ঢাকা ০১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই – এ্যাডঃ সৈয়দ ইফতেখার আলী শ্যামনগরে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার উপর ওরিয়েন্টশন আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত 

বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য নতুন গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ১২:০৮:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
  • ১০৬ জন পড়েছেন ।

হীরেন পণ্ডিত: বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়াস কাজে লেগেছে বলে মনে করছেন অনেকে। বৈধ পথে পাঠালে তাদের নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা বৈধপথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ পাচ্ছেন। এ বছরে ভালো রেমিট্যান্স আসবে বলেও আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে এখন বৈধ পথে প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে বেশি। বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। এক দেশ এক রেইট কর্মসূচির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে ৫ হাজার এর বেশি ইউনিয়ন। ৫ জি চালু হয়েছে তবে আরো ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে আরো কিছু দিন পর। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে পারলেই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে এগুতে পারব। তাহলেই সম্ভব হবে অতিরিক্ত কর্মক্ষম জনমানবকে কাজে লাগানো আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। সবকিছু যেন হাতের মুঠোয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে পদার্পণ করেছি আমরা। বদলে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা সবকিছুই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি নতুন দেশে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ অন্বেষণ এবং সেখানে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এবং নতুন দেশে জনশক্তি পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা এমন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যা একটি দেশের জন্য প্রয়োজন।
সরকার ইতিমধ্যে কয়েকটি নতুন দেশে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে তবে আমাদের দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে এবং সে জন্য আমরা কর্মীদের জন্য বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরা কীভাবে ভালো থাকবেন এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবেন সে বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। নতুন দেশে বৈদেশিক কর্মসংস্থান অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ। তাছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন। দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে।
প্রবাসীরা যদি হুন্ডি’র মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স পাঠান, তবে তা হয়তো তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছায় এবং তারা তা ব্যয় করে। কিন্তু এতে, যিনি এই অর্থ পাঠাচ্ছেন তার কোন সঞ্চয় হয় না। অনেক প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরার পর দেখেন যে-দেশে তার কোনো টাকা নেই এবং অনেককে এই ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যারা ব্যাংকিং বা আইনি মাধ্যমে টাকা পাঠায়, তার সরকার তাদের সেই রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রণোদনা দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বিদেশে কাজে গিয়ে মানুষ যাতে প্রতারণার শিকার না হয় ও যথাযথ কর্মসংস্থান পায় সে জন্য সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপরও তিনি জোর দেন। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে এবং বিদেশি চাকরি প্রার্থীরা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিজেদের নিবন্ধন করতে পারেন।
নারী শ্রমিকদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যারা সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানে যাচ্ছেন- তারা ভালো আছেন। কিন্তু যারা দালালদের খপ্পরে পড়েছেন তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সরকার যে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ক্যাম্পেইন চালু করেছে- সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশ তার ফল পেতে শুরু করেছে। ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন, যা আগে হিসাব ছিল না। বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এবং মানুষ বেশি আয় করছে।
