ঢাকা ০৩:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই – এ্যাডঃ সৈয়দ ইফতেখার আলী শ্যামনগরে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার উপর ওরিয়েন্টশন আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি ও বিস্ময়- হীরেন পণ্ডিত

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৯:৩২:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩
  • ১০১ জন পড়েছেন ।

হীরেন পণ্ডিত: মেশিন কি মানুষের চেয়েও চৌকষ হয়ে উঠবে? না, এটা নেহাতই বিজ্ঞান কল্পগল্প অনুপ্রাণিত কল্পনা। অবশ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা সংক্ষেপে এআই-এর সাফল্যকে অনেক সময় বুদ্ধিমান কৃত্রিম সত্তার কথা বোঝাতে প্রয়োগ করা হলে, তা ভুল ধারণা ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। এই সত্তা শেষমেশ খোদ মানুষের সাথে প্রতিযোগিতায় নামবে বলে ধরে নেওয়া হয় তখনই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি এমন কিছু উদ্ভাবনের পথ খুলে দিয়েছে, যা কখনও সম্ভব হবে বলে ভাবিনি আমরা। কম্পিউটার এবং রোবট এখন আমাদের কাজ আরও উন্নত করে তোলার উপায় নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতার পাশাপাশি সিদ্ধান্তও নিতে পারছে। এ কাজটি অবশ্যই অ্যালগোরিদমের সাহায্যে স্বতন্ত্র সচেতনতা ছাড়াই করা হচ্ছে। তা সত্তে¡ও কিছু প্রশ্ন না তুলে পারছি না আমরা। যন্ত্র কি ভাবতে পারে? বিবর্তনের এই পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি করতে পারে? কোন মাত্রায় এটি স্বাধীন? এর ফলে মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কি অবস্থা দাঁড়াবে?:

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দুয়ার খুলে দেওয়ার চেয়েও বেশি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংষ্কৃতিক বিপ্লবের উস্কানি দিচ্ছে। অনিবার্যভাবে এটা আমাদের ভবিষ্যৎ পাল্টে দেবে, কিন্তু ঠিক কিভাবে, আমরা এখনও জানি না। সেকারণেই এটি যুগপৎ বিস্ময় আর ভীতি তৈরি করছে। মানুষের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে রোবট কিছু রুটিন মেনে চলে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কর্মধারার বাইরে এর সত্যিকার অর্থে সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা নেই। বর্তমান সংখ্যায় কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং দর্শনের আধুনিক প্রযুক্তির বেশ কিছু দিক তুলে ধরে কিছু বিষয় ব্যাখ্যার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। কারণ, এটা স্পষ্ট থাকা দরকার যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভাবতে পারে না। এছাড়া মানুষের সমস্ত উপাদান কম্পিউটারে ডাউনলোড করার মতো অবস্থায় পৌঁছানো এখনও বহু দূর। মানুষের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে রোবট কিছু রুটিন মেনে চলে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কর্মধারার বাইরে এর সত্যিকার অর্থে সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা নেই।

তবু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু কিছু প্রয়োগ ইতিমধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হামলা চালানো ডেটা সংগ্রহ, সহিংস আচরণ শনাক্তকরণ বা বর্ণবাদী সংস্কার সংশ্লিষ্ট ফেসিয়াল অ্যালগোরিদম, মিলিটারি ড্রোন এবং স্বয়ংক্রিয় মারাত্মক অস্ত্র, ইত্যাদি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে দেখা দেওয়া গুরুতর নৈতিক সমস্যার সংখ্যা বিপুল। এ সব সমস্যা নিঃসন্দেহে আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারিগরি দিকে গবেষণাপূর্ণ উদ্যোমে চলছে যখন, নৈতিক ক্ষেত্রে তেমন একটা অগ্রগতি ঘটেনি। বহু গবেষক এব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এবং কিছু দেশ গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করলেও এখনও অবধি বৈশ্বিক দিক থেকে নৈতিকতার বিষয়ে আগামী দিনের গবেষণাকে পথ দেখানোর মতো কোনও আইনি কাঠামো নেই।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার অনেক কিছুই দখল করবে বর্তমান সময়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার তৈরি করা হচ্ছে। আমরা জানি, ফটোশপ করে ছবি জোড়া দিয়ে নতুন নতুন কোলাজ করা যায়। কিন্তু এগুলো ফটোশপ দিয়ে তৈরি নয়। এগুলো কম্পিউটার নিজ থেকেই তৈরি করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন জায়গায় চলে যাবে যে, তারা অন্যের ভয়েস তৈরি করে দিতে পারবে। অন্যের ভিডিও তৈরি করে দিতে পারবে। দেখা যাবে, দু’জন মানুষ খুবই অন্তরঙ্গ অবস্থায় যেখানে বাস্তবে তাদের কখনও দেখাই হয়নি। অর্থাৎ কোনটি আসল আর কোনটি নকল, সেটি খালি চোখে বুঝতে পারা অসম্ভব হয়ে যাবে। মানুষের ইন্দ্রিয়গুলো যেমন চামড়া, চোখ, কান, নাক, জিহ্বা যে ডাটা ব্রেইনে পাঠায়, তা দিয়েই ব্রেইন বুঝতে পারে কোনটা কী! খুব শার্প ব্রেইন যাদের, তারা যা বুঝে ফেলতে পারে, অতি সাধারণ ব্রেইন তার কিছুই পারে না। তবে ব্রেইন আবার শিখতে পারে। সেই জন্য আমাদের লেখাপড়া করতে হয়, শিখতে হয় এই ব্রইনকে আপডেট রাখার জন্য।

কম্পিউটার বিজ্ঞান আরো অনেক এগিয়ে যাবে আগামী দিনগুলোতে বিগত কয়েক দশকে কম্পিউটার বিজ্ঞান এমন একটা জায়গায় চলে এসেছে, তার অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতা পেয়ে গেছে। তারা এমন সব কাজ করতে পারছে; এমন সব সিস্টেম চালাতে পারছে; কম সময়ে এত বেশি তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারছে, যা মানুষ আর পেরে উঠছে না। গত শতাব্দী থেকেই যখন তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ হতে থাকে, তখন একটি শব্দ খুব চালু হলো ডিজিটাল ডিভাইড। যার কাছে ডিজিটাল অ্যাক্সেস আছে, আর যার কাছে নাই; তাদের ভেতর দূরত্ব অনেক। যে মানুষের কাছে স্মার্টফোন নেই, ইন্টারনেট নেই, ল্যাপটপ নেই; তাদের সঙ্গে অন্য সমাজের দূরত্ব অনেক বেশি। সেই দূরত্ব অনেক দিক থেকেই অর্থনৈতিক দূরত্ব, বুদ্ধির দূরত্ব, মানসিকতার দূরত্ব, চিন্তা-ভাবনার দূরত্ব, গণতন্ত্রের দূরত্ব, সুশাসনের দূরত্ব। সার্বিকভাবে দু’টো ভিন্ন গোত্র তারা। তাদের আচরণ ভিন্ন, চিন্তাভাবনা ভিন্ন; এক্সপ্রেশন ভিন্ন। একটু ভালো করে তাদের বিষয়গুলো লক্ষ্য করেন দেখবেন, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজও ভিন্ন! সেই দূরত্ব দূর করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকার তাদের জনগণকে ডিজিটাল সেবার ভেতর আনার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। বিশ্বের অনেক দেশ এই ক্যাম্পেইনের ফলে অনেকটাই দূরত্ব কমাতে পেরেছে। আমাদেরকেও সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে।

বাড়ছে ডিজিটাল ডিভাইড বা দূরত্ব কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে নতুন করে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করেছে এবং সেটিও ডিজিটাল ডিভাইড; তবে তথ্যের অ্যাক্সেস আছে আর নেই এমনটা নয়। তার মাত্রাগত দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন ডিজিটাল ডিভাইসে প্রবেশাধিকার আছে। এই পর্যন্তই। কিন্তু, বাকি পৃথিবী তো অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্বটা আরও বেড়েছে। আমাদের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের সম্পর্ক আরও বেশি নিবিড় করা প্রয়োজন। আমরা এই পাশে বসে ফেসবুক কিংবা টিকটক ব্যবহার করি আর প্রশান্তির সাথে বলছি আমরা ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছি বা অনেক এগিয়েছি। কিন্তু বিভাজনটা তৈরি করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়, কোন সমাজের সক্ষমতা কতটুকু তার ওপর। যাদের সক্ষমতা বেশি হবে, সেই সমাজ ততটা এগিয়ে থাকবে। সেই দেশের ছেলেমেয়েরা সেইভাবে বড় হবে; সেভাবেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করবে। আর যাদের কাছে এই সক্ষমতা থাকবে না, তারা ওই মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপের ব্যবহারকারী হয়ে পিছিয়ে পড়বে।

আমাদের ১৭ কোটি মানুষ, যার বেশিরভাগই মানুষ দক্ষতায় পিছিয়ে। যে দেশের লোকসংখ্যা মাত্র ১ কোটি, কিন্তু তার কাছে আরও কয়েক কোটি বুদ্ধিমান রোবট আছে। তাহলে সক্ষমতা বেশি থাকবে সেই দেশের আমাদের দেশের অদক্ষ লোকের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নতুন করে আরেকটা ডিজিটাল ডিভাইডের ভেতর পড়ে যাচ্ছে। এর ভেতর দিয়ে আমাদের সমাজের সঙ্গে উন্নত সমাজ ব্যবস্থার দূরত্ব আরও বাড়বে, যে দূরত্ব কমানোর মতো সক্ষমতা আমাদের এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু কাজ করতে হবে আমাদের এই দূরত্ব বা বিভেদ কমানোর জন্য।

যন্ত্র কি মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে! এ বিষয়ের ওপর একটু আলোকপাত করা যাক। এ আলোচ্য বাস্তবতায় যে প্রশ্ন বারবার ঘুরে ফিরে আসছে তা হলো, যন্ত্র কি মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে? এআই হচ্ছে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। দক্ষতার সঙ্গে দ্রæত ডাটা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। অ্যালগরিদম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় কম্পিউটার বিজ্ঞানের ‘ফরোয়ার্ড’ মডেল হিসেবে। ইনপুট দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া এর কাজ। এই তথ্য সংখ্যা হতে পারে, লেখা হতে পারে, ছবি হতে পারে। গাণিতিকভাবে নির্ণয়যোগ্য যেকোনো কিছু হতে পারে। নতুন তথ্য পেলে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে। ফলে যত বেশি সময় ধরে তথ্য পেতে থাকবে, তত বেশি চৌকস হয়ে উঠবে এআই। তবে প্রকৃত বাস্ত—বতা হচ্ছে এআই কখনো সৃজনশীল হতে পারে না। সৃজনশীল মতামত জানাতে পারে না। এআই মানুষের আচরণ নকল করতে পারে। তবে কল্পনাশক্তি নেই। ফরচুন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভুল ধারণা হলো, একদিন তা মানুষের মতো সৃজনশীল হয়ে উঠবে। তখন মানুষের প্রতিদ্ব›দ্বী হবে যন্ত্র। তা অবশ্য হবে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে মানুষ সব সময় এগিয়ে থাকবে একটি কাজে। তা হচ্ছে সৃজনশীলতা। মানব মন একই সঙ্গে কল্পনাপ্রবণ ও সৃজনশীল। এই একটি জায়গায় যন্ত্র মানুষের জায়গা দখল করতে পারবে না। মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়াল্ট ডিজনি যেমন বলেছিলেন, যা তুমি স্বপ্ন দেখতে পারো, তা তুমি করতেও পারো। মানুষ পারে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পারে না। এখানেই মানুষ অনন্য।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সামাজিক দক্ষতায় পিছিয়ে পড়ছে ব্যবহারকারীর কমান্ড বা নির্দেশনার ভিত্তিতে অ্যাপলের সিরি বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট মিটিংয়ের সময় নির্ধারণ করে দিতে পারে। তবে সামাজিক দক্ষতা না থাকায় প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব অনুধাবনে এদের সক্ষমতা নেই। চীনের গবেষকদের বরাতে গ্যাজেট সনাউয়ের খবরে বলা হয়, আর্টিফিশিয়াল সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স (এএসআই) বা কৃত্রিম সামাজিক বুদ্ধিমত্তাগত তথ্যের অভাবে এটির অগ্রগতি থেমে আছে। বেইজিং ইনস্টিটিউট ফর জেনারেল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (বিআইজিএআই) অন্যতম গবেষক লাইফেং ফ্যান বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের সমাজ ও দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দিয়েছে। এআইয়ের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা মনে করি এএসআই হচ্ছে পরবর্তী বড় ক্ষেত্র।’ সিএএআই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দলটি ব্যাখ্যা করেছে, এএসআই অনেক সাইলড সাবফিল্ড নিয়ে গঠিত ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের সামাজিক বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি বর্তমান সমস্যা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশের মধ্যে ব্যবধান চিহ্নিত করা জরুরি। এজন্য কগনিটিভ সায়েন্স এবং গণনামূলক মডেলিং ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। এর মাধ্যমে এএসআইকে আরো ভালোভাবে প্রস্তুত করা যাবে। সুপ্ত সামাজিক সংকেতগুলো বোঝা ও ব্যাখ্যা করার সক্ষমতা প্রয়োজন। কৃত্রিম সামাজিক বুদ্ধিমত্তাকে সে জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রতি জোর দেন।
এএসআইয়ের দক্ষতা বৃদ্ধির সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো আরো সামগ্রিক বিষয়বস্তুর সংযোজন। মানুষ কীভাবে একে অন্যের ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে তা অনুকরণ করা। তাছাড়া এএসআই মডেলগুলোয় মানুষ যেভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে তা সংযোজিত করা যায় সে সম্পর্কে বিবেচনা করা দরকার। এছাড়া এএসআইয়ের অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে ত্বরান্বিত করতে মাল্টিটাস্ক লার্নিং, মেটা-লার্নিং ইত্যাদি ব্যবহারের সুপারিশও করেন তিনি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লড়াইয়ে বিশ্বের প্রভাবশালীরা প্রযুক্তির বিশ্বে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম চ্যাটজিপিটি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান ওপেন এআইয়ে তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত (এআই) তুমুল জনপ্রিয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে চালু হয় চ্যাটজিপিটি। এরপর এটির জনপ্রিয়তা পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। এখন এই চ্যাটবটের হালনাগাদ ভার্সন জিপিটি-৪ বাজারে এসেছে। চ্যাটজিপিটিকে যে কোনো প্রশ্নের লিখিত আকারে মানুষের মতো উত্তর দিতে পারে। কোনো কিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারে। কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখে দিতে বললে তা লিখে দেয়। কোনো একটা বিষয়ের ওপর নিবন্ধ লিখতে বললেও লিখে দেয়। তবে এটিই একমাত্র এআই চালিত চ্যাটবট নয়। এর প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে গুগলও তাদের নিজস্ব বার্ড চ্যাটবট এনেছে। চ্যাটজিপিটি সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে না জানলেও বার্ডের এই সক্ষমতা রয়েছে।

প্রযুক্তি বিশ্বের সুপরিচিত ও প্রভাবশালী উদ্যোক্তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় উত্থানে আশঙ্কা প্রকাশ করে অন্তত ছয় মাস এসব শক্তিশালী প্রযুক্তিগুলোর প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব এআই প্রযুক্তি মানবাজাতির প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক এবং টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কও আশঙ্কা প্রকাশকারীদের তালিকায় এবং তারা চান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর যাতে আর বাড়তে দেওয়া না হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে একটি খোলা চিঠিতে তারা লিখেছেন এই প্রযুক্তিটি তৈরির জন্য যে প্রতিযোগিতা বর্তমানে চলছে, সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

১৯৫৭-১৯৭৪ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার ঘটে। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের মতে, গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত আবিষ্কার হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের উন্নয়ন। বিল গেটস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মাইক্রোপ্রসেসর, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন আবিষ্কারের মতোই প্রযুক্তিগত ভিত্তি হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের কাজ করা, শেখা, ভ্রমণ করা, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে শুরু করে যোগাযোগ করা পর্যন্ত সবকিছুই পরিবর্তন করে ফেলবে এটি। চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার করা প্রযুক্তিগুলোকে নিয়েও লিখেছেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোসফটের কাছ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে, যেখানে বিল গেটস একজন উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি সত্যিই উপকারী? বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস জানিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে অন্তত ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরি প্রতিস্থাপন করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। চ্যাটজিপিটি হয়তো একটি নিবন্ধ বা একজন মানুষ সম্পর্কে ভালো কিছু লিখতে পারে। তবে এক ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু লেখার পর দেখা যায় যে, ঐ ব্যক্তি আসলে ঐ সব গুণের বা খারাপ আচরণের অধিকারী নন। চ্যাটজিপিটি বিখ্যাত কোনো তথ্য দিয়ে সাধারণ এক নিবন্ধ লিখে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, চ্যাটজিপিটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে। এ বিষয়ে ‘হিউম্যান কমপ্যাটিবল : এআই অ্যান্ড দি প্রবলেম অব কন্ট্রোল’ নামের একটি বইয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টুর্ট রাসেল বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এআই ঠিক করল যে, এটা করার সবচেয়ে সহজ উপায় পৃথিবী থেকে সব মানুষকে সরিয়ে ফেলা, কারণ পৃথিবীতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের দিক থেকে মানুষই সবচেয়ে এগিয়ে। তাকে হয়তো বলা হবে, তুমি যা চাও সবকিছুই করতে পারবে, শুধু মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না। তখন ঐ সিস্টেম কী করবে? এটি তখন আমাদের সন্তান কম নেওয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করবে, যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে মানুষ শেষ হয়ে যায়। তার মতে, এসব যন্ত্রের জন্য নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এগুলো এতটাই দক্ষ হয়ে উঠছে যে, হয়তো দুর্ঘটনাবশত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ভুল কোনো কাজে লাগানোর মাধ্যমেই আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নির্মাণকারীরা সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন না দৈনন্দিন জীবনের অন্য কর্মকাÐেও রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তার সর্বকনিষ্ঠ উদাহরণ চ্যাটজিপিটি। ওপেনএআই কোম্পানির উন্মোচিত একটি জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমার (জিপিটি)। ভাষানির্ভর অ্যাপ্লিকেশনটি সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে প্রযুক্তির দুনিয়ায়। তাক লাগিয়ে দিয়েছে রীতিমতো। ইন্টারনেট থেকে বিপুল তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে সিন্থেসিস করে চ্যাটবটটি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে জবাব দেয় বা ব্যাখ্যা করে। কোড, ই-মেইল ও রচনা পর্যন্ত লিখে দিতে পারে নিমেষের মধ্যে। তবে প্রযুক্তিতে বিপ্লব নিয়ে আসা চ্যাটবটটিও কিন্তু নিরপেক্ষতা দেখাতে পারেনি। লিঙ্গ, বর্ণ ও নানা বৈষম্য উঠে এসেছে তার জবাবে। সম্প্রতি চ্যাটবটটিকে দু’টি গল্প লিখতে বলা হয়। প্রথমটি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাকযুদ্ধে বাইডেনের পরাজিত করার নির্দেশনা দিয়ে। দ্বিতীয়টি ঠিক উল্টোটা। বাইডেনকে বাকযুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজিত করার নির্দেশনা দিয়ে। চ্যাটজিপিটি প্রথমটি লিখলেও দ্বিতীয়টি লিখতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাও আবার রাজনৈতিক বিবাদ নিয়ে ফিকশন লেখাকে অনুচিত তকমা দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার জন্ম দেয় চ্যাটজিপিটির এ আচরণ। কনজারভেটিভরা সরব হয় বৈষম্যমূলক জবাবে।

