মোঃ রাসেল সরকার
মারিয়া বেগম থাকেন যাত্রাবাড়ি কলাপট্টি এলাকায়। তার সন্তান পড়াশোনা করে মতিঝিলের একটি স্কুলে। তাই সাত-সকালে বাসা থেকে বের হন মারিয়া বেগম। যাত্রাবাড়ি মোড় থেকে বাসে চড়তে হয়। তার আগে রাস্তা পার হতে গিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।
এই মোড়ে চারদিক থেকে গাড়ি আসে। রাস্তা পার হওয়া জটিল এক ব্যাপার। জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। মাঝে মাঝে ট্রাফিক পুলিশ রাস্তা পার করে দেয়। অনেকে দৌঁড় দিয়ে পার হয়। আমার সাথে বাচ্চা থাকে। ফুটওভারব্রিজ না থাকায় আমরা অনেক বিপদে আছি।’ বলছিলেন মারিয়া বেগম।
রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ি এলাকায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তা পারাপারে প্রতিদিনের চিত্র এটা।পরিকল্পিত কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পথচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয় এখানে। পুলিশের হিসাবে গত বছর তিনেকে ফ্লাইওভারের নিচের এই সড়ক এলাকায় দুর্ঘটনায় মারা গেছে অন্তত অর্ধশত মানুষ।
ওয়ারী ও যাত্রাবাড়ি থানার সড়ক দুর্ঘটনা মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের গুলিস্তান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী, ডেমরা সড়কের কাজলা, মাওয়া সড়কের দোলাইরপাড় প্রান্ত এবং ফ্লাইওভারের গোলাপবাগ অংশে ৫৭ জন পথচারী মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি ১৮ জন পথচারী মারা গেছে যাত্রাবাড়ি মোড় এলাকায়। সায়েদাবাদ এলাকায় মারা গেছে ২২ জন।
রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রতিদিনই পথচারীদের নাকাল হতে দেখেন যাত্রাবাড়ি মোড়ের চা-দোকানি আরজ আলী। তিনি বলেন, ‘এইখানে ধরেন মাসের তিরিশ দিনই ঝামেলা হয়। কতো মানুষ যে গাড়ির নিচে পড়তে পড়তে আবার বাঁইচা যায়, তার হিসাব নাই। প্রায় সময় ড্রাইভাররা হার্ড ব্রেক কইরা তাদের বাঁচায়। এইভাবে একটা রাস্তা চলতে পারে না। বুড়ারা, বাচ্চারা, পঙ্গু মানুষ এই মোড়ে চলবো ক্যামনে?’
যাত্রাবাড়ি মোড়ে পথচারী পারাপারের ঝুঁকি বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান বলেন, উড়ালসেতু করতে গিয়ে পথচারী পারাপারের বিষয়টি নিয়ে কোনো পরিকল্পনা না রাখার বিষয়টি ঢাকা শহর নিয়ে বিক্ষিপ্ত পরিকল্পনার একটি অংশ। যাত্রী, পথচারী, সড়ক, যানবাহন- এসব নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে।