আকিবুজ্জামিনঃ
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে খাদ্যের দাম এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে, তা বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
ইউক্রেন এবং রাশিয়া- দুটি দেশই প্রাধান্য খাদ্যশস্যের বড় রফতানি-কারক। যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খাদ্যের দাম বাড়ছে।
মি. বিসলি বলছেন, এর ফলে এখন বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে।
“আপনি যখন ভাবছেন যে পৃথিবীতে যে নরকের মতো পরিস্থিতি, তা আর কত খারাপ হবে, তখনই কিন্তু এটি আরও খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকেই বিশ্বের মোট গমের ২৫ শতাংশ রফতানি হয়। সানফ্লাওয়ার বীজ এবং তেলেরও অর্ধেক এই দুটি দেশে উৎপাদিত হয়। ইউক্রেন সারা বিশ্বের কাছে অনেক ভুট্টাও বিক্রি করে।
বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, এই যুদ্ধের ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, এমনকি বিশ্বে গমের দাম দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে বলেন, রাশিয়া এই যুদ্ধ শুরুর আগেই গত চার বছরে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আট কোটি থেকে বেড়ে ২৭ কোটি ৭৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, নানা রকম যুদ্ধ-সংঘাত, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং করোনাভাইরাস মহামারি- সব মিলিয়ে একটা ভয়ংকর দুর্যোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সংকটের কারণে কিছু দেশ বিশেষভাবে সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ এসব দেশে কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে বেশ উচ্চমাত্রায় খাদ্যশস্য আমদানি করে।
“যেমন লেবাননের খাদ্যশস্যের কমবেশি ৫০ শতাংশ আসে ইউক্রেন থেকে। ইয়েমেন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া- এরকম আরও অনেক দেশের কথা আমি বলতে পারি, এসব দেশ তাদের খাদ্যের জন্য ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করে,” বলছেন তিনি।এছাড়াও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট তীব্র হতে পারে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।বুধবার (১৮ মে) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধাবস্থা না কাটলে বিশ্ব দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি কল টু অ্যাকশনে’র বৈঠকে মহাসচিব বলেন, টানা দুবছর করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে ৭ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে রয়েছে, যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে ইউক্রেন সূর্যমুখী তেল, ভুট্টা ও গমের মতো পণ্য রফতানি করতে পারছে না। ফলে পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। জাতিসংঘের মতে, এ সংঘাতের ফলে অপুষ্টি, ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় লাখ লাখ মানুষ ভুগতে পারে।ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ করার মতো আরেকটি দেশ হলো ইরান। সরকার রুটি, রান্নার তেল এবং দুগ্ধজাত পন্যের দাম বাড়ানোর পর ২০ মে থেকে ( গত সপ্তাহে) দেশটির খুজেস্তানে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারনে ইরানিদের অবস্থা খারাপ জায়গায় দাঁড়িয়েছে। সেখানকার খাদ্যপনের দাম যদি নিন্মমুখী হতে থাকে, তাহলে ২০১৭-১৮ সালের দেশব্যপী বিদ্রোহের মতো সেখানে আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, দক্ষিণ মাদাগাস্কার এ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ভয়ানক রুপ নিয়েছে। সেখানে অনাহারজনিত মৃত্যুর পরিমাণ বাড়ছে। সর্বশেষ এই যে যদি ক্ষুধার সেই মহাস্রত আসে তাহলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মধ্যবিত্য ও নিন্মবিত্তের মানুষ গুলি, ধনীরা হবে অপমানিত। আপনার চোখের সামনে যদি ১৯৭৪-৭৭ এর সেই সময় চলে আসে, আপনি কি দেখার জন্য প্রস্তুত, একবার বইয়ে পড়া সেই দিনগুলো কেমন ছিলে সেটা কল্পনায় একবার ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।