আব্দুর রহিম, নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার গলঘেসিয়া নদীর চরে প্রায় চার বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে গোলপাতার বাগান। ঐ চরের বাসিন্দা মোঃ লুৎফর মোড়ল বাণিজ্যিকভাবে সুন্দরবনের গোলপাতা চাষ শুরু করেছে। বর্তমানে তিনি ঐ গোলপাতা বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছে। কর্দমাক্ত মাটিতে গড়ে ওঠা লূৎফর মোড়লের গোলপাতা বাগানটি দেখলেই প্রথমে মনে হবে এটি মিনি সুন্দরবন। পতিত জমিতে গড়ে ওঠা তার এই গোলপাতা বাগান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা গোলপাতা বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান। উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর চরে বিচ্ছিন্নভাবে গোলপাতা গাছ জন্ম নিলেও একমাত্র এই বাগানটিই বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের বাঁশতলা গলঘেসিয়া নদীর চর এ সুন্দরবনের গোলপাতার এই বাগানটি গড়ে উঠেছে। মনোরম পরিবেশ এবং সুন্দর দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। মূলত সুন্দরবন থেকে আহরণকৃত গোলপাতা এ অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-অঞ্চলের শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, খুলনার পাইকগাছা,কয়রা এবং বরিশাল অঞ্চলের লোকরা ঘরের চালা তৈরিতে গোলপাতা ব্যবহার করে থাকেন। এ জন্য এ অঞ্চলের গোলপাতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আহরণকারীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ৫ বছর বয়সী গোলপাতা গাছ থেকে বছরে একবার গোলপাতা কাটা যায়। শুকনো মৌসুমে সাধারণত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে গোলপাতা কাটা হয়। গোলপাতা গাছের মাঝখানে কচিপাতা ও তার চারদিকে দুটি পাতা রেখে সব পাতা কেটে ফেলা হয়। গোলফল তালের শাঁসের মতো খাওয়া যায়। এতে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা চর্মরোগ নিরসনে সাহায্য করে। গোলপাতা বাগান দেখে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে সুন্দরবনের গোলপাতা চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান, স্থানীয় সাংবাদিক হাসেম আলী।
জলবায়ু পরিবর্তন এর কারণে সুন্দরবনের গোলপাতা কম হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সুন্দরবনের গোলপাতা গাছ সংরক্ষণের জন্য উপকূল অঞ্চলের নদ-নদীর চরে সরকারিভাবে গোলপাতা বাগান গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন পরিবেশবিদরা। এ অঞ্চলের খালে, বিলে, নদীর তীরে বিচ্ছিন্নভাবে গোলপাতা গাছ জন্মাতে দেখা যায়। পুরো দক্ষিণ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার মাটি লবণাক্ত ও পলিযুক্ত হওয়ার কারণে এ এলাকায় গোলপাতা গাছ বেশি জন্ম নেয়। যদি সরকারিভাবে এই উদ্যোগটি হাতে নেওয়া হয় তাহলে এ অঞ্চলের চাষীদের ভাগ্য পরিবর্তনে দারুন সুযোগ তৈরি হবে। তা,না হলে কালের বিবর্তনে একদিন গোলপাতা চাষ জাদুঘরে ঠাই করে নিবে।