সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :
নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতায়, চাকরি পাবে নিজ যোগ্যতায়’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় ১২০ টাকায় আবেদন করে পুলিশ কনস্টেবলপদে ৭৬ জন নারী-পুরুষ চাকরি পেয়েছেন। ঘুষ ছাড়া শুধু মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশের চাকরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা দরিদ্র ও কৃষক পরিবারের এসব প্রার্থী। একই সঙ্গে কনস্টেবলপদে নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। আবেদনকারী ৫ হাজার ৪৯ জন নারী-পুরুষ পুলিশ কনস্টেবলপদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রথমে ডাক্তারি ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দৌড়, লং জাম্প ও হাই জাম্পসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তারা। পরপর তিন দিনের এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২২৭ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান, বাগেরহাট থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান, খুলনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমানসহ সাতক্ষীরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ফলাফল প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নিয়োগপ্রাপ্ত জাকিয়া সুলতানা জানান, তার বাবা একজন কৃষক। তারা দুই ভাই-বোন পুলিশ কনস্টেবলপদে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে খুশি।
পেশায় দিনমজুরের ছেলে সামছুজ্জামানও নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কৃষকের মেয়ে সাজু চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে জানান, দেশসেবাই তার একমাত্র কাজ হবে। দালাল ছাড়াই চাকরি পেয়ে গরিবের জন্য কাজ করতে চান তিনি।
চা দোকানির মেয়ে খুরশিদা খাতুন টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হয় না জেনেও লাইনে দাঁড়িয়ে চাকরি পেয়ে আনান্দে কেঁদে ফেলেন। ১২০ টাকায় যে চাকরি হয় তিনি নিজে তার সাক্ষী। তখন পাশে দাঁড়ানো বাবা বারবার চোখের পানি মুছতে থাকেন।
পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি জানান, ঘুষ ছাড়া যে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায়, পুলিশ সুপার তা প্রমাণ করেছেন। আর ঘুষ ছাড়া মেয়ে চাকরি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান খুরশিদার বাবা।
বাবা ছেড়ে চলে গেছেন, মা রাইস মিলে (চালকল) কাজ করে পড়াশোনা শিখিয়েছেন সুপ্রিয়া দাসকে। নিজ যোগ্যতায় বিনা টাকায় চাকরি পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেন মা-মেয়ে। লোকের বাড়ি কাজ করে লেখাপড়া শিখিয়ে ১২০ টাকায় চাকরি পাওয়ায় খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন দরিদ্র মা। জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতায়, চাকরি পাবে নিজ যোগ্যতায়’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা অত্যন্ত কঠোরভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।
নিয়োগ পাওয়া কনস্টেবলদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের ‘স্মার্ট পুলিশ’ হওয়ারও উপদেশ দেন তিনি। এবারের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে সাতক্ষীরা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটাসহ ৬৫ জন ছেলে ও ১১ জন মেয়েসহ মোট ৬৭ জন চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়েছে।