রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:
বর্ষাকালের খরায় প্রধান ফসল আমন ধান চাষ নিয়ে উপকূলের কৃষককুল দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। ঋতু বৈচিত্র্যের পরিক্রমায় আষাঢ় শ্রাবন এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবন মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে অথচ বৃষ্টির দেখা নেই। এর ফলে কৃষকের প্রধান ফসল আমন ধান চাষ নিয়ে কৃষকরা অনিশ্চতায় দিন কাটাচ্ছেন।
কখন তৈরী করবেন বীজ তলা, কখন রোপন করবেন ধান চারা এসব চিন্তা কৃষকের মাথায় যেন ঘুরপাক খাচ্ছে। এই বুঝি শুরু হল বৃষ্টি এই আশায় তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। হয়ত আজই শোনা যাবে আবহাওয়ার খবরে যে এখনই বৃষ্টি নামবে। এমনটাই আলোচনা কৃষকের মুখে। বৃষ্টি হচ্ছে কিন্ত সেটি বীজ তলা তৈরী বা ধান চারা রোপনের বৃষ্টি নয় বলে কৃষকরা মন্তব্য করেছেন।
উপজেলার মুন্সিগঞ্জ গ্রামের আমনধান চাষি অশোক মৃধা , ধানখালী গ্রামের খোকন বৈদ্য বলেন যেন হাত পা গুটিয়ে বসে আছি। বৃষ্টির দেখা নাই, ধান বীজতলা তৈরী করতে পারছিনা। মনে হচ্ছে এদিকে দিনক্ষণ সবই যেন চলে যাচ্ছে।
চন্ডিপুর গ্রামের আমন ধান চাষি দিলিপ মন্ডল বলেন বসে বসে দিন ক্ষেপণ না করে বৃষ্টির দেখা না পেয়ে বাড়ীর পুকুরের পানি দিয়ে আমন ধানের বীজতলা তৈরী শুরু করেছি। চ্যানেল আই পুরস্কার প্রাপ্ত হায়বাতপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন উপকূলীয় সাতক্ষীরায় কৃষকের প্রধান ফসল আমনধান চাষ। এবং এটি বর্ষাকালে চাষ করে ফসল ফলিয়ে কৃষকরা তাদের স্বপ্ন পূরণ করে থাকেন। এদিকে আষাঢ় মাস শেষ হল ও শ্রাবন মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে কিন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। তিনি বলেন জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ঋতুচক্রের পরিবর্তন হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার এখনও পর্যন্ত আমনধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। গতবছর আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬,৮৪০ হেক্টর। উপজেলায় লবন পানিতে চিংড়ী চাষের প্রাধান্য থাকলেও আমনধান চাষের পরিমানও রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে। এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী কৃষকরা বীজতলা প্রস্তত করেছেন মাত্র ৫০ হেক্টর।
অপরদিকে কৃষি অফিসের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড অনুযায়ী দেখা যায় ১৭ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে বিভিন্ন তারিখে মাত্র ১০২ মিলিমিটার। এ মাসে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৭ মিলিমিটার। জুন মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৩৫ মিলিমিটার ,মে মাসে বৃষ্টিপাত নাই। এপ্রিলে বৃষ্টি হয়েছে ২৮ মিলিমিটার। জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কোন বৃষ্টিপাত নাই। কিন্ত গতবছর এ সময়ে বৃষ্টিপাত ছিল বেশী। রেকর্ড অনুযায়ী গতবছর জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত ছিল ৯২২ মিলিমিটার, জুন মাসে ছিল ৫৬০ মিলিমিটার ও মে মাসে ১৩৭ মিলিমিটার। গতবছর জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হালকা বৃষ্টিপাত ছিল।
আষাঢ় মাস মানে বর্ষা ঋতুর আগমন। এসময় খাল বিল ,নদী নালা পানিতে ভরে যায়,ভরে যায় পুকুর ডোবা। কিন্ত এবছর তেমন চেহারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আমার বয়সকালে শ্রাবন মাসেও খরা এই মনে হয় প্রথম দেখলাম এমনটি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন উন্নয়ন কর্মী লির্ডাসের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল। তিনি বলেন উপকূলীয় শ্যামনগরে নীচের পানি লবনাক্ত থাকায় কৃষকের প্রধান ফসল আমনধান চাষের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে বৃষ্টিপাত কমবে বা বাড়বে এমটি হতে পারে তাই বলে এমন পরিবর্তন খুব কম লক্ষ্য করা যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কৃষির নিরন্তর সম্ভবনার দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের উপকূলীয় এলাকায় কৃষির অপার সম্ভবনা রয়েছে। এলাকার কৃষকবৃন্দের দাবী উপকূলীয় এলাকায় নতুন খাল খনন ও খাল পুনঃখনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হলে খরায় কৃষকের ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। অভিজ্ঞমহলের দাবী সময়োচিত নীতি, কৌশল ও কার্যকর কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে।