ঢাকা ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

গণিতের ভয় করবো জয়- মো: মনজুরুল আলম

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:৪০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অক্টোবর ২০২২
  • ১৭২ জন পড়েছেন ।

গণিতের প্রতি ভয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ম্যাথম্যাটিকস এনজাইটি বা ম্যাথেফোবিয়া। গণিতবিদ মেরি ডি লেলিস গফ ১৯৫৩ সালে ‘ম্যাথেফোবিয়া’ শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন। তিনি তার বহু শিক্ষার্থীকে গণিতের সমস্যা সমাধানে বেশ বেগ পেতে দেখেছেন। সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই ম্যাথেফোবিয়ার বিষয়টি সামনে আনেন তিনি। তার মতে ‘ম্যাথেফোবিয়া’ এক ধরণের “মানসিক সমস্যা” – যার উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার আগেই মারাত্মক বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা একে “আতঙ্ক, অসহায়ত্ব, পক্ষাঘাত এবং মানসিক অব্যবস্থাপনা” হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে অনেকের মধ্যে এসব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এক কথায় সবই হল গণিতের ভীতি।
বিবিসি ফিউচার বলছে, শিশুরা যখন দেখে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অংক নিয়ে উদ্বিগ্ন – তখন তারাও ভয় পেতে শুরু করে। ফলে যেসব শিক্ষক অংক করাতে গিয়ে অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেন।

এ ব্যাপারে কানাডার মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি অফ নিউফাউন্ডল্যান্ডের মনোবিজ্ঞানী ডার্সি হ্যালেট গণিতের উদ্বেগ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার মতে, কোন শিক্ষক বা অভিভাবক যদি প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গণিত পড়াতে অপারদর্শী হন, রেগে যান, হতাশায় ভোগেন – তাহলে তার শিক্ষার্থীদের এই গণিত উদ্বেগে ভোগার ঝুঁকি বেশি থাকে। এভাবে গণিতের ভয় একটা চক্রের মধ্যে আটকে যায়। গণিত ভীতির কারণ যাই হোক না কেন, একবার ভয়ের বীজে শিকড় গজিয়ে গেলে, এটি নিজে থেকেই বেড়ে উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা বিশ্বাস করেন যে তারা গণিতে খারাপ। গণিতের ভয় দূর করার প্রধান উপায়ই হল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। মিস ভিটার্ট বলেন, “যখন আপনার শিক্ষক বা উর্ধ্বতন কেউ বলে যে, আপনার দ্বারা কিছু হবে না। এটা অবশ্যই বিশাল উদ্বেগ তৈরি করে। চাপটা মেয়েদের ওপর বেশি থাকে।”উত্তেজনা শিথিল করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হতে পারে জোরে জোরে লম্বা নিশ্বাস নেয়া। এছাড়া ২০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটলে বা দৌড়ালেও মস্তিষ্ক ও শরীরের পেশী শিথিল হয়। উদ্বিগ্নতা কিছুটা হলেও কমে আসে। শিশুদের ক্ষেত্রে তাদেরকে অন্যান্য বিষয়গুলোর মতো গণিতের বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে কোন অবস্থাতেই গণিতকে অনেক কঠিন বিষয়, সবাই গণিত পারে না, এসব বলে ভয় দেখানো যাবে না। অংক না পারলে কোনভাবেই ঠাট্টা-তামাশা না করে তাকে গণিতের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ করুন। গণিত মুখস্থ করতে নয় বরং গণিত বোঝার ওপর গুরুত্ব দিন। গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক (১ম-৫ম) শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কন্টেন্ট ডেলিভারি বই ‍শিশুদের সামনে শত শত মজার আইডিয়া বা খেলার মাধ্যমে গণিতকে উপস্থাপন করেছে। শিশুদের পছন্দের বিষয় যেমন: তারা এরোপ্লেন দেখলে আনন্দ পায়, এই এরোপ্লেন যখন ক্লাসে শিক্ষকের সহায়তায় রঙ্গিন কাগজ দিয়ে শিশুরা বানাবে এবং বিদ্যালয়ের মাঠে উড়ানোর সুযোগ মিলবে তখন সকল শিশুই স্বাভাবিকভাকে আনন্দ সহকারে তা গ্রহণ করবে। এটাকি শুধুই একটা খেলা? নি:সন্দেহে না। শিক্ষক এই খেলাটি খেলিয়ে শিশুদের দুইটি বস্তুর মধ্যে কাছে দূরের ধারণাকে স্থায়ী করে দিলেন। এভবে গণিতকে আনন্দের মাধ্যমে একজন শিক্ষক যদি শিশুদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে গণিত ভীতি থেকে শিশুরা নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারবে। গণিত শিখতে আগ্রহী হবে। বাস্তব জীবনের সাথে মিল রেখে যদি গণিত শেখানো হয়। সেটা বেশি মনে থাকে। নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত আইনার স্কালভিক বলেছেন,গণিতের ভীতি কাটাতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মন খুলে কথা বলা বা প্রশ্ন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। গণিত ভীতিতে থাকা শিক্ষার্থীরা অন্যদের সামনে ছোট হওয়ার ভয়ে থাকেন এবং কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন না। ভুল করাটা শেখার প্রক্রিয়ার একটি অংশ। শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি বোঝানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটি শ্রেণীকক্ষে কে কতোটা মেধাবী, কার গ্রেড কতো ভালো সেটার প্রতিযোগিতা না করে শিক্ষা-ভিত্তিক পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দিতে হবে। তবেই দূর হবে গণিত ভীতি।

