বেপরোয়া ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ড. মিজান!
ডেস্ক রির্পোটঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ড. মিজানুর রহমান। তিনি পেশায় শিক্ষক হলেও অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করাই বেশি পছন্দ করেন। কখনো শেয়ারবাজারে ‘গেম্বলার’দের সঙ্গে সখ্যতা করে, কখনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে অর্থ আয় করেন। এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নিজ বিভাগের চেয়ারম্যানকে হামলার অভিযোগ ওঠার পর আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এসব অভিযোগের পর সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান। ফলে তিনি এখন আরো বেপরোয়া।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সাম্প্রতিক সময়ে ‘গেম্বলার’দের সাথে আঁতাত করে শেয়ার ব্যবসার মাধ্যমে হঠাৎই বিশাল অর্থের মালিক বনে গেছেন। গাড়ী, বাড়ী সবই নিচ্ছেন নতুন। মেয়ে কানাডা থাকার সুবাদে টাকা পাঠাচ্ছেন নানা অযুহাতে। তার মেয়ে স্কলারশিপে পড়লেও হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান নিয়মিত, যা টাকা পাচারের একটি কৌশল।
অনৈক কাজ করার অভিজ্ঞতা অনেক আগে থেকেই। ড. এমাজ উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন কোচিং সেন্টারে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ার কারনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ভর্তি সংক্রান্ত কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। নানা তদবিরে তখনও পার পেয়ে গিয়েছিলেন।
গত ১২ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলামকে খুনের হুমকি দিয়েছেন ড. মো. মিজানুর রহমান। চেয়ারম্যানের অভিযোগ, অধ্যাপক মিজান তাকে কু-রুচিপূর্ণ ভাষায় গালি দেন। এছাড়া, মিটিংয়ে তাকে মারার জন্য কয়েকবার তেড়ে আসেন। বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভায় সভা সদস্যদের নিকট এমন অভিযোগ দিয়েছেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম।
পরে এ বিষয়ে ১৬ মে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। জিডি নং ৮৬৪, তারিখ ১৬-০৫-২০২২। এস আই হারুন অর রশীদকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জিডি সম্পর্কে জানতে চাইলে, হারুন অর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিবেদন-এর কাছে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি অফিসের বাইরে, পরে জানাবেন বলে ফোন রেখে দেন।
জানা গেছে, এ ঘটনার পর বিভাগের জরুরি সভায় অধ্যাপক মিজানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, জার্নাল কমিটির মিটিংয়ে সদস্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল প্রতিটা আর্টিকেল নিয়ে ব্যাখা করেন। সভায় মোট ১১টি আর্টিকেলের মধ্যে ১টি আর্টিকেলের ২টি কপি আছে। অধ্যাপক মিজান প্রতিটি আর্টিকেলের লেখকের নাম জানতে চান। এভাবে মোট ১০টি আর্টিকেলের নাম বলার পর অধ্যাপক মিজান আরেকটা আর্টিকেলের বিষয়ে জানতে চান।
এসময় বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, জার্নাল কমিটির আগের সভায় অধ্যাপক ড. সমীর কুমার শীল ১টি আর্টিকেলের বিষয়ে বলেছিলেন আর্টিকেলটা এই ইস্যুতে যাবে না, মান সম্মত হলে পরের ইস্যুতে যাবে। এসময় অধ্যাপক মিজান দাড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ঐ ব্যাটা তোর কথায় হবে? তুই কে? মাতব্বরি করিস? তোকে খুন করে ফেলবো। এর প্রেক্ষিতে অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম মিজানকে ভদ্রভাবে কথার আহবান জানান। এসময় মিজান আরও উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়। এসময় চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জার্নালের সম্পাদক অধ্যাপক ড. হরিপদ ভট্টাচার্যকে এ বিষয়ে আর কথা না বাড়ানোর বিষয়ে বলেন।
একাডেমিক কমিটির সদস্যদেরকে দেওয়া অভিযোগপত্রে ও জিডিতে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম দাবি করেন, অধ্যাপক মিজান অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগাল দিয়ে মারতে আসে। এসময় আমি মিজানকে রুম থেকে চলে যেতে বলি। এসময় অধ্যাপক ড. হরিপদ ভট্টাচার্য এবং অধ্যাপক ড. সমীর কুমার শীল দু’জনে মিলে তাকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এরপর আরও দুইবার সে আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসে। আমি কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে যাই। এসময় বমি করি এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনা আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। দেখি কি ব্যবস্থা নেয়। বারবার ড. মিজান এধরণের অশোভন আচরণ করে যাচ্ছেন। এর সঠিক বিচার হওয়া দরকার।
জরুরি সভায় শহিদুল ইসলাম দুইটি প্রস্তব তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বিষয়টি প্রেরণ করা এবং তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক ড. মো: মিজানুর রহমানকে বিভাগের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।