উপমাহাদেশের সূফিসাধক অবিভাক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের ডিরেক্টর খানবাহাদুর হয়রত শাহসূফি আহছানউল্লাহ (র.) ইসলাম ও মানব সেবা ব্রত নিয়ে ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ নলতায় নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠিত করেন । তৎকালীন সময়ে নলতা ও তার চারপাশের মানুষের ধর্মীয় জ্ঞান ছিলো সীমিত তাই তিনি উপলব্ধি করেন ইসলামের অপর সৌন্দর্য মানুষের গণ জামায়ত করা জরুরী। তাহলে সকলকে একত্রে ধর্মীয় ও আধ্যাত্নীক বিষয়ে শিক্ষা দেয় সম্ভব হবে। তিনি ৮৮ বছর আগে নলতার ইফতার মাহফিল চালু করেন। তখনকার সময় থেকে নলতার আশে পাশের সকলের বাড়িতে রমজান মাসে রান্না করা খাবার এখানে নিয়ে এসে একসাথে বসে ইফতার করতেন। পরবর্তীতে সেই মাহফিল বৃহৎ পরিসরে থেকে ধীরে ধীরে এই ইফতার মাহফিল বিশ্বে ঐতিহ্যের সম্প্রিতির অনন্য নিদর্শনে পরিনত হয়েছে।
মক্কা শরীফের পবিত্র কাবা ঘর চত্তরের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরা জেলার নলতায় যা প্রতি বছর মাহফিলের পরিধি আরো বেড়ে চলেছে। ১লা রমজান, ২৪ মার্চ (শুক্রবার) পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন থেকে সারা রমজানমাস ব্যাপী চলমান থাকবে এই ইফতার মাহফিল। হযরহ খানবাহাদুর আহছান উল্লাহ র. সমাধীর দক্ষিনে বিশাল মাঠে উপরে টিনের ছাউনি দিয়ে করা হয় ইফতার মাহফিলের ময়দান। সারি সারি ছপ বিছানে হয় ইফতারি বিলি-বন্টন ও তদারকির জন্য রয়েছে ৬ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক একত্রে কাজ করে। সাতক্ষীরার নলতার ইফকার মাহফিলে একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষের ইফতার করেন। ১৯৩৫ সালে খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রাঃ) নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে প্রতি বছরই রমজান মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পরও মিশন কর্তৃপক্ষ এ মাহফিলকে অব্যাহত রেখেছে। প্রথম দিকে ইফতার মাহফিলে উপস্থিতি কম হলেও ধীরে ধীরে তার পরিধি বেড়ে এখন দশ হাজারে পৌঁছেছে। বর্তমানে শাহ সুফি হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রাঃ) এর রওজা প্রাঙ্গনেই এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মিশন কতৃপক্ষ মানুষের আপ্যায়নে সহজতর করতে রোজার শুরু থেকেই প্রতিদিন ইফতার মজলীসে ৬ হাজার মানুষের ইফতার ব্যবস্থা রাখেন তবুও মুসল্লীর সংখ্যা্ বেড়ে ৭/৮ হাজার হয়। নিয়মানুযায়ী বাকী ৪ হাজার নিকটবর্তী এলাকার মসজীদগুলোতে প্রেরণ করেন যেন চলাচলে অযোগ্য বা কর্ম ব্যস্ততায়ও তারা নলতা শরীফের ইফতার থেকে বঞ্চিত না হয়। ইফতারি সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খেজুর, ছোলা, সিংগড়া, ফিন্নি, চিড়া, কলা ও ডিম। এত মানুষের ইফতারির আয়োজনের পরও পার্শ্ববর্তী ১৫-২০টা মসজিদে এক বার করে ইফতারি পৌঁছে দেওয়া সহ সাতক্ষীরা জেলার বাইরে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার মানুষের। ছোলা, ডিম ও ফিন্নি বাবুর্চি বাবু বলেন, প্রতিদিন ১৬ মণ দুধ দিয়ে ফিন্নি রান্না করা হয়। সিদ্ধ করা হয় ১০ হাজার ডিম। প্রতি বছরই আমি এখানে রান্নার কাজ করে থাকি। এ মাসটি আমরা রোজাদারদের খেদমত করি। সিঙ্গাড়া বাবুর্চি মুক্তার হোসেন বলেন, আমি এখানে ৩২ বছর ধরে সিঙ্গাড়া বানাই। ১৫ জন একত্রে কাজ করি। আসরের নামাজের আগেই সিঙ্গাড়া প্রস্তুত শেষ করে ফেলি। স্বেচ্ছাসেবক আরফুদ্দীন হোসেন বলেন, আমরা ছয়শ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছি এখানে। সকলেই নিজ উদ্যোগে এখানে এসেছি। বিকাল ৪টার পর থেকে বণ্টন কাজ শুরু করি। চেষ্টা করি যেন আগত কোনো রোজাদারের কোনোরূপ অসুবিধা না হয়। কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান খোকন বলেন, রমজানে প্রতি বছরই আমি এখানে সকল স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করে থাকি । আমি একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি, হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে ইফতারি করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। বর্তমান আহছানিয়া কেন্দ্রীয় মিশনের সভাপতি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি তিনি প্রতিটি কাজ সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পান্ন করতে প্রতিটি সেকটরে স্বেচ্ছ্বাসেবক কর্মকর্তার দায়িত্ব দিয়েছেন। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নাই আগত ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীবৃন্দের জুতা, সাইকেল, মটর সাইকেল রাখার ফ্রী ব্যবস্থ্যা আছে। দেশের দুরদুরন্ত থেকে মানুষ এই মাহাফিলে শরীক হতে আসে। এখানে রাতে থাকার জন্য ফ্রীতে মিশনের ব্যবস্থাপনায় অতিথিশালা আছে দুরের অতিথিরা থাকতে পারবেন।
কিভাবে আসবেন:
বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে সাতক্ষীরা বাস টারমিনাল আসতে হবে। সেখান থেকে কালিগঞ্জ শ্যামনগর রুটের গাড়িতে আপনাকে নলতা বাজার (কালীবাড়ী) নামতে হবে দূরত্ব ২৯ কিঃমিঃ ভাড়া ৬০ টাকা । তারপর আপনাকে ব্যাটারী চালিত ভ্যান বা পায়ে চালিত ভ্যানে ১০ টাকা (দূরত্ব ১.৫কিঃমিঃ) দিয়ে নলতা শরীফ খানবাহাদুর আহছান উল্লাহ র. সমাধী প্রাঙ্গানে পৌচ্ছাতে হবে।