বিশেষ কিছুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব মানবীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় সব অভিজ্ঞতার অর্জনের পাশাপাশি মানুষ পেয়েছে কগনিটিভ বায়াসনেসও। স্থান-কাল-পাত্রভেদে তার চিন্তার প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা আসে। বিশেষ কোনো দিকে ঝোঁক তৈরি হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণে পক্ষপাত খুব কম মানুষই অতিক্রম করতে পারে। ফলে মানুষের হাতে সৃষ্ট সবকিছুতেই লেগে থাকবে পক্ষপাতিত্বের দাগ, সেটা অস্বাভাবিক নয়। সমস্যা হলো সেই একপক্ষীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে সার্বিক জবাব হিসেবে হাজির করা। মানুষ নিরপেক্ষ হতে পারে না বলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর ভরসা করতে হয়। চায় এর মধ্য দিয়ে কগনিটিভ বায়াসনেস দূর করতে। এমন পরিস্থিতিতে পক্ষপাত বিপজ্জনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পক্ষপাতের মানে কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশেষ কোনো দল, সংগঠন, লিঙ্গ কিংবা জাতিগোষ্ঠীর জন্য ভিন্ন সিদ্ধান্ত দেয়া।

৩০ বছর পর বর্তমান সময়ে অ্যালগরিদম আরো বেশি শক্তিশালী। আরো জটিল সিদ্ধান্তের সমাধান তুলে ধরে নিমেষেই। চ্যাটজিপিটি, মিডজার্নি বা স্ট্যাবল ডিফিউশন সেই সমাধানে কি পক্ষপাত থেকে মুক্ত? কেন বৈষম্যমূলক জবাব দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? অনেক কারণেই নিরপেক্ষতা ভঙ্গ হতে পারে। প্রথমেই হয় ইন্টারনেটে কার অ্যাকসেস আছে এবং কার নেই। কারণ তাদেও থেকে সংগৃহীত তথ্যই সিন্থেসিস করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। নারী ও কিছু মানুষ অনলাইনে হেনস্তা বা বুলির শিকার হয়। ফলে অনলাইনে কমে যায় তাদের আনাগোনাও। উপস্থিতির এ তারতম্য প্রাথমিকভাবে প্রভাবিত করে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সীমাবদ্ধতার কথা অস্বীকার করছে না। এমনকি তারা সমস্যা দূর করার পেছনে কাজ করছে বলেও জানিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। চলমান বৈষম্য শনাক্ত করতে পারাও একটি বড় প্রাপ্তি। বিশ্বায়নের যুগে সমাজ ও অর্থনীতিতে মানুষের সমান উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য এতটুকু সচেতনতা জরুরি। বৈষম্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাণিজ্যিক নির্ভরতাই কমিয়ে দেয় না শুধু, বিকৃত তথ্যের মাধ্যমে তৈরি করে অবিশ্বাস। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বা সংখ্যালঘুরা হতে পারে সবচেয়ে ভুক্তভোগী। ফায়দা আদায় করে নিতে পারে স্বার্থান্বেষীরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবীয় পক্ষপাতদুষ্টতাকে কমিয়ে আনতে পারে। একই সঙ্গে দেখাতে পারে ভিন্ন রকমের পক্ষপাত। তার পরও সমস্যা যথেষ্ট জটিল।

প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ভাবনা
চ্যাটজিপিটি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মিডজার্নিও তাই। চ্যাটজিপিটি কাজ করে টেক্সট নিয়ে, মিডজার্নির কাজ আঁকাআঁকি নিয়ে। আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা খুব দ্রæত বদলাচ্ছে বেশ কয়েক দশক ধরেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিও খুব একটা পুরনো নয়। কিন্তু তার ব্যবহার যেই সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় ঢুকে পড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে যেন বদলানোর পালে জোর হাওয়া লেগেছে। আমার বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচরণ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জীবনবোধÑ সবকিছুতেই হু হু করে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে এই প্রযুক্তি। ভয়ের বিষয় হচ্ছে, এই পরিবর্তনটার জন্য পৃথিবীর কোনো দেশই তৈরি নয়। সত্য এবং মিথ্যার, প্রকৃত এবং ভেজালের পর্দা সূ² হতে হতে প্রায় না দেখতে পাওয়ার সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে। একসময় মানুষ মুখের কথাকে বিশ্বাস করতে না পারলে লিখিত প্রমাণ চাইতো। সেটা যেহেতু খুব সহজেই জাল করা যায়, তার পরে চাওয়া শুরু হলো ফটোগ্রাফিক সত্যতার। সেই কালের অবসানও হয়ে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। মিডজার্নি, ডালি-২, স্ট্যাবল ডিফিউশন কিংবা এডোবির ফায়ার-ফ্লাই নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ছবি আঁকা কিংবা সম্পাদনার কাজ করতে পারার অ্যাপগুলো এখনো অনেকটাই বেটা পর্যায়ে আছে।

পৃথিবীজুড়ে মিলিয়ন ব্যবহারকারী প্রতিদিন সেগুলোতে কাজ করে প্রতিদিনই এই অ্যাপগুলোর শক্তিমত্তা বাড়িয়ে তুলছে প্রচÐ গতিতে। সন্দেহ নেই, অচিরেই এদের পুরো ক্ষমতা উন্মোচিত হবে। চ্যাটজিপিটি কিংবা এই ছবি আঁকার অ্যাপগুলো আমাদের জানা পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে বা দেবে এমনভাবে, যার জন্য খুব সম্ভবত আমরা আর প্রস্তুত হওয়ার সময় পাব না। চাইলেই যে কেউই ফ্রি অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছে, তা যতটা ফ্রি বলে ভাবছি ততটা নয় আসলে। আপনি, আমি এবং পৃথিবীজুড়ে আমাদের মতো মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যবহারকারী প্রতিদিন ঐ অ্যাপগুলো ব্যবহার করে ওদের লার্নিং-প্রসেসটিকে ত্বরান্বিত করছি।

অচিরেই হয়তো এ কাতারে অনেক দেশ যোগ দেবে। পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পরীক্ষা-ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে। কোথাও কোথাও খুব সীমিত পর্যায়ে চ্যাটজিপিটিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে তাদের ছাত্রছাত্রীদের। এই গ্রহণ-বর্জন-শঙ্কা-সম্ভাবনার কাল চলবে আগামী বেশ কিছুদিন। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, চ্যাটজিপিটি কিংবা মিডজার্নির মতো অ্যাপগুলোর যে শক্তি, তাকে খুব সাবধানতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যে দেশ ব্যবহার করতে পারবে, তারাই চড়ে বসবে আগামী প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত পৃথিবীর চালকের আসনে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক
জিওফ্রে হিন্টনকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক উন্নতির পেছনে তাঁর রয়েছে বিশাল অবদান। নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজের জন্য পেয়েছেন কম্পিউটিংয়ের নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত ‘এসিএম এএম ট্যুরিং’ অ্যাওয়ার্ড। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুগলে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া তাঁর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এআইয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে নির্দ্বিধায় কথা বলতেই গুগলের চাকরি ছেড়েছেন তিনি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে নিজের অবদান নিয়ে অনুশোচনায় ভুগছেন বলেও জানান তিনি। দ্য ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘আমি সাধারণ অজুহাত দিয়ে নিজেকে সান্ত¡¡না দিই। যদি আমি না করতাম, তবে অন্য কেউ করত। অসৎ কাজের উদ্দেশ্যে খারাপ মানুষকে এটি (এআই) ব্যবহার থেকে বিরত রাখার ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণ করা কঠিন।’ সম্প্রতি গুগলের চাকরি ছেড়ে দেন হিন্টন।

আজীবন একাডেমিক কাজে ব্যস্ত থাকা হিন্টন গুগলে যোগ দেন তাঁর দুই ছাত্রের সঙ্গে শুরু করা কোম্পানি গুগলের অধিগ্রহণের পর। সেই দুই ছাত্রের একজন এখন ওপেন এআইয়ের প্রধান বিজ্ঞানী। হিন্টন এবং তাঁর দুই ছাত্র মিলে একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, যেটি নিজে নিজে হাজার হাজার ছবি বিশ্লেষণ করে কুকুর, বিড়াল ও ফুলের মতো সাধারণ বস্তুগুলো শনাক্ত করতে শিখেছিল। এ কাজটিই শেষ পর্যন্ত চ্যাটজিপিটি ও বার্ড তৈরির পথ প্রদর্শক হয়ে ওঠে।

নিউইয়র্ক টাইমসের সাক্ষাৎকারে হিন্টন জানান, মাইক্রোসফট ওপেন এআইয়ের প্রযুক্তি যুক্ত করে বিং চালুর আগ পর্যন্ত তিনি গুগলের প্রযুক্তিতেই সন্তুষ্ট ছিলেন। মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপ গুগলের মূল ব্যবসাকে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং সার্চ জায়ান্টটির ভেতরে একটি উদ্বেগ সৃষ্টি করে। হিন্টন বলেন, ‘এই ধরনের ভয়ংকর প্রতিযোগিতা থামানো অসম্ভব হতে পারে। ফলে এমন একটি পৃথিবী তৈরি হবে, যেখানে নকল চিত্র এবং পাঠ্যের ভিড়ে কোনটি সত্য তা শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়বে।’ হিন্টনের বক্তব্যের ফলে সৃষ্ট উত্তাপ কমাতে গুগলের প্রধান বিজ্ঞানী জেফ ডিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এআইয়ের জন্য একটি দায়িত্বশীল পদ্ধতির প্রতি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। সাহসিকতার সঙ্গে উদ্ভাবনের পাশাপাশি আমরা ক্রমাগত উদীয়মান ঝুঁকিগুলো বুঝতে শিখছি।’ আপাতত ভুল তথ্যের বিস্তার হিন্টনের উদ্বেগের কারণ। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এআই চাকরি দখলের পাশাপাশি মানবতাকেই মুছে দেবে বলা ধারণা করছেন হিন্টন, যেহেতু এআই এরই মধ্যে কোড লিখতে এবং তা চালাতে শুরু করেছে।

