ফরিদুল কবির, কালিগঞ্জ
“ভাজা লবণে কাঁচা ছোলা খাবেন, লেবুর রস মিশ্রনে ছোলা খাবেন। ইহাতে কাঁচা ঝাল, আদা কুচানো মিশ্রণ পাবেন, লেবুর রস আর বিট লবণ দিয়ে ছোলা খাবেন” ক্রেতাদের উদ্দ্যেশে এভাবেই কালিগঞ্জ সদরে হাঁকডাক দিচ্ছিলেন কাঁচা ছোলা বিক্রেতা আব্দুল ওহাব (৫১)। জীবন-জীবিকার তাগিদে রৌদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন বাইসাইকেলে করে পথেঘাটে ছোলা বিক্রি করে। বর্তমানে এ ব্যবসা করে সংসারের খরচ জোগাতে তার হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। সে উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের মৃত মোঃ অজেত আলী কারিকরের ছেলে। গতকাল রাতে উপজেলা সদরে অবস্হিত ঐতিহ্যবাহী নাজিমগঞ্জ বাজারে ছোলা বিক্রিকালে কথা হয় আব্দুল ওহাবের সঙ্গে।
সে দৃষ্টিপাতকে জানান, ১৯৭১ সালে সম্ভ্রান্ত মুসলিম গরীব পরিবারে জম্ম। তার বাবা ছিলো গ্রামীন তাঁত শিল্পের কারিগর। তার ছাত্র জীবন শুরু হয় নারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। সেসময় তার বাবা-মা পরিবারের খরচ চালানোর পাশাপাশি ভাই বোনদের খরচ বহন করতে কষ্টদায়ক হতো। তাই অল্প বয়সে তাকে এক সেনা সদস্যের ব্যক্তিগত বুট মেকারের দায়িত্ব নিতে হয়। সেই সুবাদে ততকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট ক্যাডেট হাইস্কুল থেকে ৫ম শ্রেণী পরে কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পাস করে সে। তখনও সেই সেনা সদস্য তার লেখাপড়ার খরচ বহন করতেন। তৎকালীন সময়ে তার সুযোগ এলো সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য। ট্রেনিং শেষে যোগদানের পূর্বে ভারতে চলে যায়।
সেখানে সে প্রায় ১৫ বছর ধরে বস্ত্র শিল্পের কারিগর ও এমব্রয়ডারি কাজ করে। কিন্তু সেখানে সুফল না পেয়ে ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসে ওহাব। তখন সে অন্যের ঘেরে কর্মচারী আবার মাঝে মধ্যে রিক্সা চালকের পেশা বেছে নেয়। ২০০৮ সালের দিকে নিরুপায় হয়ে সে অন্যের কাছ থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা ধার-কর্জ করে কাঁচামালের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু সে ব্যবসা ধরে রাখতে পারেনি। অবশেষে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে এক ব্যক্তির অনুদানের মাত্র ২০০ টাকা নিয়ে ফেরিওয়ালা সেজে কাঁচা ছোলার ব্যবসা শুরু করে ওহাব। এখন প্রতিদিন সকালে বাইসাইকেলের পিছে বক্সে করে ৩-৪ কেজি ছোলা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। তার ক্রেতাদের মুখে স্বাদ আনতে ছোলায় ভাজা লবণ, লেবুর রস, কাঁচা ঝাল, আদা কুচানো আর বিট লবণ মিশ্রণে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে তৈরি করে ক্রেতাদের মাঝে পরিবেশন করে। এ ব্যবসায় তার দিনে ৩০০-৪০০ টাকা লাভ হচ্ছে। এখন আব্দুল ওহাবের কাঁচা ছোলার স্বাদ সবার মুখে মুখে। একপর্যায়ে সে আক্ষেপ করে বলেন, গরীব ঘরে আমার জম্ম।
ধন-সম্পদ, জায়গা জমি নেই। বড় মেয়েটি বিয়ে দিয়েছি। তারপরও আরো ২ ছেলে, ১ মেয়েকে লেখাপড়া শিখাচ্ছি। সন্তানদের আবদার এখন মেটাতে পারছিনা। আবার ইচ্ছে থাকা সত্বেও অর্থের অভাবে বড় ব্যবসা করতে পারছি না। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রত্যেকের আত্মসম্মান আছে, অন্যের কাছে বলতে পারি না।