রনজিৎ বর্মন:

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় শুক্রবার বিকালে (১৪ এপ্রিল) বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মীয় উৎসব চড়ক পূজা বা চড়ক পূজা উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রবীন ধর্মীয় ব্যক্তিদের মতে চৈত্র সংক্রান্তিতে সাধারণত এ চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা সনের এই শেষ মাসটি জুড়ে নানান উৎসব পালিত হয়। প্রবীন হিন্দু ব্যক্তিদের মতে এটি শিবের মাস বলা হয়। এ মাসে শিব ঠাকুরের পূজা অর্চনা করে থাকেন সন্ন্যাসী বা ভক্তবৃন্দ।

পূজার কয়েকদিন আগে থেকে সন্ন্যাসীরা কঠোর ব্রত ও সংযম পালন করে থাকেন। চড়কের দিনে সন্ন্যাসীরা শিবের প্রতি ভক্তি সহকারে প্রনাম করে বাঁশের তৈরী উঁচু স্থান থেকে জালের উপর সন্ন্যাস পড়ে থাকেন। এছাড়া কোন কোন স্থানে বড়শি চড়ক হয়ে থাকে।

শ্যামনগর উপজেলায় এবার বড়শি চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউপির ধূমঘাট কেওড়াতলী গ্রামে লক্ষ্মী বাবার শিব মন্দির চত্তরে। এখানে বহু ভক্ত বৃন্দের সমাগম ঘটে। বড়শি চড়ক পূজায় ভক্তের পিঠে লোহার হুক লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং চারদিকে ঘুরতে দেখা যায়। ঘোরা শেষ হলে দাগ বা কাটা চিহ্ন মিলিয়ে যায়। এ মেলায় উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. জি এম শোকর আলী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ উপজেলার নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।

এছাড়া উপজেলা সদরের জমিদার বাড়ী সংলগ্ন চড়ক পূজায় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম জগলুল হায়দার, শ্যামনগর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণানন্দ মুখ্যার্জী প্রমুখ। উপজেলার বৃহৎ এবং দীর্ঘ দিনের পূজা মুন্সিগঞ্জ ইউপির জেলেখালী গ্রামের গিরিধর বাবুর চড়ক পূজা। এখানকার মেলায় উপজেলা সহ উপজেলার বাইরে থেকে বহু ভক্তবৃন্দ আসেন। মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য চিত্ত রঞ্জন মৃধা বলেন পূর্বে এখানে চড়ক পূজা উপলক্ষে সাত থেকে এক মাস পর্যন্ত মেলা চলত। এখানে যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ এসব চলত। এখন অবশ্য এগুলি আর হয়না।
উপজেলা সদরের চন্ডিপুর, সোনামুগারী, আটুলিয়া সহ অন্যান্য স্থানে চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চড়ক পূজায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমাগম ঘটে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ সব বয়সীদের মেলায় লক্ষ্য করা যায়। এটি আবহমান বাংলার পরিচিত একটি উৎসব।