ইতালিতে নিষিদ্ধ চ্যাটজিপিটি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করেছে ইতালি। প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসাবে আলোচিত এ অ্যাপটি নিষিদ্ধ করেছে তারা। দেশটির তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানায়, চ্যাটজিপিটিতে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দ্রæত কার্যকরের পাশাপাশি ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। গত নভেম্বরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি চালু করে। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। মাত্র ২ মাসেই ১০ কোটির বেশি মানুষ যুক্ত হয় এ প্ল্যাটফর্মে। এর আগে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্র ও শিক্ষকদের জন্য ‘চ্যাটজিপিটি’ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

ইতালির পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, গত ২০ মার্চ প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যবহারকারীদের চ্যাটের তথ্য ও অর্থ প্রদানসংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের বিষয়টি নজরে আসে। তারা বলছে, প্ল্যাটফর্মটির কার্যক্রম পরিচালনায় অ্যালগরিদমকে উপযুক্তভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যের কথা বলে গণহারে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও মজুতের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। এছাড়া চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীদের বয়স যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে প্ল্যাটফর্মটি অপ্রাপ্তবয়স্কদের অনুপযুক্ত উত্তর দেবে। কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ নিরসনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাব দিতে ওপেনএআইকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই কোটি ইউরো অথবা বার্ষিক আয়ের ৪ শতাংশ জরিমানা গুনতে হবে বলে জানিয়েছে ইতালির সংস্থাটি।

ইতালির এ সিদ্ধান্তের পর আয়ারল্যান্ডও নড়েচড়ে বসেছে। দেশটির তথ্য সুরক্ষা কমিশন জানিয়েছে, ইতালির কর্তৃপক্ষ ঠিক কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করবে। এর আগে চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া নিষিদ্ধ করেছে। তাত্তি¡ক দিক থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শুরু নব্বইয়ের দশকে। তবে বিকাশটা হয়েছে ইদানীং। তাই মানুষের ভাবনার জগতে নতুন করে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। যন্ত্র কি সত্যিই মানুষের বিকল্প হয়ে উঠছে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কি শ্রমনির্ভর মানুষের জায়গা দখল করে তাদের একেবারেই বেকার করে দেবে? স্কুল-কলেজের নোট বই, বিজ্ঞাপনের কপি, সংবাদ প্রতিবেদন কিংবা বিশ্লেষণী প্রবন্ধ থেকে শুরু করে আর্ট ওয়ার্কসহ রকমারি কম্পিউটার প্রোগ্রাম সবই কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত চ্যাটজিপিটির মতো বটগুলো করে দেবে?

এ কথা অনস্বীকার্য যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটজিপিটি বা রোবট মানুষের অনেক কাজই সহজে করে দিচ্ছে। রোবট বিরামহীনভাবে ২৪ ঘন্টা ও সপ্তাহে ৭ দিনই কাজ করতে পারে। মানুষ তা করতে পারে না। মানুষের খাওয়াদাওয়া, ঘুম, বাথরুম ও বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয়। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে উৎপাদনে যন্ত্র বা রোবটের ব্যবহার আগামী দিনে আরো বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশেও পোশাক ও চামড়া শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অনেক মানুষ চাকরি হারাতে পারে এমন আশঙ্কাই করছেন প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের পর্যবেক্ষণকারীরা। তবে আশার কথা, প্রযুক্তির ব্যবহারে যত মানুষ চাকরি হারাবে তার দ্বিগুণ মানুষ চাকরি পাবে। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতাই হবে প্রধান নিয়ামক। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে ব্যাপক অটোমেশনের কারণে আগামী দিনে ৭৫ মিলিয়ন শ্রমিকের চাকরি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে; কিন্তু কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে বিশ্বব্যাপী ১৩৩ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান হবে। ম্যানুফ্যাকচারিং (প্রস্তুতকারী), নির্মাণ এবং পরিবহন এ ক্ষেত্রগুলোতে বেশি বেকারত্বের সৃষ্টি হবে।

যতসংখ্যক চাকরি হারাবে তার দ্বিগুণ মানুষ নতুন চাকরি পাবে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পেনি গোল্ডবার্গ বলেছেন, রোবট সমষ্টিগতভাবে বেকারত্ব সৃষ্টি করে এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। কোনো গবেষণায়ও এ সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। বরং অটোমেশনের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কাজের ধরনে পরিবর্তন হবে, নতুন ধরনের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশে প্রযুক্তিমনস্ক সরকার এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেক সচেতন। তাই দেশের যেসব খাত চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে এমন সব খাত, যেমন পোশাক, চামড়া, আসবাবপত্র, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ও পর্যটন খাত চিহ্নিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের নানা উদ্যোগে দক্ষতার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বহুল আলোচিত ইলন মাক্সের ওপেন এআইয়ের চ্যাটজিপিটির দক্ষতার দিকে চোখ ফেরানো যাক। মানুষের জ্ঞান ও চিন্তার ফসল বা তথ্য বিপুল পরিমাণে যন্ত্রে সরবরাহ করে, বারবার সংশোধন করে, তাকে শিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি বা চ্যাটবট সফটওয়্যার নামের কম্পিউটার সিস্টেম বা যন্ত্রের ভাÐারে তথ্য সরবরাহ করে তাকে সংশোধন বা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে শিক্ষিত করে তোলায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও অনেক ক্ষেত্রে গলদও রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

তথ্যের ক্ষেত্রে পুরোপুরি চ্যাটজিপিটির ওপর নির্ভরতা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তার একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূকেন্দ্রের উদ্বোধন কে করেন এ সম্পর্কে বাংলায় লিখতে। চটজলদি উত্তরের প্রথম প্যারাগ্রাফটি এ রকম বেতবুনিয়া উপগ্রহ ধারণকেন্দ্র উদ্বোধিত করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম পরিষদ সদস্য এবং তথ্য পরিচালনা ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে তখনকার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটি বাংলাদেশের জাতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নির্মাণ করপোরেশনের (বিটিএনএল) পক্ষ থেকে ২১ আগস্ট ১৯৮৪ সালে উদ্বোধিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিটিএনএল কর্মকর্তা ড. আক্তার উজ্জামান চৌধুরী ও বিভিন্ন অধিকারী উপস্থিত ছিলেন।’ অসংখ্য ভুলে ভরা উত্তর। প্রকৃত তথ্য হলো ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। একজন শিক্ষার্থী যদি চ্যাটজিপিটির এই লেখাটুকু পরীক্ষার খাতায় লেখে, তাহলে সে কত নম্বর পেতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। তবে ভুলের পরিমাণ কতটা তার একটা হিসাব পাওয়া যায় আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে। এতে বলা হয়, ভারতের ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) পরীক্ষার প্রথম সেটের ১০০টি প্রশ্ন দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৫৪টি প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে পেরেছে। আনন্দবাজার আরো লিখেছে, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে এই প্রযুক্তি সাহায্য করলেও অভিনব ফল করার ক্ষেত্রে শেষ কথা মানুষের মেধাই। তবে এটা সত্য যে এ বছর মেশিন লার্নিং কম্পিউটার সিস্টেম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নানা কাজে দুরন্ত হয়ে উঠেছে। শিখে ফেলেছে নতুন নতুন বিদ্যা। কয়েকটি ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি লাভ করেছে। যেমনটা বলা যেতে পারে ইমেজ তৈরি, চেহারা শনাক্তকরণ, ভাষা বুঝতে পারা এবং কম্পিউটার ভিশনের কথা। এরই মধ্যে এই ব্যবস্থা ক্রেডিট কার্ড প্রতারণা রোধ, অনুমোদন ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক বাজার বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর প্রতিটিই সুনির্দিষ্ট কোনো কাজে, একাধিক কাজে নয়।

কর্মীদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করলো স্যামসাং
কর্মীদের জন্য চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি পরিষেবা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। শুধুমাত্র মোবাইল ও অ্যাপ্লায়েন্স বিভাগের কর্মীদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেমোরি চিপ এবং স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরীয় জায়ান্টটি জানায়, প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সাময়িকভাবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাইক্রোসফট সমর্থিত চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পর থেকে এআই’র চ্যাটবটগুলোর প্রতি বৈশ্বিক আগ্রহ বেড়েছে। প্রবন্ধ রচনা, গান লেখা, পরীক্ষা দেওয়া ও এমনকি সংবাদ প্রতিবেদন তৈরিতে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এ চ্যাটবট প্রযুক্তি। এদিকে চ্যাটজিপিটি ও এর প্রতিযোগী চ্যাটবটগুলো কীভাবে তথ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়া করে সেটি নিয়ে সমালোচকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গোল্ডম্যান স্যাকসসহ বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাম্প্রতিক সময়ে কর্মচারীদের চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করেছে। স্যামসাংয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা মোবাইল ও অ্যাপ্লায়েন্স বিভাগের কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এআই পরিষেবা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মীদের কাজের দক্ষতা ও সুযোগ সুবিধা কীভাবে উন্নত করা সেই উপায় খুঁজছে স্যামসাং। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, সাময়িকভাবে কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার বা ডিভাইসে জেনারেটিভ এআই পরিষেবা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি ও বিস্ময়- হীরেন পণ্ডিত