একজন দিনমজুর আগে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করত, এখন কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারে। সর্বনিম্ন আয় ৫০০-৬০০ টাকা। গ্রামাঞ্চলে এই পরিমাণের চেয়ে বেশি আয় হয় ধান কাটার মৌসুমে দিনে তিন বেলা খাবারসহ মজুরির পরিমাণ ৭০০-৮০০ টাকা। গ্রামীণ অর্থনীতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কেউ যদি গ্রামাঞ্চলে যায় তবে দেখা যাবে যে গ্রামীণ এলাকায় জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। মানুষ সচ্ছল হয়ে উঠায় মাঝে মাঝে শ্রমিকের অভাবও দেখা যায়। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে অনেক বৈচিত্র্য বাড়ছে, পিছিয়ে বাংলাদেশ। উপসাগরীয় দেশগুলোতে দক্ষ বিদেশি কর্মীর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও এই সুযোগ হাতছাড়া হবার ভয় রয়েছে। কারণ এখনও দেশের বেশিরভাগ কর্মীই অদক্ষ কিংবা স্বল্পদক্ষ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে বৈচিত্র্য বেড়েছে। কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন খাতে। দেশ থেকে তাই দক্ষ কর্মী বাহিনী কাজের জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন অনেকটা পতনের মুখে। আর এই সংকটের মুহূর্তে যে পরিমাণ বৈদেশিক রিজার্ভ দেশে থাকা প্রয়োজন, সে অনুপাতে বাড়ছে না বিদেশি কর্মীর সংখ্যা।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে দক্ষ বিদেশি কর্মীর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও এই সুযোগ হাতছাড়া করতে বসেছে বাংলাদেশ। কারণ এখনও দেশের বেশিরভাগ কর্মীই অদক্ষ কিংবা স্বল্পদক্ষ। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়, জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার কমপক্ষে ৫০ লাখ নতুন কর্মী বিদেশে প্রেরণ এবং ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই ৫০ লাখের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই হবে দক্ষ শ্রেণীর কর্মী। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংক্রান্ত ১০-দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সংস্কার, সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজার সম্প্রসারণ, দক্ষতা উনয়ন, বিভিন্ন পরিষেবায় প্রবেশাধিকার, অর্থের যোগান, অধিকার সুরক্ষা, ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ, বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টতা, অভিবাসনের খরচ এবং পুনঃএকত্রীকরণ। তবে এগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি এখনও পর্যন্ত।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নানান ধরনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ মানবসম্পদ উনয়নের জন্য সরকারের উচিত দীর্ঘ, মধ্যম ও স্বল্পমেয়াদী কর্মসূচি প্রণয়ন করা। যেহেতু বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সরকারের একটি মধ্যম-মেয়াদী ব্যবস্থা, তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষের উচিত তাৎক্ষণিক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা। তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে বিক্রয় এবং বিপণন, ক্লাউড, পাবলিক সেক্টর, সফ্টওয়্যার উন্নয়ন, সাইবার নিরাপত্তা এবং ফিনান্সিয়াল সেক্টরে। বাংলাদেশিদের বেশিরভাগ নিরাপত্তারক্ষী, ড্রাইভার এবং নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজে নিযুক্ত হচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
এছাড়া, উপসাগরীয় অন্যান্য দেশে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, নিরাপত্তা প্রহরী এবং ড্রাইভার হিসেবে বাংলাদেশিরা চাকরি নিচ্ছেন। প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান এবং রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনার টেকনিশিয়ান হিসেবে কিছু স্বল্পদক্ষ শ্রমিক ওমানের মতো বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। কিছু কর্মী অনলাইনে নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আইটি খাতে চাকরি সুযোগ নিতে পারে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই কম। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদেশে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাতে শুরু করেছে। গত দুই মাসে দেশ থেকে প্রায় এক হাজার নার্স ও ল্যাব টেকনিশিয়ানকে কয়েতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপসহ আরও কিছু অঞ্চলে দক্ষ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন, কেয়ারগিভার, আইটি প্রফেশনাল এবং আরএমজি কর্মী পাঠানো হয়েছে। তবে এই সংখ্যাটি খুবই কম।
আন্তর্জাতিক অভিবাসনে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ এবং ২০২০ সালে রেমিট্যান্স অর্জনে দেশের অবস্থান ছিল অষ্টম। অর্থাৎ, বিদেশে বেশি কর্মী পাঠানোর পরেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় কম। এদিকে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো, ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯ মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। অবশ্য রফতানির প্রধান খাত তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে ওভেন ওপাশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং নিটওয়্যার পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
তবে একক মাস হিসাবে বিদায়ী রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। পূরণ হয়নি সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও। আগের বছরের তুলনায় আয় কমেছে ১১ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলার। আর সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে সাড়ে ৩৭ কোটি ডলার। তবে আগের মাস ফেব্রæয়ারির তুলনায় কিছুটা বেড়েছে রপ্তানি আয়। ইপিবির তথ্য মতে, ওষুধ ও তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাবদ মার্চ মাসে আয় হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ইউএস ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলার। অর্থাৎ ১১ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পরিমাণ কম পণ্য রপ্তানি হয়েছে। শতাংশের হিসাবে যা ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ কম।
২০২২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, মোট কর্মসংস্থানে কৃষির অংশ বেড়েছে এবং শিল্পের অংশ কমেছে। উল্লেখ্য, এই উপাত্ত সার্বিকভাবে শিল্প খাত সম্পর্কে; ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের জন্য আলাদা উপাত্ত পরিবেশিত হয়নি। যাই হোক কোভিড মহামারির সময় থেকেই দেখা গিয়েছিলো, শিল্প খাতে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে আর শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কৃষিতে ২০১৬-১৭ সালে নিয়োজিত ছিল ২.৪৭ কোটি, আর ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়ে গেল ৩.২২ কোটি। সাড়ে পাঁচ বছরে এই খাতে ৭৫ লাখ অতিরিক্ত মানুষ।
বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে কৃষিতে উদ্বৃত্ত শ্রম রয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষি থেকে শ্রমিক শিল্প খাতে যাবে এমনটিই আশা করা হয়, সেখানে কৃষিতে নিয়োজিতের সংখ্যা বাড়া এবং শিল্পে কমা অবশ্যই বিপরীতমুখী প্রবণতা এগুলো নিয়ে আরো অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এবং নতুন দেশে জনশক্তি পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষত যখন সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজির আলোকে ‘কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে’ সবাইকে নিয়ে অন্তুর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন, বৈষম্য হ্রাস, নিরাপদ কর্ম এবং দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের মূল চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রযুক্তিগত ডিজিটাল জ্ঞান তৈরি করছে নানা কর্মসংস্থান। শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো সহজ করে তুলতে এটুআইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’ ও ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম।
দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানিতে এখনো যেমন অদক্ষ ক্যাটাগরিতে রয়েছে, তেমনি দেশে দক্ষ জনবলের অভাবে বিদেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে। এজন্য জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কারিগরি শিক্ষার মডেল আমাদের অনুসরণ করতে হবে। জার্মানিতে কারিগরি শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। দেশে এ শিক্ষার হার অন্তত ৬০ শতাংশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের উন্নতির মূলে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা।
আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হতে পারে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে আজকের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে শুধু মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক এবং সার্বিক জীবনমানের উত্তরণ ঘটানো যায়। জাপানের প্রাকৃতিক সম্পদ অত্যন্ত নগণ্য এবং আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ মাত্র ১৫%।
জাপান সব প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেছে তার জনসংখ্যাকে সুদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তর করার মাধ্যমে। জাপানের এই উদাহরণ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বাংলাদেশের সুবিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে আমাদের পক্ষেও উন্নত অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়। শিল্প-কারখানায় কী ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা লাগবে সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষাক্রমের তেমন সমন্বয় নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, ব্লকচেইন এসব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, শিল্প-কারখানা, ব্যাংকিং, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করার পরিধি এখনও তাই ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত।
আশার কথা, শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি হিসেবে তিনটি বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো- অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাহিনী তৈরি করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়েনর জন্য প্রয়োজন ব্যাপকহারে সরকারী বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ। তাই সবাই মিলে আমাদের এখন থেকেই একটি সুপরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব, গড়তে পারব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
তাই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও হাইটেক পার্কসহ সবাইকে এক হয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি মনেপ্রাণে অনুধাবনপূর্বক কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারকে এ খাতে উন্নয়ন বাজেট বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদেরকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখে পড়তে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফলে অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিস্তৃতি লাভ করেছে। নারীরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। দক্ষভাবেই চলছে কাজগুলো। দক্ষ কর্মী তৈরি করে আমাদের নতুন গন্তব্য খোঁজে বের করতে হবে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

