আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা: হত্যার ৪দিন পর সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর সরদারপাড়ার নিহত চা ব্যবসায়ি ইয়াছিন আলী মোল্লার ঘাতক শেখ জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। রবিবার ভোরে সাতক্ষীরা শহরতলীর পারকুখরালি কাঠালতলা গুচ্ছগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি রবিরার সকাল ৯ টার দিকে শহরের কামাননগরের সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল জলিলের মাছের ঘেরের দক্ষিণ পাশের বাইপাস সড়কের কালভার্টের নীচের জলাশয় থেকে বস্তাবন্দি ইয়াছিন আলী মোল্লার কাটা মুন্ডু উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতের বাবার নাম বাচ্চু শেখ।

খুলনা র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোস্তাক আহম্মেদ রবিবার সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বাইপাস সড়কে এক প্রেস ব্রিফিংএ জানান, ২০ হাজার পাওনা টাকা দিতে টালবাহানা করায় এক মাস আগে জাকির হত্যার পরিকল্পনা করে ইয়াছিনকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ দিন আগে শহরের কামাননগর থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে একটি দা কিনে তাতে ধার দেয়। দা নিয়ে ইয়াছিনের চায়ের দোকানে এসেছে কয়েকবার। গত ৩০ আগষ্ট মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে একটি হোটেলে বিরিয়ানি খাওয়ানোর পর তাকে একটি ভ্যান চালাতে দিয়ে সে নিজে যাত্রী হিসেবে বসে থাকে। বাইপাস সড়কের বকচরা এলাকায় এলে ইয়াছিনকে পিছন দিক থেকে ঘাড়ে কোপ দেয় জাকির। এরপর ভ্যানটি আরো কিছুদুর এগিয়ে গেলে তার ঘাড়ে আরো একটি কোপ মারলে রাস্তায় পড়ে যায় ইয়াছিন। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে নির্জন জায়গায় জলাশয়ের মধ্যে নিয়ে তাকে দা দিয়ে জবাই করে হত্যা করে জাকির। পরে তার লাশ ও পরিহিত জামা একটি বস্তার মধ্যে ভরে শহরের কামাননগরের সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল জলিলের মাছের ঘেরের দক্ষিণ পাশের বাইপাস সড়কের কালভার্টের নীচের জলাশয়ে বস্তা ফেলে দেয়। সেখান থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেলের সামনে এসে একটি পুকুরে গোসল করে তার রক্তমাখা জামা ফেলে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রবিবার ভোরে সাতক্ষীরা শহরতলীর পারকুকরালি কাঠালতলা গুচ্ছগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ৫৫ বছর বয়সী জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি রবিরার সকাল টার দিকে শহরের কামাননগরের সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল জলিলের মাছের ঘেরের দক্ষিণ পাশের বাইপাস সড়কের কালভার্টের নীচের জলাশয় থেকে বস্তাবন্দি ইয়াছিন মোল্লার মুন্ডু উদ্ধার করা হয়। এছাড়া নিহতের রক্তমাখা জামা, জাকিরের রক্তমাখা জামা ও হত্যাকা-েন্ড ব্যবহৃত ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। তবে হত্যাকা-েন্ড ব্যবহৃত দা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে হত্যার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত ছিল কিনা।

স্বামীর কাটা মুন্ডু উদ্ধার ও হত্যাকারিকে গ্রেপ্তারের খবরে বাইপাস সড়কে ছুটে আসেন তাসলিমা খাতুন, তার তিন মেয়ে ও স্বজনরা। তারা জাকির হোসেনের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আজিজুল ফয়সাল তারেক জানান, গ্রেপ্তারকৃত জাকির হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার বিকেলে সাতক্ষীরা আদালতে পাঠানো হবে। সে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে সাতক্ষীরা শহরতলীর বাইপাস সড়কে বিরোধপূর্ণ জমিতে কাজ করার কথা বলে জাকির হোসেন তার পূর্ব পরিচিত সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর সরদারপাড়ার মৃত শাহবাজ মোল্লার ছেলে ইয়াছিন মোল্লাকে পুরাতন সাতক্ষীরার চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায়। বুধবার ভোরে বাইপাস সড়কের বকচরা এলাকার নুরুজ্জামানের মাছের ঘেরের পাশের জলাশয় থেকে তার মুুন্ডু বিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে বুধবার রাতে কারো নাম উল্লেখ না করেই সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।