ঢাকা ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

জীবনের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিলো কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়; বোকা মানুষটি অত্যন্ত জ্ঞানী ছিলেন

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:৩৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
  • ৯৬ জন পড়েছেন ।

আব্দুর রহিম, নিজস্ব প্রতিনিধি:

এই বোকাসোকা মানুষটা জীবনের সব যুদ্ধে জিতে এসে অবশেষে হার মানলেন মৃত্যুুর কাছে। জীবনের একেবারে অন্তিম সময়ে পর্যন্ত উনাকে বলা হয়েছিলো চিকিৎসার
জন্য বিদেশ নিয়ে যেতে, কিন্তু উনি রাজি হননি। অভাগা
এই দেশেই চিকিৎসা নেওয়ার ব্রত তিনি নিয়েছিলেন,
ঠিক ওই মুহূর্তেও সেটা ভুলে যেতে চাননি উনি।

এত বোকাও একজন মানুষ হতে পারে?

নক্ষত্রেরও পতন হয়, মহাকালের গহ্বরে হারিয়ে যায় সব রথীমহারথীরাও। সেই অমোঘ যাত্রায় এবার সামিল হয়ে গেলেন এই বোকা মানুষটাও।এই বোকাসোকা মানুষটা কে ছিলেন জানেন?

চট্টগ্রামের ছেলে জাফরুলাহ ইন্টারমিডিয়েট শেষে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকেই ওই
যে শুরু হল মানবসেবার, সেটা চালু ছিল একেবারে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করার পর পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না হতেই
দেশে শুরু হয়ে গেলো যুদ্ধ। ডিগ্রির চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেলে দেশে ফিরে আসলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে পাকিস্থানি বাহিনী যে নির্মমতা চালিয়েছিলো, সেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল লন্ডনে। এর প্রতিবাদে লন্ডনের হাইডপার্কে যে কয়জন বাঙ্গালী তাদের পাকিস্তানের পাসপোর্ট ছিড়ে আগুন ধরিয়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিল,তাদের ভেতর একজন ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। এরপর নানা কৌশলে শেষমেশ ফিরে আসলেন দেশে। লক্ষ্য একটাই— মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ।

আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ডা. জাফরুল্লাহ ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের সহযোগিতায় আগরতলার এক আনারস বাগানের ভেতর গড়ে তুলেছিলেন ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। নাম দিয়েছিলেন—বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল।

হাসপাতাল না হয় চালু হল, কিন্তু নেই পর্যাপ্ত নার্স, বিঘ্ন ঘটছে সেবাপ্রদানে। শেষমেশ ডা. জাফরুল্লাহ নিজেই নারী স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী করে নিলেন একটি নার্সের টিম।

দেশ স্বাধীন হল। কিন্তু অভাগা এই দেশকে ফেলে নিজের চাকচিক্যময় জীবনে আর ফেরত যাননি ডা. জাফরুল্লাহ।
গ্রামে গিয়ে শুরু করেন স্বাস্থ্যযুদ্ধ। ফিল্ড হাসপাতালটিকেই কুমিল্লাতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুললেন। পরবর্তীতে ঢাকার ইস্কাটনে ঘুরে শেষমেশ হাসপাতালটি ঢাকার অদূরে সাভারে স্থানান্তর করা হয়।
এবার এর নাম হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। সম্পূর্ণ অলাভজনকভাবে চলতে থাকে এই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। নিজেকে এই হাসপাতালের পেছনে একেবারে উজাড় করে দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ। যা অব্যাহত ছিলো একেবারে মৃত্যুর অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত।

মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অফিসিয়াল খাতায় নিজের নাম তোলার কোন চেষ্টাই তিনি করেন নি কোনদিন। বহুবছর তার নামই ছিলোনা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধাদি পাওয়ার
গ্রহীতার তালিকায়। পরে অন্যদের চেষ্টায় তার নাম উঠানো হয় তালিকায়। সেখানকার ভাতাও ব্যয় করতেন তার নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে তার নিজের ডায়ালাইসিসের খরচ বাবদ।

