মুঠোফোনে কথা বলার সময় প্রথম মিনিটে কলড্রপে হলে এখন থেকে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ পাবেন গ্রাহকরা। এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে দেশের মোবাইল অপারেটরদের। পাশাপাশি কলড্রপের হিসাব গ্রাহক মুঠোফোনের মাধ্যমেই জানতে পারবেন। ১ অক্টোবর থেকে এ নিয়ম চালুর কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। রাজধানীর রমনায় বিটিআরসির কার্যালয়ের প্রধান সম্মেলন কক্ষে আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। ‘মোবাইলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সংগঠিত কলড্রপ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষতিপূরণ’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিটিআরসি।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের কলড্রপের হিসাব, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার হারের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মুঠোফোন অপারেটর টেলিটকের কোনো পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়নি। এ বিষয়ে বিটিআরসির বক্তব্য হচ্ছে, টেলিটকের হিসাব চাওয়া হয়েছে। সে হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছে নেই। কিন্তু কলড্রপ হলে টেলিটককেও গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। টেলিটককে আলাদা সুবিধা দেওয়া হবে না।
এতোদিন কোনো মোবাইল অপারেটরই প্রথম কলড্রপের জন্য গ্রাহককে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতো না। অথচ বিটিআরসি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রাহকের যত কলড্রপ হয়, তার ৬৫ শতাংশই প্রথম কলড্রপ। বর্তমানে গ্রামীণফোন ও রবি তৃতীয় থেকে সপ্তম কলড্রপের ক্ষেত্রে প্রতি কলড্রপে এক মিনিট করে ফেরত দেয়। আর বাংলালিংক দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ কলড্রপ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়।
বিটিআরসি জানিয়েছে, ১ অক্টোবর থেকে অপারেটরগুলোর নিজস্ব (অননেট) কলের ক্ষেত্রে প্রথম কলড্রপের জন্য গ্রাহকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। তবে এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে (অফনেট) কলের ক্ষেত্রে আপাতত এ নিয়ম চালু হচ্ছে না। *১২১*৭৬৫# নম্বরে ডায়াল করে গ্রাহকেরা পূর্ববর্তী দিন, সপ্তাহ ও মাসের কলড্রপের সংখ্যা জানতে পারবেন। অননেট কল ড্রপ হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রথম ও দ্বিতীয় কলড্রপের ক্ষেত্রে তিনটি পালস (৩০ সেকেন্ড) এবং পরবর্তী তৃতীয় থেকে সপ্তম কলড্রপের জন্য ৪০ সেকেন্ড গ্রাহককে ফেরত দেওয়া হবে।
কলড্রপের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া মিনিটগুলো পরবর্তী দিনের প্রথম কলে ব্যবহার হবে। ফেরত পাওয়া মিনিট পুরোপুরি ব্যবহার শেষ হওয়ার আগে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো টাকা কাটা যাবে না। এ ছাড়া ফেরত দেওয়া মিনিটের বিষয়ে গ্রাহককে খুদেবার্তা পাঠিয়ে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে মুঠোফোন অপারেটরদের।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ দেশের মুঠোফোন অপারেটরগুলোর চলতি বছরের মে মাসের ৩১ দিনের কলড্রপের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, মে মাসে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের মোট অননেট কলড্রপ হয়েছে ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩২টি। এর মধ্যে প্রথম কলড্রপ ৫ কোটি ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৭টি, দ্বিতীয় কলড্রপ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ১৭৮টি, তৃতীয় ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৬টি, চতুর্থ ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৬টি, পঞ্চম ১৫ লাখ ৪১ হাজার ১৬০টি, ষষ্ঠ ৯ লাখ ৫০ হাজার ৩১০টি এবং সপ্তম ১০ লাখ ২৬ হাজার। এর বাইরে অষ্টম হতে আরও কলড্রপের পরিমাণ ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৮৯২টি।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, প্রতি কলড্রপেই ১০ সেকেন্ড করে গ্রাহকদের ফেরত দিতে হবে অপারেটরদের। কলড্রপ শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। অপারেটরগুলোও চায় না কলড্রপ হোক। অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করেই কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নতুন এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টেলিটকের কলড্রপের কোনো পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়নি, টেলিটককে আলাদা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, টেলিটকও এই নতুন নিয়মে আছে। টেলিটককে আলাদা কোনো সুযোগ দেওয় হচ্ছে না। তারা একটু পিছিয়ে আছে। তাদের একটু সময় দেওয়া হচ্ছে।
অফনেটের কলড্রপের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ গ্রাহকেরা কবে পাবেন-সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবীর বলেন, অফনেট কলড্রপের ক্ষেত্রে কোন অপারেটর দায়ী তা বের করা কঠিন। এর জন্য টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। শিগগির এটা করা হবে।
অপারেটরগুলো গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ নিয়মিত দিচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি মহাপরিচালক নাসিম পারভেজ বলেন, অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক পরিদর্শন করে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সময় বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেম থেকে তথ্য নেওয়া হয়। অপারেটরগুলো যা খুশি তাই তথ্য দিতে পারেন না। সেখানে নিজের সুবিধার্তে তথ্য বদলানোর কোনো সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেনসের মাধ্যমে বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও ডাক ও টেলিযোযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে মুঠোফোন অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।