ঢাকা ১২:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
চাঁদাবাজির অভিযোগে সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা ইমনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা কালিগঞ্জে হয়রানি, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে বড়শিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এইচপিভি টীকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন ডা: বুলবুল কবীর কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই – এ্যাডঃ সৈয়দ ইফতেখার আলী শ্যামনগরে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার উপর ওরিয়েন্টশন আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই

কালিগঞ্জের চর অঞ্চলে ভেড়া পালন: লাভবান হচ্ছে পালনকারীরা

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩
  • ৯৪ জন পড়েছেন ।

আব্দুর রহিম, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা):

কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চর অঞ্চলে ভেড়া পালনে রাখছে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা। চরের নারীরা পশু পালনে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পশু পালনে উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় ওই এলাকায় নারীরা ভেড়া পালনের উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছেন। একেক জনের সাফল্য দেখে আরেকজন অনুপ্রাণীত হয়ে ভেড়া পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ সব চর-অঞ্চলে নেহাত ভেড়ার খামারও একেবারে কম নয়। খরচ কম হওয়ায় ভেড়া পালন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভেড়া কেন পালন করেছেন এবং ভেড়া পালনের ক্ষেত্রে চরে কি কি সুবিধা পান জানতে চাইলে সন্ন্যাসীর চক চরের কৃষাণী পারভীন বেগম বলেন, “চরে ঘাসের অভাব নাই, সারাদিন চড়ায় (চকে) থাকে, গরু বাছুরের সাথে মিলে মিশে ঘাস খায়, বিকাল হলে আপনা আপনি দলবেঁধে বাড়িতে চলে আসে। আবার অনেক সময় গিয়ে নিয়ে আসি।” ভেড়া শুধু ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে‌। এ ছাড়াও দানাদার (ভুষি) খাবার সরবরাহ করলে আরও ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। তাই ভেড়ার জন্য অতিরিক্ত কোন পরিশ্রম করতে হয় না বরং লাভ বেশি বলে তিনি জানান।
তবে শুরুতে ভেড়া পালন খুব সহজ ছিলোনা বলে ভেড়া পালনাকারীরা জানান। কেননা ভেড়া পালন করাকে কেউ তেমন স্বাগত জানাতো না। তবে যারা পালন করেছেন তাদের সাফল্য দেখে মানুষের এ ধারণা পাল্টাতে শুরু করে। চর এলাকার কৃষাণী পারভীন বেগমই প্রথমে ভেড়া পালন করতে শুরু করেছেন। এই তিনি বলেন, “আমার বিয়ের পর বাবার বাড়ি থেকে পালার জন্য দু’টি ভেড়া এনেছিলাম। সেই দু’টি ভেড়া থেকে বর্তমান আমার ভেড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫টি।” তিনি গড়ে তুলেছেন খুদ্র খামার। তাঁর কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই ধীরে ধীরে ভেড়া পালন করতে শুরু করেন। এই চলে ২০১২ সালে ৩ জন কৃষক ভেড়ার খামার শুরু করলেও বর্তমানে সুন্দর খালি,বসুখালী,চর- বরেয়া,কাজলা-জাহেদাবাদ,গোলখালী, দক্ষিণ শ্রীপুর চর, গোবিন্দকাটি, রামনগর গ্রামের মানুষও ভেড়ার ক্ষুদ্র খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি গ্রামের খামারীদের বাড়িতে ৫-২৫টা পর্যন্ত ভেড়া রয়েছে।

ভেড়া পালনের সুবিধার সাথে অসুবিধাও রয়েছে বলে ভেড়া পালনকারীরা জানান। বিশেষ করে ভেড়াগুলো অসুস্থ হলে বা রোগবালাই আক্রমণ করলে এগুলোর সহজ চিকিৎসা পাওয়া যায় না। চরাঞ্চলে ভেড়াপালনকারী খামারীদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, চরে অনেক ভেড়া পালনকারী খামারী রয়েছে। কিন্তু ভেড়ার অসুখ বিসুখ হলে ডক্তার পাওয়া যায় না ফলে ভেষজ চিকিৎসা ও দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হয়। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ভেড়ার বেশি রোগ ব্যাধি দেখা যায়। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা লাগা, বাদলা, খুড়া রোগ, ম্যাসস্টাইটিস, চর্ম রোগ, কৃমি, বহিঃ পরজীবি (আটালী) পাতলা পায়খানা, পেটফুলাসহ ইত্যাদি।

ভেড়া একটি নিরীহ প্রাণী। এরা চারণভূমিতে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেতে পছন্দ করে এবং দলগতভাবে ঘুরে বেড়ায়। ১৫ মাসে ২ বার বাচ্চা দেয় এবং একটি ভেড়া ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। এই ভেড়া পালন করে কালিগঞ্জ এবং আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ এখন সাবলম্বী। দিন দিন আরো জনপ্রিয় হচ্ছে এই ভেড়া পালন কার্যক্রম। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষাণ-কৃষাণীদের এ স্বউদ্যোগকে আরও বেগবান করার জন্য সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এছাড়া ভেড়াসহ অন্যান্য গবাদিপশু অসুস্থ হলে যাতে কৃষাণ-কৃষাণীরা সহজে এর চিকিৎসা করাতে পারে সেই ব্যবস্থাও করার প্রয়োজন রয়েছে। ভেড়া পালনকারীরা তাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের এই পেশাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের আরো উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবেন।

 

আব্দুর রহিম।
কালিগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা।
জাতীয় দৈনিক ‘আমাদের অর্থনীতি’
মোবাইল নং-০১৮৫৭-৮২৭৬২৭,০১৯১২-৭২৩০০৫.