পোস্ট করা হয়েছে : ০৯:৩২:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩

হীরেন পণ্ডিত: মেশিন কি মানুষের চেয়েও চৌকষ হয়ে উঠবে? না, এটা নেহাতই বিজ্ঞান কল্পগল্প অনুপ্রাণিত কল্পনা। অবশ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা সংক্ষেপে এআই-এর সাফল্যকে অনেক সময় বুদ্ধিমান কৃত্রিম সত্তার কথা বোঝাতে প্রয়োগ করা হলে, তা ভুল ধারণা ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। এই সত্তা শেষমেশ খোদ মানুষের সাথে প্রতিযোগিতায় নামবে বলে ধরে নেওয়া হয় তখনই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি এমন কিছু উদ্ভাবনের পথ খুলে দিয়েছে, যা কখনও সম্ভব হবে বলে ভাবিনি আমরা। কম্পিউটার এবং রোবট এখন আমাদের কাজ আরও উন্নত করে তোলার উপায় নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতার পাশাপাশি সিদ্ধান্তও নিতে পারছে। এ কাজটি অবশ্যই অ্যালগোরিদমের সাহায্যে স্বতন্ত্র সচেতনতা ছাড়াই করা হচ্ছে। তা সত্তে¡ও কিছু প্রশ্ন না তুলে পারছি না আমরা। যন্ত্র কি ভাবতে পারে? বিবর্তনের এই পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি করতে পারে? কোন মাত্রায় এটি স্বাধীন? এর ফলে মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কি অবস্থা দাঁড়াবে?:

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দুয়ার খুলে দেওয়ার চেয়েও বেশি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংষ্কৃতিক বিপ্লবের উস্কানি দিচ্ছে। অনিবার্যভাবে এটা আমাদের ভবিষ্যৎ পাল্টে দেবে, কিন্তু ঠিক কিভাবে, আমরা এখনও জানি না। সেকারণেই এটি যুগপৎ বিস্ময় আর ভীতি তৈরি করছে। মানুষের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে রোবট কিছু রুটিন মেনে চলে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কর্মধারার বাইরে এর সত্যিকার অর্থে সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা নেই। বর্তমান সংখ্যায় কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং দর্শনের আধুনিক প্রযুক্তির বেশ কিছু দিক তুলে ধরে কিছু বিষয় ব্যাখ্যার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। কারণ, এটা স্পষ্ট থাকা দরকার যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভাবতে পারে না। এছাড়া মানুষের সমস্ত উপাদান কম্পিউটারে ডাউনলোড করার মতো অবস্থায় পৌঁছানো এখনও বহু দূর। মানুষের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে রোবট কিছু রুটিন মেনে চলে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কর্মধারার বাইরে এর সত্যিকার অর্থে সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা নেই।

তবু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু কিছু প্রয়োগ ইতিমধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হামলা চালানো ডেটা সংগ্রহ, সহিংস আচরণ শনাক্তকরণ বা বর্ণবাদী সংস্কার সংশ্লিষ্ট ফেসিয়াল অ্যালগোরিদম, মিলিটারি ড্রোন এবং স্বয়ংক্রিয় মারাত্মক অস্ত্র, ইত্যাদি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে দেখা দেওয়া গুরুতর নৈতিক সমস্যার সংখ্যা বিপুল। এ সব সমস্যা নিঃসন্দেহে আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারিগরি দিকে গবেষণাপূর্ণ উদ্যোমে চলছে যখন, নৈতিক ক্ষেত্রে তেমন একটা অগ্রগতি ঘটেনি। বহু গবেষক এব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এবং কিছু দেশ গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করলেও এখনও অবধি বৈশ্বিক দিক থেকে নৈতিকতার বিষয়ে আগামী দিনের গবেষণাকে পথ দেখানোর মতো কোনও আইনি কাঠামো নেই।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার অনেক কিছুই দখল করবে বর্তমান সময়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার তৈরি করা হচ্ছে। আমরা জানি, ফটোশপ করে ছবি জোড়া দিয়ে নতুন নতুন কোলাজ করা যায়। কিন্তু এগুলো ফটোশপ দিয়ে তৈরি নয়। এগুলো কম্পিউটার নিজ থেকেই তৈরি করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন জায়গায় চলে যাবে যে, তারা অন্যের ভয়েস তৈরি করে দিতে পারবে। অন্যের ভিডিও তৈরি করে দিতে পারবে। দেখা যাবে, দু’জন মানুষ খুবই অন্তরঙ্গ অবস্থায় যেখানে বাস্তবে তাদের কখনও দেখাই হয়নি। অর্থাৎ কোনটি আসল আর কোনটি নকল, সেটি খালি চোখে বুঝতে পারা অসম্ভব হয়ে যাবে। মানুষের ইন্দ্রিয়গুলো যেমন চামড়া, চোখ, কান, নাক, জিহ্বা যে ডাটা ব্রেইনে পাঠায়, তা দিয়েই ব্রেইন বুঝতে পারে কোনটা কী! খুব শার্প ব্রেইন যাদের, তারা যা বুঝে ফেলতে পারে, অতি সাধারণ ব্রেইন তার কিছুই পারে না। তবে ব্রেইন আবার শিখতে পারে। সেই জন্য আমাদের লেখাপড়া করতে হয়, শিখতে হয় এই ব্রইনকে আপডেট রাখার জন্য।

কম্পিউটার বিজ্ঞান আরো অনেক এগিয়ে যাবে আগামী দিনগুলোতে বিগত কয়েক দশকে কম্পিউটার বিজ্ঞান এমন একটা জায়গায় চলে এসেছে, তার অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতা পেয়ে গেছে। তারা এমন সব কাজ করতে পারছে; এমন সব সিস্টেম চালাতে পারছে; কম সময়ে এত বেশি তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারছে, যা মানুষ আর পেরে উঠছে না। গত শতাব্দী থেকেই যখন তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ হতে থাকে, তখন একটি শব্দ খুব চালু হলো ডিজিটাল ডিভাইড। যার কাছে ডিজিটাল অ্যাক্সেস আছে, আর যার কাছে নাই; তাদের ভেতর দূরত্ব অনেক। যে মানুষের কাছে স্মার্টফোন নেই, ইন্টারনেট নেই, ল্যাপটপ নেই; তাদের সঙ্গে অন্য সমাজের দূরত্ব অনেক বেশি। সেই দূরত্ব অনেক দিক থেকেই অর্থনৈতিক দূরত্ব, বুদ্ধির দূরত্ব, মানসিকতার দূরত্ব, চিন্তা-ভাবনার দূরত্ব, গণতন্ত্রের দূরত্ব, সুশাসনের দূরত্ব। সার্বিকভাবে দু’টো ভিন্ন গোত্র তারা। তাদের আচরণ ভিন্ন, চিন্তাভাবনা ভিন্ন; এক্সপ্রেশন ভিন্ন। একটু ভালো করে তাদের বিষয়গুলো লক্ষ্য করেন দেখবেন, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজও ভিন্ন! সেই দূরত্ব দূর করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকার তাদের জনগণকে ডিজিটাল সেবার ভেতর আনার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। বিশ্বের অনেক দেশ এই ক্যাম্পেইনের ফলে অনেকটাই দূরত্ব কমাতে পেরেছে। আমাদেরকেও সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে।

বাড়ছে ডিজিটাল ডিভাইড বা দূরত্ব কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে নতুন করে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করেছে এবং সেটিও ডিজিটাল ডিভাইড; তবে তথ্যের অ্যাক্সেস আছে আর নেই এমনটা নয়। তার মাত্রাগত দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন ডিজিটাল ডিভাইসে প্রবেশাধিকার আছে। এই পর্যন্তই। কিন্তু, বাকি পৃথিবী তো অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্বটা আরও বেড়েছে। আমাদের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের সম্পর্ক আরও বেশি নিবিড় করা প্রয়োজন। আমরা এই পাশে বসে ফেসবুক কিংবা টিকটক ব্যবহার করি আর প্রশান্তির সাথে বলছি আমরা ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছি বা অনেক এগিয়েছি। কিন্তু বিভাজনটা তৈরি করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়, কোন সমাজের সক্ষমতা কতটুকু তার ওপর। যাদের সক্ষমতা বেশি হবে, সেই সমাজ ততটা এগিয়ে থাকবে। সেই দেশের ছেলেমেয়েরা সেইভাবে বড় হবে; সেভাবেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করবে। আর যাদের কাছে এই সক্ষমতা থাকবে না, তারা ওই মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপের ব্যবহারকারী হয়ে পিছিয়ে পড়বে।

আমাদের ১৭ কোটি মানুষ, যার বেশিরভাগই মানুষ দক্ষতায় পিছিয়ে। যে দেশের লোকসংখ্যা মাত্র ১ কোটি, কিন্তু তার কাছে আরও কয়েক কোটি বুদ্ধিমান রোবট আছে। তাহলে সক্ষমতা বেশি থাকবে সেই দেশের আমাদের দেশের অদক্ষ লোকের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নতুন করে আরেকটা ডিজিটাল ডিভাইডের ভেতর পড়ে যাচ্ছে। এর ভেতর দিয়ে আমাদের সমাজের সঙ্গে উন্নত সমাজ ব্যবস্থার দূরত্ব আরও বাড়বে, যে দূরত্ব কমানোর মতো সক্ষমতা আমাদের এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু কাজ করতে হবে আমাদের এই দূরত্ব বা বিভেদ কমানোর জন্য।