লেখকঃ মো: মনজুরুল আলম

সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার,খুলনা সদর,খুলনা,

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

গণিতের ভয় করবো জয়- মো: মনজুরুল আলম

পোস্ট করা হয়েছে : ০৩:৪০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অক্টোবর ২০২২

গণিতের প্রতি ভয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ম্যাথম্যাটিকস এনজাইটি বা ম্যাথেফোবিয়া। গণিতবিদ মেরি ডি লেলিস গফ ১৯৫৩ সালে ‘ম্যাথেফোবিয়া’ শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন। তিনি তার বহু শিক্ষার্থীকে গণিতের সমস্যা সমাধানে বেশ বেগ পেতে দেখেছেন। সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই ম্যাথেফোবিয়ার বিষয়টি সামনে আনেন তিনি। তার মতে ‘ম্যাথেফোবিয়া’ এক ধরণের “মানসিক সমস্যা” – যার উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার আগেই মারাত্মক বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা একে “আতঙ্ক, অসহায়ত্ব, পক্ষাঘাত এবং মানসিক অব্যবস্থাপনা” হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে অনেকের মধ্যে এসব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এক কথায় সবই হল গণিতের ভীতি।
বিবিসি ফিউচার বলছে, শিশুরা যখন দেখে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অংক নিয়ে উদ্বিগ্ন – তখন তারাও ভয় পেতে শুরু করে। ফলে যেসব শিক্ষক অংক করাতে গিয়ে অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেন।

এ ব্যাপারে কানাডার মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি অফ নিউফাউন্ডল্যান্ডের মনোবিজ্ঞানী ডার্সি হ্যালেট গণিতের উদ্বেগ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার মতে, কোন শিক্ষক বা অভিভাবক যদি প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গণিত পড়াতে অপারদর্শী হন, রেগে যান, হতাশায় ভোগেন – তাহলে তার শিক্ষার্থীদের এই গণিত উদ্বেগে ভোগার ঝুঁকি বেশি থাকে। এভাবে গণিতের ভয় একটা চক্রের মধ্যে আটকে যায়। গণিত ভীতির কারণ যাই হোক না কেন, একবার ভয়ের বীজে শিকড় গজিয়ে গেলে, এটি নিজে থেকেই বেড়ে উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা বিশ্বাস করেন যে তারা গণিতে খারাপ। গণিতের ভয় দূর করার প্রধান উপায়ই হল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। মিস ভিটার্ট বলেন, “যখন আপনার শিক্ষক বা উর্ধ্বতন কেউ বলে যে, আপনার দ্বারা কিছু হবে না। এটা অবশ্যই বিশাল উদ্বেগ তৈরি করে। চাপটা মেয়েদের ওপর বেশি থাকে।”উত্তেজনা শিথিল করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হতে পারে জোরে জোরে লম্বা নিশ্বাস নেয়া। এছাড়া ২০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটলে বা দৌড়ালেও মস্তিষ্ক ও শরীরের পেশী শিথিল হয়। উদ্বিগ্নতা কিছুটা হলেও কমে আসে। শিশুদের ক্ষেত্রে তাদেরকে অন্যান্য বিষয়গুলোর মতো গণিতের বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে কোন অবস্থাতেই গণিতকে অনেক কঠিন বিষয়, সবাই গণিত পারে না, এসব বলে ভয় দেখানো যাবে না। অংক না পারলে কোনভাবেই ঠাট্টা-তামাশা না করে তাকে গণিতের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ করুন। গণিত মুখস্থ করতে নয় বরং গণিত বোঝার ওপর গুরুত্ব দিন। গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক (১ম-৫ম) শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কন্টেন্ট ডেলিভারি বই ‍শিশুদের সামনে শত শত মজার আইডিয়া বা খেলার মাধ্যমে গণিতকে উপস্থাপন করেছে। শিশুদের পছন্দের বিষয় যেমন: তারা এরোপ্লেন দেখলে আনন্দ পায়, এই এরোপ্লেন যখন ক্লাসে শিক্ষকের সহায়তায় রঙ্গিন কাগজ দিয়ে শিশুরা বানাবে এবং বিদ্যালয়ের মাঠে উড়ানোর সুযোগ মিলবে তখন সকল শিশুই স্বাভাবিকভাকে আনন্দ সহকারে তা গ্রহণ করবে। এটাকি শুধুই একটা খেলা? নি:সন্দেহে না। শিক্ষক এই খেলাটি খেলিয়ে শিশুদের দুইটি বস্তুর মধ্যে কাছে দূরের ধারণাকে স্থায়ী করে দিলেন। এভবে গণিতকে আনন্দের মাধ্যমে একজন শিক্ষক যদি শিশুদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে গণিত ভীতি থেকে শিশুরা নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারবে। গণিত শিখতে আগ্রহী হবে। বাস্তব জীবনের সাথে মিল রেখে যদি গণিত শেখানো হয়। সেটা বেশি মনে থাকে। নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত আইনার স্কালভিক বলেছেন,গণিতের ভীতি কাটাতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মন খুলে কথা বলা বা প্রশ্ন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। গণিত ভীতিতে থাকা শিক্ষার্থীরা অন্যদের সামনে ছোট হওয়ার ভয়ে থাকেন এবং কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন না। ভুল করাটা শেখার প্রক্রিয়ার একটি অংশ। শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি বোঝানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটি শ্রেণীকক্ষে কে কতোটা মেধাবী, কার গ্রেড কতো ভালো সেটার প্রতিযোগিতা না করে শিক্ষা-ভিত্তিক পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দিতে হবে। তবেই দূর হবে গণিত ভীতি।

লেখকঃ মো: মনজুরুল আলম

সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার,খুলনা সদর,খুলনা,