প্রায় পাঁচ বছর পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহুল আলোচিত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (বর্তমানে সংযুক্ত, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রাজশাহী) মো. রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ও যুগ্মসচিব কেএম রাহাতুল ইসলাম ও সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছায়েদুর রহমান।
দুদক ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে সাতটি চেকের মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সরকারি তহবিলের ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮ টাকা নগদায়ন করে বিভিন্ন সময়ে (্২০১৭ সালের আগস্ট-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত) উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
এজাহারে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিমারদীঘি আশরাফের বাড়ির পেছন থেকে নিজামউদ্দিন সড়কের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত আরসিসি ড্রেন নির্মাণকাজের ঠিকাদার মেসার্স শান্ত শিহাব এন্টারপ্রাইজের পাওনা বিল ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৯৫৩ টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও নথিতে পরিবর্তন করে পুনরায় পাওনা পরিশোধের নিমিত্তে ডাচবাংলা ব্যাংকের বোর্ড বাজার শাখায় সিটি করপোরেশনের হিসাব থেকে চেক ইস্যু দেখানো হয়েছে। এভাবে আরো ছয়টি প্রকল্পের টাকাসহ মোট সাতটি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নামে তিনটি ব্যাংক হিসাব পরিচালনাকারী সাবেক মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে সাতটি চেক ইস্যু দেখিয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম তার নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের টঙ্গী শাখার হিসাবে জমা করেন। অন্য আসামি সিটি করপোরেশনের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছায়েদুর রহমান কোনো কিছু যাচাই-বাছাই ছাড়াই পরে সংযোজন করা নোটশিট এবং চেক ইস্যু রেজিস্টারে স্বাক্ষর করেন। নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু করার নিয়ম থাকলেও তত্কালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম রাহাতুল ইসলাম নজরুল ইসলামের নামীয় হিসাব নম্বরে চেক ইস্যু করিয়ে তাকে ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮ টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সিটি করপোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের এসব দুর্নীতির বিষয় নজরে এলে দুদক তদন্তে নামে। এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এর সহকারী পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম গত ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চেয়ে একটি চিঠি দেন।
এ বিষয়ে বণিক বার্তায় ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত নজরুল ইসলামকে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করে।
এদিকে নজরুল ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন। পরে ওই বছর ২ সেপ্টেম্বর বণিক বার্তায় ‘ধরাছোঁয়ার বাইরে জিসিসির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা’ শিরোনামে আরো একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।