কালিগঞ্জে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ

বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য নতুন গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে

পোস্ট করা হয়েছে : ১২:০৮:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

হীরেন পণ্ডিত: বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়াস কাজে লেগেছে বলে মনে করছেন অনেকে। বৈধ পথে পাঠালে তাদের নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা বৈধপথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ পাচ্ছেন। এ বছরে ভালো রেমিট্যান্স আসবে বলেও আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে এখন বৈধ পথে প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে বেশি। বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। এক দেশ এক রেইট কর্মসূচির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে ৫ হাজার এর বেশি ইউনিয়ন। ৫ জি চালু হয়েছে তবে আরো ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে আরো কিছু দিন পর। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে পারলেই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে এগুতে পারব। তাহলেই সম্ভব হবে অতিরিক্ত কর্মক্ষম জনমানবকে কাজে লাগানো আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। সবকিছু যেন হাতের মুঠোয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে পদার্পণ করেছি আমরা। বদলে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা সবকিছুই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি নতুন দেশে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ অন্বেষণ এবং সেখানে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এবং নতুন দেশে জনশক্তি পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা এমন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যা একটি দেশের জন্য প্রয়োজন।
সরকার ইতিমধ্যে কয়েকটি নতুন দেশে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে তবে আমাদের দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে এবং সে জন্য আমরা কর্মীদের জন্য বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরা কীভাবে ভালো থাকবেন এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবেন সে বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। নতুন দেশে বৈদেশিক কর্মসংস্থান অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ। তাছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন। দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে।
প্রবাসীরা যদি হুন্ডি’র মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স পাঠান, তবে তা হয়তো তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছায় এবং তারা তা ব্যয় করে। কিন্তু এতে, যিনি এই অর্থ পাঠাচ্ছেন তার কোন সঞ্চয় হয় না। অনেক প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরার পর দেখেন যে-দেশে তার কোনো টাকা নেই এবং অনেককে এই ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যারা ব্যাংকিং বা আইনি মাধ্যমে টাকা পাঠায়, তার সরকার তাদের সেই রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রণোদনা দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বিদেশে কাজে গিয়ে মানুষ যাতে প্রতারণার শিকার না হয় ও যথাযথ কর্মসংস্থান পায় সে জন্য সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপরও তিনি জোর দেন। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে এবং বিদেশি চাকরি প্রার্থীরা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিজেদের নিবন্ধন করতে পারেন।
নারী শ্রমিকদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যারা সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানে যাচ্ছেন- তারা ভালো আছেন। কিন্তু যারা দালালদের খপ্পরে পড়েছেন তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সরকার যে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ক্যাম্পেইন চালু করেছে- সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশ তার ফল পেতে শুরু করেছে। ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন, যা আগে হিসাব ছিল না। বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এবং মানুষ বেশি আয় করছে।
একজন দিনমজুর আগে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করত, এখন কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারে। সর্বনিম্ন আয় ৫০০-৬০০ টাকা। গ্রামাঞ্চলে এই পরিমাণের চেয়ে বেশি আয় হয় ধান কাটার মৌসুমে দিনে তিন বেলা খাবারসহ মজুরির পরিমাণ ৭০০-৮০০ টাকা। গ্রামীণ অর্থনীতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কেউ যদি গ্রামাঞ্চলে যায় তবে দেখা যাবে যে গ্রামীণ এলাকায় জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। মানুষ সচ্ছল হয়ে উঠায় মাঝে মাঝে শ্রমিকের অভাবও দেখা যায়। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে অনেক বৈচিত্র্য বাড়ছে, পিছিয়ে বাংলাদেশ। উপসাগরীয় দেশগুলোতে দক্ষ বিদেশি কর্মীর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও এই সুযোগ হাতছাড়া হবার ভয় রয়েছে। কারণ এখনও দেশের বেশিরভাগ কর্মীই অদক্ষ কিংবা স্বল্পদক্ষ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে বৈচিত্র্য বেড়েছে। কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন খাতে। দেশ থেকে তাই দক্ষ কর্মী বাহিনী কাজের জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন অনেকটা পতনের মুখে। আর এই সংকটের মুহূর্তে যে পরিমাণ বৈদেশিক রিজার্ভ দেশে থাকা প্রয়োজন, সে অনুপাতে বাড়ছে না বিদেশি কর্মীর সংখ্যা।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে দক্ষ বিদেশি কর্মীর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও এই সুযোগ হাতছাড়া করতে বসেছে বাংলাদেশ। কারণ এখনও দেশের বেশিরভাগ কর্মীই অদক্ষ কিংবা স্বল্পদক্ষ। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়, জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার কমপক্ষে ৫০ লাখ নতুন কর্মী বিদেশে প্রেরণ এবং ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই ৫০ লাখের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই হবে দক্ষ শ্রেণীর কর্মী। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংক্রান্ত ১০-দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সংস্কার, সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজার সম্প্রসারণ, দক্ষতা উনয়ন, বিভিন্ন পরিষেবায় প্রবেশাধিকার, অর্থের যোগান, অধিকার সুরক্ষা, ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ, বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টতা, অভিবাসনের খরচ এবং পুনঃএকত্রীকরণ। তবে এগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি এখনও পর্যন্ত।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নানান ধরনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ মানবসম্পদ উনয়নের জন্য সরকারের উচিত দীর্ঘ, মধ্যম ও স্বল্পমেয়াদী কর্মসূচি প্রণয়ন করা। যেহেতু বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সরকারের একটি মধ্যম-মেয়াদী ব্যবস্থা, তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষের উচিত তাৎক্ষণিক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা। তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে বিক্রয় এবং বিপণন, ক্লাউড, পাবলিক সেক্টর, সফ্টওয়্যার উন্নয়ন, সাইবার নিরাপত্তা এবং ফিনান্সিয়াল সেক্টরে। বাংলাদেশিদের বেশিরভাগ নিরাপত্তারক্ষী, ড্রাইভার এবং নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজে নিযুক্ত হচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
এছাড়া, উপসাগরীয় অন্যান্য দেশে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, নিরাপত্তা প্রহরী এবং ড্রাইভার হিসেবে বাংলাদেশিরা চাকরি নিচ্ছেন। প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান এবং রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনার টেকনিশিয়ান হিসেবে কিছু স্বল্পদক্ষ শ্রমিক ওমানের মতো বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। কিছু কর্মী অনলাইনে নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আইটি খাতে চাকরি সুযোগ নিতে পারে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই কম। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদেশে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাতে শুরু করেছে। গত দুই মাসে দেশ থেকে প্রায় এক হাজার নার্স ও ল্যাব টেকনিশিয়ানকে কয়েতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপসহ আরও কিছু অঞ্চলে দক্ষ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন, কেয়ারগিভার, আইটি প্রফেশনাল এবং আরএমজি কর্মী পাঠানো হয়েছে। তবে এই সংখ্যাটি খুবই কম।
আন্তর্জাতিক অভিবাসনে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ এবং ২০২০ সালে রেমিট্যান্স অর্জনে দেশের অবস্থান ছিল অষ্টম। অর্থাৎ, বিদেশে বেশি কর্মী পাঠানোর পরেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় কম। এদিকে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো, ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯ মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। অবশ্য রফতানির প্রধান খাত তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে ওভেন ওপাশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং নিটওয়্যার পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
তবে একক মাস হিসাবে বিদায়ী রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। পূরণ হয়নি সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও। আগের বছরের তুলনায় আয় কমেছে ১১ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলার। আর সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে সাড়ে ৩৭ কোটি ডলার। তবে আগের মাস ফেব্রæয়ারির তুলনায় কিছুটা বেড়েছে রপ্তানি আয়। ইপিবির তথ্য মতে, ওষুধ ও তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাবদ মার্চ মাসে আয় হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ইউএস ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলার। অর্থাৎ ১১ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পরিমাণ কম পণ্য রপ্তানি হয়েছে। শতাংশের হিসাবে যা ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ কম।
