কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে মসুয়া গ্রামে অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। এক সময় এই বাড়িটিকে ‘পূর্ব বাংলার জোড়াসাঁকো’ বলে অভিহিত করা হতো। এই বাড়িতেই প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ও তাঁর পুত্র সুকুমার রায় চৌধুরী জন্মেছেন। সত্যজিৎ ছিলেন তারই পৌত্র।পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরী প্রায় ২০০ বছর আগে মসূয়া গ্রামে একটি মেলার আয়োজন করেছিলেন। এখনও প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বুধবার এই মেলা পালিত হয়ে আসছে।
কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মতই মসুয়ার রায়চৌধুরী পরিবারও বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছে ।
১৯২১সালের ২ রা মে ময়মনসিংহের মসুয়ার জমিদার বংশে সাহিত্যিক , চিত্রশিল্পী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হয়। মায়ের নাম সুপ্রভা দেবী।
তাঁরা বাঙালি আহির পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের পুরো নাম ছিল সত্যজিৎ ‘সুকুমার’ রাই । এর বাইরে তিনি সত্যজিৎ রায় এবং শটজিৎ রায় নামেও পরিচিত ছিলেন। অধিক পরিচিত ছিলেন ” মানিক” নামে।
সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে বলার জন্য কোনও শব্দই যথেষ্ট নয়। যে শব্দই চয়ন করা হোক, সবটাই অতীব ক্ষুদ্র বলে মনে হবে।
সত্যজিৎ রায় ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক । তিনি দেশের তো বটেই, বহু আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ পুরস্কারগুলাে অর্জন করেন একাধিকবার । ১৯৮৪ সন পর্যন্ত তিনি মােট ২৮ টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন , যা বিশ্বের চলচ্চিত্র ইতিহাসে আর কারাে পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি ।
তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাঁকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। প্রথম চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অক্সফোর্ডের ডিলিট পেয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার তাঁকে সে দেশের বিশেষ পুরস্কার লেজিওঁ দ’নরে ভূষিত করে।
১৯৯২,
কলকাতায় ৩১ মার্চ। আমেরিকায় সেদিন সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অস্কার। ঘোষিত হচ্ছে লাইভ টাইম অ্যাচিভমেন্ট – একজন বাঙালির নাম। তিনি সত্যজিৎ রায়। আমেরিকার মঞ্চ থেকে সত্যজিৎ রায়ের নাম ঘোষণা করেন হলিউডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন।
একাডেমি মোশন অফ পিকচার্স কর্তৃপক্ষ কলকাতার হাসপাতালে এসে পুরস্কারটি সত্যজিৎবাবুর হাতে তুলে দেয়।
সত্যজিৎ রায় ছুঁয়ে দেখেছিলেন ৬৪তম অস্কার৷
২৩ এপ্রিল ১৯৯২ সালে তিনি প্রয়াত হন।
(১৯৯৩ সালে প্রয়াত হলেন অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন। )