ঢাকা ০৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বিশ্বের ২য় ইফতারির আয়োজন হয় বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় নলতা শরীফে (ভিডিও)

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ১১:৩২:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২
  • ২৮২ জন পড়েছেন ।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এই রমজান মাসে বিশ্বের ২য় ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রথম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফ প্রাঙ্গনে। এখানে পহেলা রমজান থেকে ৩০শে রমজান পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ একসাথে মিলিত হয়ে ইফতার করে।

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সাধক সুলতানুল আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গওছে জামান, হয়রত শাহ্ছুফী খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর জন্মভূমি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা নলতা গ্রামে। ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ নলতায় নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। তখনকার সময় থেকে নলতার আশে পাশের সকলের বাড়িতে রমজান মাসে রান্না করা খাবার এখানে নিয়ে এসে একসাথে বসে ইফতার করতেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এই ইফতার মাহফিল চালু হয়। দিন কি দিন বাড়তে থাকে এর পরিধি। বর্তমানে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে প্রতিবছর রমাজান মাসে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা। আর বাংলাদেশের মধ্যে এটাই সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল।

এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রমজান মাসে ইফতার করতে আসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। মহামারি করোনায় ২ বছর বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়েছে নলতা শরীফের এই ইফতার মাহফিল। পহেলা রমজান থেকে শুরু হওয়া ইফতার মাহফিল চলবে ৩০ রমজান পর্যন্ত।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটি বলছেন, করোনার কারণে ১০ হাজার মানুষের আয়োজন কমিয়ে বর্তমানে ৫ হাজার করা হয়েছে। যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে পূর্বের মতো আবারও আয়োজন বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হবে। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে ২০-২৫ জন বাবুর্চী ইফতার তৈরি বা রান্নার কাজ শুরু করেন এবং তা চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত। রমজানের আগেই প্রস্তুত করা হয় বিশাল ছাউনি। রান্না শেষে পরিবেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ছাউনির নিচে।

আছরের নামাজের পরপরই ইফতারি দিয়ে শুরু হয় প্লেট সাজানোর কাজ। এলাকার ছোট বড় সব মিলিয়ে ২০০ জন যুবক প্রতিদিন স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি প্লেটে সাজানো হয়, সিংড়া, কলা, খেজুর, ফিরনি, ছোলা, চিড়াসহ নানা খাবার দিয়ে।

ইফতারি তৈরি করতে আসা বাবুর্চী মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় করার পর থেকে রান্নার কাজ শুরু করি। শেষ হতে প্রায় বেলা ৩টা বেজে যায়। এখানে আমরা পরিস্কার পরিচ্ছনতার সাথে সিংড়া, ছোলা, ফিরনি রান্না করি।

স্বেচ্ছাসেবক জনি আহসান বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসে এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। খুবই ভালো লাগে। আমরা রমজান মাসের অপেক্ষায় থাকি। একসাথে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ইফতার করে। আমাদের সৌভাগ্য এতগুলো রোজাদারের খেদমত করতে পেরে।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের আজীবন সদস্য প্রভাষক মোঃ মনিরুজ্জামান মহাসিন বলেন, ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) নলতায় মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বল্প পরিসরে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন তিনি। ধীরে ধীরে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। এখন শুধু স্থানীয়রাই নন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসেন ইফতার করতে।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ জানালেন, প্রতিদিন প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয় ইফতারিতে। পুরো টাকা আসে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দানের মাধ্যমে।

আশাশুনি উপজেলা থেকে ইফতার করতে আসা তোষিকে কাইফু বলেন, সারাদিন রোজা রাখার পরে একসাথে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বসে ইফতার করা অন্য রকম তৃপ্তি সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমরা প্রায়ই কয়েকজন বন্ধুরা মিলে এখানে ইফতার করতে আসি। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মানুষ ইফতার করতে আসে।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক জানান, আমরা প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করতাম। এখানে নলতা শরীফে ৭-৮ হাজার মানুষ একসাথে বসে ইফতার করতো। বাকি ইফতার প্রতিদিন সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন মসজিদে পাঠানো হতো। কিন্তু করোনার কারনে আমাদের ইফতার মাহফিল ২ বছর বন্ধ ছিলো। আল্লাহর রহমতে এবছর আবার চালু করতে পেরেছি। বর্তমানে মুসল্লি কম হচ্ছে। আশা করছি খুব তারাতাড়ি মুসল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মুসল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পূর্বের মত ফের ১০ হাজার রোজাদারের ইফতার তৈরি করবো। নলতার ইফতার মাহফিল দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং বিশ্বের ২য় তম। আমার জানামতে বাংলাদেশে এত বৃহত্তর ইফতার মাহফিল আর কোথাও হয় না।

বিস্তারিত দেখবেন মোসতাফি সুজনের ক্যামেরায় (ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন)

 

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

বিশ্বের ২য় ইফতারির আয়োজন হয় বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় নলতা শরীফে (ভিডিও)

পোস্ট করা হয়েছে : ১১:৩২:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এই রমজান মাসে বিশ্বের ২য় ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রথম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফ প্রাঙ্গনে। এখানে পহেলা রমজান থেকে ৩০শে রমজান পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ একসাথে মিলিত হয়ে ইফতার করে।

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সাধক সুলতানুল আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গওছে জামান, হয়রত শাহ্ছুফী খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর জন্মভূমি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা নলতা গ্রামে। ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ নলতায় নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। তখনকার সময় থেকে নলতার আশে পাশের সকলের বাড়িতে রমজান মাসে রান্না করা খাবার এখানে নিয়ে এসে একসাথে বসে ইফতার করতেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এই ইফতার মাহফিল চালু হয়। দিন কি দিন বাড়তে থাকে এর পরিধি। বর্তমানে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে প্রতিবছর রমাজান মাসে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা। আর বাংলাদেশের মধ্যে এটাই সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল।

এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রমজান মাসে ইফতার করতে আসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। মহামারি করোনায় ২ বছর বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়েছে নলতা শরীফের এই ইফতার মাহফিল। পহেলা রমজান থেকে শুরু হওয়া ইফতার মাহফিল চলবে ৩০ রমজান পর্যন্ত।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটি বলছেন, করোনার কারণে ১০ হাজার মানুষের আয়োজন কমিয়ে বর্তমানে ৫ হাজার করা হয়েছে। যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে পূর্বের মতো আবারও আয়োজন বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হবে। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে ২০-২৫ জন বাবুর্চী ইফতার তৈরি বা রান্নার কাজ শুরু করেন এবং তা চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত। রমজানের আগেই প্রস্তুত করা হয় বিশাল ছাউনি। রান্না শেষে পরিবেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ছাউনির নিচে।

আছরের নামাজের পরপরই ইফতারি দিয়ে শুরু হয় প্লেট সাজানোর কাজ। এলাকার ছোট বড় সব মিলিয়ে ২০০ জন যুবক প্রতিদিন স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি প্লেটে সাজানো হয়, সিংড়া, কলা, খেজুর, ফিরনি, ছোলা, চিড়াসহ নানা খাবার দিয়ে।

ইফতারি তৈরি করতে আসা বাবুর্চী মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় করার পর থেকে রান্নার কাজ শুরু করি। শেষ হতে প্রায় বেলা ৩টা বেজে যায়। এখানে আমরা পরিস্কার পরিচ্ছনতার সাথে সিংড়া, ছোলা, ফিরনি রান্না করি।

স্বেচ্ছাসেবক জনি আহসান বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসে এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। খুবই ভালো লাগে। আমরা রমজান মাসের অপেক্ষায় থাকি। একসাথে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ইফতার করে। আমাদের সৌভাগ্য এতগুলো রোজাদারের খেদমত করতে পেরে।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের আজীবন সদস্য প্রভাষক মোঃ মনিরুজ্জামান মহাসিন বলেন, ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) নলতায় মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বল্প পরিসরে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন তিনি। ধীরে ধীরে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। এখন শুধু স্থানীয়রাই নন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসেন ইফতার করতে।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ জানালেন, প্রতিদিন প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয় ইফতারিতে। পুরো টাকা আসে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দানের মাধ্যমে।

আশাশুনি উপজেলা থেকে ইফতার করতে আসা তোষিকে কাইফু বলেন, সারাদিন রোজা রাখার পরে একসাথে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বসে ইফতার করা অন্য রকম তৃপ্তি সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমরা প্রায়ই কয়েকজন বন্ধুরা মিলে এখানে ইফতার করতে আসি। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মানুষ ইফতার করতে আসে।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক জানান, আমরা প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করতাম। এখানে নলতা শরীফে ৭-৮ হাজার মানুষ একসাথে বসে ইফতার করতো। বাকি ইফতার প্রতিদিন সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন মসজিদে পাঠানো হতো। কিন্তু করোনার কারনে আমাদের ইফতার মাহফিল ২ বছর বন্ধ ছিলো। আল্লাহর রহমতে এবছর আবার চালু করতে পেরেছি। বর্তমানে মুসল্লি কম হচ্ছে। আশা করছি খুব তারাতাড়ি মুসল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মুসল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পূর্বের মত ফের ১০ হাজার রোজাদারের ইফতার তৈরি করবো। নলতার ইফতার মাহফিল দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং বিশ্বের ২য় তম। আমার জানামতে বাংলাদেশে এত বৃহত্তর ইফতার মাহফিল আর কোথাও হয় না।

বিস্তারিত দেখবেন মোসতাফি সুজনের ক্যামেরায় (ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন)