ঢাকা ১২:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

কৃষিপণ্য রপ্তানি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে – হীরেন পণ্ডিত

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:৪৬:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩
  • ১০৬ জন পড়েছেন ।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশি কৃষি পণ্যের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপণ্য এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের বিপণনের সুবিধার্থে ট্রেডিং সিস্টেমের আইনি ও অবকাঠামোগত সংস্কার, পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়ন এবং ঝুঁকি-ভিত্তিক পণ্য ছাড়পত্রের কাঠামোগত পরিবর্তন। রপ্তানি উনয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছিলো। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আড়াই গুণেরও বেশি বেড়ে ১০২ মিলিয়ন ৮১ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। শিক্ষিত যুবক-যুব নারীরা রপ্তানির জন্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে ঝোঁক বৃদ্দি পাচ্ছে যা আশার সৃষ্টি করেছে সবার মাঝে।

গত অর্থবছরে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ কোটি ৯২ লাখ ডলার। বাংলাদেশ চা রপ্তানি করে ভালো আয় করতো। কিন্তু এখন তা কমে এসেছে। গত অর্থবছরে মাত্র ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার মূল্যের চা রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ সবজি রপ্তানি থেকে প্রচুর আয় করছে। প্রতিবছর এ খাতের রপ্তানি বাড়ছে। গত অর্থবছরে সবজি রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ১১ কোটি ৮৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এবার লক্ষ্যমাত্রা ১২ কোটি ডলার। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসেছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০২.২৬ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫.৪৩ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন আশার সঞ্চার করছে কৃষিপণ্য। করোনা মহামারীর মধ্যে গত অর্থবছরে এই খাত এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। চলতি অর্থ বছরেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত চার বছর ধরে এ খাতের রপ্তানি আয় বাড়ছে। তবে করোনার কারণে ২০২০ অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি ৫ শতাংশ কমেছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় ১৯ শতাংশ বেড়েছে এবং প্রথমবারের মতো ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যদিও করোনা মহামারির মধ্যে পুরো বছর কেটে গেছে।

কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ শতাধিক কোম্পানি কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ২০টি বড় ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। সবগুলোই কমবেশি রপ্তানি করছে। বর্তমানে সরকার কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা (৩৪ কোটি ১০ লাখ ডলার), যা এ খাতের মোট রপ্তানির ৩৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।

১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু করা বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকা এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ ১৪৫টি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। কোম্পানিটি ফলের পানীয়, পানীয়, বিস্কুট, সস, নুডুলস, জেলি, মশলা, সুগন্ধি চাল, আলু পটকা, চানাচুর, ঝাল-মুড়ি ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাবারের সম্ভাবনা বিশাল। মানুষ যেমন রেডিমেড কাপড় গ্রহণ করছে, তেমনি মানুষ রেডিমেড খাবারও কিনে খাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশই প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন করে না। তারা মূলত আমদানি নির্ভর। সব মিলিয়ে আগামী দিনে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়াব। পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের দেশের কৃষিকে আরও বেশি উৎপাদনশীল করতে হবে।

ইপিবি’র তথ্য অনুসারে, উল্লেখযোগ্য কৃষি রপ্তানি হচ্ছে শাকসবজি, চা, ফুল, ফল, বিভিন্ন মসলা, তামাক, শুকনো খাবার ইত্যাদি। তবে শুষ্ক খাদ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত ১০০ মিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের অংশই বেশি। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পাঁচ শতাধিক কোম্পানি। এর মধ্যে ২০টি বড় ও মাঝারি শিল্প এবং ১০০টির বেশি কোম্পানি রপ্তানি করছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য রপ্তানিতে কর রেয়াত ও ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফলে গত চার বছরে এ খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে। বিশ্ববাজারের চাহিদা মাথায় রেখে এ খাতের উদ্যোক্তারা নতুন পণ্য রপ্তানি শুরু করেছেন, যার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববাজারে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বেড়েছে। সরকার চায় দেশের উদ্যোক্তারা এ সুযোগ কাজে লাগান এবং সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, দেশীয় কোম্পানিগুলি বছরের কয়েক মাসে বিস্কুট এবং রুটির মতো শুকনো খাবার রপ্তানি করে ৮৮.৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য এবং উপসাগরীয় অঞ্চল। তবে এসব দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসীরা প্রধান ভোক্তা। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বিশ্বের ১৪৫টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুডে বহু মানুষ তাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করেছে। খরচ কমাতে তারা সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার, বিশেষ করে শুকনো খাবারের দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে গত অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অর্জন করেছে তারা। প্রযুক্তির আধুনিকায়ন এবং মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার ফলে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি করছে। এ ছাড়া কর রেয়াত ও নগদ সহায়তার মতো সরকারের নীতি সহায়তা কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের অনেক দেশই প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন করে না। তারা মূলত আমদানি নির্ভর। সব মিলিয়ে আগামী দিনে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়বে। কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের দেশের কৃষিকে আরও বেশি উৎপাদনশীল করতে হবে। এ খাতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের এখনো শুল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েছে। সরকারকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এসব জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। এখন কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মানব ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত’ সার্টিফিকেট।

দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব স্থাপন করে এমন সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে রপ্তানি ১০ গুণ বাড়াতে পারে এবং প্রতি বছর আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের সনদ দেওয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। আমদানি-রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে কৃষি পণ্যের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশেও বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ‘মানব ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত’ সার্টিফিকেট রপ্তানিতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। মানের নিশ্চয়তা সনদ দেওয়ার জন্য দেশে কোনো স্বীকৃত ল্যাব নেই। যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়া রপ্তানি করা মিঠা পানির মাছ আমদানি নিষিদ্ধ করেছে অনেক দেশ।

বাংলাদেশে কৃষি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মাছ রপ্তানির জন্য মৎস্য অধিদপ্তর এবং মাংস ও প্রাণীজ পণ্য রপ্তানির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য রপ্তানির জন্য হালাল সার্টিফিকেট জারি করে এবং বিএসটিআই উৎপাদন পর্যায়ে বাংলাদেশের মান অনুযায়ী ১৮১টি পণ্যকে সার্টিফিকেট দেয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কোনওটিরই ক্রেতা দেশগুলির দ্বারা নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে ‘মানব ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত’ প্রশংসাপত্র জারি করার ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশন দেশে কৃষিপণ্যের অপচয় রোধে আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃত ল্যাব স্থাপনসহ মান নির্ধারণকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি একক ‘স্বাস্থ্য প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের সুপারিশ করেছে এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে। এমন একটি সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব হলে সেক্ষেত্রে কৃষি ও খাদ্যপণ্যের রপ্তানি ১০ গুণ বৃদ্ধি করে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

রপ্তানি বাণিজ্য নির্দিষ্ট পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বের কোন দেশে কী ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা জানা প্রয়োজন। এ জন্য বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। বিভিন্ন দেশের আমদানিকারক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এ জন্য আমাদের রপ্তানিকারকদের নিজস্ব উদ্যোগ দরকার। বর্তমানে যে দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে তার বাইরে আরও নতুন দেশে বাজার খোঁজার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যের উনয়ন করতে হলে আমাদের পণ্যের মান বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের প্রচারের কারণে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের কিছু কোম্পানি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে, বিশেষ করে খাদ্য ও কৃষি-শিল্পজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের পণ্যের কয়েকটি ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে, এর বাজার সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টি অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য সময়োপযোগী, কার্যকর, বাস্তব পরিকল্পনা একান্ত প্রয়োজন। আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার হয়রানি এবং সরকারী বিভাগগুলির জটিলতা প্রায়শই রপ্তানিমুখী শিল্প খাতকে বাধা দেয়। এই ধরনের হয়রানি, দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি যে ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি অর্থনীতিতে নতুন গতি দিতে পারে।

বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি অর্থনীতির জন্য একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে কৃষিপণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়াকরণের কোনো নীতিমালা নেই। সারা বিশ্বে এখন বাংলাদেশের কৃষিজাতপণ্যের বাজার তৈরি হয়েছে। সেখানে আমাদের বাংলাদেশের প্রবাসী যাঁরা আছেন তারা ব্যবহারের সুযোগ পান না এবং স্থানীয় যাঁরা আছেন তারাও এখন বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর ফলে দিন দিন একটা বাজার তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন আমাদের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বাইরে রপ্তানি করতে হলে অবশ্যই আমাদের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। যাতে প্রক্রিয়াজাতকরণ যেন আধুনিক হয়, মানসম্মত হয় সেজন্য একটা নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির জন্য একটি নীতি হবে। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির জন্য, মূলত রপ্তানিকে ফোকাস করেই এই নীতিমাল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি হলেও এর পরিমাণ ও আর্থিক মূল্যমান মোট রপ্তানির উল্লেখযোগ্য নয়, যদিও ক্রমান্বয়ে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যও রপ্তানির তালিকায় অধিকহারে যুক্ত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ বিলিয়ন ডলার কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। সারনি-১ হতে দেখা যায় যে, কৃষিপণ্য বিভিন্ন বছরে ধারবাহিকভাবে রপ্তানি হয়েছে এবং রপ্তানির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। আশা করা যায় সকলের প্রচেষ্টায় কৃষিপণ্য রপ্তানির এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শাকসবজি এগিয়ে আছে। তবে ফলমূলও রপ্তানির ক্ষেত্রে আগামী দিনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ হতে নানাবিধ কৃষিপণ্যসমূহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এরমধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা পাতা, আম, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, লটকন, আমড়া, পেয়ারা, শুকনা বরই, হিমায়িত সবজি আলু, কচু, পটল, মুখীকচু, লাউ, পেঁপে, শিম, করলা, কাকরুল, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, গুড়া মসলা, কালিজিরা, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, শুকনা মরিচ, বিরিয়ানী মসলা, কারি মসলা, ড্রিংকস, বিস্কুট, চানাচুর, সেমাই, পটেটো ফ্লেকস, নুডলস, ড্রাই কেক, মুড়ি, চিড়া, ফুড স্টাফ প্রভৃতি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে যে সকল দেশে শাকসবজি রপ্তানি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ও নেপাল এবং যে সকল দেশে ফল রপ্তানি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো- কাতার, ভারত, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়া।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশও শাকসবজি এবং ফলমূল বিদেশে রপ্তানি করে। অন্যান্য দেশের রপ্তানির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ এখনও কৃষিপণ্য রপ্তানির বাজারে উল্লেখযোগ্য দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেনি। কৃষিপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনার পাশাপাশি অনেক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পণ্য রপ্তানির নিমিত্ত বিমানে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় স্পেস না পাওয়া। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট করার নিমিত্ত পরীক্ষাগারের অভাব, বিমানবন্দরে হিমাগারের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের কাক্সিক্ষত জাতের অভাব, ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সহজীকরণ ইত্যাদি। এর পাশাপাশি আমদানিকারক দেশসমূহের বিভিন্ন পণ্য বিষয়ে কি কি চাহিদা রয়েছে সে বিষয়ে তথ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ নতুন নতুন বাজার অন্বেষণ করা আবশ্যক।

কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য করণীয়ের মধ্যে প্রথম হলো গুণগত মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সবজি ফল উৎপাদন, বিমানে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে স্পেস বৃদ্ধি, কৃষিপণ্যর জন্য বিমান বন্দরে পৃথক গেট ও স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করা, বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা, কৃষিপণ্য পরিবহনের সুবিধা বৃদ্ধি, পণ্য রপ্তানির জন্য প্যাকেজিং এর মান বৃদ্ধি, আলুর উন্নত জাতের সরবরাহ বৃদ্ধি, বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনের সহায়তা বৃদ্ধি, দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সরকার কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্য ২০% প্রণোদনা প্রদান করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আ্যক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরি এক গতিশীল ভূমিকা পালন করবে। আশা করা যায় সরকারের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ, কৃষকের প্রচেষ্টা, কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকগণের কার্যক্রম ও প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিসমূহের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কৃষিপণ্য রপ্তানির একটি নতুন দুয়ার খুলে যাবে। বাংলাদেশ অচিরেই কৃষিপণ্য রপ্তানি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সক্ষম হবে।

২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যের বাজারে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যিক সুবিধা ব্যবহার করে সেখানে বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সেলক্ষ্যে রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবের সনদ প্রদান, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ, পণ্যের উৎপাদন থেকে জাহাজীকরণ পর্যন্ত শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় মাণ নিয়ন্ত্রণ, যথাযথ মান বজায় রেখে প্যাকেজিং ও সালমোনোলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত পণ্য সরবরাহ, কন্ট্রাক্ট ও জোন ফার্মিংয়ে গুরুত্বারোপ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য একটি পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট খাতের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির নিকট আমাদের কৃষি পণ্য পৌঁছাতে পারলেও, মূলধারার বাজারে আমরা এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে মূলধারার বাজাওে প্রবেশ করার উপায় সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে।

লেখক – প্রবন্ধিক ও গবেষক

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

কৃষিপণ্য রপ্তানি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে – হীরেন পণ্ডিত

পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:৪৬:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশি কৃষি পণ্যের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপণ্য এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের বিপণনের সুবিধার্থে ট্রেডিং সিস্টেমের আইনি ও অবকাঠামোগত সংস্কার, পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়ন এবং ঝুঁকি-ভিত্তিক পণ্য ছাড়পত্রের কাঠামোগত পরিবর্তন। রপ্তানি উনয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছিলো। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আড়াই গুণেরও বেশি বেড়ে ১০২ মিলিয়ন ৮১ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। শিক্ষিত যুবক-যুব নারীরা রপ্তানির জন্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে ঝোঁক বৃদ্দি পাচ্ছে যা আশার সৃষ্টি করেছে সবার মাঝে।

গত অর্থবছরে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ কোটি ৯২ লাখ ডলার। বাংলাদেশ চা রপ্তানি করে ভালো আয় করতো। কিন্তু এখন তা কমে এসেছে। গত অর্থবছরে মাত্র ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার মূল্যের চা রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ সবজি রপ্তানি থেকে প্রচুর আয় করছে। প্রতিবছর এ খাতের রপ্তানি বাড়ছে। গত অর্থবছরে সবজি রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ১১ কোটি ৮৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এবার লক্ষ্যমাত্রা ১২ কোটি ডলার। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসেছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০২.২৬ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫.৪৩ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন আশার সঞ্চার করছে কৃষিপণ্য। করোনা মহামারীর মধ্যে গত অর্থবছরে এই খাত এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। চলতি অর্থ বছরেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত চার বছর ধরে এ খাতের রপ্তানি আয় বাড়ছে। তবে করোনার কারণে ২০২০ অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি ৫ শতাংশ কমেছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় ১৯ শতাংশ বেড়েছে এবং প্রথমবারের মতো ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যদিও করোনা মহামারির মধ্যে পুরো বছর কেটে গেছে।

কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ শতাধিক কোম্পানি কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ২০টি বড় ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। সবগুলোই কমবেশি রপ্তানি করছে। বর্তমানে সরকার কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা (৩৪ কোটি ১০ লাখ ডলার), যা এ খাতের মোট রপ্তানির ৩৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।

১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু করা বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকা এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ ১৪৫টি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। কোম্পানিটি ফলের পানীয়, পানীয়, বিস্কুট, সস, নুডুলস, জেলি, মশলা, সুগন্ধি চাল, আলু পটকা, চানাচুর, ঝাল-মুড়ি ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাবারের সম্ভাবনা বিশাল। মানুষ যেমন রেডিমেড কাপড় গ্রহণ করছে, তেমনি মানুষ রেডিমেড খাবারও কিনে খাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশই প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন করে না। তারা মূলত আমদানি নির্ভর। সব মিলিয়ে আগামী দিনে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়াব। পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের দেশের কৃষিকে আরও বেশি উৎপাদনশীল করতে হবে।

ইপিবি’র তথ্য অনুসারে, উল্লেখযোগ্য কৃষি রপ্তানি হচ্ছে শাকসবজি, চা, ফুল, ফল, বিভিন্ন মসলা, তামাক, শুকনো খাবার ইত্যাদি। তবে শুষ্ক খাদ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত ১০০ মিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের অংশই বেশি। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পাঁচ শতাধিক কোম্পানি। এর মধ্যে ২০টি বড় ও মাঝারি শিল্প এবং ১০০টির বেশি কোম্পানি রপ্তানি করছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য রপ্তানিতে কর রেয়াত ও ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফলে গত চার বছরে এ খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে। বিশ্ববাজারের চাহিদা মাথায় রেখে এ খাতের উদ্যোক্তারা নতুন পণ্য রপ্তানি শুরু করেছেন, যার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববাজারে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বেড়েছে। সরকার চায় দেশের উদ্যোক্তারা এ সুযোগ কাজে লাগান এবং সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, দেশীয় কোম্পানিগুলি বছরের কয়েক মাসে বিস্কুট এবং রুটির মতো শুকনো খাবার রপ্তানি করে ৮৮.৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য এবং উপসাগরীয় অঞ্চল। তবে এসব দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসীরা প্রধান ভোক্তা। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বিশ্বের ১৪৫টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুডে বহু মানুষ তাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করেছে। খরচ কমাতে তারা সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার, বিশেষ করে শুকনো খাবারের দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে গত অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অর্জন করেছে তারা। প্রযুক্তির আধুনিকায়ন এবং মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার ফলে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি করছে। এ ছাড়া কর রেয়াত ও নগদ সহায়তার মতো সরকারের নীতি সহায়তা কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের অনেক দেশই প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন করে না। তারা মূলত আমদানি নির্ভর। সব মিলিয়ে আগামী দিনে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়বে। কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের দেশের কৃষিকে আরও বেশি উৎপাদনশীল করতে হবে। এ খাতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের এখনো শুল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েছে। সরকারকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এসব জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। এখন কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মানব ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত’ সার্টিফিকেট।

দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব স্থাপন করে এমন সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে রপ্তানি ১০ গুণ বাড়াতে পারে এবং প্রতি বছর আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের সনদ দেওয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। আমদানি-রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে কৃষি পণ্যের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশেও বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ‘মানব ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত’ সার্টিফিকেট রপ্তানিতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। মানের নিশ্চয়তা সনদ দেওয়ার জন্য দেশে কোনো স্বীকৃত ল্যাব নেই। যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়া রপ্তানি করা মিঠা পানির মাছ আমদানি নিষিদ্ধ করেছে অনেক দেশ।

বাংলাদেশে কৃষি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মাছ রপ্তানির জন্য মৎস্য অধিদপ্তর এবং মাংস ও প্রাণীজ পণ্য রপ্তানির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য রপ্তানির জন্য হালাল সার্টিফিকেট জারি করে এবং বিএসটিআই উৎপাদন পর্যায়ে বাংলাদেশের মান অনুযায়ী ১৮১টি পণ্যকে সার্টিফিকেট দেয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কোনওটিরই ক্রেতা দেশগুলির দ্বারা নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে ‘মানব ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত’ প্রশংসাপত্র জারি করার ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশন দেশে কৃষিপণ্যের অপচয় রোধে আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃত ল্যাব স্থাপনসহ মান নির্ধারণকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি একক ‘স্বাস্থ্য প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের সুপারিশ করেছে এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে। এমন একটি সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব হলে সেক্ষেত্রে কৃষি ও খাদ্যপণ্যের রপ্তানি ১০ গুণ বৃদ্ধি করে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

রপ্তানি বাণিজ্য নির্দিষ্ট পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বের কোন দেশে কী ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা জানা প্রয়োজন। এ জন্য বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। বিভিন্ন দেশের আমদানিকারক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এ জন্য আমাদের রপ্তানিকারকদের নিজস্ব উদ্যোগ দরকার। বর্তমানে যে দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে তার বাইরে আরও নতুন দেশে বাজার খোঁজার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যের উনয়ন করতে হলে আমাদের পণ্যের মান বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের প্রচারের কারণে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের কিছু কোম্পানি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে, বিশেষ করে খাদ্য ও কৃষি-শিল্পজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের পণ্যের কয়েকটি ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে, এর বাজার সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টি অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য সময়োপযোগী, কার্যকর, বাস্তব পরিকল্পনা একান্ত প্রয়োজন। আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার হয়রানি এবং সরকারী বিভাগগুলির জটিলতা প্রায়শই রপ্তানিমুখী শিল্প খাতকে বাধা দেয়। এই ধরনের হয়রানি, দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি যে ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি অর্থনীতিতে নতুন গতি দিতে পারে।

বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি অর্থনীতির জন্য একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে কৃষিপণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়াকরণের কোনো নীতিমালা নেই। সারা বিশ্বে এখন বাংলাদেশের কৃষিজাতপণ্যের বাজার তৈরি হয়েছে। সেখানে আমাদের বাংলাদেশের প্রবাসী যাঁরা আছেন তারা ব্যবহারের সুযোগ পান না এবং স্থানীয় যাঁরা আছেন তারাও এখন বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর ফলে দিন দিন একটা বাজার তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন আমাদের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বাইরে রপ্তানি করতে হলে অবশ্যই আমাদের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। যাতে প্রক্রিয়াজাতকরণ যেন আধুনিক হয়, মানসম্মত হয় সেজন্য একটা নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির জন্য একটি নীতি হবে। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির জন্য, মূলত রপ্তানিকে ফোকাস করেই এই নীতিমাল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি হলেও এর পরিমাণ ও আর্থিক মূল্যমান মোট রপ্তানির উল্লেখযোগ্য নয়, যদিও ক্রমান্বয়ে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যও রপ্তানির তালিকায় অধিকহারে যুক্ত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ বিলিয়ন ডলার কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। সারনি-১ হতে দেখা যায় যে, কৃষিপণ্য বিভিন্ন বছরে ধারবাহিকভাবে রপ্তানি হয়েছে এবং রপ্তানির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। আশা করা যায় সকলের প্রচেষ্টায় কৃষিপণ্য রপ্তানির এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শাকসবজি এগিয়ে আছে। তবে ফলমূলও রপ্তানির ক্ষেত্রে আগামী দিনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ হতে নানাবিধ কৃষিপণ্যসমূহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এরমধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা পাতা, আম, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, লটকন, আমড়া, পেয়ারা, শুকনা বরই, হিমায়িত সবজি আলু, কচু, পটল, মুখীকচু, লাউ, পেঁপে, শিম, করলা, কাকরুল, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, গুড়া মসলা, কালিজিরা, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, শুকনা মরিচ, বিরিয়ানী মসলা, কারি মসলা, ড্রিংকস, বিস্কুট, চানাচুর, সেমাই, পটেটো ফ্লেকস, নুডলস, ড্রাই কেক, মুড়ি, চিড়া, ফুড স্টাফ প্রভৃতি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে যে সকল দেশে শাকসবজি রপ্তানি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ও নেপাল এবং যে সকল দেশে ফল রপ্তানি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো- কাতার, ভারত, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়া।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশও শাকসবজি এবং ফলমূল বিদেশে রপ্তানি করে। অন্যান্য দেশের রপ্তানির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ এখনও কৃষিপণ্য রপ্তানির বাজারে উল্লেখযোগ্য দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেনি। কৃষিপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনার পাশাপাশি অনেক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পণ্য রপ্তানির নিমিত্ত বিমানে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় স্পেস না পাওয়া। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট করার নিমিত্ত পরীক্ষাগারের অভাব, বিমানবন্দরে হিমাগারের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের কাক্সিক্ষত জাতের অভাব, ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সহজীকরণ ইত্যাদি। এর পাশাপাশি আমদানিকারক দেশসমূহের বিভিন্ন পণ্য বিষয়ে কি কি চাহিদা রয়েছে সে বিষয়ে তথ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ নতুন নতুন বাজার অন্বেষণ করা আবশ্যক।

কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য করণীয়ের মধ্যে প্রথম হলো গুণগত মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সবজি ফল উৎপাদন, বিমানে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে স্পেস বৃদ্ধি, কৃষিপণ্যর জন্য বিমান বন্দরে পৃথক গেট ও স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করা, বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা, কৃষিপণ্য পরিবহনের সুবিধা বৃদ্ধি, পণ্য রপ্তানির জন্য প্যাকেজিং এর মান বৃদ্ধি, আলুর উন্নত জাতের সরবরাহ বৃদ্ধি, বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনের সহায়তা বৃদ্ধি, দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সরকার কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্য ২০% প্রণোদনা প্রদান করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আ্যক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরি এক গতিশীল ভূমিকা পালন করবে। আশা করা যায় সরকারের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ, কৃষকের প্রচেষ্টা, কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকগণের কার্যক্রম ও প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিসমূহের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কৃষিপণ্য রপ্তানির একটি নতুন দুয়ার খুলে যাবে। বাংলাদেশ অচিরেই কৃষিপণ্য রপ্তানি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সক্ষম হবে।

২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যের বাজারে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যিক সুবিধা ব্যবহার করে সেখানে বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সেলক্ষ্যে রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবের সনদ প্রদান, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ, পণ্যের উৎপাদন থেকে জাহাজীকরণ পর্যন্ত শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় মাণ নিয়ন্ত্রণ, যথাযথ মান বজায় রেখে প্যাকেজিং ও সালমোনোলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত পণ্য সরবরাহ, কন্ট্রাক্ট ও জোন ফার্মিংয়ে গুরুত্বারোপ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য একটি পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট খাতের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির নিকট আমাদের কৃষি পণ্য পৌঁছাতে পারলেও, মূলধারার বাজারে আমরা এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে মূলধারার বাজাওে প্রবেশ করার উপায় সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে।

লেখক – প্রবন্ধিক ও গবেষক