শহীদুল ইসলাম লালু। বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত সর্ব কনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিলো ১২ বছর। টাংগাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে থাকতেন সেচ্ছাসেবক হিসেবে। অস্ত্র, গোলাবারুদ বহন, সংবাদ সংগ্রহ এমন সব কাজের সময় তিনি যুদ্ধে থাকতেন, অস্ত্র চালাতে শিখতেন। আগ্রহ আর সাহসিকতা দেখে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ট্রেনিং এর জন্য। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরায় প্রশিক্ষণ শেষে শহিদুল ইসলাম লালু ফিরে আসেন কাদেরিয়া বাহিনীতেই। সবাই তাকে লালু বলে ডাকতেন।
যুদ্ধে অংশ গ্রহণ ছাড়াও তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে তার সাহস সবার নজর কাড়ে। ১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল, টাংগাইলের গোপালপুর থানায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। ময়ম্নসিংহ এবং টাংগাইল থেকে আরও পাকিস্তানি সেনা সেই ক্যাম্পে এসে তাদের অবস্থান শক্ত করে। ৮ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ করলেও সেই থানায় পাকিস্তানি অবস্থানের পতন না ঘটায় চিন্তিত সেই দলের নেতা আবদুল হাকিম। পাকিস্তানি সেনাদের সেই ঘাঁটি তখন প্রায় ঘেরাও অবস্থায় ছিলো। এ সময় লালু লুংগি পরে, গ্রামের কাজের ছেলের ছদ্মবেশে পাকিস্তানি ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েন। ফুট ফরমাশ খাটেন। আবার আসার কথা বলে বেরিয়ে এসে, ঝুঁকি থাকা সত্বেও, বেশ কটি গ্রেনেড লুকিয়ে নিয়ে ভেতরে যান। সেখানে কয়েকটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে বাইরে এসে পুনরায় গ্রেনেড ছোঁড়েন। এই আচানক হামলায় পাকিস্তানের ৮ জন সেনা নিহত এবং আরও অনেক আহত হয়। তারা ভীত হয়ে পড়ে। সহজেই গোপালপুর থানার সেই পাকিস্তানি ঘাঁটি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
এরপরে ওই মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রতিটি অপারেশনে কিংবা গেরিলা যুদ্ধে ১২ থেকে ১৩ বছরে উপনীত লালুর বীরত্বগাঁথা ইতিহাস হয়ে রয়েছে। দেশ স্বাধীন হবার পর এই বালক মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক খেতাব পান। শহীদুল ইসলাম লালুর জন্ম তারিখ অজানা। খুব কষ্টে কেটেছে তার জীবন। নিরবে পার হয়ে গেছে তার মৃত্যুর দিনটাও। স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যেই আমরা ভুলে গেছি একজন লালুর কথা। বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত সর্ব কনিষ্ঠ এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা। খবরের কাগজে ছাপানো হয়নি, কোন চ্যানেলে সংবাদ করা যায়নি, টক শো তে তাকে নিয়ে কথার তুবড়ি ছোটেনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর প্রতীক শহীদুল ইসলাম লালু ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রয়াত হন। মহান আল্লাহ যেন তাঁকে শহীদের মর্যাদায় বেহেশত নসীব করেন।
সংগৃহীত