংশের সঙ্গে নতুন করে কর যুক্ত করা হয়েছে। ফলে দেশের যেখানে এখনো ৪৪ শতাংশ নাগরিক ইন্টারনেট কানেক্টিভিটিতে যুক্ত হতে পারেনি তাদের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।
তবে সরকারের সময় উপযোগী উদ্যোগ ব্যবসা সহজসাধ্য করতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে। এর পাশাপাশি এ ব্যাখ্যা প্রদান করায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সহজে ভ্যাট প্রদানকরীকে শনাক্ত করতে পারবে, যা ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়াকে আরও জোরালো করবে।