এম এ মান্নান
সাতক্ষীরা তালায় পাটের ভালো ফলন হলেও তীব্র তাপদাহ ও পানির অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। প্রখর রোদে জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাটের আঁশ। এ সময়ে চাহিদামতো বৃষ্টি না হলে পাটের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা, শ্রাবণ মাস পেরিয়ে ভাদ্র মাসের শুরুতেও জেলায় কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে জেলার অধিকাংশ খাল-বিলে পানিতে ভরপুর থাকার কথা থাকলেও এখনো শুকনো। কোনো কোনো জলাশয়ে সামান্য পানি থাকলেও পাট পচানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাষিদের অনেকেই বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমির পাশে, কেউবা রাস্তার পাশে, খাল-বিল বা ডোবার পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ কেউ পানির অভাবে জমিতে খড় ও আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার খাল-বিল ও জলাশয়ের সামান্য পানিতেই পাটের ওপর মাটি ও ভারী কিছু দিয়ে পচানোর চেষ্টা করছেন।এছাড়া অনেক জায়গায় পাট কেটে পাটের ক্ষেতের চার পাশে ভেড়ি বেধে শ্যালো ইন্জিন দিয়ে পানি দিয়ে জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
ডোবা কিংবা জলাশয়ে পাট জাগ দিতে কেউ কেউ শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি দিচ্ছেন। আবার কেউ গাড়িতে দূরে কোনো জলাশয়ে নিয়ে জাগ দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।
তালা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৯৭২ হেক্টর জমিতে পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৩ হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবার পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন।
তালা উপজেলার আটারই গ্রামের মোস্তফা খাঁ,জাতপুর গ্রামের ইয়াছিন বিশ্বাস,আলাদিপুর গ্রামের গনেশ পাল,আগোলঝাড়া গ্রামের শেখ সিদ্দিক,পাঁচপাড়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম,শামছুজ্জামান,দাদপুর গ্রামের আবুল কাশেম,সহ উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, প্রথমদিকে সংকটের কারণে বেশি দামে সার কিনতে হয়েছিল। এখন পানির অভাবে পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে।ভেড়ি বেধে শ্যালো ইন্জিন দিয়ে পানি সেচ দিয়ে পাট জাগ দেওয়া, মাঠ থেকে দূরে থাকা জলাশয়ে পাট নিয়ে জাগ দিতে যেয়ে এতে শ্রমিক ও পরিবহনের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় গড় ফলন ৯ মণ। প্রতি মণ পাটের বর্তমান বাজার দর ২ হাজার ২০০ শত টাকা থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকা। এ দামে পাট বিক্রি করলে তারা খুব বেশি লাভবান হবেন না।
তালা উপজেলার কলিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ বায়োজিদ হোসেন মোড়ল,তেরছি গ্রামের শ্যামল ঘোষ,সহ কয়েক জন কৃষক জানান, বর্ষা মৌসুমে প্রকৃতিতে চলছে গ্রীষ্মের তাপদাহ। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ার ক্ষেতের পাট ক্ষেতেই পুড়ছে। সময় হলেও পানির অভাবে পাট কাটতে পারছি না। অনেকে পাট কেটেও পানির অভাবে জাগ দিতে না পেরে জমিতে স্তূপ করে রেখেছেন। অনেক কৃষক পুকুর বা ছোট জলাশয়ে সেচ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। নিশ্চিত লাভ জেনেও প্রকৃতির বিরূপ আচরণে কৃষকের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, চাষিরা জমির পাট কাটতে শুরু করেছে। এখন বড় সমস্যা পাট পচানো নিয়ে। পানির অভাবে চাষিরা ভালোভাবে পাট পচাতে পারছেন না। আমরা চাষিদের শ্যালোর পানি বা সেচ দিয়ে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছি।অল্প পানিতে কৃষকরা যাহাতে পাট পচাতে পারে তার জন্য আমাদের উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের কাছে যেয়ে পরামর্শ দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার পাটের আবাদ ভালো হয়েছে এবং পাটের অবস্থাও ভালো। অনাবৃষ্টি হলেও পাটের উৎপাদন ব্যাহত হবে না, তবে অতিবৃষ্টি হলে চাষিদের জন্য আরও সুবিধা হতো।