ডা. জাফরুল্লাহ বাকশালে যোগ দিতে শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধ যেমন উপেক্ষা করেছিলেন, তেমনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের দেয়া মন্ত্রীত্বের প্রস্তাবও। এরশাদের আমলে মন্ত্রীত্বের অফারও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ক্ষমতার মসনদে বসাটা তার পছন্দনীয় ছিলোনা, তার জীবনের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিলো কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়।

১৯৭৯ সাল থেকেই তিনি রাষ্ট্রীয় কমিটির একজন সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জাতীয় শিক্ষা কমিটির
ও নারী কমিটির। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন বাংলাদেশে শিক্ষা ও নারী-নীতি প্রণয়নে।

তার আরেকটা বড় অবদান হল ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধ নীতি। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্যখাতে যেটাকে বিবেচনা করা দেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে। তাঁর প্রচেষ্টায় আমদানি ওষুধের সংখ্যা কমে যেতে থাকে। বর্তমানে ৯০ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশ একটি ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে এই মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি।

দেশ বিদেশের নানা পদক-সম্মাননা জুটেছে তার, কিন্তু কোনদিনই সেই সম্মাননার ঝলকে আলোকিত হয়ে থাকতে চাননি তিনি। বিলেতের গ্ল্যামারাস লাইফ ফেলে এসে এখানে আমৃত্যু কাটিয়ে দিলেন আটপৌরে জীবনের অতি সাধারণ জামাকাপড় পরে, তার শার্টে কখনও থাকতো না আইরন; ছেঁড়াফাঁটা, জোড়াতালি দেওয়া প্যান্টশার্টেই দিব্যি চলে যেতো তার। বিলেতে থাকতে ব্যক্তিগত গাড়ি তো বটেই,
ছিল পাইলট এরও লাইসেন্স। তার স্যুট বানাতেন সবচেয়ে দামি টেইলার্স থেকে, যেখান থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের লোকজনও স্যুট বানাতো। অথচ সেই মানুষটাই মারা যাওয়ার বছর দুই আগে দেওয়া একটা ইন্টারভিউতে দেখিয়েছিলেন তার পরনের ওই শার্টটি ছিলো দীর্ঘ ৩০ বছরের পুরোনো। তাতেও দিব্যি চলে গেছে তার!

দেশে-বিদেশে কোথাও তার একটি ফ্ল্যাট পর্যন্ত নেই। বোনকে দান করে দিয়েছেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সব জমিজমা।
নিজের সহায় সম্পদ বলতে কিছুই ছিলোনা তার।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যার জর্জরিত ছিলেন তিনি। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে চলতে হতো তাকে। শরীরের হাজারটা ধকল নিয়েও জাতির যেকোন ক্রান্তিকালে সাড়া দিয়েছেন একজন টগবগে তরুণের মতোই। দেশের সুশীল সমাজের সবাই যখন চাটুকারিতার তেলতেেলে বয়ান কিংবা
একদম মুখে তালা এঁটে নিরাপদ জীবন বেছে নিয়েছে, তখনও একজন জাফরুল্লাহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বানে, নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভগ্নদশা শরীর নিয়ে নেমে গেছেন রাজপথে।

কোথাও কেউ নির্যাতনের শিকার হলে, হামলা-মামলা, জেল জুলুমের শিকার হলে হুইল চেয়ারে করেই ছুটে গেছেন তাদের পক্ষে কথা বলতে। মৃত্যুশয্যা থেকে উঠে চলে গেছেন নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলতে। মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক
অত্যাচারের শিকার কেউ হলে, সেই প্রতিবাদসভায় আর কেউ থাকুক চাই না থাকুক, এই মৃত্যুপথযাত্রী অসুস্থ বোকাসোকা লোকটা ঠিকই হাজির হতেন রাজপথের প্রতিবাদ সভায়।

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

জীবনের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিলো কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়; বোকা মানুষটি অত্যন্ত জ্ঞানী ছিলেন

পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:৩৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

আব্দুর রহিম, নিজস্ব প্রতিনিধি:

এই বোকাসোকা মানুষটা জীবনের সব যুদ্ধে জিতে এসে অবশেষে হার মানলেন মৃত্যুুর কাছে। জীবনের একেবারে অন্তিম সময়ে পর্যন্ত উনাকে বলা হয়েছিলো চিকিৎসার
জন্য বিদেশ নিয়ে যেতে, কিন্তু উনি রাজি হননি। অভাগা
এই দেশেই চিকিৎসা নেওয়ার ব্রত তিনি নিয়েছিলেন,
ঠিক ওই মুহূর্তেও সেটা ভুলে যেতে চাননি উনি।

এত বোকাও একজন মানুষ হতে পারে?

নক্ষত্রেরও পতন হয়, মহাকালের গহ্বরে হারিয়ে যায় সব রথীমহারথীরাও। সেই অমোঘ যাত্রায় এবার সামিল হয়ে গেলেন এই বোকা মানুষটাও।এই বোকাসোকা মানুষটা কে ছিলেন জানেন?

চট্টগ্রামের ছেলে জাফরুলাহ ইন্টারমিডিয়েট শেষে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকেই ওই
যে শুরু হল মানবসেবার, সেটা চালু ছিল একেবারে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করার পর পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না হতেই
দেশে শুরু হয়ে গেলো যুদ্ধ। ডিগ্রির চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেলে দেশে ফিরে আসলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে পাকিস্থানি বাহিনী যে নির্মমতা চালিয়েছিলো, সেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল লন্ডনে। এর প্রতিবাদে লন্ডনের হাইডপার্কে যে কয়জন বাঙ্গালী তাদের পাকিস্তানের পাসপোর্ট ছিড়ে আগুন ধরিয়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিল,তাদের ভেতর একজন ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। এরপর নানা কৌশলে শেষমেশ ফিরে আসলেন দেশে। লক্ষ্য একটাই— মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ।

আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ডা. জাফরুল্লাহ ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের সহযোগিতায় আগরতলার এক আনারস বাগানের ভেতর গড়ে তুলেছিলেন ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। নাম দিয়েছিলেন—বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল।

হাসপাতাল না হয় চালু হল, কিন্তু নেই পর্যাপ্ত নার্স, বিঘ্ন ঘটছে সেবাপ্রদানে। শেষমেশ ডা. জাফরুল্লাহ নিজেই নারী স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী করে নিলেন একটি নার্সের টিম।

দেশ স্বাধীন হল। কিন্তু অভাগা এই দেশকে ফেলে নিজের চাকচিক্যময় জীবনে আর ফেরত যাননি ডা. জাফরুল্লাহ।
গ্রামে গিয়ে শুরু করেন স্বাস্থ্যযুদ্ধ। ফিল্ড হাসপাতালটিকেই কুমিল্লাতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুললেন। পরবর্তীতে ঢাকার ইস্কাটনে ঘুরে শেষমেশ হাসপাতালটি ঢাকার অদূরে সাভারে স্থানান্তর করা হয়।
এবার এর নাম হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। সম্পূর্ণ অলাভজনকভাবে চলতে থাকে এই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। নিজেকে এই হাসপাতালের পেছনে একেবারে উজাড় করে দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ। যা অব্যাহত ছিলো একেবারে মৃত্যুর অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত।

মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অফিসিয়াল খাতায় নিজের নাম তোলার কোন চেষ্টাই তিনি করেন নি কোনদিন। বহুবছর তার নামই ছিলোনা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধাদি পাওয়ার
গ্রহীতার তালিকায়। পরে অন্যদের চেষ্টায় তার নাম উঠানো হয় তালিকায়। সেখানকার ভাতাও ব্যয় করতেন তার নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে তার নিজের ডায়ালাইসিসের খরচ বাবদ।