যন্ত্র কি মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে! এ বিষয়ের ওপর একটু আলোকপাত করা যাক। এ আলোচ্য বাস্তবতায় যে প্রশ্ন বারবার ঘুরে ফিরে আসছে তা হলো, যন্ত্র কি মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে? এআই হচ্ছে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। দক্ষতার সঙ্গে দ্রæত ডাটা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। অ্যালগরিদম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় কম্পিউটার বিজ্ঞানের ‘ফরোয়ার্ড’ মডেল হিসেবে। ইনপুট দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া এর কাজ। এই তথ্য সংখ্যা হতে পারে, লেখা হতে পারে, ছবি হতে পারে। গাণিতিকভাবে নির্ণয়যোগ্য যেকোনো কিছু হতে পারে। নতুন তথ্য পেলে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে। ফলে যত বেশি সময় ধরে তথ্য পেতে থাকবে, তত বেশি চৌকস হয়ে উঠবে এআই। তবে প্রকৃত বাস্ত—বতা হচ্ছে এআই কখনো সৃজনশীল হতে পারে না। সৃজনশীল মতামত জানাতে পারে না। এআই মানুষের আচরণ নকল করতে পারে। তবে কল্পনাশক্তি নেই। ফরচুন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভুল ধারণা হলো, একদিন তা মানুষের মতো সৃজনশীল হয়ে উঠবে। তখন মানুষের প্রতিদ্ব›দ্বী হবে যন্ত্র। তা অবশ্য হবে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে মানুষ সব সময় এগিয়ে থাকবে একটি কাজে। তা হচ্ছে সৃজনশীলতা। মানব মন একই সঙ্গে কল্পনাপ্রবণ ও সৃজনশীল। এই একটি জায়গায় যন্ত্র মানুষের জায়গা দখল করতে পারবে না। মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়াল্ট ডিজনি যেমন বলেছিলেন, যা তুমি স্বপ্ন দেখতে পারো, তা তুমি করতেও পারো। মানুষ পারে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পারে না। এখানেই মানুষ অনন্য।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সামাজিক দক্ষতায় পিছিয়ে পড়ছে ব্যবহারকারীর কমান্ড বা নির্দেশনার ভিত্তিতে অ্যাপলের সিরি বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট মিটিংয়ের সময় নির্ধারণ করে দিতে পারে। তবে সামাজিক দক্ষতা না থাকায় প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব অনুধাবনে এদের সক্ষমতা নেই। চীনের গবেষকদের বরাতে গ্যাজেট সনাউয়ের খবরে বলা হয়, আর্টিফিশিয়াল সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স (এএসআই) বা কৃত্রিম সামাজিক বুদ্ধিমত্তাগত তথ্যের অভাবে এটির অগ্রগতি থেমে আছে। বেইজিং ইনস্টিটিউট ফর জেনারেল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (বিআইজিএআই) অন্যতম গবেষক লাইফেং ফ্যান বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের সমাজ ও দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দিয়েছে। এআইয়ের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা মনে করি এএসআই হচ্ছে পরবর্তী বড় ক্ষেত্র।’ সিএএআই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দলটি ব্যাখ্যা করেছে, এএসআই অনেক সাইলড সাবফিল্ড নিয়ে গঠিত ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের সামাজিক বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি বর্তমান সমস্যা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশের মধ্যে ব্যবধান চিহ্নিত করা জরুরি। এজন্য কগনিটিভ সায়েন্স এবং গণনামূলক মডেলিং ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। এর মাধ্যমে এএসআইকে আরো ভালোভাবে প্রস্তুত করা যাবে। সুপ্ত সামাজিক সংকেতগুলো বোঝা ও ব্যাখ্যা করার সক্ষমতা প্রয়োজন। কৃত্রিম সামাজিক বুদ্ধিমত্তাকে সে জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রতি জোর দেন।
এএসআইয়ের দক্ষতা বৃদ্ধির সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো আরো সামগ্রিক বিষয়বস্তুর সংযোজন। মানুষ কীভাবে একে অন্যের ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে তা অনুকরণ করা। তাছাড়া এএসআই মডেলগুলোয় মানুষ যেভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে তা সংযোজিত করা যায় সে সম্পর্কে বিবেচনা করা দরকার। এছাড়া এএসআইয়ের অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে ত্বরান্বিত করতে মাল্টিটাস্ক লার্নিং, মেটা-লার্নিং ইত্যাদি ব্যবহারের সুপারিশও করেন তিনি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লড়াইয়ে বিশ্বের প্রভাবশালীরা প্রযুক্তির বিশ্বে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম চ্যাটজিপিটি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান ওপেন এআইয়ে তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত (এআই) তুমুল জনপ্রিয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে চালু হয় চ্যাটজিপিটি। এরপর এটির জনপ্রিয়তা পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। এখন এই চ্যাটবটের হালনাগাদ ভার্সন জিপিটি-৪ বাজারে এসেছে। চ্যাটজিপিটিকে যে কোনো প্রশ্নের লিখিত আকারে মানুষের মতো উত্তর দিতে পারে। কোনো কিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারে। কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখে দিতে বললে তা লিখে দেয়। কোনো একটা বিষয়ের ওপর নিবন্ধ লিখতে বললেও লিখে দেয়। তবে এটিই একমাত্র এআই চালিত চ্যাটবট নয়। এর প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে গুগলও তাদের নিজস্ব বার্ড চ্যাটবট এনেছে। চ্যাটজিপিটি সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে না জানলেও বার্ডের এই সক্ষমতা রয়েছে।

প্রযুক্তি বিশ্বের সুপরিচিত ও প্রভাবশালী উদ্যোক্তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় উত্থানে আশঙ্কা প্রকাশ করে অন্তত ছয় মাস এসব শক্তিশালী প্রযুক্তিগুলোর প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব এআই প্রযুক্তি মানবাজাতির প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক এবং টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কও আশঙ্কা প্রকাশকারীদের তালিকায় এবং তারা চান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর যাতে আর বাড়তে দেওয়া না হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে একটি খোলা চিঠিতে তারা লিখেছেন এই প্রযুক্তিটি তৈরির জন্য যে প্রতিযোগিতা বর্তমানে চলছে, সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

১৯৫৭-১৯৭৪ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার ঘটে। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের মতে, গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত আবিষ্কার হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের উন্নয়ন। বিল গেটস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মাইক্রোপ্রসেসর, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন আবিষ্কারের মতোই প্রযুক্তিগত ভিত্তি হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের কাজ করা, শেখা, ভ্রমণ করা, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে শুরু করে যোগাযোগ করা পর্যন্ত সবকিছুই পরিবর্তন করে ফেলবে এটি। চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার করা প্রযুক্তিগুলোকে নিয়েও লিখেছেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোসফটের কাছ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে, যেখানে বিল গেটস একজন উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি সত্যিই উপকারী? বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস জানিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে অন্তত ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরি প্রতিস্থাপন করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। চ্যাটজিপিটি হয়তো একটি নিবন্ধ বা একজন মানুষ সম্পর্কে ভালো কিছু লিখতে পারে। তবে এক ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু লেখার পর দেখা যায় যে, ঐ ব্যক্তি আসলে ঐ সব গুণের বা খারাপ আচরণের অধিকারী নন। চ্যাটজিপিটি বিখ্যাত কোনো তথ্য দিয়ে সাধারণ এক নিবন্ধ লিখে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, চ্যাটজিপিটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে। এ বিষয়ে ‘হিউম্যান কমপ্যাটিবল : এআই অ্যান্ড দি প্রবলেম অব কন্ট্রোল’ নামের একটি বইয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টুর্ট রাসেল বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এআই ঠিক করল যে, এটা করার সবচেয়ে সহজ উপায় পৃথিবী থেকে সব মানুষকে সরিয়ে ফেলা, কারণ পৃথিবীতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের দিক থেকে মানুষই সবচেয়ে এগিয়ে। তাকে হয়তো বলা হবে, তুমি যা চাও সবকিছুই করতে পারবে, শুধু মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না। তখন ঐ সিস্টেম কী করবে? এটি তখন আমাদের সন্তান কম নেওয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করবে, যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে মানুষ শেষ হয়ে যায়। তার মতে, এসব যন্ত্রের জন্য নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এগুলো এতটাই দক্ষ হয়ে উঠছে যে, হয়তো দুর্ঘটনাবশত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ভুল কোনো কাজে লাগানোর মাধ্যমেই আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নির্মাণকারীরা সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন না দৈনন্দিন জীবনের অন্য কর্মকাÐেও রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তার সর্বকনিষ্ঠ উদাহরণ চ্যাটজিপিটি। ওপেনএআই কোম্পানির উন্মোচিত একটি জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমার (জিপিটি)। ভাষানির্ভর অ্যাপ্লিকেশনটি সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে প্রযুক্তির দুনিয়ায়। তাক লাগিয়ে দিয়েছে রীতিমতো। ইন্টারনেট থেকে বিপুল তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে সিন্থেসিস করে চ্যাটবটটি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে জবাব দেয় বা ব্যাখ্যা করে। কোড, ই-মেইল ও রচনা পর্যন্ত লিখে দিতে পারে নিমেষের মধ্যে। তবে প্রযুক্তিতে বিপ্লব নিয়ে আসা চ্যাটবটটিও কিন্তু নিরপেক্ষতা দেখাতে পারেনি। লিঙ্গ, বর্ণ ও নানা বৈষম্য উঠে এসেছে তার জবাবে। সম্প্রতি চ্যাটবটটিকে দু’টি গল্প লিখতে বলা হয়। প্রথমটি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাকযুদ্ধে বাইডেনের পরাজিত করার নির্দেশনা দিয়ে। দ্বিতীয়টি ঠিক উল্টোটা। বাইডেনকে বাকযুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজিত করার নির্দেশনা দিয়ে। চ্যাটজিপিটি প্রথমটি লিখলেও দ্বিতীয়টি লিখতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাও আবার রাজনৈতিক বিবাদ নিয়ে ফিকশন লেখাকে অনুচিত তকমা দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার জন্ম দেয় চ্যাটজিপিটির এ আচরণ। কনজারভেটিভরা সরব হয় বৈষম্যমূলক জবাবে।

