ঢাকা ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন- জানি কেন এই প্রবাদটি এখনও বাংলার মাঠে ঘাটে

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৯:১০:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২
  • ৩৪৩ জন পড়েছেন ।
” লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন “
এই প্রবাদটি এখনও বাংলার মাঠে- ঘাটে শহরের অলিতে গলিতে বহু লোকের মুখে শোনা যায়। গৌরী সেনের নাম জানে না, এরূপ লোক বিরল।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষে (১৫৮০ খ্রিঃ) হুগলী শহরের অন্তর্গত বালি নামে এক পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন গৌরী সেন। পুরো নাম গৌরী শঙ্কর সেন, জাতিতে সূবর্ণ বণিক।
পর্তুগিজ আমলে যে সকল দেশীয় ব্যবসায়ী উল্লেখযোগ্য ছিল তাদের মধ্যে এক ব্যবসায়ীর নাম আজও প্রবাদ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ব্যবসা- বাণিজ্য, ধর্মকর্ম, জনকল্যাণ মূলক কাজে এই মানুষ টি বর্তমান প্রজন্মের কাছে উদাহরণ যোগ্য। আজও মানুষ টাকার প্রয়োজন পড়লে বলে…..
” লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন “
তাঁর পূর্ব পুরুষ পুরন্দর সেন, সপ্তগ্রামের পতনের পর পুরন্দরের বংশধর হলধর সেন হুগলীতে এসে বসবাস শুরু করেন। সে সময় পর্তুগিজরাই ছিল হুগলীর শাসনকর্তা, ইংরেজ শাসন তখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। হলধর প্রপৌত্রের নাম ছিল অনিরুদ্ধ সেন, অনিরুদ্ধের পুত্রের নাম নন্দরাম, আর নন্দরামের পুত্রই হলো গৌরী সেন।
কলকাতার বিখ্যাত প্রাচীন অধিবাসীদের মধ্যে বৈষ্ণবচরণ শেঠ সর্বাপেক্ষা পুরাতন লোক ছিলেন। প্রায় চারশো বছর আগে বড় বাজারে তাঁর বাসস্থান ছিল। সে সময়ে যে সমস্ত লোক ব্যবসা বাণিজ্য করতেন তাঁদের মধ্যে বৈষ্ণব বাবু ছিলেন অত্যন্ত ধর্ম পরায়ন এবং ধনী। তাঁর সম্বন্ধে অনেক গল্প আছে। তেলঙ্গানার রাজকুমার রামরাজা কলকাতা থেকে দেবারাধনার জন্য যে গঙ্গা জল নিয়ে যেতেন, সেই গঙ্গা জল বৈষ্ণব চরণের মোহরাঙ্কিত না হলে তিনি ব্যবহার করতেন না।
এই গৌরী সেন ব্যবসার সূত্রে বৈষ্ণব চরণের অংশীদার ছিলেন। বৈষ্ণব শেঠ এক সময়ে অনেক দস্তা কেনেন। কিন্তু পরীক্ষা করে জানা যায়, এই দস্তার মধ্যে রূপোর অংশ ছিল বেশী। তখন বৈষ্ণব চরণ ভাবলেন, গৌরী সেনের নামে দস্তা কেনার ফলে “রাঙ্গের বদলে রূপায় ” এসে দাঁড়িয়েছে। এরপর ধর্মভীরু, কর্তব্য পরায়ন বৈষ্ণব চরণ তা বিক্রি করে সমস্ত টাকাই গৌরী সেনকে দিয়ে দেন।
গৌরী সেন অসাধারণ সৌভাগ্য সম্পদের অধীশ্বর ছিলেন, তাঁর প্রতি সৌভাগ্য দেবীর আকস্মিক কৃপা সম্বন্ধে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। বাংলার প্রথম গির্জা ব্যান্ডেল চার্চের দেওয়ান ছিলেন গৌরী সেন। গৌরী সেনের পিতা নন্দরাম ছিলেন মধ্যবিত্ত গৃহস্থ। মূলত ১৫৯৯ খ্রীঃ ব্যান্ডেলে খ্রিষ্টানদের উপাসনার জন্য গির্জা নির্মাণ করা হয়। একবার তিনি সাতটি নৌকা বোঝাই করে মেদিনীপুরে দস্তা পাঠান। নৌকা গুলি যখন মেদিনীপুরে এসে পৌঁছায় তখন তাঁর বন্ধু ভৈরব চন্দ্র দত্ত নৌকা গুলিতে রৌপ্য পূর্ণ দেখে তাঁর জিনিস নয় বলে তিনি তা আবার হুগলীতে গৌরী সেনের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
জনশ্রুতি আছে, যেদিন নৌকা গুলি হুগলীতে ফিরে আসে ঠিক তার আগের রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন যে, মহাদেব তাঁর সামনে এসে তাঁকে বলছেন যে, তুমি মহাদেবের মন্দির নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলে। তার জন্য আমি তোমায় অর্থ পাঠিয়েছিলেম। তুমি কাল নৌকা থেকে তা গ্ৰহণ করে তোমার বাড়ির পশ্চিম দিকের বাগানে আমার মন্দির করে দিও। পরের দিন সকালেই গৌরী সেন গঙ্গাতীরে গিয়ে দেখতে পান সপ্ততরীর যাবতীয় দস্তা রৌপ্যে পরিণত হয়েছে। তাই দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে পড়েন।
এরপর তিনি সেই অর্থ ব্যয় করে মহাদেবের জন্য মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘গৌরীশঙ্কর মন্দির ‘ হুগলীতে এখনো বিদ্যমান। মন্দির গাত্রে একটি প্রস্তর ফলকে মন্দির প্রতিষ্ঠার তারিখ লিখা আছে- “গৌরী সেন, বাংলা সন ১০০৬ সাল ইংরেজি সন ১৫৯৯ সাল”
সেকালে সপ্তগ্রামের সমস্ত খাবারের দোকানে তিনি বলে দিয়েছিলেন যে, তাঁর নাম করে কোন দরিদ্র ব্যক্তি যদি খেতে চায়, তাহলে তাকে যেন খেতে দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন বিনয়ী, ধীর ও সদালাপী। তাঁর দানশীলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই তাঁর অর্থ অপচয় করত। কিন্তু তাতে তিনি কখনও মনঃক্ষুন্ন হতেন না। এরপরও গৌরী সেন তাঁর অর্জিত বিপুল সম্পত্তি দান করতে থাকেন। কন্যাদায়, মাতৃদায়, পিতৃদায়, দেনার দায়ে যারা জর্জরিত, আবার যারা ন্যায় পথের থেকে সৎকার্য্যের জন্য, ফৌজদারী’তে জড়িত ও জরিমানার আসামী’দের জন্য তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন।
এই থেকেই শুরু হয় প্রবাদ
“লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন “….
১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর দেহাবসান হলেও প্রবাদটি বাংলা ভাষায় চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে
তথ্য সূত্র:
পুলিশ কর্মকর্তা –

