ঢাকা ০২:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

শিশু ডায়রিয়া থেকে সেরে উঠা মানেই সব সংকট দূর হওয়া নয়

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৮:৫৪:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
  • ৩১১ জন পড়েছেন ।
শিশু ডায়রিয়া
বড়দের চেয়ে শিশুদের ডায়রিয়ায় জটিলতা বেশি হয়। শিশুদের শরীরের কোষের বাইরের পানি বা এক্সট্রা সেলুলার ফ্লুইড বেশি। ফলে সহজেই তাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতা তীব্র হলে শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। ডায়রিয়া থেকে সেরে উঠার পরও অনেকদিন এর প্রভাব থাকতে পারে, ডায়রিয়া থেকে সেরে উঠা মানেই শিশু নিরাপদ নয়। ডায়রিয়াতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
চিকিৎসকদের মতে এই সময়ে শিশুর দেহে পানি ও লবণ ঘাটতি খুব প্রকট হতে পারে, যেমন:
• শরীরে অন্ত্রের তরলে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। পাতলা পায়খানার ফলে এই লবণ খুব বেশি বের হয়ে যায়। এর অভাবে পেট ফেঁপে ফুলে যাওয়া, মাংসপেশির শিথিলতা, অন্ত্রের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ ব্যাহত হওয়া, হৃৎপিন্ডের গতিতে সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া শিশু যদি আগে থেকে তীব্র মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগে থাকে তাহলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
• অন্ত্রের তরলে পটাশিয়ামের পাশাপাশি সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডও থাকে। এছাড়া সাথে বমি থাকলে আরও বেশি করে সোডিয়াম কমে যায়।
• খাওয়ার স্যালাইন যদি পরিমাণের চেয়ে কম পানি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, (যেমন আধা লিটার পানির পরিবর্তে এক গ্লাস পানিতে এক প্যাকেট স্যালাইন) তখন শরীরে সোডিয়াম বেড়ে যায়। এই লবণের মাত্রা রক্তে বাড়ার সাথে সাথে শিশুর তৃষ্ণা বাড়তে থাকে। আবার এই সময়ে সেই একই অতিরিক্ত ঘন স্যালাইন খাওয়ানোর ফলে পড়তে মস্তিষ্কের কোষ শুকিয়ে আসতে থাকে আর একসময় খিঁচুনি দেখা যায়।
ডায়রিয়া শেষ হওয়ার পরও এর দীর্মমেয়াদী প্রভাব কাটিয়ে উঠার জন্য করণীয়:
• শিশু ডায়রিয়া থেকে সুস্থ হয়ে গেলে সাধারণ খাবার আবার শুরু করলে অনেক সময় আবার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তাই ডায়রিয়ার পরে সাধারণ খাবার শুরু করতে কিছুটা সময় নেয়া উচিত এবং সহজে হজম হয় না এমন খাবার (পুই শাক/ইলিশ মাছ/গরুর মাংস) এড়িয়ে চলতে হবে।
• পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর করার জন্য কাঁচা ও পাকা কলা, ফলের রস খাওয়াতে হবে। তবে ভারী কোনও ফলের রস (তরমুজ, বাঙ্গি, লিচু) খাওয়ানো যাবে না।
• প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের জন্য দেহের ক্ষয় পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই কম চর্বিযুক্ত মুরগীর মাংস, মাছ কম তেল, মশলা দিয়ে রান্না করে দিতে হবে।
• শিশুদের শরীরে পানির যাতে কোনও অভাব না হয় সেজন্য ডাবের পানি, চিড়ার পানি ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করাতে হবে। এগুলো শিশুর দেহের বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি, ম্যাংগানিজ, পটাসিয়াম ইত্যাদির স্বল্পতা রোধ করবে।
• শিশুর ডায়রিয়াতে তাকে দিনে তিনবেলা করে ভরাপেট আহার না করিয়ে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দিনে অনেকবার করে খাওয়াতে হবে। নরম করে ভাত রান্না করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। এটি দ্বারা কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা ঠিকমত পূরণ করতে হবে।
• শিশুকে ভালো করে রান্না করা মুরগী/ সবজির পাতলা স্বচ্ছ সুরুয়া (ক্লিয়ার স্যুপ) খেতে দিতে হবে। লবণের পরিমাণ ভালো মত দেখে নিতে হবে। এতে শিশুর দুর্বলতা কমবে।
• শিশু মায়ের বুকের দুধ খেলে তা নিয়মিত ভাবে খাওয়াতে হবে, ডায়রিয়ার জন্য বন্ধ করা যাবে না। এতে অনেক ধরনের এন্টিবডি থাকে, শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ডায়রিয়া চলাকালীন ও তার পরবর্তীকালে ১মাস সময় মায়ের দুধ ছাড়া গরুর দুধ বা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার দেওয়া উচিত নয়। তবে ঘরে বানানো ননী মুক্ত দুধের দই অল্পপরিমাণে দেয়া যেতে পারে । এতে ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শিশুর অন্ত্রের জন্য উপকারী।
• বেশিক্ষণ রাখা খাবার খাওয়ানো যাবে না।
• শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা না কমা পর্যন্ত ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুর দূর্বলতা কাটাতে জিংক ট্যাবলেট দেয়া যেতে পারে।
• ডায়রিয়া শেষ হয়ে গেলেও পরবর্তী দুই সপ্তাহ এই রকম বাড়তি খাবার দিতে হবে।
• সবসময় হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে, বিশেষ করে খাওয়ার আগে।
• চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোন ঔষুধ দেয়া যাবে না।
তথ্য সম্পাদনা : ডাঃ খন্দকার রেজাউল হক
 প্রচারে: দুর্যোগ ফোরাম
Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