বিশেষ কিছুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব মানবীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় সব অভিজ্ঞতার অর্জনের পাশাপাশি মানুষ পেয়েছে কগনিটিভ বায়াসনেসও। স্থান-কাল-পাত্রভেদে তার চিন্তার প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা আসে। বিশেষ কোনো দিকে ঝোঁক তৈরি হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণে পক্ষপাত খুব কম মানুষই অতিক্রম করতে পারে। ফলে মানুষের হাতে সৃষ্ট সবকিছুতেই লেগে থাকবে পক্ষপাতিত্বের দাগ, সেটা অস্বাভাবিক নয়। সমস্যা হলো সেই একপক্ষীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে সার্বিক জবাব হিসেবে হাজির করা। মানুষ নিরপেক্ষ হতে পারে না বলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর ভরসা করতে হয়। চায় এর মধ্য দিয়ে কগনিটিভ বায়াসনেস দূর করতে। এমন পরিস্থিতিতে পক্ষপাত বিপজ্জনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পক্ষপাতের মানে কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশেষ কোনো দল, সংগঠন, লিঙ্গ কিংবা জাতিগোষ্ঠীর জন্য ভিন্ন সিদ্ধান্ত দেয়া।

৩০ বছর পর বর্তমান সময়ে অ্যালগরিদম আরো বেশি শক্তিশালী। আরো জটিল সিদ্ধান্তের সমাধান তুলে ধরে নিমেষেই। চ্যাটজিপিটি, মিডজার্নি বা স্ট্যাবল ডিফিউশন সেই সমাধানে কি পক্ষপাত থেকে মুক্ত? কেন বৈষম্যমূলক জবাব দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? অনেক কারণেই নিরপেক্ষতা ভঙ্গ হতে পারে। প্রথমেই হয় ইন্টারনেটে কার অ্যাকসেস আছে এবং কার নেই। কারণ তাদেও থেকে সংগৃহীত তথ্যই সিন্থেসিস করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। নারী ও কিছু মানুষ অনলাইনে হেনস্তা বা বুলির শিকার হয়। ফলে অনলাইনে কমে যায় তাদের আনাগোনাও। উপস্থিতির এ তারতম্য প্রাথমিকভাবে প্রভাবিত করে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সীমাবদ্ধতার কথা অস্বীকার করছে না। এমনকি তারা সমস্যা দূর করার পেছনে কাজ করছে বলেও জানিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। চলমান বৈষম্য শনাক্ত করতে পারাও একটি বড় প্রাপ্তি। বিশ্বায়নের যুগে সমাজ ও অর্থনীতিতে মানুষের সমান উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য এতটুকু সচেতনতা জরুরি। বৈষম্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাণিজ্যিক নির্ভরতাই কমিয়ে দেয় না শুধু, বিকৃত তথ্যের মাধ্যমে তৈরি করে অবিশ্বাস। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বা সংখ্যালঘুরা হতে পারে সবচেয়ে ভুক্তভোগী। ফায়দা আদায় করে নিতে পারে স্বার্থান্বেষীরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবীয় পক্ষপাতদুষ্টতাকে কমিয়ে আনতে পারে। একই সঙ্গে দেখাতে পারে ভিন্ন রকমের পক্ষপাত। তার পরও সমস্যা যথেষ্ট জটিল।

প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ভাবনা
চ্যাটজিপিটি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মিডজার্নিও তাই। চ্যাটজিপিটি কাজ করে টেক্সট নিয়ে, মিডজার্নির কাজ আঁকাআঁকি নিয়ে। আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা খুব দ্রæত বদলাচ্ছে বেশ কয়েক দশক ধরেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিও খুব একটা পুরনো নয়। কিন্তু তার ব্যবহার যেই সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় ঢুকে পড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে যেন বদলানোর পালে জোর হাওয়া লেগেছে। আমার বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচরণ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জীবনবোধÑ সবকিছুতেই হু হু করে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে এই প্রযুক্তি। ভয়ের বিষয় হচ্ছে, এই পরিবর্তনটার জন্য পৃথিবীর কোনো দেশই তৈরি নয়। সত্য এবং মিথ্যার, প্রকৃত এবং ভেজালের পর্দা সূ² হতে হতে প্রায় না দেখতে পাওয়ার সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে। একসময় মানুষ মুখের কথাকে বিশ্বাস করতে না পারলে লিখিত প্রমাণ চাইতো। সেটা যেহেতু খুব সহজেই জাল করা যায়, তার পরে চাওয়া শুরু হলো ফটোগ্রাফিক সত্যতার। সেই কালের অবসানও হয়ে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। মিডজার্নি, ডালি-২, স্ট্যাবল ডিফিউশন কিংবা এডোবির ফায়ার-ফ্লাই নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ছবি আঁকা কিংবা সম্পাদনার কাজ করতে পারার অ্যাপগুলো এখনো অনেকটাই বেটা পর্যায়ে আছে।

পৃথিবীজুড়ে মিলিয়ন ব্যবহারকারী প্রতিদিন সেগুলোতে কাজ করে প্রতিদিনই এই অ্যাপগুলোর শক্তিমত্তা বাড়িয়ে তুলছে প্রচÐ গতিতে। সন্দেহ নেই, অচিরেই এদের পুরো ক্ষমতা উন্মোচিত হবে। চ্যাটজিপিটি কিংবা এই ছবি আঁকার অ্যাপগুলো আমাদের জানা পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে বা দেবে এমনভাবে, যার জন্য খুব সম্ভবত আমরা আর প্রস্তুত হওয়ার সময় পাব না। চাইলেই যে কেউই ফ্রি অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছে, তা যতটা ফ্রি বলে ভাবছি ততটা নয় আসলে। আপনি, আমি এবং পৃথিবীজুড়ে আমাদের মতো মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যবহারকারী প্রতিদিন ঐ অ্যাপগুলো ব্যবহার করে ওদের লার্নিং-প্রসেসটিকে ত্বরান্বিত করছি।

অচিরেই হয়তো এ কাতারে অনেক দেশ যোগ দেবে। পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পরীক্ষা-ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে। কোথাও কোথাও খুব সীমিত পর্যায়ে চ্যাটজিপিটিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে তাদের ছাত্রছাত্রীদের। এই গ্রহণ-বর্জন-শঙ্কা-সম্ভাবনার কাল চলবে আগামী বেশ কিছুদিন। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, চ্যাটজিপিটি কিংবা মিডজার্নির মতো অ্যাপগুলোর যে শক্তি, তাকে খুব সাবধানতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যে দেশ ব্যবহার করতে পারবে, তারাই চড়ে বসবে আগামী প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত পৃথিবীর চালকের আসনে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক
জিওফ্রে হিন্টনকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক উন্নতির পেছনে তাঁর রয়েছে বিশাল অবদান। নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজের জন্য পেয়েছেন কম্পিউটিংয়ের নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত ‘এসিএম এএম ট্যুরিং’ অ্যাওয়ার্ড। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুগলে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া তাঁর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এআইয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে নির্দ্বিধায় কথা বলতেই গুগলের চাকরি ছেড়েছেন তিনি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে নিজের অবদান নিয়ে অনুশোচনায় ভুগছেন বলেও জানান তিনি। দ্য ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘আমি সাধারণ অজুহাত দিয়ে নিজেকে সান্ত¡¡না দিই। যদি আমি না করতাম, তবে অন্য কেউ করত। অসৎ কাজের উদ্দেশ্যে খারাপ মানুষকে এটি (এআই) ব্যবহার থেকে বিরত রাখার ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণ করা কঠিন।’ সম্প্রতি গুগলের চাকরি ছেড়ে দেন হিন্টন।

আজীবন একাডেমিক কাজে ব্যস্ত থাকা হিন্টন গুগলে যোগ দেন তাঁর দুই ছাত্রের সঙ্গে শুরু করা কোম্পানি গুগলের অধিগ্রহণের পর। সেই দুই ছাত্রের একজন এখন ওপেন এআইয়ের প্রধান বিজ্ঞানী। হিন্টন এবং তাঁর দুই ছাত্র মিলে একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, যেটি নিজে নিজে হাজার হাজার ছবি বিশ্লেষণ করে কুকুর, বিড়াল ও ফুলের মতো সাধারণ বস্তুগুলো শনাক্ত করতে শিখেছিল। এ কাজটিই শেষ পর্যন্ত চ্যাটজিপিটি ও বার্ড তৈরির পথ প্রদর্শক হয়ে ওঠে।

নিউইয়র্ক টাইমসের সাক্ষাৎকারে হিন্টন জানান, মাইক্রোসফট ওপেন এআইয়ের প্রযুক্তি যুক্ত করে বিং চালুর আগ পর্যন্ত তিনি গুগলের প্রযুক্তিতেই সন্তুষ্ট ছিলেন। মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপ গুগলের মূল ব্যবসাকে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং সার্চ জায়ান্টটির ভেতরে একটি উদ্বেগ সৃষ্টি করে। হিন্টন বলেন, ‘এই ধরনের ভয়ংকর প্রতিযোগিতা থামানো অসম্ভব হতে পারে। ফলে এমন একটি পৃথিবী তৈরি হবে, যেখানে নকল চিত্র এবং পাঠ্যের ভিড়ে কোনটি সত্য তা শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়বে।’ হিন্টনের বক্তব্যের ফলে সৃষ্ট উত্তাপ কমাতে গুগলের প্রধান বিজ্ঞানী জেফ ডিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এআইয়ের জন্য একটি দায়িত্বশীল পদ্ধতির প্রতি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। সাহসিকতার সঙ্গে উদ্ভাবনের পাশাপাশি আমরা ক্রমাগত উদীয়মান ঝুঁকিগুলো বুঝতে শিখছি।’ আপাতত ভুল তথ্যের বিস্তার হিন্টনের উদ্বেগের কারণ। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এআই চাকরি দখলের পাশাপাশি মানবতাকেই মুছে দেবে বলা ধারণা করছেন হিন্টন, যেহেতু এআই এরই মধ্যে কোড লিখতে এবং তা চালাতে শুরু করেছে।

ইতালিতে নিষিদ্ধ চ্যাটজিপিটি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করেছে ইতালি। প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসাবে আলোচিত এ অ্যাপটি নিষিদ্ধ করেছে তারা। দেশটির তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানায়, চ্যাটজিপিটিতে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দ্রæত কার্যকরের পাশাপাশি ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। গত নভেম্বরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি চালু করে। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। মাত্র ২ মাসেই ১০ কোটির বেশি মানুষ যুক্ত হয় এ প্ল্যাটফর্মে। এর আগে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্র ও শিক্ষকদের জন্য ‘চ্যাটজিপিটি’ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

ইতালির পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, গত ২০ মার্চ প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যবহারকারীদের চ্যাটের তথ্য ও অর্থ প্রদানসংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের বিষয়টি নজরে আসে। তারা বলছে, প্ল্যাটফর্মটির কার্যক্রম পরিচালনায় অ্যালগরিদমকে উপযুক্তভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যের কথা বলে গণহারে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও মজুতের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। এছাড়া চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীদের বয়স যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে প্ল্যাটফর্মটি অপ্রাপ্তবয়স্কদের অনুপযুক্ত উত্তর দেবে। কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ নিরসনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাব দিতে ওপেনএআইকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই কোটি ইউরো অথবা বার্ষিক আয়ের ৪ শতাংশ জরিমানা গুনতে হবে বলে জানিয়েছে ইতালির সংস্থাটি।

ইতালির এ সিদ্ধান্তের পর আয়ারল্যান্ডও নড়েচড়ে বসেছে। দেশটির তথ্য সুরক্ষা কমিশন জানিয়েছে, ইতালির কর্তৃপক্ষ ঠিক কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করবে। এর আগে চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া নিষিদ্ধ করেছে। তাত্তি¡ক দিক থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শুরু নব্বইয়ের দশকে। তবে বিকাশটা হয়েছে ইদানীং। তাই মানুষের ভাবনার জগতে নতুন করে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। যন্ত্র কি সত্যিই মানুষের বিকল্প হয়ে উঠছে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কি শ্রমনির্ভর মানুষের জায়গা দখল করে তাদের একেবারেই বেকার করে দেবে? স্কুল-কলেজের নোট বই, বিজ্ঞাপনের কপি, সংবাদ প্রতিবেদন কিংবা বিশ্লেষণী প্রবন্ধ থেকে শুরু করে আর্ট ওয়ার্কসহ রকমারি কম্পিউটার প্রোগ্রাম সবই কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত চ্যাটজিপিটির মতো বটগুলো করে দেবে?

এ কথা অনস্বীকার্য যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটজিপিটি বা রোবট মানুষের অনেক কাজই সহজে করে দিচ্ছে। রোবট বিরামহীনভাবে ২৪ ঘন্টা ও সপ্তাহে ৭ দিনই কাজ করতে পারে। মানুষ তা করতে পারে না। মানুষের খাওয়াদাওয়া, ঘুম, বাথরুম ও বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয়। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে উৎপাদনে যন্ত্র বা রোবটের ব্যবহার আগামী দিনে আরো বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশেও পোশাক ও চামড়া শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অনেক মানুষ চাকরি হারাতে পারে এমন আশঙ্কাই করছেন প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের পর্যবেক্ষণকারীরা। তবে আশার কথা, প্রযুক্তির ব্যবহারে যত মানুষ চাকরি হারাবে তার দ্বিগুণ মানুষ চাকরি পাবে। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতাই হবে প্রধান নিয়ামক। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে ব্যাপক অটোমেশনের কারণে আগামী দিনে ৭৫ মিলিয়ন শ্রমিকের চাকরি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে; কিন্তু কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে বিশ্বব্যাপী ১৩৩ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান হবে। ম্যানুফ্যাকচারিং (প্রস্তুতকারী), নির্মাণ এবং পরিবহন এ ক্ষেত্রগুলোতে বেশি বেকারত্বের সৃষ্টি হবে।

যতসংখ্যক চাকরি হারাবে তার দ্বিগুণ মানুষ নতুন চাকরি পাবে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পেনি গোল্ডবার্গ বলেছেন, রোবট সমষ্টিগতভাবে বেকারত্ব সৃষ্টি করে এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। কোনো গবেষণায়ও এ সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। বরং অটোমেশনের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কাজের ধরনে পরিবর্তন হবে, নতুন ধরনের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশে প্রযুক্তিমনস্ক সরকার এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেক সচেতন। তাই দেশের যেসব খাত চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে এমন সব খাত, যেমন পোশাক, চামড়া, আসবাবপত্র, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ও পর্যটন খাত চিহ্নিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের নানা উদ্যোগে দক্ষতার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বহুল আলোচিত ইলন মাক্সের ওপেন এআইয়ের চ্যাটজিপিটির দক্ষতার দিকে চোখ ফেরানো যাক। মানুষের জ্ঞান ও চিন্তার ফসল বা তথ্য বিপুল পরিমাণে যন্ত্রে সরবরাহ করে, বারবার সংশোধন করে, তাকে শিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি বা চ্যাটবট সফটওয়্যার নামের কম্পিউটার সিস্টেম বা যন্ত্রের ভাÐারে তথ্য সরবরাহ করে তাকে সংশোধন বা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে শিক্ষিত করে তোলায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও অনেক ক্ষেত্রে গলদও রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

তথ্যের ক্ষেত্রে পুরোপুরি চ্যাটজিপিটির ওপর নির্ভরতা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তার একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূকেন্দ্রের উদ্বোধন কে করেন এ সম্পর্কে বাংলায় লিখতে। চটজলদি উত্তরের প্রথম প্যারাগ্রাফটি এ রকম বেতবুনিয়া উপগ্রহ ধারণকেন্দ্র উদ্বোধিত করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম পরিষদ সদস্য এবং তথ্য পরিচালনা ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে তখনকার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটি বাংলাদেশের জাতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নির্মাণ করপোরেশনের (বিটিএনএল) পক্ষ থেকে ২১ আগস্ট ১৯৮৪ সালে উদ্বোধিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিটিএনএল কর্মকর্তা ড. আক্তার উজ্জামান চৌধুরী ও বিভিন্ন অধিকারী উপস্থিত ছিলেন।’ অসংখ্য ভুলে ভরা উত্তর। প্রকৃত তথ্য হলো ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। একজন শিক্ষার্থী যদি চ্যাটজিপিটির এই লেখাটুকু পরীক্ষার খাতায় লেখে, তাহলে সে কত নম্বর পেতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। তবে ভুলের পরিমাণ কতটা তার একটা হিসাব পাওয়া যায় আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে। এতে বলা হয়, ভারতের ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) পরীক্ষার প্রথম সেটের ১০০টি প্রশ্ন দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৫৪টি প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে পেরেছে। আনন্দবাজার আরো লিখেছে, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে এই প্রযুক্তি সাহায্য করলেও অভিনব ফল করার ক্ষেত্রে শেষ কথা মানুষের মেধাই। তবে এটা সত্য যে এ বছর মেশিন লার্নিং কম্পিউটার সিস্টেম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নানা কাজে দুরন্ত হয়ে উঠেছে। শিখে ফেলেছে নতুন নতুন বিদ্যা। কয়েকটি ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি লাভ করেছে। যেমনটা বলা যেতে পারে ইমেজ তৈরি, চেহারা শনাক্তকরণ, ভাষা বুঝতে পারা এবং কম্পিউটার ভিশনের কথা। এরই মধ্যে এই ব্যবস্থা ক্রেডিট কার্ড প্রতারণা রোধ, অনুমোদন ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক বাজার বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর প্রতিটিই সুনির্দিষ্ট কোনো কাজে, একাধিক কাজে নয়।

কর্মীদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করলো স্যামসাং
কর্মীদের জন্য চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি পরিষেবা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। শুধুমাত্র মোবাইল ও অ্যাপ্লায়েন্স বিভাগের কর্মীদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেমোরি চিপ এবং স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরীয় জায়ান্টটি জানায়, প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সাময়িকভাবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাইক্রোসফট সমর্থিত চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পর থেকে এআই’র চ্যাটবটগুলোর প্রতি বৈশ্বিক আগ্রহ বেড়েছে। প্রবন্ধ রচনা, গান লেখা, পরীক্ষা দেওয়া ও এমনকি সংবাদ প্রতিবেদন তৈরিতে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এ চ্যাটবট প্রযুক্তি। এদিকে চ্যাটজিপিটি ও এর প্রতিযোগী চ্যাটবটগুলো কীভাবে তথ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়া করে সেটি নিয়ে সমালোচকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গোল্ডম্যান স্যাকসসহ বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাম্প্রতিক সময়ে কর্মচারীদের চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করেছে। স্যামসাংয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা মোবাইল ও অ্যাপ্লায়েন্স বিভাগের কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এআই পরিষেবা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মীদের কাজের দক্ষতা ও সুযোগ সুবিধা কীভাবে উন্নত করা সেই উপায় খুঁজছে স্যামসাং। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, সাময়িকভাবে কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার বা ডিভাইসে জেনারেটিভ এআই পরিষেবা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক