ঢাকা ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সুলতান আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গউছে জামান, আরেফ বিল্লাহ, শাহ ছুফী আলহাজ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) ৫৮তম পবিত্র ওরশ শরীফ ১১,১২ ও ১৩ ই মার্চ ২০২২ রোজ শুক্রবার ,শনিবার ও রবিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০৬:১৬:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২
  • ৩৬২ জন পড়েছেন ।

সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গাওছে জামান আরেফ বিল্লাহ শাহ্ছুফী আলহাজ্জ খানাবাহাদুর আহসানউল্লা (রঃ) ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, লেখক, শিক্ষাবীদ তেমনি আধ্যাত্মবাদী আদর্শের প্রবক্তা, সুফী সাধক। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা তথা পূর্ব বঙ্গ, পশ্চিম বঙ্গ ও আসামের শিক্ষা ব্যবস্থায় তিনি যে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তা আজ প্রজ্জ্বলিত অগ্নীস্ফুলিঙ্গ হয়ে প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত হয়েছে। পাশাপাশি বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যে তার নাম ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। মেধা, প্রজ্ঞা ও মানব কল্যাণে খানাবাহাদুর আহসানউল্লা (রঃ) আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বিশ্ব মানচিত্রে সার্বিক পশ্চাৎপদগ্রস্ত বিশাল এক জনগোষ্ঠীকে প্রবহমান সামগ্রিক উন্নয়নের ক্রমধারার প্রবর্তন করেন যে অসাধারণ প্রতিভাময় মনীষী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক, চিন্তানায়ক, সমাজ ভাবনা সংগঠনের সব্যসাচী রূপকার, সাহিত্যিক এবং মানবসেবাধর্মী ও আধ্যাত্মবাদী মিশন ও আদর্শের প্রবক্তা, সুফী সাধক, সেবাধর্মী ও অধ্যাত্মবাদী প্রতিষ্ঠান আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা হজরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র:) ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শেষবেলায় তাঁর আবির্ভাব। পরাধীন স্বদেশে সমাজ জীবন সম্প্রদায়গতভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষা দীক্ষায় চাকরি পেশাদারিত্বে সৃষ্ট এক বিভেদ আর বিভাজনের প্রেক্ষাপটে আত্মসংগঠনের এক উন্মুখ পরিবেশেই হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)-এর উত্থান ও বিকাশ।দক্ষিণ বাংলার বর্তমান সাতক্ষীরা জেলার পবিত্র ভূমি নলতা শরীফে ১৮৭৩ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)। তিনি ১৮৯৫ সালে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয় তাঁর ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনে তিনি বারবার আবাসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এক সময় টাকীতে তিনি রজকালয়ে (ধোপার বাড়ি) আশ্রয় নেন। এ সময় তাঁর পাকশালার জন্য ব্যবহার করতেন অনঙ্গ বাবুর গোয়াল ঘরের অর্ধাংশ। তিনি বাল্যকাল থেকে গভীর একাগ্রতার সাথে, নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করতেন। ছেলেবেলা থেকেই ছাত্র-শিক্ষকসহ সকলেই তাঁর আচরণে মুগ্ধ হতেন।
হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)-এর কর্মজীবন শুরু করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে। পরবর্তীতে তিনি অবিভক্ত বাংলা তথা পূর্ব বঙ্গ, পশ্চিম বঙ্গ ও আসামের মুসলিম জনশিক্ষার সহকারী পরিচালকের মত গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে আসীন হয়েছিলেন।তিনিই একমাত্র বাঙালি অফিসার যিনি এত গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। যাঁর পূর্বে বা পরে আর কোন বাঙালি অফিসার এত বড় গুরুত্বপূর্ণ পদের যোগ্যতা অর্জন করেনি। তাঁর কর্মক্ষেত্র (১৮৯৫-১৯২৯) ছিল অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে। এটি নিছক চাকরির জন্য চাকরি ছিল না, তাঁর সমগ্র কর্মজীবন ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশে বাংলা ভূখন্ডে শিক্ষা পরিবেশের, পদ্ধতি প্রক্রিয়ার সংস্কার ও উন্নয়নে উৎসর্গীকৃত।
এ সময়ে শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর সে বিপুল বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো :
১. তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষার্থীর নাম লেখার রীতি প্রচলিত ছিল। ফলে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্ররা ভালো পরীক্ষা দিয়েও শীর্ষ মেধাস্থান বা প্রথম বিভাগ পেতো না সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)-এর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় প্রথমে অনার্স ও এমএ পরীক্ষার উত্তরপত্রে পরীক্ষার্থীর নামের পরিবর্তে রোল নম্বর লেখার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। পরবর্তীতে আইএ ও বিএ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও রোল নম্বর লেখার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয় ।
২. মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের মাদ্রাসা পাস করা ছাত্ররা কলেজে ভর্তি হতে পারতো না। তিনি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার মান সমন্বয় করেন। ফলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।
৩. সে সময় সব স্কুল-কলেজে মৌলবির পদ ছিল না, তিনি সব স্কুল কলেজে মৌলবির পদ সৃষ্টি করেন এবং পন্ডিত ও মৌলবির বেতনের বিশেষ বৈষম্য রহিত করেন।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশে যে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অসামান্য; সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া বিল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে উত্থাপনের পর দারুণ বিরোধ সৃষ্টি হয়। গঠিত হয় স্পেশাল কমিটি। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) এই কমিটির সদস্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। যা এ দেশের মানুষ চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
৫. তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন ফর মোহামেডান পদের দায়িত্ব নেয়ার পর এক মাসের মধ্যে মুসলমানদের জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই প্রতিষ্ঠিত হয় কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজ।
৬. তৎকালীত গভর্নমেন্ট মুসলিম শিক্ষার ভার হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) উপর ন্যস্ত করেন। ফলে বহু মক্তব মাদ্রাসা, মুসলিম হাইস্কুল এবং কলেজ তাঁরই তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়।এছাড়াও অমুসলিম স্কুলে মুসলিম শিক্ষকের নিযুক্তি এবং অন্যান্য সরকারি বিভাগে মুসলিম কর্মচারী নিয়োগও তাঁর হাতেই ন্যস্ত ছিল। এই সুযোগে তিনি স্বতন্ত্র মক্তব পাঠ্য নির্বাচন ও মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য একমাত্র মুসলিম লেখকের প্রণীত পুস্তক প্রচলনের নিয়ম প্রবর্তন করেন এবং গভর্র্নমেন্টের অনুমোদন নেন। ফলে মুসলিম শিক্ষায় নব প্রেরণা আসে। হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম শিক্ষার্থী সমভাবে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ লাভ করে।
৭. মুসলিম ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ধারা নির্দিষ্ট হয়। সকল শ্রেণীর বিদ্যালয়ের বৃত্তি বন্টনের পূর্বে তাঁর মতামত জিজ্ঞাসা করা হত।
৮. পরীক্ষকদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। মুসলমানদের জন্য বৃত্তির পরিমাণ বর্ধিত হয়।
৯. মুসলমান ছাত্রদের আবাসিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি রাজশাহীতে ফুলার হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। হোস্টেলটি রাজশাহীতে মুসলিম শিক্ষা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কলকাতায় মুসলমান ছাত্রদের জন্য বেকার হোস্টেল, টেলার হোস্টেল, কারমাইকেল হোস্টেল, মোছলেম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
১০. মুসলিম সাহিত্যের বিপুল প্রসার লাভ করে। মুসলমান সাহিত্যিকগণ নতুন প্রেরণা পান।
১১. বৈদেশিক শিক্ষার জন্য মুসলিম শিক্ষার্থীদের সরকারি সাহায্য প্রদানের নিয়ম নির্ধারিত হয়।
১২. টেক্সটবুক কমিটিতে মুসলমান সদস্য নিযুক্ত হয়, মুসলিম পাঠ্যে ইসলামী শব্দ প্রয়োগ হতে থাকে।
১৩.  মাদ্রাসার সৃষ্টি হয় এবং আরবী শিক্ষার মধ্যস্থতায় ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরবর্তী যুগের খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের মধ্যে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) অন্যতম। তিনি ভাষা ও সাহিত্য, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষানীতি, জীবনী, ইতিহাস, র্কোআন ও হাদীছ, ইছলামী বিধান, বিভিন্ন ধর্মের আলোচনা, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর বহুবিধ মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।জাতীয় জীবনের পুনর্জাগরণের পথ প্রশস্ত করাই ছিল তাঁর সাহিত্যের মূল বৈশিষ্ট্য।
ঐতিহ্য, আধুনিকতা আর মুক্ত ধর্মীয় চেতনা ছিল তাঁর পুনর্জাগরণের প্রধান উদ্দীপক। ‘সাহিত্যের প্রতি তাঁর আকর্ষণ মানব-জীবনের আদর্শবাদ প্রচারের জন্য। তিনি জীবনকে দেখেছিলেন মানবাত্মার প্রকাশের কর্মসূচি হিসাবে। সেজন্য সাহিত্যের মধ্য দিয়ে তিনি মানব-জীবন গঠনের আদর্শ প্রচারের প্রয়োজন অনুভব করেন।’

তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল- পদার্থ শিক্ষা (১৯০৫), হজরত মোহাম্মাদ (১৯৩১), ইসলাম রবি হজরত মোহাম্মাদ, ইসলামের দান (১৯৫৮), মোসলেম জগতের ইতিহাস Historz of The Muslim World  (১৯৩১), আমার জীবন ধারা (১৯৪৬), ইসলাম ও আদর্শ মহাপুরুষ (১৯২৬), ভক্তের পত্র (১৯৩৬), বঙ্গভাষা ও মুসলিম সাহিত্য (১৯১৮), শিক্ষাক্ষেত্রে বঙ্গীয় মুসলমান (১৯৩১), টিচার্স ম্যানুয়েল (১৯১৫), সৃষ্টির তত্ত্ব¡, ছুফী, তরীকত শিক্ষা (১৯৪০), মোস্তফা কামাল ১৯৩৪, হেজাজ ভ্রমণ (১৯২৯) ইত্যাদি ।মুসলিম শিক্ষা ও সাহিত্য বিস্তারে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)- এর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মখদুমী লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা। এই লাইব্রেরী থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণীর বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। অনেক নতুন লেখকদের লেখা গ্রন্থও এখান থেকে প্রকাশিত হত। মখদুমী লাইব্রেরীর উৎসাহ ও উদ্দীপনায় অনেক মুসলমান লেখক সৃজনশীল লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। মখদুমী লাইব্রেরী ছাড়াও তাঁরই প্রেরণায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরী ও ইছলামিয়া লাইব্রেরী। খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র:) কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা ও প্রতিভার বিরল স্বীকৃতি পান কর্মজীবনের শুরুতেই।
১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে খানবাহাদুর উপাধি অর্জন করেন। একই সালে তিনি লন্ডন রয়েল সোসাইটির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯১৭-১৮ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯১৯ সালে প্রথম মুসলমান হিসেবে ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস (আইইএস) ভুক্ত হন। তিনি ছিলেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টেও (সিনেট) সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্ট ও বহুমুখী অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলা একাডেমী ১৯৬০ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ১৯৮৬ সালে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (মরণোত্তর) পুরস্কারে ভূষিত হন। হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) ছিলেন শীর্ষ স্থানীয় সাধক, দরবেশ ও আউলিয়া। জন্মের আগে ও পরে জানা গিয়েছিল তাঁর সুন্দর ভবিষ্যতের আগমন বার্তা। তিনি মানুষকে আধ্যাত্মিক শিক্ষাদানের জন্য বৎসরের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভক্তদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতেন। মানুষকে খোদাত্বক পৌঁছে দেয়াই ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি এ কাজে ব্যপৃত ছিলেন। তিনি কখনো ভক্তদের থেকে পয়সা গ্রহণ করতেন না। তাঁর ভক্ত মুরিদদের সব সময় বন্ধুর মর্যাদায় আশীন করতেন।বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, প্রখর মেধা, ঐশীশক্তি সম্পন্ন, বিচক্ষণ, বিশ্লেষক, মানবদরদী সমাজ কল্যাণকামী এই মনীষী তাঁর পরিচ্ছন্ন, উদার ধর্ম ও সমাজ চিন্তার আলোকে “সমগ্র মানব সমাজের উন্নয়ন ও আধ্যাত্মিক জীবন গঠনের মহান দায়িত্ব” নিয়ে ১৯৩৫ সালে সাতক্ষীরা জেলার নলতা শরীফ নামক গ্রামে আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মিশনের মূল উদ্দেশ্য- ‘স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবা’।মিশন প্রতিষ্ঠাতার এ মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে ও বহির্বিশ্বে শতাধিক শাখা মিশন মানবতার সেবায় নিয়োজিত আছে। শাখা মিশনসমূহের মধ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন বিশ্বব্যাপী বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে । নিঃস্বার্থ জনসেবার উদ্দেশ্যে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন ও বিভিন্ন শাখা মিশনের মাধ্যমে বহু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরী, চিকিৎসা কেন্দ্র, হাসপাতাল ইত্যাদি বহুবিধ সেবামূলক কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আহ্ছানিয়া চক্ষু ক্লিনিক, নলতা আহ্ছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল।এই বিরল ব্যক্তিত্ব সুলতান আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গউছে জামান, আরেফ বিল্লাহ, শাহ ছুফী আলহাজ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ সালের সকাল ১০:১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেও থেমে থাকেনি সমাজ বিনির্মাণে তাঁর কর্মসূচি। তাঁর মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আহ্ছানিয়া মিশন বিশ্বব্যাপী সমাজ গঠনের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। তাঁর পান্ডিত্বপূর্ণ মূল্যবান রচনাবলীকে বিশ্ববাসী জীবন দর্শনের নির্দেশনাসহ বহুবিধ জ্ঞানের উৎস হিসেবে গ্রহণ করছেন। তাঁর রওজা শরীফকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক পরিবেশ, পাশাপাশি মানব সেবার একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত। তাঁর রওজা শরীফে প্রতিদিন সকল ধর্মের  অগণিত মানুষ পরিদর্শন করেন।ব্যক্তিত্ব সুলতান আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গউছে জামান, আরেফ বিল্লাহ, শাহ ছুফী আলহাজ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) পবিত্র ওরশ শরীফ উপলক্ষে প্রতি বৎসর ২৬, ২৭, ২৮ মাঘ, ইংরেজি ফেব্রুয়ারির ৯,১০,১১ তারিখে  উদযাপিত হয়ে আসছে। এ বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে ১১,১২ ও ১৩ ই মার্চ  ২০২২ রোজ শুক্রবার , শনিবার ও রবিবার অনুষ্ঠিত হবে।

সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলনে পরিণত হয় ভক্ত-প্রেমিকের এক মিলন মেলা। এ পবিত্র ওরছ শরীফে তিন দিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এবছর ৫৮তম বার্ষিক ওরছ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য ভক্তবৃন্দ জমায়ত হন এবং ধর্মীয় আলোচনা শোনেন যা “স্রষ্টার এবাদত সৃষ্টির সেবা” বাস্তবায়নে  মানব সেবায় ও মানব কল্যাণে কাজে আসে।হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)  আজ লক্ষ মানুষের প্রাণে প্রাণে। তাঁর মিশন, তাঁর গ্রন্থ এবং তাঁর রুহানী উপস্থিতি লক্ষ হৃদয়ের আসন গ্রহণ করে আছে। তাঁর এ ত্রিমাত্রিক উপস্থিতি বিশ্ববাসীকে অনাগতকালে সুন্দর ও কল্যাণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে; এটি আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় ও বিশ্বাস । তিনি মানব সেবার একটি অপূর্ব নিদর্শন রেখে গেছেন যেটা তার নলতা শরীফে না আসলে উপলব্দি করা যাবে না। তার প্রতিষ্টিত আহছানিয়া মিশন সকল ভক্তদের সধ্যমত সেবা প্রদান করেন। এখানে কোন ধরনের ধর্মীয় বিরোধী কর্মকান্ড করতে দেয়া হয় না কেন্দ্রীয় মিশন সর্বক্ষনিক তদারকিতে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।


পরিত্র ওরছ শরীফের মাহফিল/ ধর্মীয় আলোচনা  রেডিও নলতা সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে পাশাপাশি  রেডিও নলতার ফেসবুক পেজে লাইফ শুনতে পাবেন
(https://www.facebook.com/radionalta99.2fm)। এবছর করোনার প্রাদুভব থাকলেও সমাজিক দূরত্ব ও করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে নলতা কেন্দ্রীয় মিশন। তাই হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)  মতাদর্শ জানতে পবিত্র ওরশ শরীফ আসুন নিজেকে সমাজ সংস্কারক ও ধর্মীয় আদর্শে সোনার মানুষে পরিনত করুন।
তথ্য সূত্র : এ এফ এম এনামুল হক ,লেখক-গবেষক,খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)

 