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদাবাজির অভিযোগে সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা ইমনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

কালিগঞ্জের চর অঞ্চলে ভেড়া পালন: লাভবান হচ্ছে পালনকারীরা

পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩

আব্দুর রহিম, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা):

কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চর অঞ্চলে ভেড়া পালনে রাখছে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা। চরের নারীরা পশু পালনে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পশু পালনে উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় ওই এলাকায় নারীরা ভেড়া পালনের উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছেন। একেক জনের সাফল্য দেখে আরেকজন অনুপ্রাণীত হয়ে ভেড়া পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ সব চর-অঞ্চলে নেহাত ভেড়ার খামারও একেবারে কম নয়। খরচ কম হওয়ায় ভেড়া পালন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভেড়া কেন পালন করেছেন এবং ভেড়া পালনের ক্ষেত্রে চরে কি কি সুবিধা পান জানতে চাইলে সন্ন্যাসীর চক চরের কৃষাণী পারভীন বেগম বলেন, “চরে ঘাসের অভাব নাই, সারাদিন চড়ায় (চকে) থাকে, গরু বাছুরের সাথে মিলে মিশে ঘাস খায়, বিকাল হলে আপনা আপনি দলবেঁধে বাড়িতে চলে আসে। আবার অনেক সময় গিয়ে নিয়ে আসি।” ভেড়া শুধু ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে‌। এ ছাড়াও দানাদার (ভুষি) খাবার সরবরাহ করলে আরও ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। তাই ভেড়ার জন্য অতিরিক্ত কোন পরিশ্রম করতে হয় না বরং লাভ বেশি বলে তিনি জানান।
তবে শুরুতে ভেড়া পালন খুব সহজ ছিলোনা বলে ভেড়া পালনাকারীরা জানান। কেননা ভেড়া পালন করাকে কেউ তেমন স্বাগত জানাতো না। তবে যারা পালন করেছেন তাদের সাফল্য দেখে মানুষের এ ধারণা পাল্টাতে শুরু করে। চর এলাকার কৃষাণী পারভীন বেগমই প্রথমে ভেড়া পালন করতে শুরু করেছেন। এই তিনি বলেন, “আমার বিয়ের পর বাবার বাড়ি থেকে পালার জন্য দু’টি ভেড়া এনেছিলাম। সেই দু’টি ভেড়া থেকে বর্তমান আমার ভেড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫টি।” তিনি গড়ে তুলেছেন খুদ্র খামার। তাঁর কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই ধীরে ধীরে ভেড়া পালন করতে শুরু করেন। এই চলে ২০১২ সালে ৩ জন কৃষক ভেড়ার খামার শুরু করলেও বর্তমানে সুন্দর খালি,বসুখালী,চর- বরেয়া,কাজলা-জাহেদাবাদ,গোলখালী, দক্ষিণ শ্রীপুর চর, গোবিন্দকাটি, রামনগর গ্রামের মানুষও ভেড়ার ক্ষুদ্র খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি গ্রামের খামারীদের বাড়িতে ৫-২৫টা পর্যন্ত ভেড়া রয়েছে।

ভেড়া পালনের সুবিধার সাথে অসুবিধাও রয়েছে বলে ভেড়া পালনকারীরা জানান। বিশেষ করে ভেড়াগুলো অসুস্থ হলে বা রোগবালাই আক্রমণ করলে এগুলোর সহজ চিকিৎসা পাওয়া যায় না। চরাঞ্চলে ভেড়াপালনকারী খামারীদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, চরে অনেক ভেড়া পালনকারী খামারী রয়েছে। কিন্তু ভেড়ার অসুখ বিসুখ হলে ডক্তার পাওয়া যায় না ফলে ভেষজ চিকিৎসা ও দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হয়। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ভেড়ার বেশি রোগ ব্যাধি দেখা যায়। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা লাগা, বাদলা, খুড়া রোগ, ম্যাসস্টাইটিস, চর্ম রোগ, কৃমি, বহিঃ পরজীবি (আটালী) পাতলা পায়খানা, পেটফুলাসহ ইত্যাদি।

ভেড়া একটি নিরীহ প্রাণী। এরা চারণভূমিতে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেতে পছন্দ করে এবং দলগতভাবে ঘুরে বেড়ায়। ১৫ মাসে ২ বার বাচ্চা দেয় এবং একটি ভেড়া ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। এই ভেড়া পালন করে কালিগঞ্জ এবং আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ এখন সাবলম্বী। দিন দিন আরো জনপ্রিয় হচ্ছে এই ভেড়া পালন কার্যক্রম। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষাণ-কৃষাণীদের এ স্বউদ্যোগকে আরও বেগবান করার জন্য সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এছাড়া ভেড়াসহ অন্যান্য গবাদিপশু অসুস্থ হলে যাতে কৃষাণ-কৃষাণীরা সহজে এর চিকিৎসা করাতে পারে সেই ব্যবস্থাও করার প্রয়োজন রয়েছে। ভেড়া পালনকারীরা তাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের এই পেশাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের আরো উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবেন।

 

আব্দুর রহিম।
কালিগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা।
জাতীয় দৈনিক ‘আমাদের অর্থনীতি’
মোবাইল নং-০১৮৫৭-৮২৭৬২৭,০১৯১২-৭২৩০০৫.