ঢাকা ১১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

৮১ অ-মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত, বাতিল হচ্ছে গেজেট-সনদ

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৯:২১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২
  • ২৯৯ জন পড়েছেন ।

মিথ্যে তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন খুলনার বটিয়াঘাটার বার আড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র মণ্ডল। ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পান তিনি। গত বছরের জুনে তার বিরুদ্ধে সহযোদ্ধাদের অভিযোগ জমা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। এর পর ওই বছরের ২৭ অক্টোবর নিখিল চন্দ্র মণ্ডলের উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানি গ্রহণ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। পরে তার বিষয়ে জামুকার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত নন।’ এ পর্যায়ে গত মাস থেকে তার ভাতা বন্ধ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মিথ্যে তথ্য দিয়ে ২০০৫ সালে একইভাবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার মো. ইসমাইল। সেই থেকে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন তিনি। গত মাসে তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও বন্ধ করা হয়েছে। তার বিষয়ে জামুকার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উপজেলা যাচাই-বাছাইয়ে নামঞ্জুর হয়েছে। অভিযুক্ত মো. ইসমাইল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হননি। কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণও হাজির করতে পারেননি।’

শুধু নিখিল চন্দ্র মণ্ডল বা মো. ইসমাইল নন; সারাদেশে এমন ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জামুকার গত ৭৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জামুকার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে, যাদের শুধু গেজেট রয়েছে তাদের গেজেট বাতিল; যাদের শুধু সনদ রয়েছে তাদের সনদ বাতিল; যাদের লাল মুক্তিবার্তা আছে তাদের লাল মুক্তিবার্তা বাতিল এবং যাদের গেজেট, সনদ ও লাল মুক্তিবার্তা রয়েছে তাদের গেজেট, সনদ ও লাল মুক্তিবার্তা বাতিল করা হবে। অথচ তাদের অধিকাংশই গত দুই দশক ধরে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং সরকারি চাকরিতে সন্তান-পোষ্যদের জন্য নির্ধারিত কোটার সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। সেসব সুবিধা বাতিলের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা ফেরত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি জামুকা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, ‘অল্প টাকার জন্য মামলা করে তেমন সুবিধা হয় না। রায় হতেও সময় লাগে। মামলা চালানোর খরচ আছে। তবুও আমরা চেষ্টা করব মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে তারা যে ভাতা নিয়েছেন, সেটি ফেরত পাওয়া যায় কিনা।’

ফৌজদারি আইনের ৪১৬ ধারা অনুযায়ী, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের জন্য তিন বছর জেল এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

স্বীকৃতি বাতিল হলো যাদের: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের মো. আফতাব উদ্দীন, মো. ইসমাইল; খুলনার ডুমুরিয়ার নিখিল চন্দ্র মণ্ডল, প্রভাষ চন্দ্র ফৌজদার; সাতক্ষীরার আলিপুরের মো. আব্দুল করিম সরদার, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের সরোয়ার হোসেন, হাবিলদার রুস্তম আলী, মো. তৈয়বুর রহমান, হাফিজুর রহমান কাশেম, আসাদুজ্জামান, শেখ মজিবুর রহমান; নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মো. মতিউর রহমান, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার মোহাম্মদ মতিউর রহমান সরকার, ভৈরব বাজারের মো. ফজলুল হক; গাজীপুরের কালিগঞ্জের সিরাজুল হক মোড়ল, নাজির উল্লাহ মোল্লা, শহীদ আব্দুল কাদির শেখ, মো. আহসান উল্ল্যাহ, অনল রিবেরু, মন্টু গোমেজ, কাপাসিয়ার মো. আব্দুল হাই, শ্রীপুরের মো. সামসুল হক, মো. আছিম উদ্দিন, সদরের মো. সাইয়েদুল হক মোল্লা; চট্টগ্রামের পটিয়ার রণজিত কুমার দাশ, সাতকানিয়ার হাফেজ আহমদ, বাবুল কান্তি দাশ, কুমিল্লার দেবিদ্বারের মৃত আব্দুল কাদের, ফেনীর ছাগলনাইয়ার ছিদ্দিক উল্লাহ, ভোলার বোরহানউদ্দিনের মো. আহম্মদ উল্লা, মো. আ. মান্নান; বরগুনার বামনার মো. হারুন অর রশিদ; ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার মো. শমসের আলী, ত্রিশালের মো. শহিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদরের নুরুল ইসলাম দিলীপ; পাবনার ঈশ্বরদীর মো. আক্তারুজ্জামান, মো. খায়রুল ইসলাম, মো. ইমান আলী, ছায়েদ আলী, মসলেম উদ্দিন, মো. আমিরুল ইসলাম, ডা. আ. কাদের আজাদ, মো. আতিয়ার রহমান, মো. গোলাম মহমুদ, মো. আতিয়ার রহমান, মো. নূর মোহাম্মদ, মো. মজিবর রহমান; শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের মো. আলী আহম্মদ আকন, বগুড়ার শেরপুরের মজিবর রহমান, গোপালগঞ্জ সদরের বিএম আলী আহম্মদ, জামালপুরের বকশীগঞ্জের মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. আব্দুর রাজ্জাক; রাজশাহীর পবার মো. আফাজ উদ্দিন, মৃত আ. সাত্তার, মো. সামছুল হক; খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার চান মিয়া; কুমিল্লার লাকসামের মনিরুল আনোয়ার, আবুল কালাম আজাদ, আনা মিয়া, মো. শফিকুর রহমান; পাবনা সদরের মো. খালেকুজ্জামান, মো. আব্দুল মজিদ, মো. ইজিবর রহমান, মো. রুহুল আমীন, মো. মকছুদুল হক ফিরোজ, মো. খলিলুর রহমান, মো. আবু বকর সিদ্দিক, মো. তোফাজ্জল হোসেন (হেলাল), মো. লুৎফর রহমান, মো. সাইদুর রহমান, মো. আ. রহমান, মো. আবদুল করিম, মো. মজিবর রহমান, এএসএম ইজহারুল ইসলাম, মো. আব্দুল জব্বার খান, মীর্জা মো. ইদ্রিস আলী, মো. আ. রশিদ; সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের নুরুল আমিন ও আবুল হাসেম।

জামুকার সভার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর ২০২০ থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দুই দফা শুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব শুনানিতে উপস্থিত হয়েও তারা অভিযোগ খণ্ডন করে মুক্তিযোদ্ধার সপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও সহযোদ্ধাদের সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য, কিন্তু সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি।

এর আগে মিথ্যে তথ্য দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ায় ২০১৪ সালের জুন ও জুলাই মাসের বিভিন্ন সময়ে সাবেক স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক সচিব একেএম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানসহ ৪০ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দেড়শ অ-মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বহুল আলোচিত এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সাবেক সচিব একেএম আমির হোসেন ও মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের আওতায় পাঁচটি ক্যাটাগরিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক ও বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা, শব্দসৈনিক, মুজিবনগর কর্মচারীসহ ৩২ শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই তালিকা যাচাই-বাছাই করে গত এক যুগে ১৫ সহস্রাধিক অ-মুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করে সনদ বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলছেন, অ-মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার কার্যক্রম চলছে। এটি অব্যাহত থাকবে।

জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সমকালকে বলেন, অ-মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে তাদের গেজেট বাতিল করলেই হবে না। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ যেসব সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তা-ও বাতিল করে ভাতার টাকা ফেরত নিতে হবে। যারা স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদেরসহ অ-মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

৮১ অ-মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত, বাতিল হচ্ছে গেজেট-সনদ

পোস্ট করা হয়েছে : ০৯:২১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২

মিথ্যে তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন খুলনার বটিয়াঘাটার বার আড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র মণ্ডল। ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পান তিনি। গত বছরের জুনে তার বিরুদ্ধে সহযোদ্ধাদের অভিযোগ জমা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। এর পর ওই বছরের ২৭ অক্টোবর নিখিল চন্দ্র মণ্ডলের উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানি গ্রহণ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। পরে তার বিষয়ে জামুকার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত নন।’ এ পর্যায়ে গত মাস থেকে তার ভাতা বন্ধ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মিথ্যে তথ্য দিয়ে ২০০৫ সালে একইভাবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার মো. ইসমাইল। সেই থেকে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন তিনি। গত মাসে তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও বন্ধ করা হয়েছে। তার বিষয়ে জামুকার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উপজেলা যাচাই-বাছাইয়ে নামঞ্জুর হয়েছে। অভিযুক্ত মো. ইসমাইল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হননি। কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণও হাজির করতে পারেননি।’

শুধু নিখিল চন্দ্র মণ্ডল বা মো. ইসমাইল নন; সারাদেশে এমন ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জামুকার গত ৭৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জামুকার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে, যাদের শুধু গেজেট রয়েছে তাদের গেজেট বাতিল; যাদের শুধু সনদ রয়েছে তাদের সনদ বাতিল; যাদের লাল মুক্তিবার্তা আছে তাদের লাল মুক্তিবার্তা বাতিল এবং যাদের গেজেট, সনদ ও লাল মুক্তিবার্তা রয়েছে তাদের গেজেট, সনদ ও লাল মুক্তিবার্তা বাতিল করা হবে। অথচ তাদের অধিকাংশই গত দুই দশক ধরে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং সরকারি চাকরিতে সন্তান-পোষ্যদের জন্য নির্ধারিত কোটার সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। সেসব সুবিধা বাতিলের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা ফেরত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি জামুকা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, ‘অল্প টাকার জন্য মামলা করে তেমন সুবিধা হয় না। রায় হতেও সময় লাগে। মামলা চালানোর খরচ আছে। তবুও আমরা চেষ্টা করব মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে তারা যে ভাতা নিয়েছেন, সেটি ফেরত পাওয়া যায় কিনা।’

ফৌজদারি আইনের ৪১৬ ধারা অনুযায়ী, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের জন্য তিন বছর জেল এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

স্বীকৃতি বাতিল হলো যাদের: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের মো. আফতাব উদ্দীন, মো. ইসমাইল; খুলনার ডুমুরিয়ার নিখিল চন্দ্র মণ্ডল, প্রভাষ চন্দ্র ফৌজদার; সাতক্ষীরার আলিপুরের মো. আব্দুল করিম সরদার, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের সরোয়ার হোসেন, হাবিলদার রুস্তম আলী, মো. তৈয়বুর রহমান, হাফিজুর রহমান কাশেম, আসাদুজ্জামান, শেখ মজিবুর রহমান; নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মো. মতিউর রহমান, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার মোহাম্মদ মতিউর রহমান সরকার, ভৈরব বাজারের মো. ফজলুল হক; গাজীপুরের কালিগঞ্জের সিরাজুল হক মোড়ল, নাজির উল্লাহ মোল্লা, শহীদ আব্দুল কাদির শেখ, মো. আহসান উল্ল্যাহ, অনল রিবেরু, মন্টু গোমেজ, কাপাসিয়ার মো. আব্দুল হাই, শ্রীপুরের মো. সামসুল হক, মো. আছিম উদ্দিন, সদরের মো. সাইয়েদুল হক মোল্লা; চট্টগ্রামের পটিয়ার রণজিত কুমার দাশ, সাতকানিয়ার হাফেজ আহমদ, বাবুল কান্তি দাশ, কুমিল্লার দেবিদ্বারের মৃত আব্দুল কাদের, ফেনীর ছাগলনাইয়ার ছিদ্দিক উল্লাহ, ভোলার বোরহানউদ্দিনের মো. আহম্মদ উল্লা, মো. আ. মান্নান; বরগুনার বামনার মো. হারুন অর রশিদ; ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার মো. শমসের আলী, ত্রিশালের মো. শহিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদরের নুরুল ইসলাম দিলীপ; পাবনার ঈশ্বরদীর মো. আক্তারুজ্জামান, মো. খায়রুল ইসলাম, মো. ইমান আলী, ছায়েদ আলী, মসলেম উদ্দিন, মো. আমিরুল ইসলাম, ডা. আ. কাদের আজাদ, মো. আতিয়ার রহমান, মো. গোলাম মহমুদ, মো. আতিয়ার রহমান, মো. নূর মোহাম্মদ, মো. মজিবর রহমান; শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের মো. আলী আহম্মদ আকন, বগুড়ার শেরপুরের মজিবর রহমান, গোপালগঞ্জ সদরের বিএম আলী আহম্মদ, জামালপুরের বকশীগঞ্জের মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. আব্দুর রাজ্জাক; রাজশাহীর পবার মো. আফাজ উদ্দিন, মৃত আ. সাত্তার, মো. সামছুল হক; খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার চান মিয়া; কুমিল্লার লাকসামের মনিরুল আনোয়ার, আবুল কালাম আজাদ, আনা মিয়া, মো. শফিকুর রহমান; পাবনা সদরের মো. খালেকুজ্জামান, মো. আব্দুল মজিদ, মো. ইজিবর রহমান, মো. রুহুল আমীন, মো. মকছুদুল হক ফিরোজ, মো. খলিলুর রহমান, মো. আবু বকর সিদ্দিক, মো. তোফাজ্জল হোসেন (হেলাল), মো. লুৎফর রহমান, মো. সাইদুর রহমান, মো. আ. রহমান, মো. আবদুল করিম, মো. মজিবর রহমান, এএসএম ইজহারুল ইসলাম, মো. আব্দুল জব্বার খান, মীর্জা মো. ইদ্রিস আলী, মো. আ. রশিদ; সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের নুরুল আমিন ও আবুল হাসেম।

জামুকার সভার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর ২০২০ থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দুই দফা শুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব শুনানিতে উপস্থিত হয়েও তারা অভিযোগ খণ্ডন করে মুক্তিযোদ্ধার সপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও সহযোদ্ধাদের সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য, কিন্তু সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি।

এর আগে মিথ্যে তথ্য দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ায় ২০১৪ সালের জুন ও জুলাই মাসের বিভিন্ন সময়ে সাবেক স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক সচিব একেএম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানসহ ৪০ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দেড়শ অ-মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বহুল আলোচিত এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সাবেক সচিব একেএম আমির হোসেন ও মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের আওতায় পাঁচটি ক্যাটাগরিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক ও বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা, শব্দসৈনিক, মুজিবনগর কর্মচারীসহ ৩২ শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই তালিকা যাচাই-বাছাই করে গত এক যুগে ১৫ সহস্রাধিক অ-মুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করে সনদ বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলছেন, অ-মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার কার্যক্রম চলছে। এটি অব্যাহত থাকবে।

জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সমকালকে বলেন, অ-মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে তাদের গেজেট বাতিল করলেই হবে না। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ যেসব সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তা-ও বাতিল করে ভাতার টাকা ফেরত নিতে হবে। যারা স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদেরসহ অ-মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।