ডা. জাফরুল্লাহ বাকশালে যোগ দিতে শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধ যেমন উপেক্ষা করেছিলেন, তেমনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের দেয়া মন্ত্রীত্বের প্রস্তাবও। এরশাদের আমলে মন্ত্রীত্বের অফারও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ক্ষমতার মসনদে বসাটা তার পছন্দনীয় ছিলোনা, তার জীবনের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিলো কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়।

১৯৭৯ সাল থেকেই তিনি রাষ্ট্রীয় কমিটির একজন সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জাতীয় শিক্ষা কমিটির
ও নারী কমিটির। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন বাংলাদেশে শিক্ষা ও নারী-নীতি প্রণয়নে।

তার আরেকটা বড় অবদান হল ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধ নীতি। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্যখাতে যেটাকে বিবেচনা করা দেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে। তাঁর প্রচেষ্টায় আমদানি ওষুধের সংখ্যা কমে যেতে থাকে। বর্তমানে ৯০ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশ একটি ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে এই মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি।

দেশ বিদেশের নানা পদক-সম্মাননা জুটেছে তার, কিন্তু কোনদিনই সেই সম্মাননার ঝলকে আলোকিত হয়ে থাকতে চাননি তিনি। বিলেতের গ্ল্যামারাস লাইফ ফেলে এসে এখানে আমৃত্যু কাটিয়ে দিলেন আটপৌরে জীবনের অতি সাধারণ জামাকাপড় পরে, তার শার্টে কখনও থাকতো না আইরন; ছেঁড়াফাঁটা, জোড়াতালি দেওয়া প্যান্টশার্টেই দিব্যি চলে যেতো তার। বিলেতে থাকতে ব্যক্তিগত গাড়ি তো বটেই,
ছিল পাইলট এরও লাইসেন্স। তার স্যুট বানাতেন সবচেয়ে দামি টেইলার্স থেকে, যেখান থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের লোকজনও স্যুট বানাতো। অথচ সেই মানুষটাই মারা যাওয়ার বছর দুই আগে দেওয়া একটা ইন্টারভিউতে দেখিয়েছিলেন তার পরনের ওই শার্টটি ছিলো দীর্ঘ ৩০ বছরের পুরোনো। তাতেও দিব্যি চলে গেছে তার!

দেশে-বিদেশে কোথাও তার একটি ফ্ল্যাট পর্যন্ত নেই। বোনকে দান করে দিয়েছেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সব জমিজমা।
নিজের সহায় সম্পদ বলতে কিছুই ছিলোনা তার।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যার জর্জরিত ছিলেন তিনি। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে চলতে হতো তাকে। শরীরের হাজারটা ধকল নিয়েও জাতির যেকোন ক্রান্তিকালে সাড়া দিয়েছেন একজন টগবগে তরুণের মতোই। দেশের সুশীল সমাজের সবাই যখন চাটুকারিতার তেলতেেলে বয়ান কিংবা
একদম মুখে তালা এঁটে নিরাপদ জীবন বেছে নিয়েছে, তখনও একজন জাফরুল্লাহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বানে, নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভগ্নদশা শরীর নিয়ে নেমে গেছেন রাজপথে।

কোথাও কেউ নির্যাতনের শিকার হলে, হামলা-মামলা, জেল জুলুমের শিকার হলে হুইল চেয়ারে করেই ছুটে গেছেন তাদের পক্ষে কথা বলতে। মৃত্যুশয্যা থেকে উঠে চলে গেছেন নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলতে। মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক
অত্যাচারের শিকার কেউ হলে, সেই প্রতিবাদসভায় আর কেউ থাকুক চাই না থাকুক, এই মৃত্যুপথযাত্রী অসুস্থ বোকাসোকা লোকটা ঠিকই হাজির হতেন রাজপথের প্রতিবাদ সভায়।