শিশু ডায়রিয়া থেকে সেরে উঠা মানেই সব সংকট দূর হওয়া নয়

পোস্ট করা হয়েছে : ০৮:৫৪:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
শিশু ডায়রিয়া
বড়দের চেয়ে শিশুদের ডায়রিয়ায় জটিলতা বেশি হয়। শিশুদের শরীরের কোষের বাইরের পানি বা এক্সট্রা সেলুলার ফ্লুইড বেশি। ফলে সহজেই তাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতা তীব্র হলে শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। ডায়রিয়া থেকে সেরে উঠার পরও অনেকদিন এর প্রভাব থাকতে পারে, ডায়রিয়া থেকে সেরে উঠা মানেই শিশু নিরাপদ নয়। ডায়রিয়াতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
চিকিৎসকদের মতে এই সময়ে শিশুর দেহে পানি ও লবণ ঘাটতি খুব প্রকট হতে পারে, যেমন:
• শরীরে অন্ত্রের তরলে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। পাতলা পায়খানার ফলে এই লবণ খুব বেশি বের হয়ে যায়। এর অভাবে পেট ফেঁপে ফুলে যাওয়া, মাংসপেশির শিথিলতা, অন্ত্রের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ ব্যাহত হওয়া, হৃৎপিন্ডের গতিতে সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া শিশু যদি আগে থেকে তীব্র মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগে থাকে তাহলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
• অন্ত্রের তরলে পটাশিয়ামের পাশাপাশি সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডও থাকে। এছাড়া সাথে বমি থাকলে আরও বেশি করে সোডিয়াম কমে যায়।
• খাওয়ার স্যালাইন যদি পরিমাণের চেয়ে কম পানি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, (যেমন আধা লিটার পানির পরিবর্তে এক গ্লাস পানিতে এক প্যাকেট স্যালাইন) তখন শরীরে সোডিয়াম বেড়ে যায়। এই লবণের মাত্রা রক্তে বাড়ার সাথে সাথে শিশুর তৃষ্ণা বাড়তে থাকে। আবার এই সময়ে সেই একই অতিরিক্ত ঘন স্যালাইন খাওয়ানোর ফলে পড়তে মস্তিষ্কের কোষ শুকিয়ে আসতে থাকে আর একসময় খিঁচুনি দেখা যায়।
ডায়রিয়া শেষ হওয়ার পরও এর দীর্মমেয়াদী প্রভাব কাটিয়ে উঠার জন্য করণীয়:
• শিশু ডায়রিয়া থেকে সুস্থ হয়ে গেলে সাধারণ খাবার আবার শুরু করলে অনেক সময় আবার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তাই ডায়রিয়ার পরে সাধারণ খাবার শুরু করতে কিছুটা সময় নেয়া উচিত এবং সহজে হজম হয় না এমন খাবার (পুই শাক/ইলিশ মাছ/গরুর মাংস) এড়িয়ে চলতে হবে।
• পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর করার জন্য কাঁচা ও পাকা কলা, ফলের রস খাওয়াতে হবে। তবে ভারী কোনও ফলের রস (তরমুজ, বাঙ্গি, লিচু) খাওয়ানো যাবে না।
• প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের জন্য দেহের ক্ষয় পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই কম চর্বিযুক্ত মুরগীর মাংস, মাছ কম তেল, মশলা দিয়ে রান্না করে দিতে হবে।
• শিশুদের শরীরে পানির যাতে কোনও অভাব না হয় সেজন্য ডাবের পানি, চিড়ার পানি ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করাতে হবে। এগুলো শিশুর দেহের বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি, ম্যাংগানিজ, পটাসিয়াম ইত্যাদির স্বল্পতা রোধ করবে।
• শিশুর ডায়রিয়াতে তাকে দিনে তিনবেলা করে ভরাপেট আহার না করিয়ে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দিনে অনেকবার করে খাওয়াতে হবে। নরম করে ভাত রান্না করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। এটি দ্বারা কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা ঠিকমত পূরণ করতে হবে।
• শিশুকে ভালো করে রান্না করা মুরগী/ সবজির পাতলা স্বচ্ছ সুরুয়া (ক্লিয়ার স্যুপ) খেতে দিতে হবে। লবণের পরিমাণ ভালো মত দেখে নিতে হবে। এতে শিশুর দুর্বলতা কমবে।
• শিশু মায়ের বুকের দুধ খেলে তা নিয়মিত ভাবে খাওয়াতে হবে, ডায়রিয়ার জন্য বন্ধ করা যাবে না। এতে অনেক ধরনের এন্টিবডি থাকে, শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ডায়রিয়া চলাকালীন ও তার পরবর্তীকালে ১মাস সময় মায়ের দুধ ছাড়া গরুর দুধ বা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার দেওয়া উচিত নয়। তবে ঘরে বানানো ননী মুক্ত দুধের দই অল্পপরিমাণে দেয়া যেতে পারে । এতে ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শিশুর অন্ত্রের জন্য উপকারী।
• বেশিক্ষণ রাখা খাবার খাওয়ানো যাবে না।
• শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা না কমা পর্যন্ত ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুর দূর্বলতা কাটাতে জিংক ট্যাবলেট দেয়া যেতে পারে।
• ডায়রিয়া শেষ হয়ে গেলেও পরবর্তী দুই সপ্তাহ এই রকম বাড়তি খাবার দিতে হবে।
• সবসময় হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে, বিশেষ করে খাওয়ার আগে।
• চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোন ঔষুধ দেয়া যাবে না।
তথ্য সম্পাদনা : ডাঃ খন্দকার রেজাউল হক
 প্রচারে: দুর্যোগ ফোরাম