সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের বিতর্কিত এএসআই গোপালের সেচ্ছাচারিতায় ঘুমন্ত অবস্থায় প্রতিবন্ধী পরিবারের কিশোর ছেলে রাসেল হোসেনকে (১৭) চায়ের দোকান তুলে নিয়ে মিথ্যা মাদক (ইয়াবা) মামলায় চালান দেওয়ার প্রতিবাদে এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তার হয়রানী থেকে মুক্তি পেতে “মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ” অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বিকালে (১১ জুন) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বাংগাডাঙ্গা-কাকডাঙ্গা সড়কে স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধন পালিত হয়। এর আগে শনিবার (১০ জুন) বিকালে ঘুমন্ত অবস্থায় ওই কিশোরকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে ইয়াবাসহ চালান দেয় সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। রাসেল বাংগাডাঙ্গা এলাকার আলমগীর হোসেনের ছেলে।
এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী কিশোরের বাকপ্রতিবন্ধী মা নাজমা খাতুন (ইশারা ভাষাতে বক্তব্য দেন), আজিজুল ইসলাম, ডলি খাতুন, রেবেকা খাতুন, রাবেয়া খাতুন, সোহাগ হোসেন, আশা, প্রত্যক্ষদর্শী সালেক হোসেন প্রমুখ। এসময় মানববন্ধনে সহস্রাধিকেরও বেশি গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কিশোর রাসেল হোসেনের মা নাজমা খাতুন একজন বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার সুবাদে রাসেলের জন্মের ৬মাস পর তার পিতা আলমগীর হোসেন তাদের ছেড়ে অনত্র চলে যান। সেই থেকে বাংগাডাঙ্গা এলাকায় নানা আজিজুল ইসলামের সংসারে প্রতিবন্ধী মায়ের সাথে বেড়া ওঠা রাসেলের। অভাবের সংসারে মাধ্যমিক স্তর পার করতে পারেননি রাসেল। লেখাপড়া করতে না পারলেও মায়ের ভোরণপোষণ যোগাতে দীনমুজুরের পথ বেছে নিতে হয় তাকে। আর বাকিসময় বসতবাড়ির সামনে তার খালাতো ভাইয়ের চায়ের দোকানে কাজ করে সময় কাটাতেন ওই কিশোর।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এসময় বক্তারা বলেন, শনিবার বিকাল চারটার দিকে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই গোপাল ঘুমন্ত অবস্থায় রাসেল হোসেনকে তার খালাতো ভাইয়ের চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যান। এসময় তাকে ধরে নেওয়ার কারন সমন্ধে স্থানীয়রা জানতে চাইলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা। বরং, কিশোর রাসেলকে বেধড়কভাবে মারপিট করতে করতে মোটরসাইকেল যোগে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মানববন্ধনে দাবি করেন স্থানীয়রা।
তারা আরও বলেন, রাসেল তার পরিবারের একমাত্র সন্তান। তার মা একজন বাকপ্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারেননা। ছেলেকে ধরে নেয়ার পর থেকে ওই কিশোরের মা একপ্রকার খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। অপরদিকে রাসেলের খালাতো ভাই সোহাগ হোসেন ও তার বন্ধু আশা নামে অপর এক যুবককে এই মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখি পুলিশের ওই কর্মকর্তা এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে জানান তারা।
এব্যাপারে রাসেলের খালাতো ভাই সোহাগ হোসেন ও তার বন্ধু আশা জানান, ডিবি পুলিশের এএসআই গোপাল একজন মাদকাসক্ত পুলিশ কর্মকর্তা। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ী জুবায়ের সোনাডাঙ্গার হাসানের মাধ্যমে মাদক পরিবহন করতেন তিনি। পরে আমাদেরসহ স্থানীয়দের ইনফরমেশনে সাতক্ষীরা বিজিবির সদস্যরা মাদকসহ জুবায়ের ও হাসানকে গ্রেপ্তার করলে ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে হয়রানী করতে থাকে আমাদেরকে। আর এসংক্রান্ত কারনে একটি মাদক মামলায় সোহাগকে ফাঁসিয়ে দেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। পরবর্তী তাকে জব্দ করতে না পেরে তার খালাতো ভাইকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাদক মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে। এসময় সোহাগ হোসেন দাবি করেন, রাসেলকে ধরে নেওয়ার পর এএসআই গোপাল তাকে কল করেন। এসময় তার কাছে একলাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় তার নামেও মাদক মামলা দেওয়া হবে বলে পুলিশের ওই কর্মকর্তা হুমকী দেন জানান তিনি।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের (ওসি) তারেক ফয়সাল ইবনে আনিস বলেন, এঘটনায় ওই ছেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী পুলিশের কাছে রয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদকের হটসঅ্যাপে একটি ভিডিও পাঠান তিনি। পরে ডিবি ওসি হটসঅ্যাপে প্রতিবেদকের কাছে কল করেন। এসময় তিনি বলেন, ওই ছেলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আপনাকে পাঠিয়েছি। যেখানে সে নিজে মাদকের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
তবে এঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সালেক হোসেন দাবি করেন, যখন রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন তার গায়ে কোন কাপড় ছিলোনা। নাইবা সেখানে কোন ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
ডিবি ওসির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী ওই কিশোরের পরিবারের সদস্যরা জানান, যেভাবে একজন প্রতিবন্ধী মায়ের সামনে তার সন্তানকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করতে পিছুপা হননি পুলিশের ওই কর্মকর্তা সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়াটা স্বাভাবিক। সবারতো প্রাণের ভয় রয়েছে। তারা বলেন, যেভাবে রাসেলকে মারধর করা হয়েছে সেভাবে সুষ্ঠ মস্তিষ্কের কেউ এভাবে মারতে পারেনা। রাসেলের প্রতিবন্ধী মা কথা বলতে না পারলেও তার আহাজারিতেও রাসেলকে মারধর করা থেকে পিছুপা হননি পুলিশের ওই কর্মকর্তা। এসময় তারা বলেন, একজন পুলিশ সদস্যের জন্য গোটা পুলিশ বাহিনীকে বদনাম দেওয়াটা অশোভনীয়। আমরা এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাচ্ছি। তদন্ত হলে সত্য কী সেটা বেরিয়ে আসবে। এসময় ওই পুলিশ সদস্যকে অনতিবিলম্বে শাস্তিমূলক প্রত্যাহার ও রাসেল হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন রাসেলের পরিবারের সদস্যরাসহ স্থানীয় গ্রামবাসী।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি