ড. মোহাম্মদ আমীন স্বনামধন্য একজন লেখক। তিনি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন-
আমি মনে করি ‘স্যার’ ডাকতে বাধ্য করা কিংবা স্যার না-ডাকলে ‘স্যার’ ডাকার উপদেশ দেওয়া— দুটোই চরম হীনম্মন্যতা আর নিকৃষ্ট মনোবৃত্তির পাশবেচ্ছা। সরকারি কর্মচারী— তা তিনি যেমন পদস্থই হোন না; এমন দাবি করতে পারেন না। বরং উচিত আমজনতাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করা। কারণ, তারা জনগণের চাকর আর জনগণ তাদের প্রভু। জনগণের অর্থে সরকারি কর্মচারীদের বেতন হয়। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
‘বেগম রোকেয়া’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক সেবাপ্রার্থী হিসেবে রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের অফিসে যান। অফিস থেকে বেরিয়ে জনাব ওমর ফারুক সাদা কাগজে “রংপুরের জেলা প্রশাসক ‘স্যার’ ডাকতে বাধ্য করায় অনশন কর্মসূচি” কথাটি লিখে সকন্যা অবস্থান কর্মসূচিতে বসে গেলেন। কন্যার হাতেও ধরিয়ে দিলেন প্ল্যাকার্ড; সেখানে লেখা, “রংপুরের জেলা প্রশাসক ‘স্যার’ ডাকতে বাধ্য করার প্রতিবাদে অনশন কর্মসূচি”।
পরে জনাব ওমর ফারুক নিজেই নিজের মুখে সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসক তাকে ‘স্যার’ ডাকতে বাধ্য করেননি। বলেছেন, “জেলা প্রশাসককে ‘স্যার’ বলা উচিত।” ‘উচিত’ আর ‘বাধ্য করা’ একার্থ দেয় না। একজন শিক্ষক কি তা জানেন না! তার মানে জনাব ওমর ফারুক মিথ্যা লিখেছেন— মিথ্যা কথা লিখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
তিনি মিথ্যা লিখলেন কেন?
একজন শিক্ষক হয়ে তিনি এটা কী করলেন!
নিজের অনুভাবনার কাছে একটু অনুশোচনাও কি জাগেনি?!
এটা কি প্রশাসনের প্রতি তাঁর অনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়?
মিথ্যা দিয়ে অন্যকে অপদস্থ করা মারাত্মক অনৈতিক কাজ। ওমর ফারুক সাহেব একজন শিক্ষক হয়েও এমন গর্হিত কাজ করেছেন। তাঁর এমন আচরণের বিরুদ্ধে শিক্ষকবৃন্দের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। এতে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা রক্ষিত হতো। কিন্তু করেননি। তাঁর মিথ্যাকে সবাই এড়িয়ে গেছেন। কেবল জেলা প্রশাসকের ভুলটা দেখলেন। কাজটা কি ভালো হলো?
জেলা প্রশাসক উচিত কাজ করেননি, ঠিক আছে; শিক্ষক কি মিথ্যা বলে উচিত কাজ করেছেন? জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে শিক্ষকের বিরুদ্ধেও হওয়া উচিত ছিল। জেলা প্রশাসক ভুল করেছেন, তার ভুলে মিথ্যা ছিল না। কিন্তু শিক্ষক মিথ্যা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে গিয়েছেন।