ঢাকা ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ নয়নতারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে দোয়েল মহিলা উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে হরিণের মাংস সহ আটক দুই সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত খুলনা প্রেসক্লাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত  কালিগঞ্জে তরুন দলের কমিটি গঠন সভাপতি সুলতান,সম্পাদক আলতাপ পানি নিষ্কাশনে ইউএনও,র প্রাণপণ চেষ্টা অব্যহত তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আবারও পানিবন্ধী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সঃ কে কটুক্তির প্রতিবাদে রূপসা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

চাটখিল উপজেলায় চিকিৎসার অভাবে দুই সহোদরের শিকলবন্দী জীবন

  • Sound Of Community
  • পোস্ট করা হয়েছে : ০১:০৬:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৩২৫ জন পড়েছেন ।

মোজাম্মেল হক লিটন, নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার ঘাটলাবাগ হাটপুকুরিয়া ইউনিয়নের কেশোরবাগ গ্রামের কাজী বাড়ির বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম (২৭) ও কামরুল ইসলাম (২০) দুই ভাই। কামরুলের বয়স যখন দুই বছর, তখন তাদের বাবা শামসুল আলম মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর চার সন্তানকে নিয়ে অন্যের কাজ করে সংসার চালান নুরজাহান বেগম। ২০১৭ সালে রাশেদুল ইসলাম বিয়ে করেন। বিয়ের ১ বছরের মাথায় সবার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন রাশেদুল। এ কারণে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। ২০২০ সালে ছোট ভাই কামরুল ইসলামও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় দুই সহোদরের ভাগ্যে জোটেনি চিকিৎসাসেবা। তাই শিকলবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।সরেজমিনে দেখা যায়, নিজ ঘরের পিলারের সঙ্গে রাশেদুল ইসলাম ও কামরুল ইসলামকে শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রেখেছেন অসহায় মা নুরজাহান বেগম।

তিনিই এখন তাদের দেখাশোনা করছেন। রাশেদুল চুপচাপ থাকলেও আবোলতাবোল কথা বলেন কামরুল ইসলাম। সন্তানের চিকিৎসা চালাতে না পারলেও মায়ের আদর ও ভালোবাসার কোনো কমতি নেই মানসিক প্রতিবন্ধী এই দুই ছেলের জন্য। ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে বৃদ্ধ মা এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ান। চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে এভাবে ছেলেদের করুণ দৃশ্য সহ্য করাটা কঠিন। মায়ের চোখ বুজলে ছেলেটির কী হবে, এ চিন্তায় প্রতিনিয়ত কাঁদেন এই দুঃখিনী মা। নুরজাহান বেগম বলেন, আমাদের সম্পদ নেই। তাই ছেলেদের চিকিৎসা করাতে পারছি না।

অন্যের ঘরে কাজ করে এবং মানুষের সহায়তা নিয়ে ছেলেদের মুখে খাবার তুলেই দিই। ওদের ছেড়ে দিলে ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলে। আমাকেও মারধর করে। তাই শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখছি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা আমরা পাই না। নুরজাহান বেগম আরও বলেন, সন্তান খারাপ হলেও মা হিসেবে আমি ওদের জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত ওদের জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পাতছি। স্বামী ছাড়া এমন প্রতিবন্ধী ছেলে দুইটা নিয়ে আমার দুঃখের শেষ নাই। আমি মরে গেলে ওদের কী হবে জানি না। প্রতিবেশী জয়নাল আবেদিন বলেন, ছেলে দুইটা এই এলাকার মধ্যে সব থেকে ভদ্র ছেলে।

তারা কখনো মানুষের এক টাকা মেরে খায়নি। কারও সম্পদ নষ্ট করে নাই। আল্লাহ পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছেন হয়তো। আমাদের পক্ষ থেকে যা করা সম্ভব আমরা তা করছি। কিন্তু সুচিকিৎসার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। এদের টাকাপয়সা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঘাটলাবাগ হাটপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম বাকী বিল্লাহ বলেন, দিনদিন দুই সহোদরের অবস্থা আরও প্রকোট হচ্ছে। তাদের স্থায়ী চিকিৎসার প্রয়োজন, যার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার সাধ্যমতো যা প্রয়োজন, তা পূরণের চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি। সবার সহযোগিতা নিয়ে তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :
রিপোর্টার সম্পর্কে