২০২২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, মোট কর্মসংস্থানে কৃষির অংশ বেড়েছে এবং শিল্পের অংশ কমেছে। উল্লেখ্য, এই উপাত্ত সার্বিকভাবে শিল্প খাত সম্পর্কে; ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের জন্য আলাদা উপাত্ত পরিবেশিত হয়নি। যাই হোক কোভিড মহামারির সময় থেকেই দেখা গিয়েছিলো, শিল্প খাতে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে আর শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কৃষিতে ২০১৬-১৭ সালে নিয়োজিত ছিল ২.৪৭ কোটি, আর ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়ে গেল ৩.২২ কোটি। সাড়ে পাঁচ বছরে এই খাতে ৭৫ লাখ অতিরিক্ত মানুষ।
বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে কৃষিতে উদ্বৃত্ত শ্রম রয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষি থেকে শ্রমিক শিল্প খাতে যাবে এমনটিই আশা করা হয়, সেখানে কৃষিতে নিয়োজিতের সংখ্যা বাড়া এবং শিল্পে কমা অবশ্যই বিপরীতমুখী প্রবণতা এগুলো নিয়ে আরো অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এবং নতুন দেশে জনশক্তি পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষত যখন সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজির আলোকে ‘কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে’ সবাইকে নিয়ে অন্তুর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন, বৈষম্য হ্রাস, নিরাপদ কর্ম এবং দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের মূল চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রযুক্তিগত ডিজিটাল জ্ঞান তৈরি করছে নানা কর্মসংস্থান। শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো সহজ করে তুলতে এটুআইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’ ও ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম।
দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানিতে এখনো যেমন অদক্ষ ক্যাটাগরিতে রয়েছে, তেমনি দেশে দক্ষ জনবলের অভাবে বিদেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে। এজন্য জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কারিগরি শিক্ষার মডেল আমাদের অনুসরণ করতে হবে। জার্মানিতে কারিগরি শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। দেশে এ শিক্ষার হার অন্তত ৬০ শতাংশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের উন্নতির মূলে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা।
আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হতে পারে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে আজকের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে শুধু মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক এবং সার্বিক জীবনমানের উত্তরণ ঘটানো যায়। জাপানের প্রাকৃতিক সম্পদ অত্যন্ত নগণ্য এবং আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ মাত্র ১৫%।
জাপান সব প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেছে তার জনসংখ্যাকে সুদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তর করার মাধ্যমে। জাপানের এই উদাহরণ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বাংলাদেশের সুবিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে আমাদের পক্ষেও উন্নত অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়। শিল্প-কারখানায় কী ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা লাগবে সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষাক্রমের তেমন সমন্বয় নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, ব্লকচেইন এসব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, শিল্প-কারখানা, ব্যাংকিং, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করার পরিধি এখনও তাই ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত।
আশার কথা, শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি হিসেবে তিনটি বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো- অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাহিনী তৈরি করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়েনর জন্য প্রয়োজন ব্যাপকহারে সরকারী বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ। তাই সবাই মিলে আমাদের এখন থেকেই একটি সুপরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব, গড়তে পারব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
তাই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও হাইটেক পার্কসহ সবাইকে এক হয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি মনেপ্রাণে অনুধাবনপূর্বক কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারকে এ খাতে উন্নয়ন বাজেট বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদেরকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখে পড়তে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফলে অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিস্তৃতি লাভ করেছে। নারীরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। দক্ষভাবেই চলছে কাজগুলো। দক্ষ কর্মী তৈরি করে আমাদের নতুন গন্তব্য খোঁজে বের করতে হবে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক