সুকুমার দাশ বাচ্চু
আমি ফুল ফোটা দেখেছি, ফুল ফটো শব্দ শুনিনি,। আমি আগুন দেখেছি আগুন হয়ে ওঠা দেখিনি। অধ্যক্ষ তমিজউদ্দিন আহমেদ (বাংলা স্যার) আমার ফুল ফোটার শব্দ, আগুন হয়ে ওঠার শিল্পী, আমার ছাত্র জীবন থেকে সাংবাদিকতার গুরু। দীর্ঘ সময় স্যারের সাথে থেকেছি এবং অনেক স্মৃতিময় ঘটনা আজও স্মৃতিতে ভাস্কর হয়ে আছে। নিজ কর্ম গুণে তিনি সকলের কাছে সকলের মাঝে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। একই সাথে একজন শিক্ষানুরাগী, সংগঠক, শিক্ষক, প্রতিথযশা সাংবাদিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ তমিজউদ্দিন আহমেদ বাংলা স্যার আর আমাদের মাঝে নেই ভাবতে খুবই কষ্ট লাগে। ১৯ আগস্ট ২০১৪ সালে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।তিনি রেখে গেছেন কালিগঞ্জ প্রেসক্লাব সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্মৃতি চিহ্ন । তিনি আছেন, থাকবেন ,আমাদের শ্রদ্ধায় ভালবাসায় আমাদের সুখে দুঃখে বেদনায় ও হাসি কান্নায় মাটি ও মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। বৃহত্তর অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জ্ঞান বিকাশিত করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। জীবনের ঊষা লগ্ন থেকে জীবনের শেষে এসেও তিনি নিরলসভাবে শিক্ষা বিস্তারে ব্রতী ছিলেন। হাজার হাজার অন্ধ প্রাণকে দিয়েছেন আলোর সন্ধান।
বিস্ফোরিত করেছে জ্ঞানচক্ষূ। এমনি এক শিক্ষানুরাগী ও মুক্ত বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দিন আহমেদ, পিতা মহরম এস এম ইসমাইল হোসেন, মাতা মহরুমা মতিউরনেসা। স্ত্রী মোসাম্মৎ মনুজাহান আহমেদ, তিনি এক পুত্র ফারুক আহমেদ উজ্জল, দুই কন্যা মিলি ও শিল্পীর জনক ছিলেন। কালিগঞ্জ উপজেলার বাজার গ্রাম রহিমপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তার আদি নিবাস সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা নোয়াবেকী আটুলিয়া গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে।তিনি ১৯৪৪ সালে পহেলা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে ভূরুলিয়া হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬৬ সালে সাতক্ষীরা কলেজ থেকে স্নাতক, ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কৃতিত্বের সাথে এম,এ, পাস করেন।
ছাত্র নেতৃত্বের সফলতায় তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আলওয়াল হলের নির্বাচিত হন। তিনি ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দিন স্যার চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদী পত্রিকায় কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব রিপোর্টার ছিলেন। ১৯৭০ সালে আশাশুনি কলেজে বাংলা বিষয় অধ্যাপক হিসেবে যোগদান ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভাষনের পর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও দক্ষিণাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলে জানা যায়। তিনি ভারতে গমন করেন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শাজাহান মাস্টার সাহেবের সাথে সাংগঠনিক কাজে লিপ্ত হন। পরবর্তীতে কালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয় যোগদান করেন।
১৯৮৩ সালে শ্যামনগর দেবভাটা আশাশুনি ও কালিগঞ্জ থানা কে নিয়ে আঞ্চলিক প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। পরে আঞ্চলিক প্রেস ক্লাব বাদ দিয়ে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমান কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ সাইফুল বারী সফু ও সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাস বাচ্চুর নেতৃত্বে প্রেসক্লাবের অবকাঠামো উন্নয়নে আধুনিকরণ করা হয়েছে।১৯৯৫ সালে কালীগঞ্জে রোকেয়া মুনসুর ডিগ্রী মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি হাজী তফিলউদ্দিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা ও কফিলউদ্দিন হাফিজিয়া কারিয়ানা মাদ্রাসা ও এতিমখানার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। কোমলমতি শিশুদের অত্যাধুনিক শিক্ষার জন্য ১৯৯৫ সালে উপজেলা সদরে লিটিল ফলোয়ার কিন্ডার গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হায়দার এর নির্দেশে অত্র প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ হিসেবে প্রায় ১ যুগ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তৎকালীন ভুতপর্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন খান উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং নামকরণ করেন উপজেলা ল্যাবরেটরী স্কুল। বর্তমান স্কুলটি আধুনিকরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ। অধ্যক্ষ তমিজউদ্দিন আহমেদ কালিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব কালীন সময়ে ১৯৯৫ ও ১৯৯৮ সালে মুক্তি ও ফরিয়াদ নামে দুটি পত্রিকার সম্পাদনা করেন। পরে সাংবাদিক সুকুমার দাশ বাচ্চুর সম্পাদনায় প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় মুক্তি ও ফরিয়াদের দুটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০৫ সালে সাপ্তাহিক মুক্ত আলাপ পত্রিকাটি অনুমোদন লাভ করলে, তিনি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি শিক্ষকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে কালীগঞ্জ থানার শ্রেষ্ঠ কলেজ শিক্ষকের পুরস্কার লাভ করেন। তিনি জনকল্যাণ অসহায় দুস্ত মানবতায় সেবায় নিয়োজিত থাকায় সাতক্ষীরা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের আজীবন সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালে তারই হাতে গড়া কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি মানবাধিকার ও পরিবেশ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ক্রিড়া প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
১৯ আগস্ট অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দিন আহমেদ বাংলা স্যারের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচি মধ্যে আছে মহরমের মাজার জিয়ারত, প্রেসক্লাবে স্মৃতিচারণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান। স্যারের প্রতি কালিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।