এস এম মজনু সিরাজগঞ্জ
যমুনার পানি বৃদ্ধি ও কমায় প্রবল স্রোতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে নদী তীরের প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা যমুনায় বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে আশপাশের লোকজন তাদের বসত-বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার ভাঙনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে, রবিবার সকাল থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার পাঁচঠাকুরীতে যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙনে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। তীব্র ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। নদী থেকে বাঁধের দূরত্ব মাত্র ২০ মিটার। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার পাচঁঠাকুরী গ্রামের সিমলা স্পারের পাশে পাঁচঠাকুরী স্থানটি গত বছর ভেঙ্গে গিয়েছিল। সেখানে অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়েছিল। স্থায়ী মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও কাজ শুরু হয়নি। এ অবস্থায় গত দুইদিন ধরে নদীর প্রবল স্রোতে পূর্বের ভাঙনের স্থানে আবারও ভাঙন দেখা গিয়েছে। এ অবস্থায় ভাঙন স্থানের আশপাশের ২৫/৩০টি বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙ্গনের ঝুঁঁকিতে রয়েছে পাশের নদীতীর রক্ষা বাঁধের ওপরে নির্মিত রানীগ্রাম-রতনকান্দি আঞ্চলিক সড়ক।
৭ বার নদী ভাঙনের মুখে আমি নিঃস্ব। সহায় সম্বল যা কিছু ছিলো সব নদী গর্ভে চলে গেছে। শেষ সময়ে পাঁচঠাকুরীতে বাঁধের নিচে আশ্রয় নিলাম। এই জায়গাতেও নদী ভাঙন। ১৫-২০ শতক জমির উপড়ে আমার বাড়ি ছিলো। এক রাইতের ভাঙনে সব শেষ। এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন পাঁচঠাকুরী গ্রামের ভাঙন কবলিত আব্দুল মোতালেব।
এলাকাবাসী জানায়, অনেকে নদীর তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষ ঘর-বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভাঙনে ৫টি বাড়ি, বসতভিটা, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালি উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি ও মানববন্ধন পালন করে এলাকাবাসী। কিন্তু তাতেও বালি উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
স্থানীয় শামীম হোসেন বলেন, যমুনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু তোলা বন্ধের জন্য এলাকার মানুষ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। তারপরও বালু তোলা বন্ধ হয় নাই। সকালে হঠাৎ চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙে। এসে দেখি নদীতে খুব ভাঙন। মানুষজন ছোটা ছুটি করছে। ঘর থেকে মালামাল বাহিরে সরানোর চেষ্টা করছে। এভাবে নদী ভাঙন কোনো দিন দেখি নাই।
ভাঙন কবলের শিকার হেলেনা বেগম বলেন, রাতে হঠাৎ করে নদীতে ভাঙন শুরু হয়। নদীর তীব্র গর্জনে ঘুম ভাঙে এলাকার মানুষের। এক বছর আগে স্বামী মারা গেছে। তিন মেয়ে আমার। সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছি। ভাঙন না থামলে আমার বাড়িও যে নদী গর্ভে চলে যাবে। নদী থেকে বালু তোলার কারনে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, নদীতে পানি কমতে থাকায় তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। একারণে নদীর তলদেশে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে মাটি সরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা হচ্ছে। দুই/এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এসএম মজনু
সিরাজগঞ্জ
তাং-৩১/১০/২০২২ই