লেখক-
সেলিম শাহারীয়ার
সম্পাদক ও প্রকাশক
সাউন্ড অব কমিউনিটি

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

সুলতান আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গউছে জামান, আরেফ বিল্লাহ, শাহ ছুফী আলহাজ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) ৫৮তম পবিত্র ওরশ শরীফ ১১,১২ ও ১৩ ই মার্চ ২০২২ রোজ শুক্রবার ,শনিবার ও রবিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে

পোস্ট করা হয়েছে : ০৬:১৬:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২

সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গাওছে জামান আরেফ বিল্লাহ শাহ্ছুফী আলহাজ্জ খানাবাহাদুর আহসানউল্লা (রঃ) ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, লেখক, শিক্ষাবীদ তেমনি আধ্যাত্মবাদী আদর্শের প্রবক্তা, সুফী সাধক। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা তথা পূর্ব বঙ্গ, পশ্চিম বঙ্গ ও আসামের শিক্ষা ব্যবস্থায় তিনি যে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তা আজ প্রজ্জ্বলিত অগ্নীস্ফুলিঙ্গ হয়ে প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত হয়েছে। পাশাপাশি বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যে তার নাম ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। মেধা, প্রজ্ঞা ও মানব কল্যাণে খানাবাহাদুর আহসানউল্লা (রঃ) আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বিশ্ব মানচিত্রে সার্বিক পশ্চাৎপদগ্রস্ত বিশাল এক জনগোষ্ঠীকে প্রবহমান সামগ্রিক উন্নয়নের ক্রমধারার প্রবর্তন করেন যে অসাধারণ প্রতিভাময় মনীষী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক, চিন্তানায়ক, সমাজ ভাবনা সংগঠনের সব্যসাচী রূপকার, সাহিত্যিক এবং মানবসেবাধর্মী ও আধ্যাত্মবাদী মিশন ও আদর্শের প্রবক্তা, সুফী সাধক, সেবাধর্মী ও অধ্যাত্মবাদী প্রতিষ্ঠান আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা হজরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র:) ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শেষবেলায় তাঁর আবির্ভাব। পরাধীন স্বদেশে সমাজ জীবন সম্প্রদায়গতভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষা দীক্ষায় চাকরি পেশাদারিত্বে সৃষ্ট এক বিভেদ আর বিভাজনের প্রেক্ষাপটে আত্মসংগঠনের এক উন্মুখ পরিবেশেই হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)-এর উত্থান ও বিকাশ।দক্ষিণ বাংলার বর্তমান সাতক্ষীরা জেলার পবিত্র ভূমি নলতা শরীফে ১৮৭৩ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)। তিনি ১৮৯৫ সালে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয় তাঁর ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনে তিনি বারবার আবাসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এক সময় টাকীতে তিনি রজকালয়ে (ধোপার বাড়ি) আশ্রয় নেন। এ সময় তাঁর পাকশালার জন্য ব্যবহার করতেন অনঙ্গ বাবুর গোয়াল ঘরের অর্ধাংশ। তিনি বাল্যকাল থেকে গভীর একাগ্রতার সাথে, নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করতেন। ছেলেবেলা থেকেই ছাত্র-শিক্ষকসহ সকলেই তাঁর আচরণে মুগ্ধ হতেন।
হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)-এর কর্মজীবন শুরু করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে। পরবর্তীতে তিনি অবিভক্ত বাংলা তথা পূর্ব বঙ্গ, পশ্চিম বঙ্গ ও আসামের মুসলিম জনশিক্ষার সহকারী পরিচালকের মত গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে আসীন হয়েছিলেন।তিনিই একমাত্র বাঙালি অফিসার যিনি এত গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। যাঁর পূর্বে বা পরে আর কোন বাঙালি অফিসার এত বড় গুরুত্বপূর্ণ পদের যোগ্যতা অর্জন করেনি। তাঁর কর্মক্ষেত্র (১৮৯৫-১৯২৯) ছিল অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে। এটি নিছক চাকরির জন্য চাকরি ছিল না, তাঁর সমগ্র কর্মজীবন ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশে বাংলা ভূখন্ডে শিক্ষা পরিবেশের, পদ্ধতি প্রক্রিয়ার সংস্কার ও উন্নয়নে উৎসর্গীকৃত।
এ সময়ে শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর সে বিপুল বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো :
১. তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষার্থীর নাম লেখার রীতি প্রচলিত ছিল। ফলে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্ররা ভালো পরীক্ষা দিয়েও শীর্ষ মেধাস্থান বা প্রথম বিভাগ পেতো না সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)-এর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় প্রথমে অনার্স ও এমএ পরীক্ষার উত্তরপত্রে পরীক্ষার্থীর নামের পরিবর্তে রোল নম্বর লেখার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। পরবর্তীতে আইএ ও বিএ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও রোল নম্বর লেখার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয় ।
২. মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের মাদ্রাসা পাস করা ছাত্ররা কলেজে ভর্তি হতে পারতো না। তিনি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার মান সমন্বয় করেন। ফলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।
৩. সে সময় সব স্কুল-কলেজে মৌলবির পদ ছিল না, তিনি সব স্কুল কলেজে মৌলবির পদ সৃষ্টি করেন এবং পন্ডিত ও মৌলবির বেতনের বিশেষ বৈষম্য রহিত করেন।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশে যে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অসামান্য; সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া বিল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে উত্থাপনের পর দারুণ বিরোধ সৃষ্টি হয়। গঠিত হয় স্পেশাল কমিটি। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) এই কমিটির সদস্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। যা এ দেশের মানুষ চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
৫. তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন ফর মোহামেডান পদের দায়িত্ব নেয়ার পর এক মাসের মধ্যে মুসলমানদের জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই প্রতিষ্ঠিত হয় কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজ।
৬. তৎকালীত গভর্নমেন্ট মুসলিম শিক্ষার ভার হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) উপর ন্যস্ত করেন। ফলে বহু মক্তব মাদ্রাসা, মুসলিম হাইস্কুল এবং কলেজ তাঁরই তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়।এছাড়াও অমুসলিম স্কুলে মুসলিম শিক্ষকের নিযুক্তি এবং অন্যান্য সরকারি বিভাগে মুসলিম কর্মচারী নিয়োগও তাঁর হাতেই ন্যস্ত ছিল। এই সুযোগে তিনি স্বতন্ত্র মক্তব পাঠ্য নির্বাচন ও মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য একমাত্র মুসলিম লেখকের প্রণীত পুস্তক প্রচলনের নিয়ম প্রবর্তন করেন এবং গভর্র্নমেন্টের অনুমোদন নেন। ফলে মুসলিম শিক্ষায় নব প্রেরণা আসে। হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম শিক্ষার্থী সমভাবে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ লাভ করে।
৭. মুসলিম ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ধারা নির্দিষ্ট হয়। সকল শ্রেণীর বিদ্যালয়ের বৃত্তি বন্টনের পূর্বে তাঁর মতামত জিজ্ঞাসা করা হত।
৮. পরীক্ষকদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। মুসলমানদের জন্য বৃত্তির পরিমাণ বর্ধিত হয়।
৯. মুসলমান ছাত্রদের আবাসিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি রাজশাহীতে ফুলার হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। হোস্টেলটি রাজশাহীতে মুসলিম শিক্ষা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কলকাতায় মুসলমান ছাত্রদের জন্য বেকার হোস্টেল, টেলার হোস্টেল, কারমাইকেল হোস্টেল, মোছলেম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
১০. মুসলিম সাহিত্যের বিপুল প্রসার লাভ করে। মুসলমান সাহিত্যিকগণ নতুন প্রেরণা পান।
১১. বৈদেশিক শিক্ষার জন্য মুসলিম শিক্ষার্থীদের সরকারি সাহায্য প্রদানের নিয়ম নির্ধারিত হয়।
১২. টেক্সটবুক কমিটিতে মুসলমান সদস্য নিযুক্ত হয়, মুসলিম পাঠ্যে ইসলামী শব্দ প্রয়োগ হতে থাকে।
১৩.  মাদ্রাসার সৃষ্টি হয় এবং আরবী শিক্ষার মধ্যস্থতায় ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরবর্তী যুগের খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের মধ্যে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) অন্যতম। তিনি ভাষা ও সাহিত্য, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষানীতি, জীবনী, ইতিহাস, র্কোআন ও হাদীছ, ইছলামী বিধান, বিভিন্ন ধর্মের আলোচনা, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর বহুবিধ মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।জাতীয় জীবনের পুনর্জাগরণের পথ প্রশস্ত করাই ছিল তাঁর সাহিত্যের মূল বৈশিষ্ট্য।
ঐতিহ্য, আধুনিকতা আর মুক্ত ধর্মীয় চেতনা ছিল তাঁর পুনর্জাগরণের প্রধান উদ্দীপক। ‘সাহিত্যের প্রতি তাঁর আকর্ষণ মানব-জীবনের আদর্শবাদ প্রচারের জন্য। তিনি জীবনকে দেখেছিলেন মানবাত্মার প্রকাশের কর্মসূচি হিসাবে। সেজন্য সাহিত্যের মধ্য দিয়ে তিনি মানব-জীবন গঠনের আদর্শ প্রচারের প্রয়োজন অনুভব করেন।’

তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল- পদার্থ শিক্ষা (১৯০৫), হজরত মোহাম্মাদ (১৯৩১), ইসলাম রবি হজরত মোহাম্মাদ, ইসলামের দান (১৯৫৮), মোসলেম জগতের ইতিহাস Historz of The Muslim World  (১৯৩১), আমার জীবন ধারা (১৯৪৬), ইসলাম ও আদর্শ মহাপুরুষ (১৯২৬), ভক্তের পত্র (১৯৩৬), বঙ্গভাষা ও মুসলিম সাহিত্য (১৯১৮), শিক্ষাক্ষেত্রে বঙ্গীয় মুসলমান (১৯৩১), টিচার্স ম্যানুয়েল (১৯১৫), সৃষ্টির তত্ত্ব¡, ছুফী, তরীকত শিক্ষা (১৯৪০), মোস্তফা কামাল ১৯৩৪, হেজাজ ভ্রমণ (১৯২৯) ইত্যাদি ।মুসলিম শিক্ষা ও সাহিত্য বিস্তারে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)- এর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মখদুমী লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা। এই লাইব্রেরী থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণীর বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। অনেক নতুন লেখকদের লেখা গ্রন্থও এখান থেকে প্রকাশিত হত। মখদুমী লাইব্রেরীর উৎসাহ ও উদ্দীপনায় অনেক মুসলমান লেখক সৃজনশীল লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। মখদুমী লাইব্রেরী ছাড়াও তাঁরই প্রেরণায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরী ও ইছলামিয়া লাইব্রেরী। খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র:) কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা ও প্রতিভার বিরল স্বীকৃতি পান কর্মজীবনের শুরুতেই।
১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে খানবাহাদুর উপাধি অর্জন করেন। একই সালে তিনি লন্ডন রয়েল সোসাইটির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯১৭-১৮ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯১৯ সালে প্রথম মুসলমান হিসেবে ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস (আইইএস) ভুক্ত হন। তিনি ছিলেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টেও (সিনেট) সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্ট ও বহুমুখী অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলা একাডেমী ১৯৬০ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ১৯৮৬ সালে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (মরণোত্তর) পুরস্কারে ভূষিত হন। হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) ছিলেন শীর্ষ স্থানীয় সাধক, দরবেশ ও আউলিয়া। জন্মের আগে ও পরে জানা গিয়েছিল তাঁর সুন্দর ভবিষ্যতের আগমন বার্তা। তিনি মানুষকে আধ্যাত্মিক শিক্ষাদানের জন্য বৎসরের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভক্তদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতেন। মানুষকে খোদাত্বক পৌঁছে দেয়াই ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি এ কাজে ব্যপৃত ছিলেন। তিনি কখনো ভক্তদের থেকে পয়সা গ্রহণ করতেন না। তাঁর ভক্ত মুরিদদের সব সময় বন্ধুর মর্যাদায় আশীন করতেন।বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, প্রখর মেধা, ঐশীশক্তি সম্পন্ন, বিচক্ষণ, বিশ্লেষক, মানবদরদী সমাজ কল্যাণকামী এই মনীষী তাঁর পরিচ্ছন্ন, উদার ধর্ম ও সমাজ চিন্তার আলোকে “সমগ্র মানব সমাজের উন্নয়ন ও আধ্যাত্মিক জীবন গঠনের মহান দায়িত্ব” নিয়ে ১৯৩৫ সালে সাতক্ষীরা জেলার নলতা শরীফ নামক গ্রামে আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মিশনের মূল উদ্দেশ্য- ‘স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবা’।মিশন প্রতিষ্ঠাতার এ মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে ও বহির্বিশ্বে শতাধিক শাখা মিশন মানবতার সেবায় নিয়োজিত আছে। শাখা মিশনসমূহের মধ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন বিশ্বব্যাপী বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে । নিঃস্বার্থ জনসেবার উদ্দেশ্যে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন ও বিভিন্ন শাখা মিশনের মাধ্যমে বহু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরী, চিকিৎসা কেন্দ্র, হাসপাতাল ইত্যাদি বহুবিধ সেবামূলক কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আহ্ছানিয়া চক্ষু ক্লিনিক, নলতা আহ্ছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল।এই বিরল ব্যক্তিত্ব সুলতান আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গউছে জামান, আরেফ বিল্লাহ, শাহ ছুফী আলহাজ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ সালের সকাল ১০:১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেও থেমে থাকেনি সমাজ বিনির্মাণে তাঁর কর্মসূচি। তাঁর মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আহ্ছানিয়া মিশন বিশ্বব্যাপী সমাজ গঠনের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। তাঁর পান্ডিত্বপূর্ণ মূল্যবান রচনাবলীকে বিশ্ববাসী জীবন দর্শনের নির্দেশনাসহ বহুবিধ জ্ঞানের উৎস হিসেবে গ্রহণ করছেন। তাঁর রওজা শরীফকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক পরিবেশ, পাশাপাশি মানব সেবার একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত। তাঁর রওজা শরীফে প্রতিদিন সকল ধর্মের  অগণিত মানুষ পরিদর্শন করেন।ব্যক্তিত্ব সুলতান আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গউছে জামান, আরেফ বিল্লাহ, শাহ ছুফী আলহাজ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) পবিত্র ওরশ শরীফ উপলক্ষে প্রতি বৎসর ২৬, ২৭, ২৮ মাঘ, ইংরেজি ফেব্রুয়ারির ৯,১০,১১ তারিখে  উদযাপিত হয়ে আসছে। এ বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে ১১,১২ ও ১৩ ই মার্চ  ২০২২ রোজ শুক্রবার , শনিবার ও রবিবার অনুষ্ঠিত হবে।

সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলনে পরিণত হয় ভক্ত-প্রেমিকের এক মিলন মেলা। এ পবিত্র ওরছ শরীফে তিন দিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এবছর ৫৮তম বার্ষিক ওরছ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য ভক্তবৃন্দ জমায়ত হন এবং ধর্মীয় আলোচনা শোনেন যা “স্রষ্টার এবাদত সৃষ্টির সেবা” বাস্তবায়নে  মানব সেবায় ও মানব কল্যাণে কাজে আসে।হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)  আজ লক্ষ মানুষের প্রাণে প্রাণে। তাঁর মিশন, তাঁর গ্রন্থ এবং তাঁর রুহানী উপস্থিতি লক্ষ হৃদয়ের আসন গ্রহণ করে আছে। তাঁর এ ত্রিমাত্রিক উপস্থিতি বিশ্ববাসীকে অনাগতকালে সুন্দর ও কল্যাণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে; এটি আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় ও বিশ্বাস । তিনি মানব সেবার একটি অপূর্ব নিদর্শন রেখে গেছেন যেটা তার নলতা শরীফে না আসলে উপলব্দি করা যাবে না। তার প্রতিষ্টিত আহছানিয়া মিশন সকল ভক্তদের সধ্যমত সেবা প্রদান করেন। এখানে কোন ধরনের ধর্মীয় বিরোধী কর্মকান্ড করতে দেয়া হয় না কেন্দ্রীয় মিশন সর্বক্ষনিক তদারকিতে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।


পরিত্র ওরছ শরীফের মাহফিল/ ধর্মীয় আলোচনা  রেডিও নলতা সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে পাশাপাশি  রেডিও নলতার ফেসবুক পেজে লাইফ শুনতে পাবেন
(https://www.facebook.com/radionalta99.2fm)। এবছর করোনার প্রাদুভব থাকলেও সমাজিক দূরত্ব ও করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে নলতা কেন্দ্রীয় মিশন। তাই হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)  মতাদর্শ জানতে পবিত্র ওরশ শরীফ আসুন নিজেকে সমাজ সংস্কারক ও ধর্মীয় আদর্শে সোনার মানুষে পরিনত করুন।
তথ্য সূত্র : এ এফ এম এনামুল হক ,লেখক-গবেষক,খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)

 

লেখক-
সেলিম শাহারীয়ার
সম্পাদক ও প্রকাশক
সাউন্ড অব কমিউনিটি