ঢাকা ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মাক্সিম গোর্কি সম্পর্কে জানি

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৫:৫১:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩
  • ৯৮ জন পড়েছেন ।

ডেক্স: সাউন্ড অব কমিউনিটি

আত্মহত্যা থেকে বেঁচে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছিলেন সাড়া জাগানো ‘মা’ উপন্যাসের লেখক মাক্সিম গোর্কি। উপন্যাসের মতোই তার জীবন। বেশ কাঁচা বয়সে নিজের কাছেই হেরে বসেছিলেন তিনি। করেছিলেন আত্মহত্যার চেষ্টা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় জীবনে হয়ে উঠলেন বিখ্যাত লেখক।

প্রকৃত নাম আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ। এই রুশ লেখকের জন্ম ১৮৬৮ সালের ২৮ মার্চ। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছিলেন। এরপর শুরু হয় তার কঠিন জীবন।

প্রথমে একটি শৌখিন জুতার দোকানে কাজ শুরু করেন। সেখানে সারা দিন শ্রম দিতে হতো তাকে। এরপর কিশোর পেশকভ কাজ নেন কয়েদি বহনের জাহাজে। তার কাজ ছিল জাহাজের কর্মচারীদের বাসন-কোসন ধোয়া।

সেখানে ভোর ছয়টা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত তাকে ঘাম ছুটাতে হতো। পেটের দায়ে ভালো কাজের আশায় পেশা বদলাতে থাকেন পেশকভ। কিন্তু কোথাও শান্তি পাননি।

অবশেষে পেশকভ শান্তি খুঁজে পান বইয়ের পাতায়। তিনি ছিলেন বইয়ের পোকা। অভাব-অনটন, হাড়ভাঙা পরিশ্রম- এত কিছুর মধ্যেও থামেনি তার বই পড়া। রুশ কবি পুশকিনের একটি কবিতার বই তাকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে।

দরিদ্রতা পেশকভের পিছু ছাড়েনি। এক পর্যায়ে তিনি কাজ নেন একটি রুটির কারখানায়। সেখানে সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হতো। দারিদ্র্যের কশাঘাত আর দিনের পর দিন ঘামঝরা শ্রমের ধকলে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।

জীবন হয়ে পড়ে তার কাছে অর্থহীন। তিক্ত জীবনের অবসান ঘটাতে পিস্তল কেনেন তিনি। সময়টা ১৮৮৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। পেশকভের বয়স তখন মাত্র ২০ বছর। নদীর তীরে গিয়ে নিজের বুকেই গুলি করলেন পেশকভ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। নিঃসন্দেহে এটা ছিল তার দ্বিতীয় জীবন। নব-উদ্যমে জীবন শুরু করেন পেশকভ। সেই থেকে লেখালেখির গোড়াপত্তন। ধারণ করেন নতুন নাম- মাক্সিম গোর্কি। রুশ ভাষায় ম্যাক্সিম অর্থ সর্বাধিক আর গোর্কি অর্থ তেতো।

প্রথাগত রচনার বাইরে গোর্কির লেখায় প্রাধান্য পায় সমাজের নিচুতলার মানুষের জীবনালেখ্য। ১৮৯৮ সালে তার লেখা প্রবন্ধ ও গল্প নিয়ে একটি সংকলন ‘রেখাচিত্র ও কাহিনী’ প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশের পর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গোর্কির খ্যাতি। ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় তার সার্থক উপন্যাস ফোমা গর্দিয়েভ। ১৯০১ সালে বিপ্লবী ছাত্রদের হত্যার প্রতিবাদে গোর্কি রচনা করলেন ‘ঝোড়ো পাখির গান’ নামের কবিতা। ওই কবিতা হয়ে ওঠে বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্র। তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতিবাদের মুখে তাকে ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয় সরকার।

ক্রমে গোর্কি হয়ে ওঠেন লেনিন আদর্শের কর্মী, লেখনীর মাধ্যমে মানবিক সমস্যার চিত্র তুলে ধরার সুদক্ষ শিল্পী। গোর্কিকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। নির্বাসনে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাঠানো হয় ক্রিমিয়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সুস্থ হয়ে নাটক লিখতে শুরু করেন গোর্কি। ১৯০২ সালে লিখলেন লোয়ার ডেপথ। এই নাটকের পর গোর্কির পরিচিতি রাশিয়ার সীমা পেরিয়ে ছড়িয়ে যায় সমগ্র ইউরোপে। গোর্কি হয়ে ওঠেন ইউরোপের বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর।

লেখনীর কারণে জীবনে বহুবার জার শাসকের রোষানলে পড়েছিলেন গোর্কি। বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। আবারও গ্রেফতার হতে পারেন এমন খবর পেয়ে দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

অবশেষে তিনি জার্মানি ও ফ্রান্স হয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯০৭ সালে সেখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘মা’। এই উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি নাম লেখান অমরত্বের খাতায়।

১৯৩৬ সালের ১৮ জুন এই মহান লেখকের জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু গোর্কি আজও তার লেখনীর মাধ্যমে চির-অম্লান হয়ে আছেন মানুষের হৃদয়ে।

২০ বছর বয়সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ সত্যিই বড় ভুল করেছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন বলেই পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন মাক্সিম গোর্কি।

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

মাক্সিম গোর্কি সম্পর্কে জানি

পোস্ট করা হয়েছে : ০৫:৫১:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩

ডেক্স: সাউন্ড অব কমিউনিটি

আত্মহত্যা থেকে বেঁচে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছিলেন সাড়া জাগানো ‘মা’ উপন্যাসের লেখক মাক্সিম গোর্কি। উপন্যাসের মতোই তার জীবন। বেশ কাঁচা বয়সে নিজের কাছেই হেরে বসেছিলেন তিনি। করেছিলেন আত্মহত্যার চেষ্টা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় জীবনে হয়ে উঠলেন বিখ্যাত লেখক।

প্রকৃত নাম আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ। এই রুশ লেখকের জন্ম ১৮৬৮ সালের ২৮ মার্চ। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছিলেন। এরপর শুরু হয় তার কঠিন জীবন।

প্রথমে একটি শৌখিন জুতার দোকানে কাজ শুরু করেন। সেখানে সারা দিন শ্রম দিতে হতো তাকে। এরপর কিশোর পেশকভ কাজ নেন কয়েদি বহনের জাহাজে। তার কাজ ছিল জাহাজের কর্মচারীদের বাসন-কোসন ধোয়া।

সেখানে ভোর ছয়টা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত তাকে ঘাম ছুটাতে হতো। পেটের দায়ে ভালো কাজের আশায় পেশা বদলাতে থাকেন পেশকভ। কিন্তু কোথাও শান্তি পাননি।

অবশেষে পেশকভ শান্তি খুঁজে পান বইয়ের পাতায়। তিনি ছিলেন বইয়ের পোকা। অভাব-অনটন, হাড়ভাঙা পরিশ্রম- এত কিছুর মধ্যেও থামেনি তার বই পড়া। রুশ কবি পুশকিনের একটি কবিতার বই তাকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে।

দরিদ্রতা পেশকভের পিছু ছাড়েনি। এক পর্যায়ে তিনি কাজ নেন একটি রুটির কারখানায়। সেখানে সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হতো। দারিদ্র্যের কশাঘাত আর দিনের পর দিন ঘামঝরা শ্রমের ধকলে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।

জীবন হয়ে পড়ে তার কাছে অর্থহীন। তিক্ত জীবনের অবসান ঘটাতে পিস্তল কেনেন তিনি। সময়টা ১৮৮৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। পেশকভের বয়স তখন মাত্র ২০ বছর। নদীর তীরে গিয়ে নিজের বুকেই গুলি করলেন পেশকভ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। নিঃসন্দেহে এটা ছিল তার দ্বিতীয় জীবন। নব-উদ্যমে জীবন শুরু করেন পেশকভ। সেই থেকে লেখালেখির গোড়াপত্তন। ধারণ করেন নতুন নাম- মাক্সিম গোর্কি। রুশ ভাষায় ম্যাক্সিম অর্থ সর্বাধিক আর গোর্কি অর্থ তেতো।

প্রথাগত রচনার বাইরে গোর্কির লেখায় প্রাধান্য পায় সমাজের নিচুতলার মানুষের জীবনালেখ্য। ১৮৯৮ সালে তার লেখা প্রবন্ধ ও গল্প নিয়ে একটি সংকলন ‘রেখাচিত্র ও কাহিনী’ প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশের পর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গোর্কির খ্যাতি। ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় তার সার্থক উপন্যাস ফোমা গর্দিয়েভ। ১৯০১ সালে বিপ্লবী ছাত্রদের হত্যার প্রতিবাদে গোর্কি রচনা করলেন ‘ঝোড়ো পাখির গান’ নামের কবিতা। ওই কবিতা হয়ে ওঠে বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্র। তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতিবাদের মুখে তাকে ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয় সরকার।

ক্রমে গোর্কি হয়ে ওঠেন লেনিন আদর্শের কর্মী, লেখনীর মাধ্যমে মানবিক সমস্যার চিত্র তুলে ধরার সুদক্ষ শিল্পী। গোর্কিকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। নির্বাসনে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাঠানো হয় ক্রিমিয়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সুস্থ হয়ে নাটক লিখতে শুরু করেন গোর্কি। ১৯০২ সালে লিখলেন লোয়ার ডেপথ। এই নাটকের পর গোর্কির পরিচিতি রাশিয়ার সীমা পেরিয়ে ছড়িয়ে যায় সমগ্র ইউরোপে। গোর্কি হয়ে ওঠেন ইউরোপের বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর।

লেখনীর কারণে জীবনে বহুবার জার শাসকের রোষানলে পড়েছিলেন গোর্কি। বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। আবারও গ্রেফতার হতে পারেন এমন খবর পেয়ে দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

অবশেষে তিনি জার্মানি ও ফ্রান্স হয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯০৭ সালে সেখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘মা’। এই উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি নাম লেখান অমরত্বের খাতায়।

১৯৩৬ সালের ১৮ জুন এই মহান লেখকের জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু গোর্কি আজও তার লেখনীর মাধ্যমে চির-অম্লান হয়ে আছেন মানুষের হৃদয়ে।

২০ বছর বয়সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ সত্যিই বড় ভুল করেছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন বলেই পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন মাক্সিম গোর্কি।