Hasan Hafizur Rahman

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন- জানি কেন এই প্রবাদটি এখনও বাংলার মাঠে ঘাটে

পোস্ট করা হয়েছে : ০৯:১০:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২
” লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন “
এই প্রবাদটি এখনও বাংলার মাঠে- ঘাটে শহরের অলিতে গলিতে বহু লোকের মুখে শোনা যায়। গৌরী সেনের নাম জানে না, এরূপ লোক বিরল।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষে (১৫৮০ খ্রিঃ) হুগলী শহরের অন্তর্গত বালি নামে এক পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন গৌরী সেন। পুরো নাম গৌরী শঙ্কর সেন, জাতিতে সূবর্ণ বণিক।
পর্তুগিজ আমলে যে সকল দেশীয় ব্যবসায়ী উল্লেখযোগ্য ছিল তাদের মধ্যে এক ব্যবসায়ীর নাম আজও প্রবাদ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ব্যবসা- বাণিজ্য, ধর্মকর্ম, জনকল্যাণ মূলক কাজে এই মানুষ টি বর্তমান প্রজন্মের কাছে উদাহরণ যোগ্য। আজও মানুষ টাকার প্রয়োজন পড়লে বলে…..
” লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন “
তাঁর পূর্ব পুরুষ পুরন্দর সেন, সপ্তগ্রামের পতনের পর পুরন্দরের বংশধর হলধর সেন হুগলীতে এসে বসবাস শুরু করেন। সে সময় পর্তুগিজরাই ছিল হুগলীর শাসনকর্তা, ইংরেজ শাসন তখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। হলধর প্রপৌত্রের নাম ছিল অনিরুদ্ধ সেন, অনিরুদ্ধের পুত্রের নাম নন্দরাম, আর নন্দরামের পুত্রই হলো গৌরী সেন।
কলকাতার বিখ্যাত প্রাচীন অধিবাসীদের মধ্যে বৈষ্ণবচরণ শেঠ সর্বাপেক্ষা পুরাতন লোক ছিলেন। প্রায় চারশো বছর আগে বড় বাজারে তাঁর বাসস্থান ছিল। সে সময়ে যে সমস্ত লোক ব্যবসা বাণিজ্য করতেন তাঁদের মধ্যে বৈষ্ণব বাবু ছিলেন অত্যন্ত ধর্ম পরায়ন এবং ধনী। তাঁর সম্বন্ধে অনেক গল্প আছে। তেলঙ্গানার রাজকুমার রামরাজা কলকাতা থেকে দেবারাধনার জন্য যে গঙ্গা জল নিয়ে যেতেন, সেই গঙ্গা জল বৈষ্ণব চরণের মোহরাঙ্কিত না হলে তিনি ব্যবহার করতেন না।
এই গৌরী সেন ব্যবসার সূত্রে বৈষ্ণব চরণের অংশীদার ছিলেন। বৈষ্ণব শেঠ এক সময়ে অনেক দস্তা কেনেন। কিন্তু পরীক্ষা করে জানা যায়, এই দস্তার মধ্যে রূপোর অংশ ছিল বেশী। তখন বৈষ্ণব চরণ ভাবলেন, গৌরী সেনের নামে দস্তা কেনার ফলে “রাঙ্গের বদলে রূপায় ” এসে দাঁড়িয়েছে। এরপর ধর্মভীরু, কর্তব্য পরায়ন বৈষ্ণব চরণ তা বিক্রি করে সমস্ত টাকাই গৌরী সেনকে দিয়ে দেন।
গৌরী সেন অসাধারণ সৌভাগ্য সম্পদের অধীশ্বর ছিলেন, তাঁর প্রতি সৌভাগ্য দেবীর আকস্মিক কৃপা সম্বন্ধে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। বাংলার প্রথম গির্জা ব্যান্ডেল চার্চের দেওয়ান ছিলেন গৌরী সেন। গৌরী সেনের পিতা নন্দরাম ছিলেন মধ্যবিত্ত গৃহস্থ। মূলত ১৫৯৯ খ্রীঃ ব্যান্ডেলে খ্রিষ্টানদের উপাসনার জন্য গির্জা নির্মাণ করা হয়। একবার তিনি সাতটি নৌকা বোঝাই করে মেদিনীপুরে দস্তা পাঠান। নৌকা গুলি যখন মেদিনীপুরে এসে পৌঁছায় তখন তাঁর বন্ধু ভৈরব চন্দ্র দত্ত নৌকা গুলিতে রৌপ্য পূর্ণ দেখে তাঁর জিনিস নয় বলে তিনি তা আবার হুগলীতে গৌরী সেনের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
জনশ্রুতি আছে, যেদিন নৌকা গুলি হুগলীতে ফিরে আসে ঠিক তার আগের রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন যে, মহাদেব তাঁর সামনে এসে তাঁকে বলছেন যে, তুমি মহাদেবের মন্দির নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলে। তার জন্য আমি তোমায় অর্থ পাঠিয়েছিলেম। তুমি কাল নৌকা থেকে তা গ্ৰহণ করে তোমার বাড়ির পশ্চিম দিকের বাগানে আমার মন্দির করে দিও। পরের দিন সকালেই গৌরী সেন গঙ্গাতীরে গিয়ে দেখতে পান সপ্ততরীর যাবতীয় দস্তা রৌপ্যে পরিণত হয়েছে। তাই দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে পড়েন।
এরপর তিনি সেই অর্থ ব্যয় করে মহাদেবের জন্য মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘গৌরীশঙ্কর মন্দির ‘ হুগলীতে এখনো বিদ্যমান। মন্দির গাত্রে একটি প্রস্তর ফলকে মন্দির প্রতিষ্ঠার তারিখ লিখা আছে- “গৌরী সেন, বাংলা সন ১০০৬ সাল ইংরেজি সন ১৫৯৯ সাল”
সেকালে সপ্তগ্রামের সমস্ত খাবারের দোকানে তিনি বলে দিয়েছিলেন যে, তাঁর নাম করে কোন দরিদ্র ব্যক্তি যদি খেতে চায়, তাহলে তাকে যেন খেতে দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন বিনয়ী, ধীর ও সদালাপী। তাঁর দানশীলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই তাঁর অর্থ অপচয় করত। কিন্তু তাতে তিনি কখনও মনঃক্ষুন্ন হতেন না। এরপরও গৌরী সেন তাঁর অর্জিত বিপুল সম্পত্তি দান করতে থাকেন। কন্যাদায়, মাতৃদায়, পিতৃদায়, দেনার দায়ে যারা জর্জরিত, আবার যারা ন্যায় পথের থেকে সৎকার্য্যের জন্য, ফৌজদারী’তে জড়িত ও জরিমানার আসামী’দের জন্য তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন।
এই থেকেই শুরু হয় প্রবাদ
“লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন “….
১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর দেহাবসান হলেও প্রবাদটি বাংলা ভাষায় চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে
তথ্য সূত্র:
পুলিশ কর্মকর্তা –

Hasan Hafizur Rahman