Sound Of Community

জনপ্রিয় সংবাদ

আসুন সবাই মিলে আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করি নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ

চাটখিল উপজেলায় চিকিৎসার অভাবে দুই সহোদরের শিকলবন্দী জীবন

পোস্ট করা হয়েছে : ০১:০৬:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মোজাম্মেল হক লিটন, নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার ঘাটলাবাগ হাটপুকুরিয়া ইউনিয়নের কেশোরবাগ গ্রামের কাজী বাড়ির বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম (২৭) ও কামরুল ইসলাম (২০) দুই ভাই। কামরুলের বয়স যখন দুই বছর, তখন তাদের বাবা শামসুল আলম মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর চার সন্তানকে নিয়ে অন্যের কাজ করে সংসার চালান নুরজাহান বেগম। ২০১৭ সালে রাশেদুল ইসলাম বিয়ে করেন। বিয়ের ১ বছরের মাথায় সবার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন রাশেদুল। এ কারণে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। ২০২০ সালে ছোট ভাই কামরুল ইসলামও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় দুই সহোদরের ভাগ্যে জোটেনি চিকিৎসাসেবা। তাই শিকলবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।সরেজমিনে দেখা যায়, নিজ ঘরের পিলারের সঙ্গে রাশেদুল ইসলাম ও কামরুল ইসলামকে শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রেখেছেন অসহায় মা নুরজাহান বেগম।

তিনিই এখন তাদের দেখাশোনা করছেন। রাশেদুল চুপচাপ থাকলেও আবোলতাবোল কথা বলেন কামরুল ইসলাম। সন্তানের চিকিৎসা চালাতে না পারলেও মায়ের আদর ও ভালোবাসার কোনো কমতি নেই মানসিক প্রতিবন্ধী এই দুই ছেলের জন্য। ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে বৃদ্ধ মা এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ান। চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে এভাবে ছেলেদের করুণ দৃশ্য সহ্য করাটা কঠিন। মায়ের চোখ বুজলে ছেলেটির কী হবে, এ চিন্তায় প্রতিনিয়ত কাঁদেন এই দুঃখিনী মা। নুরজাহান বেগম বলেন, আমাদের সম্পদ নেই। তাই ছেলেদের চিকিৎসা করাতে পারছি না।

অন্যের ঘরে কাজ করে এবং মানুষের সহায়তা নিয়ে ছেলেদের মুখে খাবার তুলেই দিই। ওদের ছেড়ে দিলে ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলে। আমাকেও মারধর করে। তাই শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখছি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা আমরা পাই না। নুরজাহান বেগম আরও বলেন, সন্তান খারাপ হলেও মা হিসেবে আমি ওদের জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত ওদের জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পাতছি। স্বামী ছাড়া এমন প্রতিবন্ধী ছেলে দুইটা নিয়ে আমার দুঃখের শেষ নাই। আমি মরে গেলে ওদের কী হবে জানি না। প্রতিবেশী জয়নাল আবেদিন বলেন, ছেলে দুইটা এই এলাকার মধ্যে সব থেকে ভদ্র ছেলে।

তারা কখনো মানুষের এক টাকা মেরে খায়নি। কারও সম্পদ নষ্ট করে নাই। আল্লাহ পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছেন হয়তো। আমাদের পক্ষ থেকে যা করা সম্ভব আমরা তা করছি। কিন্তু সুচিকিৎসার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। এদের টাকাপয়সা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঘাটলাবাগ হাটপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম বাকী বিল্লাহ বলেন, দিনদিন দুই সহোদরের অবস্থা আরও প্রকোট হচ্ছে। তাদের স্থায়ী চিকিৎসার প্রয়োজন, যার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার সাধ্যমতো যা প্রয়োজন, তা পূরণের চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি। সবার সহযোগিতা নিয়ে তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।