সময়টা তখন খুব খারাপ করোনা নামক মহামারির ভাইরাস মানুষের কর্মকান্ডকে স্তবির করে দিয়েছিলো। মানুষের হতাশা আর অক্ষমতা আমরা দেখেছি। সেদিন কেউ সাধারন মানুষের পাশে ছিলো না। সবাই লকডাউনে গৃহবন্দি। কালিগঞ্জ করোনা এক্সপার্ট টিমের ৩৬০ জন প্রশিক্ষিত দক্ষ স্বেচ্ছ্বাসেবী ভাই-বোনদের নিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলাকে করোনা থেকে রক্ষ করার জন্য যে ব্রত হাতে নিয়েছিলাম সেটা আজীবন স্মরণ করবে কালিগঞ্জবাসী। আমি ২৪ ঘন্টায় ওই দিনগুলোতে (২ বছর ৬ মাস) ব্যস্ততম সময়গুলোতে প্রতিদিন একাধারে ৩-৪ ঘন্টার বেশি ঘুমিয়েছি কিনা মনে পড়ে না। এ কথাটি এজন্যই বলছি যে যত রাত হোক যখনি প্রতিটি সদস্যকে বা টিম লিডারকে কোন কাজের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি তখনি সেটা তারা করেছে এই সুব্রত সেই অতন্দ্র প্রহরীর একজন মেহনতি মানুষের জন্য লড়াই করা কমরেড। এরা লাশ দাফন, করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নেয়া, অক্সিজেন সরবারহ করা,, বাড়িতে বাজার করে দেয়া, খাবার পানি ও সওদা সংগ্রহ করে দেয়া, আসহায় মানুষের অভাব দুর করা , মানুষকে সচেতন করা, হাত ধৌয়া -মাস্ক পড়া – দূরত্ব বজায় রাখা সহ প্রতিটি রাস্তায় চৈৗকি বসানো। ৫৫ যশোর সেনানিবাসের একজন ব্রিগেডিয়ার আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন আমি সত্যি অবাক হয়ে গেছি আপনার কাজে যখনি আমরা আপনাদের এলাকায় যাই , যেখানে যাই সেখানে আপনারা কাজ করছেন। আপনাদের কথা গুলা আমি আমার সেনাদের সেমিনারে আলাপ করেছি আপনাদের ছবি ও ভিডিও তাদের দেখিয়েছি। আপনারা মানুষের জন্য যা করছেন সত্যি মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমি ওনাকে বলেছিলাম আমাদের ইউএনও কালিগঞ্জ মোঃ মোজাম্মেল হক রাসেল মহোদয় আর আমি আমাদের টিমের জন্য একটা শ্লোগান আইডি কার্ডে ও ইউনিফর্মে ব্যবহার করেছি হয়ত আপনি দেখেছেন “ চল যাই যুদ্ধে / করোনার বিরুদ্ধে” এটাও আমাদের একটা যুদ্ধ ছিলো।
আমরা প্রশাসনের কাজে সহয়তা করেছিলাম। কারন খুলনা বিভাগের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা ও সাতক্ষীরার মধ্যে কারিগঞ্জ উপজেলা সব চেয়ে হুমকিতে ছিলো। আজ সুব্রত বিশ্বাস মারা গেলো আমি ওর একটা বিষয় তখনি লক্ষ্য করেছিলাম যে, মানুষকে বাজারে সচেতন করছে কিন্তু গরিব পরিবারের জন্য আলুভর্তা করে কোন রকম দিন পার করার জন্য ৫০০ গ্রাম আলু কিনে হাতে করে আমাদের টিমের কাজ করছে। ছবিতে দেখবেন সেই সময়ে ২০২১ সালে তার পায়ে ক্ষত হয় যা সারানো যায়নি সে তার পায়ে ন্যাকড়া বেঁধে রেখেছে। টিম লিডারকে (আমিনুর রহমানকে) প্রশ্ন করে ছিলাম তার সমস্যা নিয়ে আমরা তাকে টিমের সহায়তায় চিকিৎসা করিয়েছিলাম সে কিছুটা সুস্থ্য হয়েগিয়েছিলো কিন্তু হাঁটতে পারতো না (গ্যাংগ্রীন ও ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছিলো) তাই তার জন্য একটা দোকান করে দিয়েছিলাম।
আজ সে আমাদের থেকে চির বিদায় নিল—-!!! ভাবছি তার পরিবার ফুটফুটে একটা মেয়ে আর বাবা-মার কথা । মহান আল্লাহ যেন তাকে ও তার পরিবাকে শান্তিতে রাখেন শোক সহিবার সাহস প্রদান করেন।
আজ চাম্পাফুল ইউনিয়ন টিম লিডার মোঃ আমিনুর রহমান সুব্রতকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে সেটা এমন-
KCET এর কর্মঠ স্বেচ্ছাসেবক সুব্রত বিশ্বাস মৃত্যু বরণ করেছে। কালিগঞ্জ উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার রবিউল ইসলাম স্যার, কেসিইটির এডমিন সেলিম শাহরিয়ার, সাংবাদিক এস এম আহমাদুল্লাহ বাচ্চুসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় প্রথম দিকে সুস্থ হয়ে উঠলেও দ্বিতীয় বার সাতক্ষীরা মেডিকেলে চিকিৎসারত অবস্থায় আজ সকালে মৃত্যু বরণ করেছে। তার স্ত্রীও একটি দুর্ঘটনায় মারা যান ৬ বছরের একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান আছে। বাবা মা ও বৃদ্ধ। পরিবারের একমাত্র আশাভরসার সম্বল ছিল বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সুব্রত বিশ্বাস। কিন্তু বিধাতার খেলা অন্যরকম। তিনি তার মত করে খেলেছেন। সে খেলায় আমরাসহ সুব্রত বিশ্বাস হার মানতে বাধ্য হয়েছে। তার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ৮ থেকে ৯ মাস আগে খন্দকার রবিউল ইসলাম স্যারের হাত দিয়ে তাকে ব্যাবসার জিনিসপত্র ক্রয় করে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু সুব্রত বিশ্বাস সময় পেল না ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি কালিগঞ্জ কেসিইটির পক্ষ থেকে। এমন কর্মঠ নিবেদিত প্রাণ স্বেচ্ছাসেবক আর দ্বিতীয় বার আসবে না।
——————————————————————————————————————–
আমরা যেন আমাদের সুব্রতকে না ভুলি পারলে যেন তার গরিব পরিবার ও শিশু কন্যার কন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। সুব্রত যেখানেই থাকবে ভালো থাকবে এই প্রত্যাশা।
সেলিম শাহারীয়ার
এডমিন
কালিগঞ্জ করোনা এক্সপার্ট টিম, সাতক্ষীরা।